ঢাকা ০৫:১৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের জীবনাবসান

  • আপডেট সময় : ০২:৪৯:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ মার্চ ২০২২
  • ৩০ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ আর নেই। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল শনিবার সকালে তিনি মারা যান। সাহাবুদ্দীন আহমদের বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।
নব্বইয়ের গণআন্দোলনের পর বাংলাদেশের গণতন্ত্রে ফেরার প্রক্রিয়ায় অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনকারী সাহাবুদ্দীন পরে ১৯৯৬ সালে পুনরায় রাষ্ট্রপ্রধানের পদে ফিরেছিলেন। ২০০১ সালে বঙ্গভবন থেকে বিদায় নেওয়ার পর ঢাকার গুলশানের বাড়িতে অনেকটা নিভৃত জীবন যাপন করছিলেন সাহাবুদ্দীন আহমদ। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি বার্ধ্যক্যজনিত বিভিন্ন অসুস্থতায় ভুগছিলেন। মাসখানেক আগে তাকে সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। সেখানেই শনিবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে সাহাবুদ্দীনের মৃত্যু হয় বলে তার জামাতা অধ্যাপক আহাদুজ্জামান মোহাম্মদ আলী জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “উনি (সাহাবুদ্দীন) আর বেঁচে নেই। সকাল ১০টা ২০ মিনিটের দিকে সিএমএইচে মারা গেছেন বলে উনার ছোট ছেলে আমাকে জানালেন।”
দাফনের বিষয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে সময় নির্ধারণ করা হবে বলে জানান তিনি। হাসপাতাল থেকে লাশ গুলশানে প্রেসিডেন্ট কনকর্ডে তার বাড়িতে নেওয়া হবে। সেখানে গোসল করানো হয়। বাড়ির ব্যবস্থাপক আবদুল মোতালিব জানান, সাহাবুদ্দীনের দুই ছেলে সিএমএইচেই ছিলেন। সাহাবুদ্দীনের এক মেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এবং এক মেয়ে যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। তার পাঁচ সন্তানের মধ্যে সবার বড় ড. সিতারা পারভীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। ২০০৫ সালের ২৩ জুন যুক্তরাষ্ট্রে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি।
জামাতা অধ্যাপক আহাদুজ্জামান বলেন, রোববার বনানী কবরস্থানে দাফন করা হতে পারে সাহাবুদ্দীন আহমদকে, সেখানে তার স্ত্রী শায়িত রয়েছেন।
দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগে ২০১৮ সালে ৮০ বছর বয়সে মারা যান সাহাবুদ্দীন আহমদের স্ত্রী আনোয়ারা আহমদ। সাবেক রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাবেক প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
আজ রোবববার সকাল ১০টায় জাতীয় ঈদগাঁ মঠে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে বলে সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এদিন সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। এদিকে শনিবার বিকালে নেত্রকোণার কেন্দুয়ায় গ্রামের বাড়িতে বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। হেলিকপ্টারে করে কফিন নিয়ে যাওয়ার পর জানাজা শেষে পুনরায় ঢাকায় ফেরানো হয় মরদেহ।
১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এইচ এম এরশাদ ক্ষমতা হস্তান্তর করেন সাহাবুদ্দীন আহমদকে।১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এইচ এম এরশাদ ক্ষমতা হস্তান্তর করেন সাহাবুদ্দীন আহমদকে। নব্বইয়ের আন্দোলনে স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদ সরকারের পতনের নাটকীয়তার মধ্যে আকস্মিকভাবে রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্বে আসেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ। এরশাদ পদত্যাগ করার পর রাষ্ট্রপতির পদে কে আসবে, নির্বাচন পর্যন্ত অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান কে থাকবেন- সেই প্রশ্নে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া দলগুলো (তিন জোট) একমত হতে পারছিল না। পরে প্রধান বিচারপতিকে সেই দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে সমঝোতা হয়। আবার সুপ্রিম কোর্টে ফেরার শর্ত দিয়ে সাহাবুদ্দীন আহমদ তাতে রাজি হন।
মওদুদ আহমেদ উপ-রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দিলে সেই দায়িত্বে আসেন সাহাবুদ্দীন। ৬ ডিসেম্বর এরশাদ ক্ষমতা ছাড়লে সাহাবুদ্দীন হন রাষ্ট্রপতি। পরে তার নেতৃত্বাধীন নির্দলীয় সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়।
নির্বাচনের পর আবার প্রধান বিচারপতির পদে ফেরেন তিনি। তার সেই ফেরার জন্য দেশের সংবিধানেও পরিবর্তন আনতে হয়েছিল। চাকরির মেয়াদ শেষে ওই পদ থেকেই অবসরে যান তিনি।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই দলের প্রার্থী হিসেবে সংসদীয় সরকার পদ্ধতিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সাহাবুদ্দীন আহমদ। ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি সেই দায়িত্বে ছিলেন। তবে ২০০১ সালে নির্বাচনে হারের পর আওয়ামী লীগের সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন সাহাবুদ্দীন আহমদ।
বাংলাদেশের ষষ্ঠ প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের জন্ম ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার পেমই গ্রামে। তার বাবার নাম তালুকদার রিসাত আহমেদ। সাহাবুদ্দীন ১৯৪৫ সালে নান্দাইলের চন্ডীপাশা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৪৮ সালে কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজ থেকে আইএ পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫১ সালে অর্থনীতিতে বিএ (অনার্স) এবং ১৯৫২ সালে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন তিনি। ১৯৫৪ সালে পাকিস্তানি সিভিল সার্ভিসের (সিএসপি) প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কর্মজীবন শুরু হয় সাহাবুদ্দীনের। ১৯৬০ সালে প্রশাসন থেকে বিচার বিভাগে বদলি হন তিনি। ১৯৬৭ সালে ঢাকা হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ পান সাহাবুদ্দীন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে হাই কোর্টের বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। ১৯৮০ সালে আপিল বিভাগে বিচারকের দায়িত্ব পান তিনি। তার এক দশক পরে ১৯৯০ সালের জানুয়ারিতে প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন তিনি।
গ্রামের বাড়িতে সাহাবুদ্দিনের জানাজা, চোখের জলে বিদায় : সাবেক রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন আহমদের প্রথম জানাজা নেত্রকোণায় কেন্দুয়া উপজেলার পাইকূড়া ইউনিয়নের পেমই গ্রামে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে সাহাবুদ্দিনের মরদেহবাহী হেলিকপ্টার হেলিপ্যাডে অবতরণ করে বলে কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মইন উদ্দিন খন্দকার জানান। তিনি বলেন, সেখান থেকে লাশবাহী গাড়িতে করে সড়কপথে নেওয়া হয় জন্মস্থান পেমই গ্রামের বাড়িতে। তখন স্বজনসহ এলাকাবাসীর মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। তাকে একনজর দেখতে সবাই ভিড় জমান।
সেখানে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জনপতিনিধি, বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে মরদেহে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
এ সময় জেলা স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক জিয়াউল হাসান সুমন নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি চৌকশ দল সাবেক রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। পরে বিকাল সোয়া ৪টায় বাড়ির প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম জানাজার নামাজ। জানাজায় ইমামতি করেন মাওলানা মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। জানাজায় সাবেক রাষ্ট্রপতির আত্মীয়-স্বজন, স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন। ইউএনও আরও বলেন, পরে বাড়ি থেকে আবার সড়কপথে গাড়িতে করে মরদেহ হেলিপ্যাডে নিয়ে আসা হয়। পরে হেলিকপ্টারটি মরদেহ নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
আজ অবকাশকালীন বেঞ্চের বিচারকাজ বন্ধ : সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজ রোববার সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের অবকাশকালীন বেঞ্চের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর আদেশক্রমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল শনিবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সাহাবুদ্দীন আহমদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। পৃথক শোকবার্তায় তাঁরা মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার লার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের জীবনাবসান

আপডেট সময় : ০২:৪৯:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ মার্চ ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ আর নেই। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল শনিবার সকালে তিনি মারা যান। সাহাবুদ্দীন আহমদের বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।
নব্বইয়ের গণআন্দোলনের পর বাংলাদেশের গণতন্ত্রে ফেরার প্রক্রিয়ায় অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনকারী সাহাবুদ্দীন পরে ১৯৯৬ সালে পুনরায় রাষ্ট্রপ্রধানের পদে ফিরেছিলেন। ২০০১ সালে বঙ্গভবন থেকে বিদায় নেওয়ার পর ঢাকার গুলশানের বাড়িতে অনেকটা নিভৃত জীবন যাপন করছিলেন সাহাবুদ্দীন আহমদ। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি বার্ধ্যক্যজনিত বিভিন্ন অসুস্থতায় ভুগছিলেন। মাসখানেক আগে তাকে সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। সেখানেই শনিবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে সাহাবুদ্দীনের মৃত্যু হয় বলে তার জামাতা অধ্যাপক আহাদুজ্জামান মোহাম্মদ আলী জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “উনি (সাহাবুদ্দীন) আর বেঁচে নেই। সকাল ১০টা ২০ মিনিটের দিকে সিএমএইচে মারা গেছেন বলে উনার ছোট ছেলে আমাকে জানালেন।”
দাফনের বিষয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে সময় নির্ধারণ করা হবে বলে জানান তিনি। হাসপাতাল থেকে লাশ গুলশানে প্রেসিডেন্ট কনকর্ডে তার বাড়িতে নেওয়া হবে। সেখানে গোসল করানো হয়। বাড়ির ব্যবস্থাপক আবদুল মোতালিব জানান, সাহাবুদ্দীনের দুই ছেলে সিএমএইচেই ছিলেন। সাহাবুদ্দীনের এক মেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এবং এক মেয়ে যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। তার পাঁচ সন্তানের মধ্যে সবার বড় ড. সিতারা পারভীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। ২০০৫ সালের ২৩ জুন যুক্তরাষ্ট্রে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি।
জামাতা অধ্যাপক আহাদুজ্জামান বলেন, রোববার বনানী কবরস্থানে দাফন করা হতে পারে সাহাবুদ্দীন আহমদকে, সেখানে তার স্ত্রী শায়িত রয়েছেন।
দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগে ২০১৮ সালে ৮০ বছর বয়সে মারা যান সাহাবুদ্দীন আহমদের স্ত্রী আনোয়ারা আহমদ। সাবেক রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাবেক প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
আজ রোবববার সকাল ১০টায় জাতীয় ঈদগাঁ মঠে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে বলে সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এদিন সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। এদিকে শনিবার বিকালে নেত্রকোণার কেন্দুয়ায় গ্রামের বাড়িতে বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। হেলিকপ্টারে করে কফিন নিয়ে যাওয়ার পর জানাজা শেষে পুনরায় ঢাকায় ফেরানো হয় মরদেহ।
১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এইচ এম এরশাদ ক্ষমতা হস্তান্তর করেন সাহাবুদ্দীন আহমদকে।১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এইচ এম এরশাদ ক্ষমতা হস্তান্তর করেন সাহাবুদ্দীন আহমদকে। নব্বইয়ের আন্দোলনে স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদ সরকারের পতনের নাটকীয়তার মধ্যে আকস্মিকভাবে রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্বে আসেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ। এরশাদ পদত্যাগ করার পর রাষ্ট্রপতির পদে কে আসবে, নির্বাচন পর্যন্ত অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান কে থাকবেন- সেই প্রশ্নে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া দলগুলো (তিন জোট) একমত হতে পারছিল না। পরে প্রধান বিচারপতিকে সেই দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে সমঝোতা হয়। আবার সুপ্রিম কোর্টে ফেরার শর্ত দিয়ে সাহাবুদ্দীন আহমদ তাতে রাজি হন।
মওদুদ আহমেদ উপ-রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দিলে সেই দায়িত্বে আসেন সাহাবুদ্দীন। ৬ ডিসেম্বর এরশাদ ক্ষমতা ছাড়লে সাহাবুদ্দীন হন রাষ্ট্রপতি। পরে তার নেতৃত্বাধীন নির্দলীয় সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়।
নির্বাচনের পর আবার প্রধান বিচারপতির পদে ফেরেন তিনি। তার সেই ফেরার জন্য দেশের সংবিধানেও পরিবর্তন আনতে হয়েছিল। চাকরির মেয়াদ শেষে ওই পদ থেকেই অবসরে যান তিনি।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই দলের প্রার্থী হিসেবে সংসদীয় সরকার পদ্ধতিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সাহাবুদ্দীন আহমদ। ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি সেই দায়িত্বে ছিলেন। তবে ২০০১ সালে নির্বাচনে হারের পর আওয়ামী লীগের সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন সাহাবুদ্দীন আহমদ।
বাংলাদেশের ষষ্ঠ প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের জন্ম ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার পেমই গ্রামে। তার বাবার নাম তালুকদার রিসাত আহমেদ। সাহাবুদ্দীন ১৯৪৫ সালে নান্দাইলের চন্ডীপাশা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৪৮ সালে কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজ থেকে আইএ পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫১ সালে অর্থনীতিতে বিএ (অনার্স) এবং ১৯৫২ সালে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন তিনি। ১৯৫৪ সালে পাকিস্তানি সিভিল সার্ভিসের (সিএসপি) প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কর্মজীবন শুরু হয় সাহাবুদ্দীনের। ১৯৬০ সালে প্রশাসন থেকে বিচার বিভাগে বদলি হন তিনি। ১৯৬৭ সালে ঢাকা হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ পান সাহাবুদ্দীন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে হাই কোর্টের বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। ১৯৮০ সালে আপিল বিভাগে বিচারকের দায়িত্ব পান তিনি। তার এক দশক পরে ১৯৯০ সালের জানুয়ারিতে প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন তিনি।
গ্রামের বাড়িতে সাহাবুদ্দিনের জানাজা, চোখের জলে বিদায় : সাবেক রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন আহমদের প্রথম জানাজা নেত্রকোণায় কেন্দুয়া উপজেলার পাইকূড়া ইউনিয়নের পেমই গ্রামে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে সাহাবুদ্দিনের মরদেহবাহী হেলিকপ্টার হেলিপ্যাডে অবতরণ করে বলে কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মইন উদ্দিন খন্দকার জানান। তিনি বলেন, সেখান থেকে লাশবাহী গাড়িতে করে সড়কপথে নেওয়া হয় জন্মস্থান পেমই গ্রামের বাড়িতে। তখন স্বজনসহ এলাকাবাসীর মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। তাকে একনজর দেখতে সবাই ভিড় জমান।
সেখানে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জনপতিনিধি, বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে মরদেহে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
এ সময় জেলা স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক জিয়াউল হাসান সুমন নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি চৌকশ দল সাবেক রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। পরে বিকাল সোয়া ৪টায় বাড়ির প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম জানাজার নামাজ। জানাজায় ইমামতি করেন মাওলানা মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। জানাজায় সাবেক রাষ্ট্রপতির আত্মীয়-স্বজন, স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন। ইউএনও আরও বলেন, পরে বাড়ি থেকে আবার সড়কপথে গাড়িতে করে মরদেহ হেলিপ্যাডে নিয়ে আসা হয়। পরে হেলিকপ্টারটি মরদেহ নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
আজ অবকাশকালীন বেঞ্চের বিচারকাজ বন্ধ : সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজ রোববার সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের অবকাশকালীন বেঞ্চের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর আদেশক্রমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল শনিবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সাহাবুদ্দীন আহমদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। পৃথক শোকবার্তায় তাঁরা মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।