ঢাকা ০১:০৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

কানাডার আদিবাসী এলাকায় পুড়ল আরও ২ গির্জা

  • আপডেট সময় : ১১:৪২:১৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুন ২০২১
  • ৮৫ বার পড়া হয়েছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কানাডার পশ্চিমাঞ্চলে আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় আরও দুটি ক্যাথলিক গির্জা অগ্নিকা-ে ভস্মীভূত হয়েছে।
গত শনিবার এ ঘটনা ঘটেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি। ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় সেইন্ট অ্যান’স ও চোপাকা নামের ওই দুটি গির্জায় আগুন লাগার ব্যবধান ছিল ঘণ্টাখানেক।
দুটি ভবনই পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং অগ্নিকা-ের এ ঘটনাকে ‘সন্দেহজনক’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। এর আগে গত সপ্তাহের সোমবার কানাডায় জাতীয় আদিবাসী জনগোষ্ঠী দিবস উদ্যাপনের দিনও ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় আরও দুটি ক্যাথলিক গির্জা আগুনে ভস্মীভূত হয়েছিল। “আগের অগ্নিকা-লোর পাশাপাশি নতুন দুই অগ্নিকা-েরও তদন্ত চলছে, এখনো কোনো অভিযোগ আসেনি বা কেউ গ্রেপ্তার হয়নি,” বলেছেন রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশের (আরসিএমপি) সার্জেন্ট জেসন বেইদা।
কানাডায় উনিশ ও বিশ শতকে আবাসিক বিদ্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হতো এমন দুটি এলাকায় কয়েকশ অচিহ্নিত কবর আবিষ্কারের পর সৃষ্ট উদ্বেগের মধ্যে এক সপ্তাহের ব্যবধানে চারটি ক্যাথলিক গির্জায় এসব অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটল। ওই বিদ্যালয়গুলোতে সরকারি অর্থায়নে ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর পরিচালনায় আদিবাসী শিশুদের রাখা হতো।
১৮৬৩ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এসব বোর্ডিং স্কুলে এক লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি আদিবাসী শিশুকে তাদের পরিবারগুলো থেকে নিয়ে এসে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছিল।
এসব শিশুদের প্রায়ই তাদের নিজেদের ভাষায় কথা বলতে ও তাদের সংস্কৃতি চর্চা করতে দেওয়া হতো না। তারা ছিল অপুষ্টির শিকার; তাদেরকে এমনকী শারীরিক ও যৌন নিগ্রহও সইতে হয়েছে।
২০১৫ সালে কানাডার ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন আবাসিক বিদ্যালয়গুলোর ওই চর্চাকে ‘সাংস্কৃতিক গণহত্যা’ আখ্যা দেয়। যারা এসব বোর্ডিং থেকে শেষ পর্যন্ত বের হয়ে আসতে পেরেছে তারা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানায়, ক্ষুধা আর একাকিত্ব তাদের তাড়া করে ফিরত। বিদ্যালয়ে নিয়মিত ভয় দেখানো ও বল প্রয়োগ করা হতো। কানাডার কেন্দ্রীয় সরকার ওই বিদ্যালয় ব্যবস্থার জন্য ২০০৮ সালে ক্ষমা চেয়েছে। তবে বেশিরভাগ বিদ্যালয়ের পরিচালনার ভার যাদের দায়িত্বে ছিল, সেই রোমান ক্যাথলিক গির্জার পক্ষ থেকে এখনো দুঃখ প্রকাশ করা হয়নি।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো পোপ ফ্রান্সিসকে কানাডায় এসে উনিশ ও বিশ শতকে আবাসিক বিদ্যালয়গুলোতে আদিবাসী শিশুদের ওপর করা নিপীড়নের জন্য ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। লোয়ার সিমিলকামিন ইন্ডিয়ান ব্যান্ডের প্রধান কিথ ক্রো সম্প্রচারমাধ্যম সিবিসিকে জানান, শনিবার ভোরের দিকে পাওয়া এক ফোনে তিনি চোপাকা গির্জায় আগুন লাগার কথা জানতে পারেন। খবর পাওয়ার আধাঘণ্টার মধ্যে তিনি ওই গির্জায় পৌঁছালেও, ততক্ষণে সেটি মাটির সঙ্গে মিশে যায়, বলেন তিনি। “আমি ক্ষুব্ধ। এটার মধ্যে ইতিবাচকতা দেখছি না আমি, এবং এটা খুবই জটিল হতে যাচ্ছে,” বলেছেন ক্রো। স্থানীয়দের অনেকেই ক্যাথলিক গির্জার সদস্য এবং তারা এ অগ্নিকা-ের ঘটনায় স্তম্ভিত বলেও জানান তিনি।
গত মাসে টেক’এম্লাপস টে সেকউইপেমেক ফার্স্ট নেশন ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার পরিত্যক্ত একটি আবাসিক বিদ্যালয়ে ২১৫ শিশুর গণকবরের সন্ধান পাওয়ার কথা জানায়। শিশুদের দেহাবশেষ যে পরিত্যক্ত বিদ্যালয়ে মেলে, সেই ‘কামলুপ্স ইন্ডিয়ান রেসিডেন্সিয়াল স্কুল’টি রোমান ক্যাথলিক প্রশাসনের উদ্যোগে ১৮৯০ চালু হয়েছিল। ১৯৭৮ সালে সেটি বন্ধ হয়ে যায়।
কয়েকদিন আগে কাওয়েসিস ফার্স্ট নেশন জানায় তারা সাসকাচোয়ান প্রদেশে সাবেক একটি আবাসিক বিদ্যালয় এলাকায় ৭৫১টি অচিহ্নিত কবর আবিষ্কার করেছ। এই ‘মেরিয়েভেল ইন্ডিয়ান রেসিডেন্সিয়াল স্কুল’টিও রোমান ক্যাথলিক গির্জাই পরিচালনা করতো।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

কানাডার আদিবাসী এলাকায় পুড়ল আরও ২ গির্জা

আপডেট সময় : ১১:৪২:১৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুন ২০২১

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কানাডার পশ্চিমাঞ্চলে আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় আরও দুটি ক্যাথলিক গির্জা অগ্নিকা-ে ভস্মীভূত হয়েছে।
গত শনিবার এ ঘটনা ঘটেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি। ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় সেইন্ট অ্যান’স ও চোপাকা নামের ওই দুটি গির্জায় আগুন লাগার ব্যবধান ছিল ঘণ্টাখানেক।
দুটি ভবনই পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং অগ্নিকা-ের এ ঘটনাকে ‘সন্দেহজনক’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। এর আগে গত সপ্তাহের সোমবার কানাডায় জাতীয় আদিবাসী জনগোষ্ঠী দিবস উদ্যাপনের দিনও ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় আরও দুটি ক্যাথলিক গির্জা আগুনে ভস্মীভূত হয়েছিল। “আগের অগ্নিকা-লোর পাশাপাশি নতুন দুই অগ্নিকা-েরও তদন্ত চলছে, এখনো কোনো অভিযোগ আসেনি বা কেউ গ্রেপ্তার হয়নি,” বলেছেন রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশের (আরসিএমপি) সার্জেন্ট জেসন বেইদা।
কানাডায় উনিশ ও বিশ শতকে আবাসিক বিদ্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হতো এমন দুটি এলাকায় কয়েকশ অচিহ্নিত কবর আবিষ্কারের পর সৃষ্ট উদ্বেগের মধ্যে এক সপ্তাহের ব্যবধানে চারটি ক্যাথলিক গির্জায় এসব অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটল। ওই বিদ্যালয়গুলোতে সরকারি অর্থায়নে ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর পরিচালনায় আদিবাসী শিশুদের রাখা হতো।
১৮৬৩ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এসব বোর্ডিং স্কুলে এক লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি আদিবাসী শিশুকে তাদের পরিবারগুলো থেকে নিয়ে এসে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছিল।
এসব শিশুদের প্রায়ই তাদের নিজেদের ভাষায় কথা বলতে ও তাদের সংস্কৃতি চর্চা করতে দেওয়া হতো না। তারা ছিল অপুষ্টির শিকার; তাদেরকে এমনকী শারীরিক ও যৌন নিগ্রহও সইতে হয়েছে।
২০১৫ সালে কানাডার ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন আবাসিক বিদ্যালয়গুলোর ওই চর্চাকে ‘সাংস্কৃতিক গণহত্যা’ আখ্যা দেয়। যারা এসব বোর্ডিং থেকে শেষ পর্যন্ত বের হয়ে আসতে পেরেছে তারা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানায়, ক্ষুধা আর একাকিত্ব তাদের তাড়া করে ফিরত। বিদ্যালয়ে নিয়মিত ভয় দেখানো ও বল প্রয়োগ করা হতো। কানাডার কেন্দ্রীয় সরকার ওই বিদ্যালয় ব্যবস্থার জন্য ২০০৮ সালে ক্ষমা চেয়েছে। তবে বেশিরভাগ বিদ্যালয়ের পরিচালনার ভার যাদের দায়িত্বে ছিল, সেই রোমান ক্যাথলিক গির্জার পক্ষ থেকে এখনো দুঃখ প্রকাশ করা হয়নি।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো পোপ ফ্রান্সিসকে কানাডায় এসে উনিশ ও বিশ শতকে আবাসিক বিদ্যালয়গুলোতে আদিবাসী শিশুদের ওপর করা নিপীড়নের জন্য ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। লোয়ার সিমিলকামিন ইন্ডিয়ান ব্যান্ডের প্রধান কিথ ক্রো সম্প্রচারমাধ্যম সিবিসিকে জানান, শনিবার ভোরের দিকে পাওয়া এক ফোনে তিনি চোপাকা গির্জায় আগুন লাগার কথা জানতে পারেন। খবর পাওয়ার আধাঘণ্টার মধ্যে তিনি ওই গির্জায় পৌঁছালেও, ততক্ষণে সেটি মাটির সঙ্গে মিশে যায়, বলেন তিনি। “আমি ক্ষুব্ধ। এটার মধ্যে ইতিবাচকতা দেখছি না আমি, এবং এটা খুবই জটিল হতে যাচ্ছে,” বলেছেন ক্রো। স্থানীয়দের অনেকেই ক্যাথলিক গির্জার সদস্য এবং তারা এ অগ্নিকা-ের ঘটনায় স্তম্ভিত বলেও জানান তিনি।
গত মাসে টেক’এম্লাপস টে সেকউইপেমেক ফার্স্ট নেশন ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার পরিত্যক্ত একটি আবাসিক বিদ্যালয়ে ২১৫ শিশুর গণকবরের সন্ধান পাওয়ার কথা জানায়। শিশুদের দেহাবশেষ যে পরিত্যক্ত বিদ্যালয়ে মেলে, সেই ‘কামলুপ্স ইন্ডিয়ান রেসিডেন্সিয়াল স্কুল’টি রোমান ক্যাথলিক প্রশাসনের উদ্যোগে ১৮৯০ চালু হয়েছিল। ১৯৭৮ সালে সেটি বন্ধ হয়ে যায়।
কয়েকদিন আগে কাওয়েসিস ফার্স্ট নেশন জানায় তারা সাসকাচোয়ান প্রদেশে সাবেক একটি আবাসিক বিদ্যালয় এলাকায় ৭৫১টি অচিহ্নিত কবর আবিষ্কার করেছ। এই ‘মেরিয়েভেল ইন্ডিয়ান রেসিডেন্সিয়াল স্কুল’টিও রোমান ক্যাথলিক গির্জাই পরিচালনা করতো।