ক্রীড়া ডেস্ক : দেশের ক্রিকেটে এক ধাঁধার নাম নাজমুল হোসেন শান্ত। আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভালো করার সব উপকরণ তার মধ্যে থাকলেও, এখন পর্যন্ত নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি বাঁহাতি এই টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান। অনুশীলনে নেট সেশনে বরাবরই মুগ্ধতা ছড়ান তিনি। তাই তাকে নিয়ে আশায় বুক বাঁধেন জাতীয় দলের যেকোনো নতুন কোচ। ব্যতিক্রম নন টি-টোয়েন্টি দলের টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট শ্রীধরন শ্রীরামও। শান্তকে অনুশীলনে দেখেই বড় স্বীকৃতি দিয়েছিলেন এ ভারতীয়। তিনি বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার সবধরনের টেম্পারমেন্ট ও ইমপ্যাক্ট রয়েছে শান্তর মধ্যে। কিন্তু মূল ম্যাচে তাকে ঠিক সন্তুষ্ট করতে পারেননি শান্ত। তাই ভাবনায় বদল এসেছে শ্রীরামের। গত অগাস্টে এশিয়া কাপের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যাত্রা শুরু হয়েছে শ্রীরামের। সেই আসরের দলে ছিলেন না শান্ত। তাই তখন তাকে দেখার সুযোগ পাননি শ্রীরাম। পরে অনেকটা চমক হিসেবেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে জায়গা পেয়ে যান ২৪ বছর বয়সী এ টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। দল ঘোষণার পর স্রেফ দুইটি অনুশীলন সেশন দেখেই শান্তকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য প্রস্তুত ঘোষণা করেছিলেন শ্রীরাম। অবশ্য শুধু শ্রীরাম একা নন, অনুশীলনে শান্তকে দেখে মুগ্ধ হওয়া কোচদের তালিকা বেশ লম্বা। বর্তমান ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্সও শান্তকে প্রথমবার দেখে ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। তবে এখন পরিস্থিতি বদলেছে। বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়ার পর সংযুক্ত আরব আমিরাতে দুই ম্যাচ ও নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজেও স্কোয়াডে ছিলেন শান্ত। আরব আমিরাতে ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি তার। ত্রিদেশীয় সিরিজে খেলেছেন তিনটি ম্যাচ। এরপর আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচেও ইনিংস সূচনা করেন তিনি। এই চার ম্যাচে তেমন কিছুই করতে পারেননি শান্ত। ত্রিদেশীয় সিরিজে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৩ রানের একটি ইনিংস রয়েছে তার। তবে সেই ইনিংসে পুরোপুরি আড়ষ্ট ছিলেন তিনি। হাত খুলে ব্যাট চালানোয় বড্ড অনীহা দেখা গেছে তার মাঝে। বেশ কয়েকবার হাফ-চান্স দিয়ে বেঁচে যাওয়ার পরেও ৩৩ রান করতে খেলেন ২৯টি বল।
বাকি তিন ইনিংসে নড়বড়ে ব্যাটিংয়ে দশ পেরোলেও সাজঘরে ফিরে গেছেন ১১, ১২ ও ১২ রানে। শুধু এই চার ম্যাচ নয়, শান্তর পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই এমন অধারাবাহিকতার ছাপ। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১২ ম্যাচ খেলে মাত্র ১০৩.০৩ স্ট্রাইক রেট ও ১৮.৫৪ গড়ে করেছেন ২০৪ রান। সর্বোচ্চ ইনিংস ৪০ রানের। তবু এবারের বিশ্বকাপে উদ্বোধনী জুটিতে প্রথম পছন্দ হিসেবে শান্তর কথাই মনে হচ্ছে। যার ইঙ্গিত মিলেছে ত্রিদেশীয় সিরিজের তিন ও বিশ্বকাপের একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে। অন্যপ্রান্তে সঙ্গী বদলালেও শান্ত খেলেছেন সবকয়টি ম্যাচ। অবশ্য এতে যে শ্রীরামকে খুশি করতে পেরেছেন তিনি- তা কিন্তু নয়। বারবার সুযোগ পেয়েও শান্তসহ অন্যান্যদের ব্যর্থতার বিষয়টি মেনে নিয়েছেন শ্রীরাম। এটি মেনে নিয়েই শান্তকে শেখার প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকতে বলেছেন বাংলাদেশের টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট। তবে শান্তর মধ্যে যে সামর্থ্য রয়েছে সেটি মনে করিয়ে দিতেও ভোলেননি শ্রীরাম। ব্রিজবেনের অ্যালান বোর্ডার ফিল্ডে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ দলের অনুশীলন শেষে কথা বলেন শ্রীরাম। সুপার টুয়েলভের ম্যাচ খেলতে হোবার্ট যাওয়ার আগে এখানে শুক্রবারও অনুশীলন করবে টাইগাররা। “এই ধরনের পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে আমাদের। তাকে (শান্ত) শেখার প্রক্রিয়ায় থাকতে হবে, নিজেকে বিকশিত করে যেতে হবে। সে ভালো ক্রিকেটার, তার হাতে শট আছে।” “আমার মনে হয়, বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সে কীভাবে ব্যাট করে, ভিন্ন ভিন্ন কন্ডিশন ও বোলারদের সে কীভাবে সামলায়, এসব শিখছে সে। আমরা এসব নিয়ে তার সঙ্গে ক্রমাগত কথা বলছি, ফুটেজ দেখানো হচ্ছে, সে কীভাবে উন্নতি করতে পারে। কোচিংয়ের দিক থেকে আমরা এসবই কেবল করতে পারি।”
শান্তকে শেখার প্রক্রিয়ায় থাকতে বলছেন শ্রীরাম
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ