ঢাকা ০৬:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫

তৃতীয় দিনের মতো সংঘর্ষে ভারত-পাকিস্তান, সীমান্তজুড়ে যুদ্ধাবস্থা

  • আপডেট সময় : ০৯:০৭:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ মে ২০২৫
  • ৬ বার পড়া হয়েছে

বৃহস্পতিবার রাতে কাশ্মিরের একটি হোটেল -ছবি রয়টার্স

প্রত্যাশা ডেস্ক: পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ তৃতীয় দিনে গড়িয়েছে। একে অপরের বিরুদ্ধে ড্রোন ও কামান হামলার অভিযোগ তুলেছে উভয় দেশ। ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধের পর এটিই সবচেয়ে বড় সামরিক উত্তেজনা বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, জম্মু ও কাশ্মির অঞ্চলে পাকিস্তানি বাহিনী একাধিকবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। পাল্টা জবাবে ড্রোন হামলা প্রতিহত করে উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়েছে।

ভারতের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, যেকোনও অপচেষ্টার জবাব শক্ত হাতে দেওয়া হবে।

অন্যদিকে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার দাবি করেছেন, ভারতের বিবৃতি ‘ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর’। তিনি বলেন, পাকিস্তান কোনো আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নেয়নি, বরং আত্মরক্ষামূলক অবস্থানে রয়েছে।

পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মিরে রাতভর গোলাবর্ষণে পাঁচ জন নিহত ও ২৯ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা। নিহতদের মধ্যে একজন শিশু রয়েছে। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এখনও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

জম্মুর শের-ই-কাশ্মির কৃষি ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী আনসাব জানান, রাত ৪টার দিকে ভয়াবহ শব্দ হতে থাকে, জানালাগুলো যেন ভেঙে যাবে। বাতাসে ধোঁয়া আর কুয়াশার মতো কিছু ছিল।

ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে কাশ্মিরের সাম্বা অঞ্চলে ‘বড় ধরনের অনুপ্রবেশ প্রচেষ্টা’ ব্যর্থ করা হয়েছে। পাশাপাশি উরি সেক্টরে শুক্রবারও ভারী গোলাবর্ষণ হয়েছে।

একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, উরিতে কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরে যায়। একজন নারী নিহত ও তিন জন আহত হয়েছেন।

ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের সীমান্তবর্তী শহর অমৃতসরে শুক্রবার ঘণ্টাব্যাপী সাইরেন বাজানো হয়। স্বর্ণমন্দির শহর হিসেবে পরিচিত এই নগরীতে মানুষকে ঘরে থাকতে বলা হয়। আতঙ্কে শহর ছাড়ছেন পর্যটকরা।

এক ব্রিটিশ পর্যটক বলেন, শব্দ, সাইরেন আর বিদ্যুৎ বিভ্রাটে রাতে ঘুমানো যাচ্ছে না। আমাদের পরিবারও ভীত, তাই আমরা ক্যাব বুক করে শহর ছাড়ছি।

ভারতের গুজরাট রাজ্যের ভুজ শহরেও সতর্কতা জারি করে বাস প্রস্তুত রাখা হয়েছে। রাজস্থানের বিকানেরে স্কুল ও কোচিং সেন্টার বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সীমান্তবর্তী গ্রামবাসীদের আত্মীয়দের বাড়িতে কিংবা সরকার-নির্ধারিত আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

পরিস্থিতির ভয়াবহতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে আইপিএলের মতো মর্যাদাপূর্ণ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট বন্ধ ঘোষণা করেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। বৃহস্পতিবার একটি ম্যাচ মাঝপথে বাতিল করে আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়।

ভারতের নৌপরিবহন অধিদফতর সব বন্দরে নিরাপত্তা বাড়াতে বলেছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, বাড়তে থাকা হুমকির আশঙ্কা।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীন পর্যন্ত বিশ্ব শক্তিগুলো ভারত-পাকিস্তানকে উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানিয়েছে। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বৃহস্পতিবার ফক্স নিউজকে বলেন, আমরা চাই এই উত্তেজনা দ্রুত কমুক। তবে এ দেশগুলোর ওপর আমাদের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ নেই।

সৌদি আরবের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী আদেল আল-জুবেইর শুক্রবার পাকিস্তানে যাচ্ছেন। এর আগে তিনি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের সঙ্গে দেখা করে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার বিষয়ে ভারতের অবস্থান শুনেছেন।

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ পার্লামেন্টে বলেন, আমরা প্রতিদিন সৌদি আরব, কাতার ও চীনের সঙ্গে কথা বলছি। শান্তিপূর্ণ সমাধানই আমাদের লক্ষ্য।

হিন্দু-প্রধান ভারত ও মুসলিম-প্রধান পাকিস্তানের সম্পর্ক ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর থেকেই উত্তেজনাপূর্ণ। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মির অঞ্চল নিয়ে দুই দেশ তিনবার যুদ্ধ করেছে, যার মধ্যে দুটি সরাসরি কাশ্মিরকে কেন্দ্র করে।

বিশ্লেষকদের মতে, এবারের সংঘর্ষ শুধু কাশ্মির নয়, বরং পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডে ভারতীয় হামলার মধ্য দিয়ে নতুন মাত্রা পেয়েছে, যা পুরো দক্ষিণ এশিয়াকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

তৃতীয় দিনের মতো সংঘর্ষে ভারত-পাকিস্তান, সীমান্তজুড়ে যুদ্ধাবস্থা

আপডেট সময় : ০৯:০৭:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ মে ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ তৃতীয় দিনে গড়িয়েছে। একে অপরের বিরুদ্ধে ড্রোন ও কামান হামলার অভিযোগ তুলেছে উভয় দেশ। ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধের পর এটিই সবচেয়ে বড় সামরিক উত্তেজনা বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, জম্মু ও কাশ্মির অঞ্চলে পাকিস্তানি বাহিনী একাধিকবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। পাল্টা জবাবে ড্রোন হামলা প্রতিহত করে উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়েছে।

ভারতের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, যেকোনও অপচেষ্টার জবাব শক্ত হাতে দেওয়া হবে।

অন্যদিকে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার দাবি করেছেন, ভারতের বিবৃতি ‘ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর’। তিনি বলেন, পাকিস্তান কোনো আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নেয়নি, বরং আত্মরক্ষামূলক অবস্থানে রয়েছে।

পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মিরে রাতভর গোলাবর্ষণে পাঁচ জন নিহত ও ২৯ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা। নিহতদের মধ্যে একজন শিশু রয়েছে। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এখনও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

জম্মুর শের-ই-কাশ্মির কৃষি ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী আনসাব জানান, রাত ৪টার দিকে ভয়াবহ শব্দ হতে থাকে, জানালাগুলো যেন ভেঙে যাবে। বাতাসে ধোঁয়া আর কুয়াশার মতো কিছু ছিল।

ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে কাশ্মিরের সাম্বা অঞ্চলে ‘বড় ধরনের অনুপ্রবেশ প্রচেষ্টা’ ব্যর্থ করা হয়েছে। পাশাপাশি উরি সেক্টরে শুক্রবারও ভারী গোলাবর্ষণ হয়েছে।

একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, উরিতে কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরে যায়। একজন নারী নিহত ও তিন জন আহত হয়েছেন।

ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের সীমান্তবর্তী শহর অমৃতসরে শুক্রবার ঘণ্টাব্যাপী সাইরেন বাজানো হয়। স্বর্ণমন্দির শহর হিসেবে পরিচিত এই নগরীতে মানুষকে ঘরে থাকতে বলা হয়। আতঙ্কে শহর ছাড়ছেন পর্যটকরা।

এক ব্রিটিশ পর্যটক বলেন, শব্দ, সাইরেন আর বিদ্যুৎ বিভ্রাটে রাতে ঘুমানো যাচ্ছে না। আমাদের পরিবারও ভীত, তাই আমরা ক্যাব বুক করে শহর ছাড়ছি।

ভারতের গুজরাট রাজ্যের ভুজ শহরেও সতর্কতা জারি করে বাস প্রস্তুত রাখা হয়েছে। রাজস্থানের বিকানেরে স্কুল ও কোচিং সেন্টার বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সীমান্তবর্তী গ্রামবাসীদের আত্মীয়দের বাড়িতে কিংবা সরকার-নির্ধারিত আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

পরিস্থিতির ভয়াবহতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে আইপিএলের মতো মর্যাদাপূর্ণ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট বন্ধ ঘোষণা করেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। বৃহস্পতিবার একটি ম্যাচ মাঝপথে বাতিল করে আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়।

ভারতের নৌপরিবহন অধিদফতর সব বন্দরে নিরাপত্তা বাড়াতে বলেছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, বাড়তে থাকা হুমকির আশঙ্কা।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীন পর্যন্ত বিশ্ব শক্তিগুলো ভারত-পাকিস্তানকে উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানিয়েছে। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বৃহস্পতিবার ফক্স নিউজকে বলেন, আমরা চাই এই উত্তেজনা দ্রুত কমুক। তবে এ দেশগুলোর ওপর আমাদের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ নেই।

সৌদি আরবের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী আদেল আল-জুবেইর শুক্রবার পাকিস্তানে যাচ্ছেন। এর আগে তিনি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের সঙ্গে দেখা করে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার বিষয়ে ভারতের অবস্থান শুনেছেন।

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ পার্লামেন্টে বলেন, আমরা প্রতিদিন সৌদি আরব, কাতার ও চীনের সঙ্গে কথা বলছি। শান্তিপূর্ণ সমাধানই আমাদের লক্ষ্য।

হিন্দু-প্রধান ভারত ও মুসলিম-প্রধান পাকিস্তানের সম্পর্ক ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর থেকেই উত্তেজনাপূর্ণ। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মির অঞ্চল নিয়ে দুই দেশ তিনবার যুদ্ধ করেছে, যার মধ্যে দুটি সরাসরি কাশ্মিরকে কেন্দ্র করে।

বিশ্লেষকদের মতে, এবারের সংঘর্ষ শুধু কাশ্মির নয়, বরং পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডে ভারতীয় হামলার মধ্য দিয়ে নতুন মাত্রা পেয়েছে, যা পুরো দক্ষিণ এশিয়াকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।