ঢাকা ০৫:৩৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্বচ্ছ দেয়ালে ঘেরা শব্দহীন পার্ক

  • আপডেট সময় : ০২:০৩:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ মার্চ ২০২৪
  • ৫১ বার পড়া হয়েছে

সবুজে ঘেরা পার্কটিতে রয়েছে হাঁটার পথ, ছাউনি, বসার বেঞ্চ, মাটির টিলা, গ্রিন ওয়াল, বাচ্চাদের খেলার ব্যবস্থা, ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজের ব্যবস্থা, পানি শোষণ চ্যানেল ও সুষ্ঠু ড্রেনেজ ব্যবস্থা। রেইন গার্ডেন, জলাধার ও ব্রিজওয়ে যুক্ত করেছে নতুন মাত্রা। তবে এই পার্কে স্থাপন করা ট্রান্সপারেন্ট নয়েজ ব্যারিয়ার বা স্বচ্ছ শব্দরোধক ব্যবস্থাকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন পার্কে ভ্রমণে আসা দর্শনার্থীরা। তারা বলছেন, সারাদিন রাজধানীর প্রধান সড়কের পাশাপাশি অলিগলিতে প্রচুর শব্দ থাকে। সাধারণ মানুষের বিরক্তির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এটি। যারা একটু নীরবতা পছন্দ করেন তাদের জন্য উপযুক্ত একটি স্থান হতে পারে এ পার্ক। কারণ ট্রান্সপারেন্ট নয়েজ ব্যারিয়ারের কারণে এখানে যানবাহনের হর্ন, কোলাহল কিংবা হৈচৈয়ের শব্দ প্রবেশ করতে পারে না।
ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটির তত্ত্বাবধানে পার্কটির আধুনিকীরণের কাজ করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগ। প্রকল্পের নেতৃত্বে ছিলেন বুয়েটের শিক্ষক অধ্যাপক ড. এস এম নাজমুল ইমাম।
তিনি বলেন, প্রজেক্ট ডিজাইনের আগে পার্ক ও তার আশপাশের এলাকার নয়েজ ম্যাপিং করা হয়। সাউন্ড লেভেল মিটারের সাহায্যে পার্কের শব্দ দূষণের মাত্রা নির্ণয় করা হয় এবং ব্যবহারকারীদের মতামত জরিপ করা হয়। একই সঙ্গে শব্দ দূষণের ফ্রিকোয়েন্সি স্পেকট্রাম ও অন্যান্য প্যারামিটার পর্যালোচনা করা হয়। দেখা যায়, এই পার্কে শব্দ দূষণের মাত্রা বিধিমালায় অনুমোদনযোগ্য মাত্রা (৫০ ও ৪০ ডেসিবেল) থেকে অনেক বেশি। পার্কের ভেতরে এভারেজ শব্দ দূষণের মাত্রা প্রায় ৭৫ ডেসিবেল। এমনকি, এই মাত্রা কখনো কখনো ৮৬ ডেসিবেল ছাড়িয়ে যায়।
তিনি বলেন, বিধিমালা অনুযায়ী, এই উঁচুমাত্রার শব্দ দূষণ ‘নীরব এলাকা’ হিসাবে গণ্য এই পার্ক ব্যবহারকারীদের জন্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এছাড়া, পার্কে থাকা পাখি, ছোট জীব-জন্তু ও পোকা-মাকড়ের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার জন্যও এই শব্দ দূষণ কমানো জরুরি। পরিশ্রান্ত ও নানাবিধ দূষণে জর্জরিত নগরবাসীর জন্য আরবান পার্ক এক প্রশান্তির জায়গা হওয়ার কথা। তাই জাতীয় বিধিমালা অনুযায়ী, শব্দ দূষণের মাত্রা কমানোর জন্য এবং প্রাকৃতিক দৃশ্য অবারিত রাখার জন্য ট্রান্সপারেন্ট নয়েজ ব্যারিয়ার বা স্বচ্ছ শব্দরোধক ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তিনি বলেন, পার্কে ব্যবহৃত নয়েজ ব্যারিয়ার সাধারণ জানালা দরজার কাঁচ নয়। অতি উচ্চ মানের স্বচ্ছ এক্সট্রুডেড এক্রেলিক জাতীয় পদার্থ। এটা সুনির্দিষ্টভাবে নয়েজ ব্যারিয়ার হিসেবে এবং পরিবেশ সংক্রান্ত যাবতীয় বিধিমালা অনুসরণ করে জার্মানিতে তৈরি। এমনকি, এতে পাখির নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোড মেনে নির্দিষ্ট দূরত্বে বৈজ্ঞানিকভাবে পরীক্ষিত কিছু সমান্তরাল রেখা দেওয়া রয়েছে, যা বার্ড সেফটি স্ট্রিপ নামেও পরিচিত।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ফজলে রাব্বি পার্কটি একটি আধুনিক ব্যতিক্রমধর্মী পার্ক। এই পার্কের চারদিকে শব্দ দূষণ রোধে জার্মানি থেকে আমদানি করা দৃষ্টিনন্দন ট্রান্সপারেন্ট নয়েজ ব্যারিয়ার দেওয়া হয়েছে। এর ফলে বাইরের তুলনায় পার্কের ভেতরে পঞ্চাশ শতাংশ কম নয়েজ থাকবে। সবাই বলে বিদেশে দেখা যায় সুন্দর সুন্দর পার্ক। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি ডা. ফজলে রাব্বি পার্ক, শাহাবুদ্দিন পার্ক, শহীদ তাজউদ্দীন পার্ক এবং শহরের সবগুলো পার্ক তেমনই সুন্দর করে গড়ে তোলা হচ্ছে। আমরা দেশের সেরা স্থপতি ও প্রকৌশলীদের দিয়ে ডিজাইন করিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, এই পার্কটির উন্নয়ন কাজ শেষ করতে করোনার কারণে বিলম্ব হয়েছে। এখন উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হওয়ার পরে সবাই বুঝতে পেরেছে কেন সময়টা লেগেছে। এখানে ন্যাচারবেজড সবকিছু করা হয়েছে। মানুষের সুবিধার বিষয় যেমন বিবেচনা করা হয়েছে তেমনি পাখিদের কথাও বিবেচনা করা হয়েছে। পার্কটিতে এক বিকেলে শিশু সন্তান ও স্ত্রীসহ ঘুরতে আসেন গুলশানের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগে আমরা এই পার্কটিতে নিয়মিত ঘুরতে আসতাম। কিন্তু উন্নয়নের কথা পার্কটি বলে কয়েক বছর বন্ধ ছিল। ফলে সন্তানদের নিয়ে বা এই এলাকার মানুষের এ পার্কটি ব্যবহার দীর্ঘ দিন বন্ধ ছিল। এখন এই পার্কটি খুলে দেওয়ার পর এমন পরিবেশ দেখে আমরা মুগ্ধ। এত ছোট ছোট বিষয়গুলোকে এখানে যুক্ত করা হয়েছে, যা ভাবতেও পারিনি। সবচেয়ে যে বিষয়টিতে ব্যবহারকারীরা মুগ্ধ তা হলো পার্কটির নীরবতা।
ফুটপাথ সংলগ্ন খোলা জায়গা ও বসার ব্যবস্থা: পার্কটির উত্তর দিকের রাস্তার পাশে সীমানা সংলগ্ন স্থানে খোলা জায়গা ও পথচারীদের বসার জন্য বেঞ্চের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেখানে বসে বিশ্রামের পাশাপাশি পার্কের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
গাড়ি ড্রপ-অফ ও সাইকেল পার্কিং ব্যবস্থা: উত্তর দিকের প্রধান প্রবেশপথের সাথে গাড়ি ড্রপ-অফ এবং বাই-সাইকেল পার্কিংয়ের জন্য বিশেষ ভাবে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যাতে গাড়ি চলাচলে কোনো ধরনের বাধা সৃষ্টি না হয়। একই সঙ্গে বাই-সাইকেলে নিয়ে আসা দর্শনার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট স্থানে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রবেশপথ: পার্কটি ঘুরে দেখা গেছে, পার্কের সংখ্যাগরিষ্ঠ ব্যবহারকারী উত্তর দিকের প্রবেশপথ ব্যবহার করেন। যদিও পার্কের প্রধান প্রবেশপথ ছিল পূর্ব দিকের বীর উত্তম মীর শওকত সড়কের সঙ্গে। পূর্বদিকে প্রবেশপথ হওয়ায় ড্রপ-অফ ও পার্কিংয়ের প্রয়োজনে বীর উত্তম মীর শওকত সড়কে যানজট সৃষ্টি হতো। এ পরিস্থিতি বিবেচনায় পার্কের প্রধান প্রবেশপথ হিসেবে উত্তর দিকের প্রবেশপথকে বিবেচনা করে এতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। একই সঙ্গে পশ্চিম দিকে আরেকটি প্রবেশপথ এবং পূর্বদিকের প্রবেশপথটিকে জরুরি প্রবেশপথ হিসেবে ডিজাইন করা হয়েছে।
উত্তর দিকের প্রধান প্রবেশপথ ও পশ্চিম দিকের প্রবেশপথটি বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে পার্কের সীমানা প্রাচীর হিসেবে যে স্বচ্ছ শব্দরোধক ব্যবহার করা হয়েছে, তার সঙ্গে সহায়ক হিসাবে কাজ করে। প্রবেশপথের ভেতরের দেয়ালগুলোতে এবং ছাদে বিশেষভাবে কিছু একুয়িস্টিকাল ট্রিটমেন্ট করা হয়েছে, যাতে পার্কের বাইরে তৈরি হওয়া শব্দ ভেতরে প্রবেশের আগেই অনেকাংশে শোষিত হয়ে শব্দ দূষণের মাত্রা কমিয়ে ফেলতে পারে।
গাছপালা ও সবুজায়ন: পার্কটির নকশা করার সময় ঘাস আচ্ছাদিত সবুজ বিস্তীর্ণ প্রান্তর রাখার প্রস্তাব করা হয়েছিল। এজন্য সংস্কারের আগে পার্কে যে ছোট ছোট ঝোপ জাতীয় গাছ ছিল, তার কিছু অংশ প্রতিস্থাপিত করা হয়। এ কাজ এখনও চলছে। এ পার্কের সবুজ বিস্তীর্ণ নান্দনিক পরিসর নগরবাসীর মনে প্রশান্তি দেবে।
নতুন ডিজাইনে, পার্কের বাইরে ফুটপাত থেকে বাউন্ডারি করা হয়েছে এবং সেখানে আগের গাছগুলো রাখা হয়েছে। পথচারীদের সুবিধার্থে, ল্যান্ডস্কেপিং করে নতুন গাছ ও পথচারীদের জন্য বেঞ্চের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া, উত্তর দিকের প্রধান গেটের সামনে গাড়ি ড্রপ-অফের জায়গাও তৈরি করা হয়েছে, যা আগে ছিল না। রোপণ করা হয়েছে ঔষধিসহ নানা প্রজাতির গাছ। পূর্বের তুলনায় বর্তমানে প্রস্তাবিত গাছের সংখ্যা এখন অনেক বেশি।
হাঁটাপথ, ছাউনি ও লাইটিং: পার্কের হাঁটাপথে অমসৃণ পেভমেন্ট টাইল ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে পা পিছলে কোনো দর্শনার্থী পড়ে না যান। এই ধরনের টাইল টেক্সচার ফুট-সোল ম্যাসাজের কাজও করে, যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। পার্কটিতে হাঁটাপথের একটি নির্দিষ্ট অংশে ছাউনি প্রস্তাব করা হয়েছে, যা পরবর্তী পর্যায়ে বাস্তবায়ন করবে ডিএনসিসি।
ছাউনিটি এমনভাবে নকশা করা হয়েছে, যাতে কোনো দুর্যোগে (যেমন, ভূমিকম্প, অগ্নিকা- ইত্যাদি) এটাকে জরুরি আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করা যায়। পাশাপাশি পার্কটিতে পরিকল্পিতভাবে চোখের জন্য সহনীয় আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাঁটাপথে বোলার্ড লাইট ও স্প্রিঙ্কলারের মাঝ-উচ্চতায় জরুরি লাইটের ব্যবস্থা রয়েছে। একই সঙ্গে আলোক-দূষণের কারণে পার্কের কীটপতঙ্গ, পাখি ও অন্যান্য প্রাণীদের রাত্রিকালীন জীবনযাত্রা যাতে ব্যাহত না হয় সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা হয়েছে।
বসার বেঞ্চ এবং সার্ভিস: পার্কের বসার বেঞ্চগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে করে ধুলাবালি, ময়লা ও পানি না জমে। এছাড়াও বেঞ্চে প্রাকৃতিক উপকরণ হিসাবে কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে, যা প্রায় সব ঋতু ও আবহাওয়ায় ব্যবহারের জন্য আরামদায়ক। পাশাপাশি পার্কটি নকশার প্রাথমিক পর্যায় থেকেই বসার বেঞ্চের সঙ্গে ব্যবহারকারীদের জন্য বেশ কিছু আনুষঙ্গিক সুবিধা সংযোজনের কথা বিবেচনায় রাখা হয়েছে, যা বাস্তবায়নাধীন। বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখে বেঞ্চের পাশেই একটি সার্ভিস ইউনিটে ময়লা ফেলার বিন, মোবাইল ফোন চার্জিংয়ের পোর্ট, এবং সুপেয় পানির ব্যবস্থা রাখার প্রস্তাবনা রয়েছে, যা পরবর্তী পর্যায়ে ডিএনসিসি বাস্তবায়ন করবে।
মাটির টিলা: দর্শনার্থীদের আকর্ষণ বাড়াতে পার্কের সার্ভিস ব্লকের উত্তর পাশে মাটির একটি কৃত্রিম টিলা তৈরি করা হয়েছে। টিলাটির একপাশে স্থাপিত সিঁড়ির মাধ্যমে সার্ভিস ব্লকের ছাদে চলে যাওয়া সম্ভব, যেখান থেকে হাতিরঝিল ও গুলশান লেকের চমৎকার দৃশ্য দেখা যায়। পার্কের সমতল ভূমির মতো, টিলাটির উপরেও বিস্তৃতভাবে ঘাস রোপণ করা হয়েছে। এতে সামগ্রিকভাবে পার্কের ল্যান্ডস্কেপে একটি সংগতিপূর্ণ নান্দনিক সবুজের সমারোহ সৃষ্টি হয়েছে।
বাচ্চাদের খেলা ও সবার ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ ব্যবস্থা: পার্কের পূর্ব দিকে সীমানা প্রাচীর ও ওয়াকওয়ের মধ্যবর্তী দীর্ঘ সবুজ এলাকায় শিশুদের খেলার জন্য কয়েক ধরনের সরঞ্জাম স্থাপন করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। শিশুদের খেলার জন্য আধুনিক ও নিরাপদ সরঞ্জাম এবং তাদের অভিভাবকদের বসার জায়গা বিবেচনা করে একটি নির্দিষ্ট জায়গা প্রস্তাব করা হয়েছে, যা পরবর্তী পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা হবে।
পাশাপাশি পার্কের উত্তর-পশ্চিম কোণে একটি খোলা জায়গা ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজের জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে, যাতে ঘাসের লনের পরিবর্তে নুড়িপাথর দেওয়া হয়েছে। নুড়িপাথরে দেওয়ার সঙ্গে পুরো জায়গাজুড়েই কয়েক স্তরের ফিল্ট্রেশনের মাধ্যমে ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে বর্ষাকালে বৃষ্টি হলেও জায়গাটি কর্দমাক্ত বা পিচ্ছিল না হয় ও ব্যবহারকারীরা বছরের যেকোনো সময়ই নির্বিঘেœ ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করতে পারেন। এখানেও ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজের সহায়ক বেশ কিছু সরঞ্জাম স্থাপন পরবর্তী পর্যায়ে করা হবে।
রেইন গার্ডেন-জলাধার ও ব্রিজওয়ে: শহীদ ডা. ফজলে রাব্বি পার্কের পশ্চিম পাশের সীমানা ও লেক সংলগ্ন এলাকায় একটি রেইন গার্ডেন সন্নিবেশ করা হয়েছে। এখানে একটি জলাধার দেওয়া হয়েছে, যার আকার বিভিন্ন ঋতুতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বড় বা ছোট হতে পারে। বর্ষাকালে পানিতে ভরে যাবে এবং শীতকালে অনেকটাই শুকিয়ে যাবে। এই প্রক্রিয়া জীববৈচিত্র্য সৃষ্টিতে সহায়ক।
এই জলাধার সংলগ্ন এলাকায় বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির গাছ রোপণ করা হয়েছে, যা জলাভূমিতে জন্মানোর জন্য উপযোগী। দর্শনার্থীরা বিভিন্ন ঋতুতে এই রেইন গার্ডেনের ভিন্ন ভিন্ন রূপ উপভোগ করতে পারবেন। মশার লার্ভা খেয়ে মশার বংশবৃদ্ধিতে বাধা দেয়, এমন বিশেষ প্রজাতির মাছ জলাধারটিতে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।
পাশাপাশি রেইন গার্ডেনের জলাধারটি ভিন্ন মাত্রায় উপভোগের জন্য, এর উপরে একটি ব্রিজওয়ে স্থাপন করা হয়েছে। পার্কে হাঁটার রাস্তার জন্য যে লুপ পরিকল্পনা করা হয়েছে, ব্রিজটি তার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ। পার্কটি পরিদর্শন বা ব্যবহারের অংশ হিসাবে যে কোনো দর্শনার্থী, তার ওয়াকিং ট্রেইলের মধ্যেই এই ব্রিজটি অতিক্রম করতে পারবে। ব্রিজের মাঝামাঝি স্থানে জলাধারটি উপভোগ করার জন্য একটি ডেক ডিজাইন করা হয়েছে।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার লার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

স্বচ্ছ দেয়ালে ঘেরা শব্দহীন পার্ক

আপডেট সময় : ০২:০৩:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ মার্চ ২০২৪

সবুজে ঘেরা পার্কটিতে রয়েছে হাঁটার পথ, ছাউনি, বসার বেঞ্চ, মাটির টিলা, গ্রিন ওয়াল, বাচ্চাদের খেলার ব্যবস্থা, ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজের ব্যবস্থা, পানি শোষণ চ্যানেল ও সুষ্ঠু ড্রেনেজ ব্যবস্থা। রেইন গার্ডেন, জলাধার ও ব্রিজওয়ে যুক্ত করেছে নতুন মাত্রা। তবে এই পার্কে স্থাপন করা ট্রান্সপারেন্ট নয়েজ ব্যারিয়ার বা স্বচ্ছ শব্দরোধক ব্যবস্থাকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন পার্কে ভ্রমণে আসা দর্শনার্থীরা। তারা বলছেন, সারাদিন রাজধানীর প্রধান সড়কের পাশাপাশি অলিগলিতে প্রচুর শব্দ থাকে। সাধারণ মানুষের বিরক্তির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এটি। যারা একটু নীরবতা পছন্দ করেন তাদের জন্য উপযুক্ত একটি স্থান হতে পারে এ পার্ক। কারণ ট্রান্সপারেন্ট নয়েজ ব্যারিয়ারের কারণে এখানে যানবাহনের হর্ন, কোলাহল কিংবা হৈচৈয়ের শব্দ প্রবেশ করতে পারে না।
ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটির তত্ত্বাবধানে পার্কটির আধুনিকীরণের কাজ করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগ। প্রকল্পের নেতৃত্বে ছিলেন বুয়েটের শিক্ষক অধ্যাপক ড. এস এম নাজমুল ইমাম।
তিনি বলেন, প্রজেক্ট ডিজাইনের আগে পার্ক ও তার আশপাশের এলাকার নয়েজ ম্যাপিং করা হয়। সাউন্ড লেভেল মিটারের সাহায্যে পার্কের শব্দ দূষণের মাত্রা নির্ণয় করা হয় এবং ব্যবহারকারীদের মতামত জরিপ করা হয়। একই সঙ্গে শব্দ দূষণের ফ্রিকোয়েন্সি স্পেকট্রাম ও অন্যান্য প্যারামিটার পর্যালোচনা করা হয়। দেখা যায়, এই পার্কে শব্দ দূষণের মাত্রা বিধিমালায় অনুমোদনযোগ্য মাত্রা (৫০ ও ৪০ ডেসিবেল) থেকে অনেক বেশি। পার্কের ভেতরে এভারেজ শব্দ দূষণের মাত্রা প্রায় ৭৫ ডেসিবেল। এমনকি, এই মাত্রা কখনো কখনো ৮৬ ডেসিবেল ছাড়িয়ে যায়।
তিনি বলেন, বিধিমালা অনুযায়ী, এই উঁচুমাত্রার শব্দ দূষণ ‘নীরব এলাকা’ হিসাবে গণ্য এই পার্ক ব্যবহারকারীদের জন্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এছাড়া, পার্কে থাকা পাখি, ছোট জীব-জন্তু ও পোকা-মাকড়ের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার জন্যও এই শব্দ দূষণ কমানো জরুরি। পরিশ্রান্ত ও নানাবিধ দূষণে জর্জরিত নগরবাসীর জন্য আরবান পার্ক এক প্রশান্তির জায়গা হওয়ার কথা। তাই জাতীয় বিধিমালা অনুযায়ী, শব্দ দূষণের মাত্রা কমানোর জন্য এবং প্রাকৃতিক দৃশ্য অবারিত রাখার জন্য ট্রান্সপারেন্ট নয়েজ ব্যারিয়ার বা স্বচ্ছ শব্দরোধক ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তিনি বলেন, পার্কে ব্যবহৃত নয়েজ ব্যারিয়ার সাধারণ জানালা দরজার কাঁচ নয়। অতি উচ্চ মানের স্বচ্ছ এক্সট্রুডেড এক্রেলিক জাতীয় পদার্থ। এটা সুনির্দিষ্টভাবে নয়েজ ব্যারিয়ার হিসেবে এবং পরিবেশ সংক্রান্ত যাবতীয় বিধিমালা অনুসরণ করে জার্মানিতে তৈরি। এমনকি, এতে পাখির নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোড মেনে নির্দিষ্ট দূরত্বে বৈজ্ঞানিকভাবে পরীক্ষিত কিছু সমান্তরাল রেখা দেওয়া রয়েছে, যা বার্ড সেফটি স্ট্রিপ নামেও পরিচিত।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ফজলে রাব্বি পার্কটি একটি আধুনিক ব্যতিক্রমধর্মী পার্ক। এই পার্কের চারদিকে শব্দ দূষণ রোধে জার্মানি থেকে আমদানি করা দৃষ্টিনন্দন ট্রান্সপারেন্ট নয়েজ ব্যারিয়ার দেওয়া হয়েছে। এর ফলে বাইরের তুলনায় পার্কের ভেতরে পঞ্চাশ শতাংশ কম নয়েজ থাকবে। সবাই বলে বিদেশে দেখা যায় সুন্দর সুন্দর পার্ক। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি ডা. ফজলে রাব্বি পার্ক, শাহাবুদ্দিন পার্ক, শহীদ তাজউদ্দীন পার্ক এবং শহরের সবগুলো পার্ক তেমনই সুন্দর করে গড়ে তোলা হচ্ছে। আমরা দেশের সেরা স্থপতি ও প্রকৌশলীদের দিয়ে ডিজাইন করিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, এই পার্কটির উন্নয়ন কাজ শেষ করতে করোনার কারণে বিলম্ব হয়েছে। এখন উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হওয়ার পরে সবাই বুঝতে পেরেছে কেন সময়টা লেগেছে। এখানে ন্যাচারবেজড সবকিছু করা হয়েছে। মানুষের সুবিধার বিষয় যেমন বিবেচনা করা হয়েছে তেমনি পাখিদের কথাও বিবেচনা করা হয়েছে। পার্কটিতে এক বিকেলে শিশু সন্তান ও স্ত্রীসহ ঘুরতে আসেন গুলশানের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগে আমরা এই পার্কটিতে নিয়মিত ঘুরতে আসতাম। কিন্তু উন্নয়নের কথা পার্কটি বলে কয়েক বছর বন্ধ ছিল। ফলে সন্তানদের নিয়ে বা এই এলাকার মানুষের এ পার্কটি ব্যবহার দীর্ঘ দিন বন্ধ ছিল। এখন এই পার্কটি খুলে দেওয়ার পর এমন পরিবেশ দেখে আমরা মুগ্ধ। এত ছোট ছোট বিষয়গুলোকে এখানে যুক্ত করা হয়েছে, যা ভাবতেও পারিনি। সবচেয়ে যে বিষয়টিতে ব্যবহারকারীরা মুগ্ধ তা হলো পার্কটির নীরবতা।
ফুটপাথ সংলগ্ন খোলা জায়গা ও বসার ব্যবস্থা: পার্কটির উত্তর দিকের রাস্তার পাশে সীমানা সংলগ্ন স্থানে খোলা জায়গা ও পথচারীদের বসার জন্য বেঞ্চের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেখানে বসে বিশ্রামের পাশাপাশি পার্কের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
গাড়ি ড্রপ-অফ ও সাইকেল পার্কিং ব্যবস্থা: উত্তর দিকের প্রধান প্রবেশপথের সাথে গাড়ি ড্রপ-অফ এবং বাই-সাইকেল পার্কিংয়ের জন্য বিশেষ ভাবে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যাতে গাড়ি চলাচলে কোনো ধরনের বাধা সৃষ্টি না হয়। একই সঙ্গে বাই-সাইকেলে নিয়ে আসা দর্শনার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট স্থানে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রবেশপথ: পার্কটি ঘুরে দেখা গেছে, পার্কের সংখ্যাগরিষ্ঠ ব্যবহারকারী উত্তর দিকের প্রবেশপথ ব্যবহার করেন। যদিও পার্কের প্রধান প্রবেশপথ ছিল পূর্ব দিকের বীর উত্তম মীর শওকত সড়কের সঙ্গে। পূর্বদিকে প্রবেশপথ হওয়ায় ড্রপ-অফ ও পার্কিংয়ের প্রয়োজনে বীর উত্তম মীর শওকত সড়কে যানজট সৃষ্টি হতো। এ পরিস্থিতি বিবেচনায় পার্কের প্রধান প্রবেশপথ হিসেবে উত্তর দিকের প্রবেশপথকে বিবেচনা করে এতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। একই সঙ্গে পশ্চিম দিকে আরেকটি প্রবেশপথ এবং পূর্বদিকের প্রবেশপথটিকে জরুরি প্রবেশপথ হিসেবে ডিজাইন করা হয়েছে।
উত্তর দিকের প্রধান প্রবেশপথ ও পশ্চিম দিকের প্রবেশপথটি বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে পার্কের সীমানা প্রাচীর হিসেবে যে স্বচ্ছ শব্দরোধক ব্যবহার করা হয়েছে, তার সঙ্গে সহায়ক হিসাবে কাজ করে। প্রবেশপথের ভেতরের দেয়ালগুলোতে এবং ছাদে বিশেষভাবে কিছু একুয়িস্টিকাল ট্রিটমেন্ট করা হয়েছে, যাতে পার্কের বাইরে তৈরি হওয়া শব্দ ভেতরে প্রবেশের আগেই অনেকাংশে শোষিত হয়ে শব্দ দূষণের মাত্রা কমিয়ে ফেলতে পারে।
গাছপালা ও সবুজায়ন: পার্কটির নকশা করার সময় ঘাস আচ্ছাদিত সবুজ বিস্তীর্ণ প্রান্তর রাখার প্রস্তাব করা হয়েছিল। এজন্য সংস্কারের আগে পার্কে যে ছোট ছোট ঝোপ জাতীয় গাছ ছিল, তার কিছু অংশ প্রতিস্থাপিত করা হয়। এ কাজ এখনও চলছে। এ পার্কের সবুজ বিস্তীর্ণ নান্দনিক পরিসর নগরবাসীর মনে প্রশান্তি দেবে।
নতুন ডিজাইনে, পার্কের বাইরে ফুটপাত থেকে বাউন্ডারি করা হয়েছে এবং সেখানে আগের গাছগুলো রাখা হয়েছে। পথচারীদের সুবিধার্থে, ল্যান্ডস্কেপিং করে নতুন গাছ ও পথচারীদের জন্য বেঞ্চের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া, উত্তর দিকের প্রধান গেটের সামনে গাড়ি ড্রপ-অফের জায়গাও তৈরি করা হয়েছে, যা আগে ছিল না। রোপণ করা হয়েছে ঔষধিসহ নানা প্রজাতির গাছ। পূর্বের তুলনায় বর্তমানে প্রস্তাবিত গাছের সংখ্যা এখন অনেক বেশি।
হাঁটাপথ, ছাউনি ও লাইটিং: পার্কের হাঁটাপথে অমসৃণ পেভমেন্ট টাইল ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে পা পিছলে কোনো দর্শনার্থী পড়ে না যান। এই ধরনের টাইল টেক্সচার ফুট-সোল ম্যাসাজের কাজও করে, যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। পার্কটিতে হাঁটাপথের একটি নির্দিষ্ট অংশে ছাউনি প্রস্তাব করা হয়েছে, যা পরবর্তী পর্যায়ে বাস্তবায়ন করবে ডিএনসিসি।
ছাউনিটি এমনভাবে নকশা করা হয়েছে, যাতে কোনো দুর্যোগে (যেমন, ভূমিকম্প, অগ্নিকা- ইত্যাদি) এটাকে জরুরি আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করা যায়। পাশাপাশি পার্কটিতে পরিকল্পিতভাবে চোখের জন্য সহনীয় আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাঁটাপথে বোলার্ড লাইট ও স্প্রিঙ্কলারের মাঝ-উচ্চতায় জরুরি লাইটের ব্যবস্থা রয়েছে। একই সঙ্গে আলোক-দূষণের কারণে পার্কের কীটপতঙ্গ, পাখি ও অন্যান্য প্রাণীদের রাত্রিকালীন জীবনযাত্রা যাতে ব্যাহত না হয় সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা হয়েছে।
বসার বেঞ্চ এবং সার্ভিস: পার্কের বসার বেঞ্চগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে করে ধুলাবালি, ময়লা ও পানি না জমে। এছাড়াও বেঞ্চে প্রাকৃতিক উপকরণ হিসাবে কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে, যা প্রায় সব ঋতু ও আবহাওয়ায় ব্যবহারের জন্য আরামদায়ক। পাশাপাশি পার্কটি নকশার প্রাথমিক পর্যায় থেকেই বসার বেঞ্চের সঙ্গে ব্যবহারকারীদের জন্য বেশ কিছু আনুষঙ্গিক সুবিধা সংযোজনের কথা বিবেচনায় রাখা হয়েছে, যা বাস্তবায়নাধীন। বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখে বেঞ্চের পাশেই একটি সার্ভিস ইউনিটে ময়লা ফেলার বিন, মোবাইল ফোন চার্জিংয়ের পোর্ট, এবং সুপেয় পানির ব্যবস্থা রাখার প্রস্তাবনা রয়েছে, যা পরবর্তী পর্যায়ে ডিএনসিসি বাস্তবায়ন করবে।
মাটির টিলা: দর্শনার্থীদের আকর্ষণ বাড়াতে পার্কের সার্ভিস ব্লকের উত্তর পাশে মাটির একটি কৃত্রিম টিলা তৈরি করা হয়েছে। টিলাটির একপাশে স্থাপিত সিঁড়ির মাধ্যমে সার্ভিস ব্লকের ছাদে চলে যাওয়া সম্ভব, যেখান থেকে হাতিরঝিল ও গুলশান লেকের চমৎকার দৃশ্য দেখা যায়। পার্কের সমতল ভূমির মতো, টিলাটির উপরেও বিস্তৃতভাবে ঘাস রোপণ করা হয়েছে। এতে সামগ্রিকভাবে পার্কের ল্যান্ডস্কেপে একটি সংগতিপূর্ণ নান্দনিক সবুজের সমারোহ সৃষ্টি হয়েছে।
বাচ্চাদের খেলা ও সবার ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ ব্যবস্থা: পার্কের পূর্ব দিকে সীমানা প্রাচীর ও ওয়াকওয়ের মধ্যবর্তী দীর্ঘ সবুজ এলাকায় শিশুদের খেলার জন্য কয়েক ধরনের সরঞ্জাম স্থাপন করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। শিশুদের খেলার জন্য আধুনিক ও নিরাপদ সরঞ্জাম এবং তাদের অভিভাবকদের বসার জায়গা বিবেচনা করে একটি নির্দিষ্ট জায়গা প্রস্তাব করা হয়েছে, যা পরবর্তী পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা হবে।
পাশাপাশি পার্কের উত্তর-পশ্চিম কোণে একটি খোলা জায়গা ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজের জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে, যাতে ঘাসের লনের পরিবর্তে নুড়িপাথর দেওয়া হয়েছে। নুড়িপাথরে দেওয়ার সঙ্গে পুরো জায়গাজুড়েই কয়েক স্তরের ফিল্ট্রেশনের মাধ্যমে ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে বর্ষাকালে বৃষ্টি হলেও জায়গাটি কর্দমাক্ত বা পিচ্ছিল না হয় ও ব্যবহারকারীরা বছরের যেকোনো সময়ই নির্বিঘেœ ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করতে পারেন। এখানেও ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজের সহায়ক বেশ কিছু সরঞ্জাম স্থাপন পরবর্তী পর্যায়ে করা হবে।
রেইন গার্ডেন-জলাধার ও ব্রিজওয়ে: শহীদ ডা. ফজলে রাব্বি পার্কের পশ্চিম পাশের সীমানা ও লেক সংলগ্ন এলাকায় একটি রেইন গার্ডেন সন্নিবেশ করা হয়েছে। এখানে একটি জলাধার দেওয়া হয়েছে, যার আকার বিভিন্ন ঋতুতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বড় বা ছোট হতে পারে। বর্ষাকালে পানিতে ভরে যাবে এবং শীতকালে অনেকটাই শুকিয়ে যাবে। এই প্রক্রিয়া জীববৈচিত্র্য সৃষ্টিতে সহায়ক।
এই জলাধার সংলগ্ন এলাকায় বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির গাছ রোপণ করা হয়েছে, যা জলাভূমিতে জন্মানোর জন্য উপযোগী। দর্শনার্থীরা বিভিন্ন ঋতুতে এই রেইন গার্ডেনের ভিন্ন ভিন্ন রূপ উপভোগ করতে পারবেন। মশার লার্ভা খেয়ে মশার বংশবৃদ্ধিতে বাধা দেয়, এমন বিশেষ প্রজাতির মাছ জলাধারটিতে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।
পাশাপাশি রেইন গার্ডেনের জলাধারটি ভিন্ন মাত্রায় উপভোগের জন্য, এর উপরে একটি ব্রিজওয়ে স্থাপন করা হয়েছে। পার্কে হাঁটার রাস্তার জন্য যে লুপ পরিকল্পনা করা হয়েছে, ব্রিজটি তার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ। পার্কটি পরিদর্শন বা ব্যবহারের অংশ হিসাবে যে কোনো দর্শনার্থী, তার ওয়াকিং ট্রেইলের মধ্যেই এই ব্রিজটি অতিক্রম করতে পারবে। ব্রিজের মাঝামাঝি স্থানে জলাধারটি উপভোগ করার জন্য একটি ডেক ডিজাইন করা হয়েছে।