ঢাকা ০১:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

নতুন কূপ খননে বিবিয়ানায় জায়গা বাড়িয়েছে শেভরন

  • আপডেট সময় : ০১:১৪:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর ২০২২
  • ৬৫ বার পড়া হয়েছে

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : সিলেট অঞ্চলে নিজেদের কাজের পরিধি বাড়াতে সরকারের সঙ্গে করা তিনটি চুক্তি করেছে শেভরন। এর ফলে একদিকে বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে নতুন কূপ খননের জন্য জায়গা পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানিটি। পাশাপাশি জালালাবাদ ও মৌলভীবাজার ক্ষেত্র থেকে গ্যাস ক্রয়-বিক্রয় চুক্তিগুলোর মেয়াদ পাঁচ বছর করে বেড়েছে। রোববার ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এবং পেট্রোবাংলার সঙ্গে শেভরনের চুক্তিগুলো স্বাক্ষরিত হয়। পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিবিয়ানার চুক্তির মূল লক্ষ্য সেখানে নতুন কূপ খনন করা। বর্তমানে বিবিয়ানায় শেভরনের কূপ সংখ্যা ২৬। শেভরন তার হাতে পাওয়ার বাড়তি ক্ষেত্রে উন্নয়ন কূপ খনন শুরু করবে। পরবর্তীকালে ইনফিল্ড কূপ খননের পরিকল্পনা রয়েছে শেভরনের। সেখান থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গ্যাস পাওয়া যাবে বলে পেট্রোবাংলার আশা। এসব চুক্তির বিষয়ে শেভরনের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল বলেন, “শেভরন বর্ধিত এলাকায় ২০২৩ সালে ২৭তম উন্নয়ন কূপ খনন শুরু করবে। সেই কূপের সফলতার ওপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে ২৮তম ইনফিল্ড কূপ খননের পরিকল্পনাও রয়েছে।” এই তিনটি চুক্তি দেশের চলমান গ্যাস সঙ্কট কিছুটা হলেও কাটাতে পারবে বলে আশা দেখিয়ে তিনি বলেন, “তারা সময় ও পরিধি বাড়িয়েছে। চুক্তির ফলে সিলেট অঞ্চলের তিনটি গ্যাস কূপে উৎপাদন বাড়াতে পারে। সেখানে নতুন গ্যাসের সম্ভাবনা আছে বিধায় তারা এই কাজটি করেছে। আমরা এখন গ্যাসের সঙ্কটে আছি। এই পরিস্থিতিতে ২৭ নম্বর কূপ থেকেই দৈনিক ৬০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।” চুক্তিতে নতুন কী পরিবর্তন এসেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বিবিয়ানার ক্ষেত্রে চলমান চুক্তিতে কোনো পরিবর্তন হবে না। তাদের সাথে আমাদের যে উৎপাদন-বণ্টন চুক্তি আছে, সেটা গ্যাসের পরিমাণের সাথে সম্পর্কিত। সেই চুক্তিতে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। বর্তমানে উৎপাদিত গ্যাসের ৭০ শতাংশের বেশি পাচ্ছে বাংলাদেশ, ৩০ শতাংশের কম পাচ্ছে শেভরন। “বিবিয়ানার কাজ যখন তারা শুরু করে, সেখানে একটা নির্দিষ্ট এলাকায় ২৬টা কূপ খনন করেছে। কূপের ওই জায়গাটুকু অধিগ্রহণ করে বাকি কিছু জায়গার দায়-দায়িত্ব তারা ছেড়ে দিয়েছিল। ছেড়ে দেওয়া জায়গাকেই ফ্ল্যাঙ্ক এরিয়া বলা হচ্ছে। ওই ফ্যাঙ্ক এরিয়া থেকে তারা আরও কিছু জায়গা চেয়েছে। ওই জায়গাটুকু পেট্রোবাংলার নামেই ছিল। এগুলো খাস জমি, জঙ্গল হয়ে পড়ে আছে। তারা সেখানে সার্ভে করে আরও কিছু গ্যাস পেয়েছে। সে কারণে আমাদের কাছ থেকে জায়গার পরিধি বাড়িয়ে নিয়েছে। এখন তারা এখানে কূপ খননের জন্য বিনিয়োগ করবে।”
অন্য দুটি গ্যাসক্ষেত্রে পাঁচ বছর করে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর কথা জানিয়ে পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান বলেন, মৌলভীবাজার গ্যাসক্ষেত্রে শেভরনের সঙ্গে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত চুক্তি করা হয়েছিল। সেই চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে ২০৩৮ সাল করা হয়েছে। একইভাবে জালালাবাদ গ্যাস ক্ষেত্রের চুক্তির মেয়াদ ছিল ২০২৯ সাল পর্যন্ত। সেটাকে বাড়িয়ে ২০৩৪ সাল করা হয়েছে। এর গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, “এখন মৌলভীবাজার ও জালালাবাদে সময় বাড়ানোর চুক্তি হয়েছে। ওদের হাতে সময় ছিল। কিন্তু তারা যদি ভবিষ্যৎমুখী কোনো পরিকল্পনা নেয়, সেক্ষেত্রে সময়টা বাড়িয়ে নেয়। অর্থাৎ তারা সেখানে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় আরও বিনিয়োগ করবে বা কাজের পরিধি বাড়াবে, সেজন্যই সময় বাড়িয়ে নিয়েছে। “ওখানে ওরা সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছে বিধায় সময়সীমাটা বাড়িয়ে নিচ্ছে। এখানে তারা নতুন করে কোনো কাজে হাত দেয়নি। তবে কাজে হাত দেবে বলেই সময়টা বাড়িয়ে নিয়েছে।” গ্যাস সঙ্কটের এই সময়ে দেশে বর্তমানে দৈনিক ২৬৭৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের জোগান দিতে পারছে সরকার। শেভরন তার তিনটি কূপ থেকে ১৪৫৩ মিলিয়ন ঘনফুট বা ৫৪ শতাংশ গ্যাসের জোগান দিচ্ছে। ৩৮০ মিলিয়ন ঘনফুট বা ১৪ শতাংশের জোগান আসছে বিদেশ থেকে কেনা এলএনজির মাধ্যমে। দেশে গৃহস্থালিতে বিদ্যমান সংযোগ এবং শিল্পের চাহিদা পূরণে দিনে আরও অন্তত এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের উপসচিব মোছা. মোর্শেদা ফেরদৌস, পেট্রোবাংলার সচিব রুচিরা ইসলাম এবং শেভরনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এরিক এম ওয়াকার চুক্তিপত্রে সই করেন। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হেলাল উদ্দিন, পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) শাহীনুর ইসলাম, শেভরন বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এরিক এম ওয়াকার ও কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স ডিরেক্টর মুহাম্মদ ইমরুল কবির সরকার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নতুন কূপ খননে বিবিয়ানায় জায়গা বাড়িয়েছে শেভরন

আপডেট সময় : ০১:১৪:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর ২০২২

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : সিলেট অঞ্চলে নিজেদের কাজের পরিধি বাড়াতে সরকারের সঙ্গে করা তিনটি চুক্তি করেছে শেভরন। এর ফলে একদিকে বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে নতুন কূপ খননের জন্য জায়গা পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানিটি। পাশাপাশি জালালাবাদ ও মৌলভীবাজার ক্ষেত্র থেকে গ্যাস ক্রয়-বিক্রয় চুক্তিগুলোর মেয়াদ পাঁচ বছর করে বেড়েছে। রোববার ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এবং পেট্রোবাংলার সঙ্গে শেভরনের চুক্তিগুলো স্বাক্ষরিত হয়। পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিবিয়ানার চুক্তির মূল লক্ষ্য সেখানে নতুন কূপ খনন করা। বর্তমানে বিবিয়ানায় শেভরনের কূপ সংখ্যা ২৬। শেভরন তার হাতে পাওয়ার বাড়তি ক্ষেত্রে উন্নয়ন কূপ খনন শুরু করবে। পরবর্তীকালে ইনফিল্ড কূপ খননের পরিকল্পনা রয়েছে শেভরনের। সেখান থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গ্যাস পাওয়া যাবে বলে পেট্রোবাংলার আশা। এসব চুক্তির বিষয়ে শেভরনের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল বলেন, “শেভরন বর্ধিত এলাকায় ২০২৩ সালে ২৭তম উন্নয়ন কূপ খনন শুরু করবে। সেই কূপের সফলতার ওপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে ২৮তম ইনফিল্ড কূপ খননের পরিকল্পনাও রয়েছে।” এই তিনটি চুক্তি দেশের চলমান গ্যাস সঙ্কট কিছুটা হলেও কাটাতে পারবে বলে আশা দেখিয়ে তিনি বলেন, “তারা সময় ও পরিধি বাড়িয়েছে। চুক্তির ফলে সিলেট অঞ্চলের তিনটি গ্যাস কূপে উৎপাদন বাড়াতে পারে। সেখানে নতুন গ্যাসের সম্ভাবনা আছে বিধায় তারা এই কাজটি করেছে। আমরা এখন গ্যাসের সঙ্কটে আছি। এই পরিস্থিতিতে ২৭ নম্বর কূপ থেকেই দৈনিক ৬০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।” চুক্তিতে নতুন কী পরিবর্তন এসেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বিবিয়ানার ক্ষেত্রে চলমান চুক্তিতে কোনো পরিবর্তন হবে না। তাদের সাথে আমাদের যে উৎপাদন-বণ্টন চুক্তি আছে, সেটা গ্যাসের পরিমাণের সাথে সম্পর্কিত। সেই চুক্তিতে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। বর্তমানে উৎপাদিত গ্যাসের ৭০ শতাংশের বেশি পাচ্ছে বাংলাদেশ, ৩০ শতাংশের কম পাচ্ছে শেভরন। “বিবিয়ানার কাজ যখন তারা শুরু করে, সেখানে একটা নির্দিষ্ট এলাকায় ২৬টা কূপ খনন করেছে। কূপের ওই জায়গাটুকু অধিগ্রহণ করে বাকি কিছু জায়গার দায়-দায়িত্ব তারা ছেড়ে দিয়েছিল। ছেড়ে দেওয়া জায়গাকেই ফ্ল্যাঙ্ক এরিয়া বলা হচ্ছে। ওই ফ্যাঙ্ক এরিয়া থেকে তারা আরও কিছু জায়গা চেয়েছে। ওই জায়গাটুকু পেট্রোবাংলার নামেই ছিল। এগুলো খাস জমি, জঙ্গল হয়ে পড়ে আছে। তারা সেখানে সার্ভে করে আরও কিছু গ্যাস পেয়েছে। সে কারণে আমাদের কাছ থেকে জায়গার পরিধি বাড়িয়ে নিয়েছে। এখন তারা এখানে কূপ খননের জন্য বিনিয়োগ করবে।”
অন্য দুটি গ্যাসক্ষেত্রে পাঁচ বছর করে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর কথা জানিয়ে পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান বলেন, মৌলভীবাজার গ্যাসক্ষেত্রে শেভরনের সঙ্গে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত চুক্তি করা হয়েছিল। সেই চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে ২০৩৮ সাল করা হয়েছে। একইভাবে জালালাবাদ গ্যাস ক্ষেত্রের চুক্তির মেয়াদ ছিল ২০২৯ সাল পর্যন্ত। সেটাকে বাড়িয়ে ২০৩৪ সাল করা হয়েছে। এর গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, “এখন মৌলভীবাজার ও জালালাবাদে সময় বাড়ানোর চুক্তি হয়েছে। ওদের হাতে সময় ছিল। কিন্তু তারা যদি ভবিষ্যৎমুখী কোনো পরিকল্পনা নেয়, সেক্ষেত্রে সময়টা বাড়িয়ে নেয়। অর্থাৎ তারা সেখানে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় আরও বিনিয়োগ করবে বা কাজের পরিধি বাড়াবে, সেজন্যই সময় বাড়িয়ে নিয়েছে। “ওখানে ওরা সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছে বিধায় সময়সীমাটা বাড়িয়ে নিচ্ছে। এখানে তারা নতুন করে কোনো কাজে হাত দেয়নি। তবে কাজে হাত দেবে বলেই সময়টা বাড়িয়ে নিয়েছে।” গ্যাস সঙ্কটের এই সময়ে দেশে বর্তমানে দৈনিক ২৬৭৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের জোগান দিতে পারছে সরকার। শেভরন তার তিনটি কূপ থেকে ১৪৫৩ মিলিয়ন ঘনফুট বা ৫৪ শতাংশ গ্যাসের জোগান দিচ্ছে। ৩৮০ মিলিয়ন ঘনফুট বা ১৪ শতাংশের জোগান আসছে বিদেশ থেকে কেনা এলএনজির মাধ্যমে। দেশে গৃহস্থালিতে বিদ্যমান সংযোগ এবং শিল্পের চাহিদা পূরণে দিনে আরও অন্তত এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের উপসচিব মোছা. মোর্শেদা ফেরদৌস, পেট্রোবাংলার সচিব রুচিরা ইসলাম এবং শেভরনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এরিক এম ওয়াকার চুক্তিপত্রে সই করেন। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হেলাল উদ্দিন, পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) শাহীনুর ইসলাম, শেভরন বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এরিক এম ওয়াকার ও কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স ডিরেক্টর মুহাম্মদ ইমরুল কবির সরকার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।