ঢাকা ০৫:০২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫
কারিতাসের জরিপে উদ্বেগজনক চিত্র

৫৮% পথশিশুর জন্মসনদ নেই, সরকারি সহায়তা বঞ্চিত ৯৪ শতাংশ

  • আপডেট সময় : ০৬:৩৮:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
  • ১৬ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: পথশিশুদের ৯৪ শতাংশ এবং সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের প্রায় ১১ শতাংশ এখনো দেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতার বাইরে রয়েছে-এমন ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কারিতাস বাংলাদেশের সাম্প্রতিক এক গবেষণায়। এই শিশুদের অধিকাংশের জন্মসনদ নেই, যা তাদের শিক্ষাসহ রাষ্ট্রীয় সেবা পাওয়ার অধিকার থেকেও বঞ্চিত করছে। জরিপের আলোকে সংস্থাটি সরকারের প্রতি পথশিশুদের জন্য শর্তযুক্ত ভাতা চালু এবং হাসপাতাল থেকেই জন্মসনদ প্রদান ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করার আহ্বান জানিয়েছে।

মঙ্গলবার (১৭ জুন) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক মিডিয়া পরামর্শ সভায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। ‘শিশুদের সামাজিক নিরাপত্তা ও জন্মনিবন্ধন’ বিষয়ক এই সমীক্ষা পরিচালিত হয় ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ শহরের ৬৬৭ জন পথশিশু এবং বস্তি এলাকায় বসবাসরত ১ হাজার ২৪৬টি পরিবারকে ঘিরে।

অধিকাংশের জন্মসনদ নেই, শিক্ষার বাইরে প্রায় অর্ধেক: কারিতাসের গবেষণা অনুযায়ী, জরিপে অংশ নেওয়া ৬৬৭ জন পথশিশুর মধ্যে ৫৮.২ শতাংশের (৩৮৮ জন) কোনো জন্মসনদ নেই। তাদের মধ্যে আবার ৭১.৪ শতাংশ শিশু বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বরও জানে না-যা জন্মনিবন্ধন প্রক্রিয়ায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। শিক্ষার ক্ষেত্রে চিত্র আরো উদ্বেগজনক। জরিপের আওতায় আসা শিশুদের ৫১.৬ শতাংশ (৩৪৪ জন) বর্তমানে স্কুল বা মাদ্রাসায় পড়ে না। অর্থাৎ তারা পুরোপুরি শিক্ষা ব্যবস্থার বাইরেই রয়েছে। জন্মনিবন্ধন এবং শিক্ষার এই ঘাটতি শিশুদের ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে বলে সংস্থাটির পর্যবেক্ষণ।

প্রায় সব পথশিশুই সহায়তা কর্মসূচির বাইরে: সরকারি সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী পথশিশুর সংখ্যা মাত্র ৫.৭ শতাংশ (৩৮ জন)। অর্থাৎ, ৯৪.৩ শতাংশ শিশু কোনো ধরনের সরকারি সহায়তা পাচ্ছে না। অথচ, এসব শিশুর বেশিরভাগই রাস্তা, মার্কেট, বাসস্ট্যান্ড বা রেলস্টেশনে দিন কাটায়-নিরাপত্তাহীন পরিবেশে বেড়ে ওঠা এই শিশুরা জীবনের শুরুতেই নানারকম সহিংসতা, মাদকাসক্তি ও অপরাধে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

বস্তির পরিবারগুলোর ৯২ শতাংশই নিম্নআয়ের শ্রেণিতে: বস্তি এলাকায় জরিপে অংশ নেওয়া ১ হাজার ২৪৬টি পরিবারের মধ্যে ৯২.৭ শতাংশের মাসিক আয় ১২ হাজার ৫০০ টাকার নিচে। কিন্তু এর মধ্যেও ৯১.৭ শতাংশ পরিবার কোনো ধরনের সরকারি সুরক্ষা সুবিধা পায় না। জরিপ অনুযায়ী, ৩৮.১ শতাংশ পরিবারে পথশিশু রয়েছে এবং ৩২.৯ শতাংশ পরিবারের কোনো শিশুরই জন্মসনদ নেই।

শিক্ষার দিক থেকেও চিত্র উদ্বেগজনক। এসব পরিবারের ৫৭.৫ শতাংশের শিশু স্কুলে গেলেও ৪২.৫ শতাংশ পরিবারে শিশুদের শিক্ষা থেকে বাদ রাখা হয়েছে।

পথশিশুদের দাবিও তুলে ধরেছেন তারা নিজেরাই: সভায় উপস্থিত পথশিশু প্রতিনিধিরা নিজেদের জীবনের কঠিন বাস্তবতা এবং প্রতিদিনের সংগ্রামের কথা জানিয়ে এক হৃদয়বিদারক চিত্র তুলে ধরেন। তারা বলেন, রাষ্ট্রের নাগরিক হয়েও তারা নাগরিক সুবিধা থেকে দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত। মূল সমাজ কাঠামো থেকে ছিটকে পড়া এসব শিশু জানে না কখন খাবার জুটবে, কোথায় ঘুমাবে, কিংবা পরদিন হয়রানি ও সহিংসতার শিকার হবে কিনা।

১২ বছর বয়সী আফরিন, যিনি জন্ম থেকেই রাজধানীর শ্যামবাজার এলাকায় ফুটপাতে বড় হচ্ছেন, সভায় কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, ‘আমি কোনোদিন স্কুলে যাইনি। আমার বাবা নেই, মা ভিক্ষা করে। আমার কোনো কাগজপত্র নাই। পুলিশ আমাদের জায়গা থেকে তাড়ায়। খাই না খাই, মাথা গোঁজার জায়গা নেই। কেউ জিজ্ঞেসও করে না আমরা কেমন আছি। জন্মসনদ না থাকায় স্কুলেও নিতে চায় না। আমি শুধু চাই-আমারও যেন একটা নাম হয়, একটা পরিচয় হয়, যেন আমি স্কুলে যেতে পারি।’

একইভাবে, মোহাম্মদ রাশেদ নামে ১৪ বছর বয়সী আরেক পথশিশু জানায়, ‘আমি কখনো স্কুলে যাইনি। ছোটবেলা থেকেই বোতল কুড়াই, হোটেলে বাসন ধুই। কেউ বলে না, তুমি স্কুলে যাও। বরং সবাই খারাপ চোখে দেখে। অনেক সময় মারেও। আমাদের খাবার নাই, ওষুধ নাই, মাথার ওপর ছাদ নাই। সরকার যদি আমাদের দেখে, আমাদের জন্য বাসার ব্যবস্থা করে, পড়াশোনার সুযোগ দেয়, তাহলে আমরাও বড় হয়ে ভালো কিছু হতে পারি। আমি চাই-আমার জন্মসনদ হোক, আমি স্কুলে পড়তে চাই, ভাতা পাই যাতে খেয়ে বাঁচতে পারি।’

কারিতাস বাংলাদেশের সুপারিশসমূহ:
কারিতাস বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ তুলে ধরেছে। এর মধ্যে রয়েছে-
১। বাবা-মাহীন ও পরিচয়হীন শিশুদের জন্মনিবন্ধন সহজীকরণ এবং ওয়ার্ডভিত্তিক ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে জন্মনিবন্ধন নিশ্চিত করা।
২। শিশু জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই হাসপাতালে বা কমিউনিটি ক্লিনিকে জন্মসনদ প্রদানের বাধ্যবাধকতা চালু করা।
৩। পথশিশুদের জন্য শর্তযুক্ত ভাতা চালু করে তাদের পরিবারকে জীবনমান উন্নয়নে উৎসাহিত করা।
৪। শিশুশ্রম বন্ধ ও ঝরে পড়া শিশুদের পুনরায় স্কুলে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ।
৫। পথশিশুদের জন্য সহনশীল ও নিরাপদ শিক্ষা পরিবেশ গড়ে তোলা।
৬। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ভাতার পরিমাণ বাড়ানো এবং আবেদন প্রক্রিয়া সহজ করা।
বেসরকারি সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে কারিতাস বলেছে, জন্মনিবন্ধনের গুরুত্ব, শিশুশ্রমের ক্ষতি এবং শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি বিকল্প শিক্ষা কেন্দ্র চালু এবং গবেষণালব্ধ তথ্যের ভিত্তিতে সরকারকে নীতিনির্ধারণে প্রভাবিত করার জন্য অ্যাডভোকেসি চালাতে হবে।

কারিতাসের পরিচালক (কর্মসূচি) দাউদ জীবন দাশ বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা ভাতার পরিমাণ ও সুযোগ এতটাই কম যে বাস্তবে এর সুফল অতি নগণ্য। পথশিশুদের মতো অবহেলিত জনগোষ্ঠীর জন্য নির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা নেই। এদের বাদ দিয়ে আমরা টেকসই উন্নয়নের কথা ভাবতেই পারি না।

সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন কারিতাসের এসডব্লিউভিসি সেক্টরের ইনচার্জ চন্দ্রমনি চাকমা, প্রোগ্রাম অফিসার কুসুম গ্রেগরি, অসীম ক্রুজ, বারাকার প্রোগ্রাম অফিসার আশ্বিনী প্রিন্স গমেজ এবং পথশিশু ও অভিভাবক প্রতিনিধিরা।

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

কারিতাসের জরিপে উদ্বেগজনক চিত্র

৫৮% পথশিশুর জন্মসনদ নেই, সরকারি সহায়তা বঞ্চিত ৯৪ শতাংশ

আপডেট সময় : ০৬:৩৮:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: পথশিশুদের ৯৪ শতাংশ এবং সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের প্রায় ১১ শতাংশ এখনো দেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতার বাইরে রয়েছে-এমন ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কারিতাস বাংলাদেশের সাম্প্রতিক এক গবেষণায়। এই শিশুদের অধিকাংশের জন্মসনদ নেই, যা তাদের শিক্ষাসহ রাষ্ট্রীয় সেবা পাওয়ার অধিকার থেকেও বঞ্চিত করছে। জরিপের আলোকে সংস্থাটি সরকারের প্রতি পথশিশুদের জন্য শর্তযুক্ত ভাতা চালু এবং হাসপাতাল থেকেই জন্মসনদ প্রদান ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করার আহ্বান জানিয়েছে।

মঙ্গলবার (১৭ জুন) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক মিডিয়া পরামর্শ সভায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। ‘শিশুদের সামাজিক নিরাপত্তা ও জন্মনিবন্ধন’ বিষয়ক এই সমীক্ষা পরিচালিত হয় ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ শহরের ৬৬৭ জন পথশিশু এবং বস্তি এলাকায় বসবাসরত ১ হাজার ২৪৬টি পরিবারকে ঘিরে।

অধিকাংশের জন্মসনদ নেই, শিক্ষার বাইরে প্রায় অর্ধেক: কারিতাসের গবেষণা অনুযায়ী, জরিপে অংশ নেওয়া ৬৬৭ জন পথশিশুর মধ্যে ৫৮.২ শতাংশের (৩৮৮ জন) কোনো জন্মসনদ নেই। তাদের মধ্যে আবার ৭১.৪ শতাংশ শিশু বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বরও জানে না-যা জন্মনিবন্ধন প্রক্রিয়ায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। শিক্ষার ক্ষেত্রে চিত্র আরো উদ্বেগজনক। জরিপের আওতায় আসা শিশুদের ৫১.৬ শতাংশ (৩৪৪ জন) বর্তমানে স্কুল বা মাদ্রাসায় পড়ে না। অর্থাৎ তারা পুরোপুরি শিক্ষা ব্যবস্থার বাইরেই রয়েছে। জন্মনিবন্ধন এবং শিক্ষার এই ঘাটতি শিশুদের ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে বলে সংস্থাটির পর্যবেক্ষণ।

প্রায় সব পথশিশুই সহায়তা কর্মসূচির বাইরে: সরকারি সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী পথশিশুর সংখ্যা মাত্র ৫.৭ শতাংশ (৩৮ জন)। অর্থাৎ, ৯৪.৩ শতাংশ শিশু কোনো ধরনের সরকারি সহায়তা পাচ্ছে না। অথচ, এসব শিশুর বেশিরভাগই রাস্তা, মার্কেট, বাসস্ট্যান্ড বা রেলস্টেশনে দিন কাটায়-নিরাপত্তাহীন পরিবেশে বেড়ে ওঠা এই শিশুরা জীবনের শুরুতেই নানারকম সহিংসতা, মাদকাসক্তি ও অপরাধে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

বস্তির পরিবারগুলোর ৯২ শতাংশই নিম্নআয়ের শ্রেণিতে: বস্তি এলাকায় জরিপে অংশ নেওয়া ১ হাজার ২৪৬টি পরিবারের মধ্যে ৯২.৭ শতাংশের মাসিক আয় ১২ হাজার ৫০০ টাকার নিচে। কিন্তু এর মধ্যেও ৯১.৭ শতাংশ পরিবার কোনো ধরনের সরকারি সুরক্ষা সুবিধা পায় না। জরিপ অনুযায়ী, ৩৮.১ শতাংশ পরিবারে পথশিশু রয়েছে এবং ৩২.৯ শতাংশ পরিবারের কোনো শিশুরই জন্মসনদ নেই।

শিক্ষার দিক থেকেও চিত্র উদ্বেগজনক। এসব পরিবারের ৫৭.৫ শতাংশের শিশু স্কুলে গেলেও ৪২.৫ শতাংশ পরিবারে শিশুদের শিক্ষা থেকে বাদ রাখা হয়েছে।

পথশিশুদের দাবিও তুলে ধরেছেন তারা নিজেরাই: সভায় উপস্থিত পথশিশু প্রতিনিধিরা নিজেদের জীবনের কঠিন বাস্তবতা এবং প্রতিদিনের সংগ্রামের কথা জানিয়ে এক হৃদয়বিদারক চিত্র তুলে ধরেন। তারা বলেন, রাষ্ট্রের নাগরিক হয়েও তারা নাগরিক সুবিধা থেকে দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত। মূল সমাজ কাঠামো থেকে ছিটকে পড়া এসব শিশু জানে না কখন খাবার জুটবে, কোথায় ঘুমাবে, কিংবা পরদিন হয়রানি ও সহিংসতার শিকার হবে কিনা।

১২ বছর বয়সী আফরিন, যিনি জন্ম থেকেই রাজধানীর শ্যামবাজার এলাকায় ফুটপাতে বড় হচ্ছেন, সভায় কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, ‘আমি কোনোদিন স্কুলে যাইনি। আমার বাবা নেই, মা ভিক্ষা করে। আমার কোনো কাগজপত্র নাই। পুলিশ আমাদের জায়গা থেকে তাড়ায়। খাই না খাই, মাথা গোঁজার জায়গা নেই। কেউ জিজ্ঞেসও করে না আমরা কেমন আছি। জন্মসনদ না থাকায় স্কুলেও নিতে চায় না। আমি শুধু চাই-আমারও যেন একটা নাম হয়, একটা পরিচয় হয়, যেন আমি স্কুলে যেতে পারি।’

একইভাবে, মোহাম্মদ রাশেদ নামে ১৪ বছর বয়সী আরেক পথশিশু জানায়, ‘আমি কখনো স্কুলে যাইনি। ছোটবেলা থেকেই বোতল কুড়াই, হোটেলে বাসন ধুই। কেউ বলে না, তুমি স্কুলে যাও। বরং সবাই খারাপ চোখে দেখে। অনেক সময় মারেও। আমাদের খাবার নাই, ওষুধ নাই, মাথার ওপর ছাদ নাই। সরকার যদি আমাদের দেখে, আমাদের জন্য বাসার ব্যবস্থা করে, পড়াশোনার সুযোগ দেয়, তাহলে আমরাও বড় হয়ে ভালো কিছু হতে পারি। আমি চাই-আমার জন্মসনদ হোক, আমি স্কুলে পড়তে চাই, ভাতা পাই যাতে খেয়ে বাঁচতে পারি।’

কারিতাস বাংলাদেশের সুপারিশসমূহ:
কারিতাস বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ তুলে ধরেছে। এর মধ্যে রয়েছে-
১। বাবা-মাহীন ও পরিচয়হীন শিশুদের জন্মনিবন্ধন সহজীকরণ এবং ওয়ার্ডভিত্তিক ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে জন্মনিবন্ধন নিশ্চিত করা।
২। শিশু জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই হাসপাতালে বা কমিউনিটি ক্লিনিকে জন্মসনদ প্রদানের বাধ্যবাধকতা চালু করা।
৩। পথশিশুদের জন্য শর্তযুক্ত ভাতা চালু করে তাদের পরিবারকে জীবনমান উন্নয়নে উৎসাহিত করা।
৪। শিশুশ্রম বন্ধ ও ঝরে পড়া শিশুদের পুনরায় স্কুলে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ।
৫। পথশিশুদের জন্য সহনশীল ও নিরাপদ শিক্ষা পরিবেশ গড়ে তোলা।
৬। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ভাতার পরিমাণ বাড়ানো এবং আবেদন প্রক্রিয়া সহজ করা।
বেসরকারি সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে কারিতাস বলেছে, জন্মনিবন্ধনের গুরুত্ব, শিশুশ্রমের ক্ষতি এবং শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি বিকল্প শিক্ষা কেন্দ্র চালু এবং গবেষণালব্ধ তথ্যের ভিত্তিতে সরকারকে নীতিনির্ধারণে প্রভাবিত করার জন্য অ্যাডভোকেসি চালাতে হবে।

কারিতাসের পরিচালক (কর্মসূচি) দাউদ জীবন দাশ বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা ভাতার পরিমাণ ও সুযোগ এতটাই কম যে বাস্তবে এর সুফল অতি নগণ্য। পথশিশুদের মতো অবহেলিত জনগোষ্ঠীর জন্য নির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা নেই। এদের বাদ দিয়ে আমরা টেকসই উন্নয়নের কথা ভাবতেই পারি না।

সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন কারিতাসের এসডব্লিউভিসি সেক্টরের ইনচার্জ চন্দ্রমনি চাকমা, প্রোগ্রাম অফিসার কুসুম গ্রেগরি, অসীম ক্রুজ, বারাকার প্রোগ্রাম অফিসার আশ্বিনী প্রিন্স গমেজ এবং পথশিশু ও অভিভাবক প্রতিনিধিরা।