ঢাকা ০৮:৪২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫

বোর্ড পরীক্ষায় এমন প্রশ্ন প্রমাণ করে শিক্ষায় উদাসীনতা

  • আপডেট সময় : ১০:০২:৫৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ নভেম্বর ২০২২
  • ৯৮ বার পড়া হয়েছে

মাছুম বিল্লাহ : ৬ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। ঢাকা বোর্ডের এইচএসসির বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে প্রণীত প্রশ্নপত্র ধর্মীয় সংবেদনশীলতা ক্ষুণ্ন করেছে। বিশিষ্টজনেরা বলছেন, এটি রীতিমতো ধর্মীয় উসকানির সামিল। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বলছে তারা এ ব্যাপারে দায়ীদের খুঁজে বের করে পদক্ষেপ নেবে।

বাংলা প্রথম পত্র সৃজনশীল ১১ নম্বর প্রশ্নে কয়েকটি বিষয় চলে এসেছে। এক, ধর্মীয় বা যে কোনো সংবেদনশীল বিষয় জাতীয় পরীক্ষায় শুধু নয়, কোনো ধরনের পরীক্ষায় দেওয়া যায় না। এই বিষয়টি এখানে চরমভাবে উপেক্ষিত হয়েছে। দুই, বোর্ডের প্রশ্ন যারা করেন তারা কোন মানের সেটিও সামনে চলে এসেছে এই ধরনের প্রশ্নপত্রের কারণে।

এখন কথা হলো সবাই কি বোর্ডের প্রশ্ন করতে পারেন? প্রশ্ন করার দায়িত্ব কারা পাচ্ছেন? তিন, দেশে সৃজনশীল প্রশ্নের এই দশা! অথচ সৃজনশীল প্রশ্ন শুরু হয়েছে এক যুগেরও বেশি সময় হয়েছে; তারপরও এই অবস্থা! চার, এটি কিন্তু প্রাথমিক কিংবা মাধ্যমিকের প্রশ্ন নয়, উচ্চ মাধ্যমিকের প্রশ্ন। নিশ্চয়ই কোনো কলেজের শিক্ষক এই প্রশ্ন করেছেন। যে শিক্ষকই করুন না কেন, প্রশ্ন করা সম্পর্কে যে তার কোনও ধারণা নেই সেটি প্রমাণিত হলো। এবং বোঝা গেল, বোর্ড এ ধরনের অনেকের দ্বারাই প্রশ্ন করিয়ে থাকেন যারা প্রশ্ন করার উপযুক্ত নয়। সবশেষ যেটি বলতে চাই সেটি হচ্ছে, বোর্ড কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন করা নিয়ে যে খুব একটা মাথা ঘামান না সেটিও শক্তভাবে প্রমাণিত হলো।

অনেকেই হয়তো জানেন, এই প্রশ্ন একাধিক প্রশ্নকর্তার মধ্যে থেকে বাছাই করা হয়। তারপর এটি মডারেট করতে হয়। কারুর চোখে ধরা পড়েনি এ ধরনের সংবেদনশীল বিষয়টি! শিক্ষার অনেক ক্ষেত্রেই যে উদাসীনতা চলছে সেটি এভাবে কাজে প্রমাণিত হচ্ছে বারবার। এ শিক্ষক কিন্তু উদ্দেশ্যমূলকভাবে কাজটি করেননি। কারণ এ ধরনের প্রশ্ন যে তার জন্য সর্বনাশ ডেকে আনবে সে সম্পর্কে তিনি অজ্ঞ। আসলে তিনি কখনোই বোর্ডের প্রশ্ন করেন নি। তাহলে তাকে কেন দেওয়া হলো এই দায়িত্ব?

বোর্ড কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন করা বা প্রশ্নের মান নিয়ে যে কতটা ভাবেন তার একটি উদাহরণ দিচ্ছি। কয়েক বছর আগে এনসিটিবিতে বিভিন্ন কারণে ডাক পেতাম । হয়তো ক্যাডেট কলেজের শিক্ষক ছিলাম ও শিক্ষা নিয়ে লেখালেখি করি সেই সুবাদে। সেখানে প্রশ্ন করা নিয়ে একটি সেমিনার ছিল। দেশের সব বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকগণ ছিলেন। আমি একটি উদাহরণ দিয়েছিলাম যে, আমি ক্যাডেট কলেজের পর রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে থাকাকালীন ইংরেজির প্রশ্নে একটি প্যাসেজ বানিয়ে দিয়েছিলাম। সেখানে প্রশ্ন ছাপতে গিয়ে একটি শব্দ ভুল ছাপা হয়েছিল যা আভ্যন্তরীণ পরীক্ষায় আমরা সঠিক করে দিয়েছি। কিন্তু রাজউক কলেজের প্রশ্ন বিধায় সঙ্গে সঙ্গে সেই প্রশ্ন ভুলসহ সব টেস্ট পেপারে ছাপা হয়েছে।

রাজউক কলেজের চাকরি ছেড়ে আমি তখন ব্র্যাক প্রধান কার্যালয়ে কাজ করি। ইতোমধ্যে আট বছর হয়ে গেছে। তখনও আমি অবাক হয়ে দেখতে পাচ্ছিলাম যে, দেশের বিভিন্ন কলেজ সেই প্রশ্নটি একটি শব্দ ভুলসহ আট বছর পর্যন্ত তাদের টেস্ট পরীক্ষাগুলোতে দিয়ে আসছে। তার অর্থ হচ্ছে শিক্ষকরা নিজেরা প্রশ্ন তৈরি করেন না ব্যতিক্রম ছাড়া। একটি ভুল যে আছে সেটিও আট বছরে কারো চোখে ধরা পড়েনি!

দ্বিতীয় পয়েন্ট ছিল ইংরেজি টেস্কট বইয়ে আশি থেকে একশ কিংবা তারও বেশি লেসন থাকে। সেখান থেকে মাত্র ৫ থেকে ৬টি লেসন শিক্ষার্থীরা পড়ে, শিক্ষকরাও পড়ান; এর বাইরে যান না। যারা আরও নামকরা শিক্ষক অর্থাৎ যাদের প্রাইভেটের খুব নামডাক তারা আরও কম লেসন পড়ান। কারণ দুই থেকে তিনটি প্যাসেজ পড়িয়ে পরীক্ষায় কমন ফেলতে পারলে তাদের শিক্ষার্থীর অভাব হয় না। একই প্রশ্ন সব বোর্ডে ঘুরে ঘুরে আসছে। ৫-৬টি লেসনের বাইরে আর কেউ যায় না। তাহলে শিক্ষার্থীরাই বা কি শিখবে আর শিক্ষকই বা কি পড়ান?

আমি প্রস্তাব করলাম যে, মাননীয় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকগণ বিষয়টি দেখলে ভালো হয় যাতে এ ধরনের ট্রাডিশন বন্ধ হয়। তা না হলে শিক্ষার্থীদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। উত্তরে কয়েকজন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সুন্দর করে বলেছিলেন ‘বোর্ডের প্রশ্ন করেন শিক্ষকরা, প্রশ্ন মডারেটও করেন তারা। সেখানে কি থাকে বা না থাকে তা দেখার বিষয় আমাদের নয়।’ আমি অবাক হয়ে বলেছিলাম, ‘একজন কন্ট্রোলার নিজেকে শিক্ষক পরিচয় দিতে হয়তো ইতস্তত করছেন। আর বোর্ডের প্রশ্নে কি করা হয় বা না হয় সেটি দেখার তাদের সময় নেই। আমি বলেছিলাম এটি বলে দায়িত্ব এড়ানো যাবে না। আপনারা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, পরীক্ষার যে কোনো বিষয় আপনাদের পুঙ্খানুপুঙখ রূপে দেখতে হবে, জানতে হবে।’ যাই হোক তারপর থেকে কোনোদিন আর এনসিটিবিতে দাওয়াত পাইনি।
ঢাকা বোর্ডের এই প্রশ্ন সম্পর্কে বিভিন্ন শিক্ষাবিদগণ মন্তব্য করেছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলছেন, দেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও অসাম্প্রদায়িকতা শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলেও প্রশ্নপত্রে ভিন্ন চিত্র ফুটে উঠেছে। দেশের বাস্তবিক চিত্রও এমন নয়। ধর্মীয় নানা উৎসবে দল-মত নির্বিশেষে এ দেশের মানুষ সবাই অংশগ্রহণ করে। পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন কাঠামো কেমন হবে- এ ধরনের লিখিত নির্দেশনা এবং প্রশ্নপ্রণেতা ও প্রশ্ন সেটারদের ওরিয়েন্টেশনও করানো হয়। এরপরেও অমূলক প্রসঙ্গ টেনে ধর্মীয় উসকানি দেওয়া হয়েছে। এতে করে সমাজে বিদ্বেষ ছড়াতে পারে।
শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য মানুষকে ভালবাসা, তার ধর্ম বর্ণ বা ভাষা দেখে বিভেদ সৃষ্টি করা নয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষকসহ সবাইকে প্রকৃত মানবতার চর্চায় এগিয়ে আসতে হবে।
লেখক: সাবেক ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, ক্যাডেট কলেজ ও রাজউক কলেজ শিক্ষক

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বোর্ড পরীক্ষায় এমন প্রশ্ন প্রমাণ করে শিক্ষায় উদাসীনতা

আপডেট সময় : ১০:০২:৫৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ নভেম্বর ২০২২

মাছুম বিল্লাহ : ৬ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। ঢাকা বোর্ডের এইচএসসির বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে প্রণীত প্রশ্নপত্র ধর্মীয় সংবেদনশীলতা ক্ষুণ্ন করেছে। বিশিষ্টজনেরা বলছেন, এটি রীতিমতো ধর্মীয় উসকানির সামিল। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বলছে তারা এ ব্যাপারে দায়ীদের খুঁজে বের করে পদক্ষেপ নেবে।

বাংলা প্রথম পত্র সৃজনশীল ১১ নম্বর প্রশ্নে কয়েকটি বিষয় চলে এসেছে। এক, ধর্মীয় বা যে কোনো সংবেদনশীল বিষয় জাতীয় পরীক্ষায় শুধু নয়, কোনো ধরনের পরীক্ষায় দেওয়া যায় না। এই বিষয়টি এখানে চরমভাবে উপেক্ষিত হয়েছে। দুই, বোর্ডের প্রশ্ন যারা করেন তারা কোন মানের সেটিও সামনে চলে এসেছে এই ধরনের প্রশ্নপত্রের কারণে।

এখন কথা হলো সবাই কি বোর্ডের প্রশ্ন করতে পারেন? প্রশ্ন করার দায়িত্ব কারা পাচ্ছেন? তিন, দেশে সৃজনশীল প্রশ্নের এই দশা! অথচ সৃজনশীল প্রশ্ন শুরু হয়েছে এক যুগেরও বেশি সময় হয়েছে; তারপরও এই অবস্থা! চার, এটি কিন্তু প্রাথমিক কিংবা মাধ্যমিকের প্রশ্ন নয়, উচ্চ মাধ্যমিকের প্রশ্ন। নিশ্চয়ই কোনো কলেজের শিক্ষক এই প্রশ্ন করেছেন। যে শিক্ষকই করুন না কেন, প্রশ্ন করা সম্পর্কে যে তার কোনও ধারণা নেই সেটি প্রমাণিত হলো। এবং বোঝা গেল, বোর্ড এ ধরনের অনেকের দ্বারাই প্রশ্ন করিয়ে থাকেন যারা প্রশ্ন করার উপযুক্ত নয়। সবশেষ যেটি বলতে চাই সেটি হচ্ছে, বোর্ড কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন করা নিয়ে যে খুব একটা মাথা ঘামান না সেটিও শক্তভাবে প্রমাণিত হলো।

অনেকেই হয়তো জানেন, এই প্রশ্ন একাধিক প্রশ্নকর্তার মধ্যে থেকে বাছাই করা হয়। তারপর এটি মডারেট করতে হয়। কারুর চোখে ধরা পড়েনি এ ধরনের সংবেদনশীল বিষয়টি! শিক্ষার অনেক ক্ষেত্রেই যে উদাসীনতা চলছে সেটি এভাবে কাজে প্রমাণিত হচ্ছে বারবার। এ শিক্ষক কিন্তু উদ্দেশ্যমূলকভাবে কাজটি করেননি। কারণ এ ধরনের প্রশ্ন যে তার জন্য সর্বনাশ ডেকে আনবে সে সম্পর্কে তিনি অজ্ঞ। আসলে তিনি কখনোই বোর্ডের প্রশ্ন করেন নি। তাহলে তাকে কেন দেওয়া হলো এই দায়িত্ব?

বোর্ড কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন করা বা প্রশ্নের মান নিয়ে যে কতটা ভাবেন তার একটি উদাহরণ দিচ্ছি। কয়েক বছর আগে এনসিটিবিতে বিভিন্ন কারণে ডাক পেতাম । হয়তো ক্যাডেট কলেজের শিক্ষক ছিলাম ও শিক্ষা নিয়ে লেখালেখি করি সেই সুবাদে। সেখানে প্রশ্ন করা নিয়ে একটি সেমিনার ছিল। দেশের সব বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকগণ ছিলেন। আমি একটি উদাহরণ দিয়েছিলাম যে, আমি ক্যাডেট কলেজের পর রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে থাকাকালীন ইংরেজির প্রশ্নে একটি প্যাসেজ বানিয়ে দিয়েছিলাম। সেখানে প্রশ্ন ছাপতে গিয়ে একটি শব্দ ভুল ছাপা হয়েছিল যা আভ্যন্তরীণ পরীক্ষায় আমরা সঠিক করে দিয়েছি। কিন্তু রাজউক কলেজের প্রশ্ন বিধায় সঙ্গে সঙ্গে সেই প্রশ্ন ভুলসহ সব টেস্ট পেপারে ছাপা হয়েছে।

রাজউক কলেজের চাকরি ছেড়ে আমি তখন ব্র্যাক প্রধান কার্যালয়ে কাজ করি। ইতোমধ্যে আট বছর হয়ে গেছে। তখনও আমি অবাক হয়ে দেখতে পাচ্ছিলাম যে, দেশের বিভিন্ন কলেজ সেই প্রশ্নটি একটি শব্দ ভুলসহ আট বছর পর্যন্ত তাদের টেস্ট পরীক্ষাগুলোতে দিয়ে আসছে। তার অর্থ হচ্ছে শিক্ষকরা নিজেরা প্রশ্ন তৈরি করেন না ব্যতিক্রম ছাড়া। একটি ভুল যে আছে সেটিও আট বছরে কারো চোখে ধরা পড়েনি!

দ্বিতীয় পয়েন্ট ছিল ইংরেজি টেস্কট বইয়ে আশি থেকে একশ কিংবা তারও বেশি লেসন থাকে। সেখান থেকে মাত্র ৫ থেকে ৬টি লেসন শিক্ষার্থীরা পড়ে, শিক্ষকরাও পড়ান; এর বাইরে যান না। যারা আরও নামকরা শিক্ষক অর্থাৎ যাদের প্রাইভেটের খুব নামডাক তারা আরও কম লেসন পড়ান। কারণ দুই থেকে তিনটি প্যাসেজ পড়িয়ে পরীক্ষায় কমন ফেলতে পারলে তাদের শিক্ষার্থীর অভাব হয় না। একই প্রশ্ন সব বোর্ডে ঘুরে ঘুরে আসছে। ৫-৬টি লেসনের বাইরে আর কেউ যায় না। তাহলে শিক্ষার্থীরাই বা কি শিখবে আর শিক্ষকই বা কি পড়ান?

আমি প্রস্তাব করলাম যে, মাননীয় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকগণ বিষয়টি দেখলে ভালো হয় যাতে এ ধরনের ট্রাডিশন বন্ধ হয়। তা না হলে শিক্ষার্থীদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। উত্তরে কয়েকজন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সুন্দর করে বলেছিলেন ‘বোর্ডের প্রশ্ন করেন শিক্ষকরা, প্রশ্ন মডারেটও করেন তারা। সেখানে কি থাকে বা না থাকে তা দেখার বিষয় আমাদের নয়।’ আমি অবাক হয়ে বলেছিলাম, ‘একজন কন্ট্রোলার নিজেকে শিক্ষক পরিচয় দিতে হয়তো ইতস্তত করছেন। আর বোর্ডের প্রশ্নে কি করা হয় বা না হয় সেটি দেখার তাদের সময় নেই। আমি বলেছিলাম এটি বলে দায়িত্ব এড়ানো যাবে না। আপনারা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, পরীক্ষার যে কোনো বিষয় আপনাদের পুঙ্খানুপুঙখ রূপে দেখতে হবে, জানতে হবে।’ যাই হোক তারপর থেকে কোনোদিন আর এনসিটিবিতে দাওয়াত পাইনি।
ঢাকা বোর্ডের এই প্রশ্ন সম্পর্কে বিভিন্ন শিক্ষাবিদগণ মন্তব্য করেছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলছেন, দেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও অসাম্প্রদায়িকতা শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলেও প্রশ্নপত্রে ভিন্ন চিত্র ফুটে উঠেছে। দেশের বাস্তবিক চিত্রও এমন নয়। ধর্মীয় নানা উৎসবে দল-মত নির্বিশেষে এ দেশের মানুষ সবাই অংশগ্রহণ করে। পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন কাঠামো কেমন হবে- এ ধরনের লিখিত নির্দেশনা এবং প্রশ্নপ্রণেতা ও প্রশ্ন সেটারদের ওরিয়েন্টেশনও করানো হয়। এরপরেও অমূলক প্রসঙ্গ টেনে ধর্মীয় উসকানি দেওয়া হয়েছে। এতে করে সমাজে বিদ্বেষ ছড়াতে পারে।
শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য মানুষকে ভালবাসা, তার ধর্ম বর্ণ বা ভাষা দেখে বিভেদ সৃষ্টি করা নয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষকসহ সবাইকে প্রকৃত মানবতার চর্চায় এগিয়ে আসতে হবে।
লেখক: সাবেক ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, ক্যাডেট কলেজ ও রাজউক কলেজ শিক্ষক