ঢাকা ০২:৫৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫, ৭ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বছরের প্রথম সূর্যোদয়ের আয়োজন ‘সূর্য উৎসব’

  • আপডেট সময় : ০৪:১৫:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫
  • ১৭ বার পড়া হয়েছে

লাইফস্টাইল ডেস্ক: খ্রিস্টীয় নববর্ষের প্রথম দিনে অপ্রচলিত জায়গায় অ্যাডভেঞ্চার ক্যাম্পের আয়োজন করে বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন। আয়োজনটির নাম দেওয়া হয় তারা ‘সূর্য উৎসব’। এবার উৎসব হয়েছে গাজীপুরের কালীগঞ্জে।

সন্ধ্যা নামার আগেই সারিটা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে গেল। পানজোরা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রীদের উৎসাহ দেখে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের টেলিস্কোপ অপারেটর আবদুর রাজ্জাক দূরবীক্ষণ যন্ত্রটি নিয়ে প্রস্তুত হয়ে গেলেন। এক সময় আকাশে উদয় হলো সন্ধ্যাতারা। ছাত্রীরা একে একে চোখ রাখল টেলিস্কোপের লেন্সে। বইয়ের পাতায় যাকে তারা শুক্র নামে জানে, বিস্ময়ে নিজের চোখে দেখল সেই দূরের গ্রহটি।

২০২৪ সালের শেষ দিনে এভাবেই শুরু হয়েছিল সূর্য উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। রাত বাড়তে থাকলে আকাশে বৃহস্পতি, শনিসহ তারকারাজি ফুটে উঠল। ছাত্রীরা ঘুরেফিরে সেসবও দেখতে থাকল। গাজীপুরে কালীগঞ্জের নাগরী ধর্মপল্লির কয়েকটি স্কুলের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতে এরপর শুরু হলো সাংস্কৃতিক পর্ব। তাদের নাচে, গানে সূর্য উৎসবের বর্ষবিদায়ের আয়োজন নতুন মাত্রা যোগ করল।

সূর্য উৎসবের নানা আয়োজনের একটি হলো বছরের প্রথম সূর্যোদয় দেখা। তার প্রস্তুতি শুরু হয় রাতে। এই প্রস্তুতির কান্ডারি উৎসবে অংশগ্রহণকারী সবাই। বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন যাদের বলে ‘অভিযাত্রী’। প্রতিবছর নির্দিষ্ট ফি দিয়ে নিবন্ধন করেই এই অভিযাত্রীরা উৎসবে যোগ দেন। এবারও নানা বয়সের প্রায় ৫০ জন অংশ নিয়েছিলেন। তাদেরই একটি দল লাল–হলুদ কাগজ কেটে সূর্যের মতো দেখতে মুকুট বানাচ্ছিল। অন্য একটি দল প্রস্তুতি নিচ্ছিল মধ্যরাতে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে। দেখতে দেখতে রাত ১২টা বেজে গেল। স্কুল প্রাঙ্গণে জ্বলে উঠল মোমবাতি। আলোকোজ্জ্বল মাঠে গল্প–আড্ডায় স্বাগত জানানো হলো নতুন বছর ২০২৫ সালকে।

অ্যাডভেঞ্চার ক্যাম্প বলেই সূর্য উৎসবে রাতযাপনের ব্যবস্থা হয় স্কুলের মেঝে কিংবা তাবুতে। এবারও তা–ই হয়েছিল। তবে এমন আড্ডামুখর রাতে কে আর চায় ঘুমাতে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানবিষয়ক সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের নিয়মিত কার্যক্রম সূর্য উৎসব। বছরের প্রথম দিনটিতে দেশের অপরিচিত বা সাধারণত যাওয়া হয়ে ওঠে না—এমন জায়গায় অ্যাডভেঞ্চার ক্যাম্পের আয়োজন করে থাকে সংগঠনটি। কিন্তু কীভাবে উৎসবের শুরু? সেই গল্প শুনছিলাম সংগঠনটির চেয়ারম্যান মশহুরুল আমিনের কাছে।
২০০১ সালে নতুন সহস্রাব্দ শুরু হবে। বিজ্ঞান সংগঠন হিসেবে শুরুর ক্ষণটি তারা ভিন্নভাবে উদ্যাপনের পরিকল্পনা করলেন। সিদ্ধান্ত হলো, বছরের প্রথম সূর্য উদয় দেখতে তারা সেন্ট মার্টিন যাবেন। এখানকার ছেঁড়াদ্বীপই দেশের ভূখণ্ড হিসেবে প্রথম সূর্যের আলোর স্পর্শ পায়। সেই আয়োজনের নাম দেওয়া হলো ‘সূর্য উৎসব’। ৮০ জনের দলে বিজ্ঞানী, শিল্পী, শিক্ষক, সাংবাদিকসহ নানা পেশার মানুষ অংশ নিলেন প্রথম উৎসবে। প্রথম আলোসহ বিভিন্ন পত্রিকায় সেই গল্প ছাপা হলে দারুণ সাড়া পড়ে গেল।

মশহুরুল আমিন বলছিলেন, ২৫ বছর আগে দেশে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম এতা বিকশিত হয়নি। তখনো বেড়ানো বলতে ছুটিতে নানাবাড়ি-দাদাবাড়ি যাওয়া। পত্রিকায় প্রচার হওয়ার কারণে তাই খুব সাড়া পড়ে গেল। পরের বছর আয়োজনের কথাও কেউ কেউ বলতে থাকলেন।

সিদ্ধান্ত হলো, সূর্য উৎসব বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের নিয়মিত আয়োজন হবে। এর পর থেকে কেওক্রাডং, চরকুকরি-মুকরি, সুন্দরবন, চিলমারী, হালুয়াঘাটসহ দেশের নানা প্রান্তে হতে থাকল সূর্য উৎসব।
ভোরের আলো ফুটতেই অভিযাত্রী সবাই প্রস্তুত বছরের নতুন সূর্যকে বরণ করে নিতে। নাগরীর উৎসব প্রাঙ্গণ ছেড়ে একে একে সবাই গিয়ে হাজির হলেন লোকালয় ছেড়ে খোলা প্রান্তরে। শৈত্যপ্রবাহের দাপটে কুয়াশায় ঢাকা সূর্যকে বরণ করা হলো উল্লাসে। এরপরই শিক্ষার্থীদের নিয়ে দিনের বাকি পর্বগুলো চলতে থাকল—জাদু প্রদর্শনী, পাপেট শো, প্লানেটেরিয়ামে মহাকাশের সন্ধান, ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর ঘুরে দেখাসহ নানা কিছু। এ বছর থেকে অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন–পদক প্রবর্তন করা হয়েছে। প্রতিবছর সংগঠনটির সুহৃদদের এই পদক দেওয়া হবে। এ বছর পদকটি তুলে দেওয়া হয় অর্থনীতিবিদ ও গবেষক ড. সাজেদা আমিনকে। এরপর শেষ বেলায় বিভিন্ন পর্বে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় সনদ। বিদায়বেলায় শিক্ষার্থীদের হাসিমুখ বলে দিচ্ছিল সূর্য উৎসব যেন বিজ্ঞান, সংস্কৃতি আর অ্যাডভেঞ্চারের মেলবন্ধন।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বছরের প্রথম সূর্যোদয়ের আয়োজন ‘সূর্য উৎসব’

আপডেট সময় : ০৪:১৫:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫

লাইফস্টাইল ডেস্ক: খ্রিস্টীয় নববর্ষের প্রথম দিনে অপ্রচলিত জায়গায় অ্যাডভেঞ্চার ক্যাম্পের আয়োজন করে বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন। আয়োজনটির নাম দেওয়া হয় তারা ‘সূর্য উৎসব’। এবার উৎসব হয়েছে গাজীপুরের কালীগঞ্জে।

সন্ধ্যা নামার আগেই সারিটা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে গেল। পানজোরা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রীদের উৎসাহ দেখে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের টেলিস্কোপ অপারেটর আবদুর রাজ্জাক দূরবীক্ষণ যন্ত্রটি নিয়ে প্রস্তুত হয়ে গেলেন। এক সময় আকাশে উদয় হলো সন্ধ্যাতারা। ছাত্রীরা একে একে চোখ রাখল টেলিস্কোপের লেন্সে। বইয়ের পাতায় যাকে তারা শুক্র নামে জানে, বিস্ময়ে নিজের চোখে দেখল সেই দূরের গ্রহটি।

২০২৪ সালের শেষ দিনে এভাবেই শুরু হয়েছিল সূর্য উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। রাত বাড়তে থাকলে আকাশে বৃহস্পতি, শনিসহ তারকারাজি ফুটে উঠল। ছাত্রীরা ঘুরেফিরে সেসবও দেখতে থাকল। গাজীপুরে কালীগঞ্জের নাগরী ধর্মপল্লির কয়েকটি স্কুলের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতে এরপর শুরু হলো সাংস্কৃতিক পর্ব। তাদের নাচে, গানে সূর্য উৎসবের বর্ষবিদায়ের আয়োজন নতুন মাত্রা যোগ করল।

সূর্য উৎসবের নানা আয়োজনের একটি হলো বছরের প্রথম সূর্যোদয় দেখা। তার প্রস্তুতি শুরু হয় রাতে। এই প্রস্তুতির কান্ডারি উৎসবে অংশগ্রহণকারী সবাই। বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন যাদের বলে ‘অভিযাত্রী’। প্রতিবছর নির্দিষ্ট ফি দিয়ে নিবন্ধন করেই এই অভিযাত্রীরা উৎসবে যোগ দেন। এবারও নানা বয়সের প্রায় ৫০ জন অংশ নিয়েছিলেন। তাদেরই একটি দল লাল–হলুদ কাগজ কেটে সূর্যের মতো দেখতে মুকুট বানাচ্ছিল। অন্য একটি দল প্রস্তুতি নিচ্ছিল মধ্যরাতে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে। দেখতে দেখতে রাত ১২টা বেজে গেল। স্কুল প্রাঙ্গণে জ্বলে উঠল মোমবাতি। আলোকোজ্জ্বল মাঠে গল্প–আড্ডায় স্বাগত জানানো হলো নতুন বছর ২০২৫ সালকে।

অ্যাডভেঞ্চার ক্যাম্প বলেই সূর্য উৎসবে রাতযাপনের ব্যবস্থা হয় স্কুলের মেঝে কিংবা তাবুতে। এবারও তা–ই হয়েছিল। তবে এমন আড্ডামুখর রাতে কে আর চায় ঘুমাতে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানবিষয়ক সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের নিয়মিত কার্যক্রম সূর্য উৎসব। বছরের প্রথম দিনটিতে দেশের অপরিচিত বা সাধারণত যাওয়া হয়ে ওঠে না—এমন জায়গায় অ্যাডভেঞ্চার ক্যাম্পের আয়োজন করে থাকে সংগঠনটি। কিন্তু কীভাবে উৎসবের শুরু? সেই গল্প শুনছিলাম সংগঠনটির চেয়ারম্যান মশহুরুল আমিনের কাছে।
২০০১ সালে নতুন সহস্রাব্দ শুরু হবে। বিজ্ঞান সংগঠন হিসেবে শুরুর ক্ষণটি তারা ভিন্নভাবে উদ্যাপনের পরিকল্পনা করলেন। সিদ্ধান্ত হলো, বছরের প্রথম সূর্য উদয় দেখতে তারা সেন্ট মার্টিন যাবেন। এখানকার ছেঁড়াদ্বীপই দেশের ভূখণ্ড হিসেবে প্রথম সূর্যের আলোর স্পর্শ পায়। সেই আয়োজনের নাম দেওয়া হলো ‘সূর্য উৎসব’। ৮০ জনের দলে বিজ্ঞানী, শিল্পী, শিক্ষক, সাংবাদিকসহ নানা পেশার মানুষ অংশ নিলেন প্রথম উৎসবে। প্রথম আলোসহ বিভিন্ন পত্রিকায় সেই গল্প ছাপা হলে দারুণ সাড়া পড়ে গেল।

মশহুরুল আমিন বলছিলেন, ২৫ বছর আগে দেশে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম এতা বিকশিত হয়নি। তখনো বেড়ানো বলতে ছুটিতে নানাবাড়ি-দাদাবাড়ি যাওয়া। পত্রিকায় প্রচার হওয়ার কারণে তাই খুব সাড়া পড়ে গেল। পরের বছর আয়োজনের কথাও কেউ কেউ বলতে থাকলেন।

সিদ্ধান্ত হলো, সূর্য উৎসব বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের নিয়মিত আয়োজন হবে। এর পর থেকে কেওক্রাডং, চরকুকরি-মুকরি, সুন্দরবন, চিলমারী, হালুয়াঘাটসহ দেশের নানা প্রান্তে হতে থাকল সূর্য উৎসব।
ভোরের আলো ফুটতেই অভিযাত্রী সবাই প্রস্তুত বছরের নতুন সূর্যকে বরণ করে নিতে। নাগরীর উৎসব প্রাঙ্গণ ছেড়ে একে একে সবাই গিয়ে হাজির হলেন লোকালয় ছেড়ে খোলা প্রান্তরে। শৈত্যপ্রবাহের দাপটে কুয়াশায় ঢাকা সূর্যকে বরণ করা হলো উল্লাসে। এরপরই শিক্ষার্থীদের নিয়ে দিনের বাকি পর্বগুলো চলতে থাকল—জাদু প্রদর্শনী, পাপেট শো, প্লানেটেরিয়ামে মহাকাশের সন্ধান, ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর ঘুরে দেখাসহ নানা কিছু। এ বছর থেকে অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন–পদক প্রবর্তন করা হয়েছে। প্রতিবছর সংগঠনটির সুহৃদদের এই পদক দেওয়া হবে। এ বছর পদকটি তুলে দেওয়া হয় অর্থনীতিবিদ ও গবেষক ড. সাজেদা আমিনকে। এরপর শেষ বেলায় বিভিন্ন পর্বে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় সনদ। বিদায়বেলায় শিক্ষার্থীদের হাসিমুখ বলে দিচ্ছিল সূর্য উৎসব যেন বিজ্ঞান, সংস্কৃতি আর অ্যাডভেঞ্চারের মেলবন্ধন।