নিজস্ব প্রতিবেদক : লকডাউনে বারণ ছিল স্পিডবোট চালানো। নির্দেশ ছিল স্পিডবোটের জেটি বন্ধ থাকবে। টিকিট বেচাকেনা বা যাত্রী পরাপার করা যাবে না। কিন্তু এই নিদের্শনাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই মাওয়া-কাঁঠালবাড়ি রুটে পদ্মার বুকে ঢেউ তুলত দ্রুতগতির এই নৌযান।
গত ৩ মে বাল্কহেডের সঙ্গে এমনই একটি স্পিডবোটের ধাক্কায় ২৬ জন যাত্রী মারা গেছেন। তারপরই টনক নড়েছে স্থানীয় প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। শুরু হয়েছে তদন্ত। এসব তদন্তে লকডাউনের নিয়ম ভেঙে চলা স্পিডবোটগুলোর পেছনে কারা ছিলেন, সেই তথ্য বেরিয়ে আসছে।
স্থানীয় সূত্রে খোঁজ নিয়ে একটি সংবাদসংস্থা জানিয়েছে, মাওয়া এবং শিবচরের কাঁঠালবাড়ি ঘাটের নিয়ন্ত্রণে ছিলেন দুটি পক্ষ। তাদের যোগসাজশ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ‘ম্যানেজ করে’ অবৈধভাবে স্পিডবোটগুলো চলতো বলে জানা গেছে। তারা প্রকাশ্যে টিকিটও বিক্রি করত। কারা এসব কাজে জড়িত তাদের তথ্যও বেরিয়ে আসছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, ঘাটের ইজারাদার আশরাফ ও তার ছোটের কাছে ছিল মাওয়া ঘাটের নিয়ন্ত্রণ। কাঁঠালবাড়ি ঘাটের নিয়ন্ত্রণে ছিলেন শাহ আলম খান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঘাট সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি বলেন, ‘ইজারাদারদের লোকেরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্যকে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে স্পিডবোট চালাতো। এজন্য প্রতিদিন তাদের নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ কয়েকজনকে দিতে হতো। অতিরিক্ত টাকা দিতে গিয়ে অতিরিক্ত যাত্রীও বোটে তুলত তারা। এসবই চলছিল প্রকাশ্যেই।’
অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্পিডবোটের প্রতিটি ট্রিপ থেকে ৫০০ টাকা দেয়া হতো দুটি বাহিনীর কিছু সদস্যদের। লকডাউনের শুরু থেকেই প্রকাশ্যে চলছিল এই অনিয়ম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই অবৈধ কাজে যারা জড়িত ছিলেন তাদের জন্যই গত ৩ মে ২৬ জন মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। কারণ তারা শুধু নিয়ম ভেঙে স্পিডবোট চলাচলই সচল রাখেননি অতিরিক্ত যাত্রীও নিয়েছে। ১৫ জন ধারণ ক্ষমতার বোটে তোলা হতো ৩৪ থেকে ৩৫ জন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনায় পড়া ওই স্পিডবোটের মালিক ছিলেন চান্দু বেপারি। বোটটি চালাচ্ছিলেন শাহ আলম নামে একজন চালক। ওই দুর্ঘটনার পর তারা দুজনই পলাতক। এছাড়া ইজাদার আশরাফের ভাইও দুর্ঘটনার কারণে করা মামলার আসামি। তিনিও পলাতক রয়েছেন।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, লকডাউনের মধ্যে স্পিডবোটের পাশাপাশি ট্রলারও চলছিল পদ্মায়। হানিফ মাতব্বর নামে এক ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে এই কাজ চলতো। তিনিই সংশ্লিষ্টদের ‘ম্যানেজ করে’ এ কাজ করে আসছিলেন বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে শিবচর থানার অফিসার ইনচার্জ মিরাজ হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মামলাটি নৌপুলিশ তদন্ত করছে। এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
দুর্ঘটনার পর পদ্মানদীতে অবৈধভাবে পরাপার ঠেকাতে শিমুলিয়া স্পিডবোট ঘাটে বাঁশ, রশি ও লাল কাপড় দিয়ে বেরিকেড দিয়েছে পুলিশ। শিমুলিয়া বাংলাবাজার নৌ রুটে চলাচল ঠেকাতে এই পদক্ষেপ নিয়েছে তারা। এতে ঘাটে ও বোটে যাত্রী প্রবেশের কোনো সুযোগ থাকছে না। পাশাপাশি স্পিডবোট ঘাটে অবস্থান নিয়েছে নৌপুলিশের সদস্যরা।’
এদিকে বিআইডব্লিউটি কর্তৃপক্ষ বলছে, নিয়ম অমান্য করে নৌযান চলাচল ঠেকানোর দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। বিআইডব্লিউটির চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটা দেখা দায়িত্ব নৌপুলিশ ও কোস্ট গার্ডের। আমরা তো স্পিডবোট চালানোর জন্য মন্ত্রণালয় থেকে এদেরকে লাইসেন্সের আওতায় আনার একটি কাজ চলছে। অদক্ষ চালক ও অবৈধভাবে চলা এই সকল স্পিড বোট নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।’
ম্যানেজ করে’ পদ্মায় চলত স্পিডবোট!
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ