স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ডেস্ক: শিশুর জীবনে প্রথম এক হাজার দিন বা তিন বছর যদি চিনিমুক্ত রাখা যায়, তাহলে তা ভবিষ্যতে বেশকিছু রোগের ঝুঁকি কমায়। ফলে পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের সম্ভবনা বেড়ে যায় অনেকটাই। নতুন গবেষণায় এমনটাই পাওয়া গেছে। প্রথম জীবনে চিনি না খেলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে, উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমে ২০ শতাংশ। গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব সাদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার একদল গবেষক। সম্প্রতি এটি প্রকাশিত হয়েছে সায়েন্স জার্নালে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, একজনের স্বাস্থ্যের অবস্থা কেমন হবে, তা অনেকটাই নির্ধারিত হয় তার জীবনের প্রথম তিন বছরে। বিশেষ করে প্রথম দুই বছর চিনি বা চিনিজাতীয় খাবার না খাওয়ালে পরবর্তী সময়ে দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখা সহজ হয়ে যায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কয়েক বছর পর যুক্তরাজ্যে সরকারিভাবে রেশন দেওয়া বন্ধ করা হয়। ১৯৫৩ সালের সেপ্টেম্বরে চিনি ও মিষ্টান্ন রেশন হিসেবে দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এর পরের মাস থেকে যুক্তরাজ্যের নাগরিকেরা প্রতিদিন গড়ে ৪১ থেকে ৮০ গ্রাম পর্যন্ত চিনি খাওয়া কমিয়ে দেন।
১৯৫১ থেকে ১৯৫৬ সালের মধ্যে জন্মেছেন—এ রকম ৬০ হাজার মানুষের ওপর ৭০ বছর ধরে গবেষণাটি পরিচালিত হয়। তাদের মধ্যে একদল জন্মের প্রথম এক হাজার দিন চিনি খেয়েছিলেন। অন্য দলের সদস্যরা খাননি। এই দুই দলের সদস্যদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। ৭০ বছর ধরে তাদের স্বাস্থ্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। মূল পার্থক্য গড়ে দেয় জন্মের পর একেবারে প্রাথমিক অবস্থায় শিশুর চিনি খাওয়া না খাওয়ার বিষয়টি।
গবেষণায় দেখা গেছে, রেশন বন্ধ হওয়ার পর যেসব শিশু জন্মেছে, তারা পরবর্তী সময়ে ৩৫ শতাংশেরও কম টাইপ-২ ডায়াবেটিস ও ২০ শতাংশেরও কম উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়েছে। এই গবেষণা দলের সদস্য তাদেজা গ্রেসনার বলেন, ‘কেবল যে ডায়াবেটিস আর উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমেছে, তাই-ই নয়, চিনি না খাওয়া শিশুদের পরবর্তী সময়ে মুটিয়ে যাওয়ার প্রবণতাও কম ছিল। কেননা, তাদের মেটাবলিক রেট ভালো ছিল।’ তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই শিশুদের জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে মিষ্টিজাতীয় খাবারের প্রতি আগ্রহী করে তোলা হয়। অথচ মিষ্টি বাদ দেওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই ছোট পদক্ষেপই পববর্তী সময়ে স্বাস্থ্যকর জীবনের রূপরেখা গড়ে দেয়।’
যুক্তরাজ্যের লন্ডনের কিংস কলেজের পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ডা. কেটি ডালরিম্পল জানান, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক গবেষণা। নতুন বাবা–মায়েদের বিষয়টি জানা অত্যন্ত জরুরি। সেই সঙ্গে শিশুদের লক্ষ্য করে যেসব কোম্পানি চকলেট, কেক, মিষ্টি ও মিষ্টিজাতীয় লোভনীয় খাবার তৈরি করে, তাদেরও অবিলম্বে সচেতন করতে হবে। সূত্র: বিবিসি।