ঢাকা ০৩:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫

বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশের অবনতি

  • আপডেট সময় : ০২:৩৫:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২২
  • ৯৫ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে (জিএসআই) গত বছরের তুলনায় ২০২২ সালে বাংলাদেশের অবস্থানের অবনতি ঘটেছে। ২০২১ সালের বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ৭৬তম অবস্থানে থাকলেও চলতি বছর ১২১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৮৪তম স্থানে রয়েছে। তবে এই সূচকে প্রতিবেশি ভারত (১০৭তম) এবং পাকিস্তানের (৯৯তম) চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। গতকাল বৃহস্পতিবার আয়ারল্যান্ড-ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড এবং জার্মানির ওয়েল্ট হাঙ্গার হিলফ যৌথভাবে বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচক-২০২২ প্রকাশ করেছে। বিশ্বের ১২১টি দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, শিশু স্বাস্থ্য আর সম্পদ বণ্টনে বৈষম্যের মতো বিষয়গুলোকে মাপকাঠি ধরে এই সূচক তৈরি করা হয়েছে। অপুষ্টি, পাঁচ বছরের কমবয়সী শিশুদের উচ্চতা, মৃত্যুহার, উচ্চতার তুলনায় ওজন; এই চার বিষয় সামনে রেখে তৈরি হয় বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচক। চলতি বছরের এই সূচকে বাংলাদেশ পেয়েছে ১৯ দশমিক ৬ স্কোর। যদিও ২০১৪ সালে বাংলাদেশের এই স্কোর ছিল ২৬ দশমিক ৩। জিএসআইয়ের ২০২২ সালের স্কোর অনুযায়ী, বিশ্বের ১২১টি দেশের মধ্যে অন্তত ৯টি দেশে ক্ষুধার মাত্রা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এছাড়া অন্য আরও ৩৫টি দেশের গুরুতর ক্ষুধা পরিস্থিতি রয়েছে। উদ্বেগজনক ক্ষুধা রয়েছে এমন দেশগুলো হলো মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, চাদ, গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গো, মাদাগাস্কার, ইয়েমেন, বুরুন্ডি, দক্ষিণ সুদান ও সিরিয়া। কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড ও ওয়েল্ট হাঙ্গার হিলফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে গুরুতর ক্ষুধা পরিস্থিতি বিরাজ করছে দক্ষিণ এশিয়ায়। এরপরই সাহারার দক্ষিণের আফ্রিকা অঞ্চলে দ্বিতীয় সবচেয়ে বেশি ক্ষুধার্ত পরিবেশ রয়েছে। এছাড়া গত ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র খরার মুখোমুখি হয়েছে পূর্ব আফ্রিকার কিছু দেশ; যা সেখানকার লাখ লাখ মানুষের জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। পশ্চিম এশিয়া এবং উত্তর আফ্রিকায় ক্ষুধা মাঝারি পর্যায়ে রয়েছে; যেখানে ক্ষুধা প্রশমনের উদ্যোগ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তবে বিশ্বে ক্ষুধা কম মাত্রায় রয়েছে লাতিন আমেরিকা, ক্যারিবীয়, পূর্ব ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া এবং ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ায়। চলতি বছরের এই সূচকে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের ওপরে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। ১৩ দশমিক ৬ স্কোর নিয়ে দেশটি ৬৪তম অবস্থানে রয়েছে। এরপর ১৫ দশমিক ৬ স্কোর নিয়ে ৭১তম স্থানে রয়েছে মিয়ানমার। অন্যদিকে, বাংলাদেশের আরেক প্রতিবেশি ভারতের অবস্থান ১০৭তম। আর এই সূচকে ২৬ দশমিক ১ স্কোর নিয়ে ৯৯তম স্থানে রয়েছে পাকিস্তান। বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে ৫ এর নিচে স্কোর পেয়ে শীর্ষ ১৭ দেশের তালিকায় রয়েছে বেলারুশ, হার্জেগোভিনা, চিলি, চীন, ক্রোয়েশিয়া, এস্তোনিয়া, হাঙ্গেরি, কুয়েত, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, মন্টিনিগ্রো, নর্থ মেসিডোনিয়া, রোমানিয়া, সার্বিয়া, স্লোভাকিয়া, তুরস্ক ও উরুগুয়ে। অর্থাৎ বিশ্বে এসব দেশে ক্ষুধা কম। সূচকে একেবারে তলানিতে রয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেন। ৪৫ দশমিক ১ স্কোর নিয়ে দেশটি ১২১তম অবস্থানে রয়েছে। কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ডমিনিক ম্যাক সরলি বলেছেন, বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচক আমাদের এক ভয়াবহ বাস্তবতার মুখোমুখি করেছে। সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন এবং কোভিড-১৯ মহামারির বিষাক্ত ককটেল ইতোমধ্যে লাখ লাখ মানুষকে খাদ্য মূল্যবৃদ্ধির সংকটে ফেলেছে এবং এই সংকটের ঝুঁকিকে আরও বৃদ্ধি করেছে। এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক সরবরাহ এবং খাদ্য, সার ও জ্বালানির মূল্যে আঘাত হেনেছে। আর এই সংকট ধীরে ধীরে বিপর্যয়কর রূপ নিতে শুরু করেছে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি। দ্য স্টেট অব ফুড সিকিউরিট অ্যান্ড নিউট্রিশন-২০২২ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে অপুষ্টিতে ভুগতে থাকা মানুষের সংখ্যা ৮২৮ মিলিয়নে পৌঁছেছে। ২০২২ সালের বৈশ্বিক খাদ্য সংকট প্রতিবেদনে তীব্র ক্ষুধার সম্মুখীন মানুষের সংখ্যাও ২০২০ সালের তুলনায় গত বছর ১৯৩ মিলিয়ন বেড়েছে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশের অবনতি

আপডেট সময় : ০২:৩৫:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২২

প্রত্যাশা ডেস্ক : বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে (জিএসআই) গত বছরের তুলনায় ২০২২ সালে বাংলাদেশের অবস্থানের অবনতি ঘটেছে। ২০২১ সালের বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ৭৬তম অবস্থানে থাকলেও চলতি বছর ১২১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৮৪তম স্থানে রয়েছে। তবে এই সূচকে প্রতিবেশি ভারত (১০৭তম) এবং পাকিস্তানের (৯৯তম) চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। গতকাল বৃহস্পতিবার আয়ারল্যান্ড-ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড এবং জার্মানির ওয়েল্ট হাঙ্গার হিলফ যৌথভাবে বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচক-২০২২ প্রকাশ করেছে। বিশ্বের ১২১টি দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, শিশু স্বাস্থ্য আর সম্পদ বণ্টনে বৈষম্যের মতো বিষয়গুলোকে মাপকাঠি ধরে এই সূচক তৈরি করা হয়েছে। অপুষ্টি, পাঁচ বছরের কমবয়সী শিশুদের উচ্চতা, মৃত্যুহার, উচ্চতার তুলনায় ওজন; এই চার বিষয় সামনে রেখে তৈরি হয় বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচক। চলতি বছরের এই সূচকে বাংলাদেশ পেয়েছে ১৯ দশমিক ৬ স্কোর। যদিও ২০১৪ সালে বাংলাদেশের এই স্কোর ছিল ২৬ দশমিক ৩। জিএসআইয়ের ২০২২ সালের স্কোর অনুযায়ী, বিশ্বের ১২১টি দেশের মধ্যে অন্তত ৯টি দেশে ক্ষুধার মাত্রা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এছাড়া অন্য আরও ৩৫টি দেশের গুরুতর ক্ষুধা পরিস্থিতি রয়েছে। উদ্বেগজনক ক্ষুধা রয়েছে এমন দেশগুলো হলো মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, চাদ, গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গো, মাদাগাস্কার, ইয়েমেন, বুরুন্ডি, দক্ষিণ সুদান ও সিরিয়া। কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড ও ওয়েল্ট হাঙ্গার হিলফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে গুরুতর ক্ষুধা পরিস্থিতি বিরাজ করছে দক্ষিণ এশিয়ায়। এরপরই সাহারার দক্ষিণের আফ্রিকা অঞ্চলে দ্বিতীয় সবচেয়ে বেশি ক্ষুধার্ত পরিবেশ রয়েছে। এছাড়া গত ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র খরার মুখোমুখি হয়েছে পূর্ব আফ্রিকার কিছু দেশ; যা সেখানকার লাখ লাখ মানুষের জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। পশ্চিম এশিয়া এবং উত্তর আফ্রিকায় ক্ষুধা মাঝারি পর্যায়ে রয়েছে; যেখানে ক্ষুধা প্রশমনের উদ্যোগ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তবে বিশ্বে ক্ষুধা কম মাত্রায় রয়েছে লাতিন আমেরিকা, ক্যারিবীয়, পূর্ব ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া এবং ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ায়। চলতি বছরের এই সূচকে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের ওপরে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। ১৩ দশমিক ৬ স্কোর নিয়ে দেশটি ৬৪তম অবস্থানে রয়েছে। এরপর ১৫ দশমিক ৬ স্কোর নিয়ে ৭১তম স্থানে রয়েছে মিয়ানমার। অন্যদিকে, বাংলাদেশের আরেক প্রতিবেশি ভারতের অবস্থান ১০৭তম। আর এই সূচকে ২৬ দশমিক ১ স্কোর নিয়ে ৯৯তম স্থানে রয়েছে পাকিস্তান। বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে ৫ এর নিচে স্কোর পেয়ে শীর্ষ ১৭ দেশের তালিকায় রয়েছে বেলারুশ, হার্জেগোভিনা, চিলি, চীন, ক্রোয়েশিয়া, এস্তোনিয়া, হাঙ্গেরি, কুয়েত, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, মন্টিনিগ্রো, নর্থ মেসিডোনিয়া, রোমানিয়া, সার্বিয়া, স্লোভাকিয়া, তুরস্ক ও উরুগুয়ে। অর্থাৎ বিশ্বে এসব দেশে ক্ষুধা কম। সূচকে একেবারে তলানিতে রয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেন। ৪৫ দশমিক ১ স্কোর নিয়ে দেশটি ১২১তম অবস্থানে রয়েছে। কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ডমিনিক ম্যাক সরলি বলেছেন, বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচক আমাদের এক ভয়াবহ বাস্তবতার মুখোমুখি করেছে। সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন এবং কোভিড-১৯ মহামারির বিষাক্ত ককটেল ইতোমধ্যে লাখ লাখ মানুষকে খাদ্য মূল্যবৃদ্ধির সংকটে ফেলেছে এবং এই সংকটের ঝুঁকিকে আরও বৃদ্ধি করেছে। এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক সরবরাহ এবং খাদ্য, সার ও জ্বালানির মূল্যে আঘাত হেনেছে। আর এই সংকট ধীরে ধীরে বিপর্যয়কর রূপ নিতে শুরু করেছে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি। দ্য স্টেট অব ফুড সিকিউরিট অ্যান্ড নিউট্রিশন-২০২২ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে অপুষ্টিতে ভুগতে থাকা মানুষের সংখ্যা ৮২৮ মিলিয়নে পৌঁছেছে। ২০২২ সালের বৈশ্বিক খাদ্য সংকট প্রতিবেদনে তীব্র ক্ষুধার সম্মুখীন মানুষের সংখ্যাও ২০২০ সালের তুলনায় গত বছর ১৯৩ মিলিয়ন বেড়েছে।