রাজশাহী প্রতিনিধি : প্রকৃতিতে বইতে শুরু করেছে শীতের হাওয়া। আর এ শীতের শুরুটা যেন অন্য রকম এক ভালো লাগার মুহূর্ত। এতে নতুন মাত্রা যোগ করে পিঠা। পিঠা ছাড়া বাংলার শীত যেন অপূর্ণ। শীতের আমেজকে পূর্ণ করতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো সময়টাই সারাদেশের মতো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) চলে পিঠা খাওয়ার ধুম। শীত আসতে না আসতেই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় বসেছে পিঠার দোকান। আর এসব দোকানের গরম পিঠায় জমে উঠেছে পিঠা প্রেমী শিক্ষার্থীদের আড্ডা। পিঠা খাওয়ার রীতি বাংলার চিরায়ত সংস্কৃতির অংশ। কথায় আছে ‘শীতের পিঠা, খেতে ভারি মিঠা’। তাই শীত এলেই এক শ্রেণীর মানুষ ভিড় জমায় পিঠার দোকানগুলোতে। খাওয়ার পাশাপাশি আড্ডাও জমে ওঠে এসব পিঠার দোকানে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল স্কুল মাঠ, খালেদা জিয়া হলের সামনে এবং রোকেয়া হলের সামনে পিঠার দোকান বসলেও সবচেয়ে বেশি জমে উঠেছে রোকেয়া হলের সামনের দোকানগুলো। বিকাল হলেই পিঠার দোকানের আশপাশে বসে ছোট ছোট আড্ডার আসর।
পিঠা আড্ডায় গিয়ে দেখা যায়, অনেকগুলো চুলায় একসঙ্গে পিঠা তৈরি হচ্ছে। আতপ চালের আটা দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে চিতই পিঠা আর সেদ্ধ চাল দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ভাপা পিঠা। গরম গরম পিঠা শিক্ষার্থীদের আড্ডার আসরে পৌঁছে দিচ্ছেন দোকানের কর্মচারীরা। সাত রকমের ভর্তা তৈরি করে প্লেট সাজিয়ে দিচ্ছেন তারা। ভর্তাগুলো হচ্ছে শুঁটকি, বেগুন, কাঁচামরিচ, ধনিয়া পাতা, কালিজিরা ভর্তা। পিঠার সঙ্গে সঙ্গে ভর্তার প্লেটও চলে যাচ্ছে আড্ডায়। গরম পিঠা আর তার সঙ্গে নানা রকম ভর্তায় আড্ডা যেন আরও জমে ওঠে।
পিঠা খেতে আসা ইসলামি স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মায়মুনা আক্তার বলেন, এখানকার পিঠা খেতে অসাধারণ। তাই তো বন্ধুদের সঙ্গে পিঠা খেতে এসেছি। আর সঙ্গে চলছে আড্ডা। আমরা আমাদের পরিবারের সঙ্গেও পিঠা খেয়ে থাকি। কিন্তু সেখানকার মজা আর এখানকার পিঠা খাওয়ার মজা আলাদা। বন্ধুদের সঙ্গে বসে পিঠা খাওয়া আর আড্ডা দেওয়ার যে অনুভূতি থাকে, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তা হয়তো হয়ে ওঠে না।
ক্যাম্পাসে শীতকালীন এই পিঠা উৎসবকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে উল্লেখ করে প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সুফিয়ান বলেন, শীত মানেই পিঠা খাওয়ার মৌসুম। তেমনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শীতের সন্ধ্যা মানেই পশ্চিম পাড়ার পিঠা উৎসব। যেখানে পিঠা খেতে হলে রীতিমত যুদ্ধ করতে হয়। একটু পরে গেলেই যেন সিরিয়াল মেলা ভাড়। পশ্চিম পাড়াতে চিতই এবং ভাপা পিঠা খুবই জনপ্রিয়। সঙ্গে বেশ কয়েক প্রকারের ভর্তা। বন্ধু-বান্ধবী, বড়-ছোট ভাইদের সঙ্গে মিলে পশ্চিম পাড়ায় রোকেয়া হলের সামনে পিঠা খাওয়াটা যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যের সঙ্গে জুড়ে গেছে। পিঠা বিক্রেতা শুকুর আলী জানান, আমি একজন প্রতিবন্ধী মানুষ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের সামনে চার বছর ধরে পিঠা বিক্রি করছি। এখানে ভাপা ও চিতই পিঠা বিক্রি করি। শুধু শিক্ষার্থীরাই নয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও পিঠা খেতে আসেন। ক্যাম্পাসের বাইরে থেকেও অনেকে আসেন পিঠা খেতে।
বেগম রোকেয়া হলের সামনে পাঁচ বছর ধরে পিঠা বিক্রি করেন মাসুম আলী। তিনি বলেন, প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকেই আমাদের পিঠা বানানোর কাজ শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিয়ম অনুযায়ী রাত সাড়ে ৮টার মধ্যে দোকান তুলে ফেলতে হয়। এই সময়ের মধ্যে প্রতিদিন ভাপা পিঠার জন্য ২০ কেজি এবং চিতই পিঠার জন্য ৩০-৩৫ কেজি চাল লাগে। প্রতিদিন প্রায় চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা বিক্রি হয়। শীত বাড়লে বিক্রি আরও বাড়বে। তিনি আরও বলেন, এখানে তিন রকমের পিঠা পাওয়া যায়। চিতই পিঠা ১০ টাকা, ভাপা পিঠা ১০ টাকা এবং তেলের পিঠা ১৫ টাকা। এছাড়াও ভর্তার জন্য আলাদা দাম দিতে হয়।
রাবিতে জমে উঠছে পিঠার আড্ডা
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ