নিজস্ব প্রতিবেদক : লকডাউন আতঙ্কে গত রোববার (২৭ জুন) বড় দরপতন হলেও গতকাল সোমবার (২৮ জুন) ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। পতনের পরের দিনই দেশের শেয়ারবাজারে বড় উত্থান হয়েছে। এই উত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, প্রকৌশল এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালালি খাতের কোম্পানিগুলো। এর আগে সরকারের পক্ষ থেকে আজ থেকে পরবর্তীতে সাত দিন কঠোর লকডাউন এবং ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক লকডাউনের ঘোষণা আসলে গতকাল শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১০০ পয়েন্ট কমে যায়। তবে রোববার সন্ধ্যার দিকে লকডাউন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। এই প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বুধবার পর্যন্ত সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। তবে রিকশা ও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করবে। খোলা থাকবে ব্যাংকসহ সব ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এদিকে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে জানানো হয়েছে, ব্যাংক খোলা থাকলে যেকোনো পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারের লেনদেন চলমান থাকবে। সেইসঙ্গে বিনিয়োগকারীদের গুজবে কান না দেয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এ পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে প্রথম মিনিটের লেনদেনেই প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক প্রায় ২০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। লেনদেনের শেষ পর্যন্ত সূচকের এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকে। ফলে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৩৩ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ২৬ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ৮ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৭৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসইর শরিয়াহ্ সূচক ৭ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২৯৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। সূচকের এই উত্থানের দিনে তালিকাভুক্ত ৩১টি ব্যাংকের মধ্যে দাম বেড়েছে ২২টির। বিপরীতে দাম কমেছে চারটির। আর পাঁচটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আর তালিকাভুক্ত ২৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৮টির দাম বেড়েছে এবং তিনটির দাম কমেছে। অপরিবর্তিত রয়েছে দুইটির দাম। প্রকৌশল খাতের ৪২টির মধ্যে ৩০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৯টির এবং তিনটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আর বিদ্যুৎ ও জ্বালালি খাতের ২২টির মধ্যে ১৮টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে তিনটির ও দুইটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এদিকে সব খাত মিলে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ২৩১টি প্রতিষ্ঠান। বিপরীতে দাম কমেছে ১০৮টির। আর ৩৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়লেও ডিএসইতে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৩২৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১ হাজার ৭৪০ কোটি ১৮ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন কমেছে ৪১১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ডেল্টা লাইফের শেয়ার। কোম্পানিটির ১৩৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বেক্সিমকোর ৪৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৪১ কোটি ৮২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে কুইন সাউথ টেক্সটাইল। এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- মালিক স্পিনিং, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, রিং সাইন টেক্সটাইল, জিবিবি পাওয়ার, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ এবং ড্রাগন সোয়েটার। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্য সূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৭৯ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ৩১১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৬৯টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১০৮টির এবং ৩৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।