ঢাকা ০৩:০২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫

সংসারে মিছে মায়ার জালে আবদ্ধ নারীরা

  • আপডেট সময় : ১০:২৭:০৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • ৮৮ বার পড়া হয়েছে

মাহমুদা আকতার : দিনে দিনে আরও কঠিন হয়ে উঠছে নারীদের জীবন তা তিনি শিক্ষক, সাংবাদিক, ব্যাংকার, চিকিৎসক, অনলাইন ব্যবসায়ী কিংবা সিম্পল হাউজ ওয়াইফ যা-ই হোন না কেন। আগে যেমন তারা পড়তে পড়তে কিংবা পড়ালেখা শেষ করে বিয়ে করতেন, এরপর ছেলেমেয়ে হতো-তাদের দেখভাল করে সিম্পলি জীবনটা কাটিয়ে দিতেন। জয়েন ফ্যামিলি হলে টুকটাক ঝগড়াঝাটি হলেও জীবনটা কিন্তু আরামদায়কই ছিলো। দুর্গা হয়ে সব কাজ এক সামলাতে হতো না। দিন শেষে অন্তত মন খুলে কথা বলার কিছু মানুষ পাওয়া যেতো। ছেলেমেয়ের লেখাপড়া নিয়েও কিন্তু এতটা টেনশন থাকতো না। আর এখন আপনাকে সংসারের আয় রোজগারের পাশাপাশি বাজার করা, বিল দেয়া, দশ রকমের সামাজিকতা-সব একাই সামলাতে হচ্ছে। আপনার স্বামী আছেন তার চাকরি বাকরি আর নিজস্ব জগত নিয়ে-ফলে তার কাছ থেকে তেমন কোনও সাহায্য সহযোগিতা না পাওয়ার সম্ভবনাই বেশি।
আর এখন তো সন্তান মানুষ করাও অনেক কষ্টকর। কেননা কেবল তাদের লেখাপড়ার দিকটি দেখলেই চলে না- সে কার সাথে মিশছে, কোথায় যাচ্ছে, ফেসবুকে কি কি অপকর্ম করছে এইসব নানা হাবিজাবি নজরদারিতে রাখতে হচ্ছে। আর এই কাজগুলো কিন্তু করতে হচ্ছে মায়েদেরকেই। এ কারণেই কিন্তু অনেক মাকে সন্তানের সঙ্গে প্রায় সারা দিন (স্কুল থেকে কোচিং) কাটাতে দেখা যায়।
ছেলেমেয়ে মানুষ হলে বা বড়ো চাকরি করলেই কি সব সমস্যা শেষ? না ভাই, সেইটা কিন্তু একবারও ভাইবেন না। সাবলক ও সাবলম্বী হওয়ার পরর অনেক সন্তানের প্রেম ও বিবাহ সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে মায়েদের নানা রকমের মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়। এরপর তারা নিজেদের সংসারে গেলেই যে আপনার জীবনে শান্তির নহর বইবে-তেমন আশা করা বোকামি। জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও আমি অনেক নারীকে যে কষ্টকর জীবন কাটাতে দেখেছি-তা ভাবলে এখনও গা শিউরে ওঠে। এই লেখায় সেরকমই মাত্র একজন নারীর ঘটনা শেয়ার করছি।
আমার বিল্ডিংয়ের চারতলায় থাকতেন ওই মধ্যবয়সী নারী, যিনি হাউজিংয়ের সবার কাছে ‘বান্টির মা হিসাবেই বেশি পরিচিত ছিলেন। তাকে আমি সামনা সামনি দু একবার দেখেছি। বয়সকালে ডাকসাইটে সুন্দরী ছিলেন-দেখেই বোঝা গেছে। একই সঙ্গে বেশ শৌখিন-তার ঘরে এক নজর চোখ বুলিয়েই জেনে গেছি। নানা রকমের আসবাবপত্র আর দামী গাছগাছালিতে সাজানো তার ফ্ল্যাটটি। স্বামী একসময় অনেক বড় চাকরি করতেন। দুই ছেলের মধ্যে বড়টা সপরিবাবে থাকে আমেরিকায়, ছোটটা তার সঙ্গে। আপাতদৃষ্টিতে সাজানো গোছানো সংসার। কিন্তু আমরা যারা এই হাউজিংয়ে থাকি তারা জানি কতটা কষ্টকর ছিলো তার জীবন। বয়সকালে তারই বাসার গৃহকর্মীকে বিয়ে করেন তার স্বামী। এরপর ওই মেয়েকে নিয়ে অন্যত্র সংসার পাতেন। সেই স্বামীকে ঘরে ফেরাতে কম কষ্ট করতে হয়নি তাকে। শেষে ওই মেয়ের নামে একটা আস্ত ফ্ল্যাট লিখে দিয়ে তবেই স্বামীকে ফিরে পান তিনি। কিন্তু যাকে ফেরালেন তিনি কেমন ছিলেন জানেন! ভদ্রলোক অবসরে যাওয়ার পর অনেকটাই যেন মানসিক বিকারগ্রস্থ হয়ে পড়েন। খাবার দিতে একটু দেরি হলে সব ছুড়ে ফেলতেন, কাজের বুয়াদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতেন। তিনি যখন যে অর্ডার করতেন, সঙ্গে সঙ্গে সেই কাজ করে দিতে হতো। নইলে শুরু হতো অশান্তি। একসময় বড় চাকরি করেছেন, অফিসে পিয়ন আর বয় বেয়ারাদের যেভাবে অর্ডার দিয়েছেন-অবসরে যাওয়ার পরও সেই অভ্যাস গত হয়নি। এটা যে তার অফিস নয়, বাসা-এটা তিনি বুঝতেই চাইতেন না। এজন্য তার বাসায় কোনও বুয়া বেশিদিন থাকতে চাইতো না। ফলে বার বার বান্টির মাকে বুয়া বদলাতে হতো। তারপরও কখনও তাকে কেউ স্বামী কিংবা ছেলের প্রতি বিরক্ত প্রকাশ করতে দেখেনি। মুখ বুঁজেই সয়ে গেছেন তাদের সমস্ত অন্যায় আবদার আর অত্যাচার। এই তো গেলো স্বামীর কথা। ছোট ছেলেটাও কম কষ্ট দেয়নি তাকে। এক ছেলে আমেরিকায়, তাই বুঝি ছোটছেলেটাকে জড়িয়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ছেলেটা বেশি পড়তে পারেনি-কলেজে উঠেই হয়ে গেলো মাদকাসক্ত। মাদকের নেশা আর ছাড়ানো সম্ভব হয়নি। এই ছেলেও মাকে নানাভাবে যন্ত্রণা দিতো। উনিশ থেকে বিশ হলেই ঘরের জিনিসপত্র ভাঙচুর করতো। প্রায় রাতেই ওদের বাসা থেকে চিৎকার চেঁচামেচি ভেসে আসতো। সকালে সিড়ি দিয়ে নামার সময় দেখতাম পড়ে আছে ভাঙা কাচের টুকরা, ফুলের টব আরও নানা জিনিসপাতি। এই ছেলেটাকে শেষে বিয়ে করানোরও চেষ্টা করেছিলেন ওই ভদ্রমহিলা। ছেলেটা দেখতে বেশ সুন্দর, তারওপর তাদের টাকা পয়সা থাকায় অনেক মেয়েই প্রথম প্রথম আগ্রহ দেখাতো। কিন্তু তার নেশার খবর জানার পরই সরে পড়তো।
ঘরে স্বামী আর জোয়ান ছেলে থাকার পরও বাজার করার কেউ ছিলো না তাদের। বান্টির মা কখনও কাজের বুয়া, কখনও বা দারোয়ানদের ধরে বাজার করাতেন। শেষ দিকে অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়েছিলেন বেশ কয়েক বছর। বিছানায় থেকেই সংসারের সব কাজ সামলাতে হতো তাকে। বাজার করানো, রান্না করানো, ঘর গুছানো, ফার্নিচার ঝাড়পোছ, গাছে পানি দেয়া-সব কিছুই ডিকটেশন দিতেন তিনি। আর একটু নিয়মের হেরফের হলেই স্বামী আর পুত্রের চোখ রাঙানি তো ছিলোই। আর এই অবস্থার মধ্যেই গত বছর সংসার থেকে টুক করে ঝরে পড়লেন এই নারী। এখন আর তার সংসারে তেমন কোন ঝামেলা চোখে পড়ে না। বাবা আর ছেলেতে মিলে ভালোই সংসার সামলাচ্ছে। অথচ তিনি বেঁচে থাকতে এক ফোঁটাও শান্তি দেয়নি-না বাপ, না ছেলে।
এই বান্টির মায়ের কথা যত ভাবি-ততই ভারাক্রান্ত হয় মন। যত দিন যাচ্ছে নারীদের উপর দায়িত্বের পাহাড় জড়ো হচ্ছে। ঘরে বাইরে এসব দায়িত্ব সামাল দিতে গিয়ে নিজের জন্য সময়ই বের করতে পারছে না তারা। এই মহামারী পরিস্থিতিতে অনেক পরিবারের অর্থ উপার্জনের দায়টাও তো এসে পড়েছে নারীরই ঘাড়ে। তাই বলে গৃহস্থালীর কাজ কিন্তু ঠিকই আছে তার। আর এইভাবে দুই দায়িত্ব পালন করতে করতে চিড়ে চ্যাপ্টা অবস্থা এক এক জনের। অথচ এই সমাজে নারীর শ্রমের কোনও দাম নাই। এখনও তাদের সাজগোজ আর পোশাক নিয়ে কটাক্ষ করতে ব্যস্ত এই অবিবেচক নিষ্ঠুর সমাজ।
লেখক : সাংবাদিক ও অনুবাদক

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সংসারে মিছে মায়ার জালে আবদ্ধ নারীরা

আপডেট সময় : ১০:২৭:০৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

মাহমুদা আকতার : দিনে দিনে আরও কঠিন হয়ে উঠছে নারীদের জীবন তা তিনি শিক্ষক, সাংবাদিক, ব্যাংকার, চিকিৎসক, অনলাইন ব্যবসায়ী কিংবা সিম্পল হাউজ ওয়াইফ যা-ই হোন না কেন। আগে যেমন তারা পড়তে পড়তে কিংবা পড়ালেখা শেষ করে বিয়ে করতেন, এরপর ছেলেমেয়ে হতো-তাদের দেখভাল করে সিম্পলি জীবনটা কাটিয়ে দিতেন। জয়েন ফ্যামিলি হলে টুকটাক ঝগড়াঝাটি হলেও জীবনটা কিন্তু আরামদায়কই ছিলো। দুর্গা হয়ে সব কাজ এক সামলাতে হতো না। দিন শেষে অন্তত মন খুলে কথা বলার কিছু মানুষ পাওয়া যেতো। ছেলেমেয়ের লেখাপড়া নিয়েও কিন্তু এতটা টেনশন থাকতো না। আর এখন আপনাকে সংসারের আয় রোজগারের পাশাপাশি বাজার করা, বিল দেয়া, দশ রকমের সামাজিকতা-সব একাই সামলাতে হচ্ছে। আপনার স্বামী আছেন তার চাকরি বাকরি আর নিজস্ব জগত নিয়ে-ফলে তার কাছ থেকে তেমন কোনও সাহায্য সহযোগিতা না পাওয়ার সম্ভবনাই বেশি।
আর এখন তো সন্তান মানুষ করাও অনেক কষ্টকর। কেননা কেবল তাদের লেখাপড়ার দিকটি দেখলেই চলে না- সে কার সাথে মিশছে, কোথায় যাচ্ছে, ফেসবুকে কি কি অপকর্ম করছে এইসব নানা হাবিজাবি নজরদারিতে রাখতে হচ্ছে। আর এই কাজগুলো কিন্তু করতে হচ্ছে মায়েদেরকেই। এ কারণেই কিন্তু অনেক মাকে সন্তানের সঙ্গে প্রায় সারা দিন (স্কুল থেকে কোচিং) কাটাতে দেখা যায়।
ছেলেমেয়ে মানুষ হলে বা বড়ো চাকরি করলেই কি সব সমস্যা শেষ? না ভাই, সেইটা কিন্তু একবারও ভাইবেন না। সাবলক ও সাবলম্বী হওয়ার পরর অনেক সন্তানের প্রেম ও বিবাহ সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে মায়েদের নানা রকমের মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়। এরপর তারা নিজেদের সংসারে গেলেই যে আপনার জীবনে শান্তির নহর বইবে-তেমন আশা করা বোকামি। জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও আমি অনেক নারীকে যে কষ্টকর জীবন কাটাতে দেখেছি-তা ভাবলে এখনও গা শিউরে ওঠে। এই লেখায় সেরকমই মাত্র একজন নারীর ঘটনা শেয়ার করছি।
আমার বিল্ডিংয়ের চারতলায় থাকতেন ওই মধ্যবয়সী নারী, যিনি হাউজিংয়ের সবার কাছে ‘বান্টির মা হিসাবেই বেশি পরিচিত ছিলেন। তাকে আমি সামনা সামনি দু একবার দেখেছি। বয়সকালে ডাকসাইটে সুন্দরী ছিলেন-দেখেই বোঝা গেছে। একই সঙ্গে বেশ শৌখিন-তার ঘরে এক নজর চোখ বুলিয়েই জেনে গেছি। নানা রকমের আসবাবপত্র আর দামী গাছগাছালিতে সাজানো তার ফ্ল্যাটটি। স্বামী একসময় অনেক বড় চাকরি করতেন। দুই ছেলের মধ্যে বড়টা সপরিবাবে থাকে আমেরিকায়, ছোটটা তার সঙ্গে। আপাতদৃষ্টিতে সাজানো গোছানো সংসার। কিন্তু আমরা যারা এই হাউজিংয়ে থাকি তারা জানি কতটা কষ্টকর ছিলো তার জীবন। বয়সকালে তারই বাসার গৃহকর্মীকে বিয়ে করেন তার স্বামী। এরপর ওই মেয়েকে নিয়ে অন্যত্র সংসার পাতেন। সেই স্বামীকে ঘরে ফেরাতে কম কষ্ট করতে হয়নি তাকে। শেষে ওই মেয়ের নামে একটা আস্ত ফ্ল্যাট লিখে দিয়ে তবেই স্বামীকে ফিরে পান তিনি। কিন্তু যাকে ফেরালেন তিনি কেমন ছিলেন জানেন! ভদ্রলোক অবসরে যাওয়ার পর অনেকটাই যেন মানসিক বিকারগ্রস্থ হয়ে পড়েন। খাবার দিতে একটু দেরি হলে সব ছুড়ে ফেলতেন, কাজের বুয়াদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতেন। তিনি যখন যে অর্ডার করতেন, সঙ্গে সঙ্গে সেই কাজ করে দিতে হতো। নইলে শুরু হতো অশান্তি। একসময় বড় চাকরি করেছেন, অফিসে পিয়ন আর বয় বেয়ারাদের যেভাবে অর্ডার দিয়েছেন-অবসরে যাওয়ার পরও সেই অভ্যাস গত হয়নি। এটা যে তার অফিস নয়, বাসা-এটা তিনি বুঝতেই চাইতেন না। এজন্য তার বাসায় কোনও বুয়া বেশিদিন থাকতে চাইতো না। ফলে বার বার বান্টির মাকে বুয়া বদলাতে হতো। তারপরও কখনও তাকে কেউ স্বামী কিংবা ছেলের প্রতি বিরক্ত প্রকাশ করতে দেখেনি। মুখ বুঁজেই সয়ে গেছেন তাদের সমস্ত অন্যায় আবদার আর অত্যাচার। এই তো গেলো স্বামীর কথা। ছোট ছেলেটাও কম কষ্ট দেয়নি তাকে। এক ছেলে আমেরিকায়, তাই বুঝি ছোটছেলেটাকে জড়িয়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ছেলেটা বেশি পড়তে পারেনি-কলেজে উঠেই হয়ে গেলো মাদকাসক্ত। মাদকের নেশা আর ছাড়ানো সম্ভব হয়নি। এই ছেলেও মাকে নানাভাবে যন্ত্রণা দিতো। উনিশ থেকে বিশ হলেই ঘরের জিনিসপত্র ভাঙচুর করতো। প্রায় রাতেই ওদের বাসা থেকে চিৎকার চেঁচামেচি ভেসে আসতো। সকালে সিড়ি দিয়ে নামার সময় দেখতাম পড়ে আছে ভাঙা কাচের টুকরা, ফুলের টব আরও নানা জিনিসপাতি। এই ছেলেটাকে শেষে বিয়ে করানোরও চেষ্টা করেছিলেন ওই ভদ্রমহিলা। ছেলেটা দেখতে বেশ সুন্দর, তারওপর তাদের টাকা পয়সা থাকায় অনেক মেয়েই প্রথম প্রথম আগ্রহ দেখাতো। কিন্তু তার নেশার খবর জানার পরই সরে পড়তো।
ঘরে স্বামী আর জোয়ান ছেলে থাকার পরও বাজার করার কেউ ছিলো না তাদের। বান্টির মা কখনও কাজের বুয়া, কখনও বা দারোয়ানদের ধরে বাজার করাতেন। শেষ দিকে অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়েছিলেন বেশ কয়েক বছর। বিছানায় থেকেই সংসারের সব কাজ সামলাতে হতো তাকে। বাজার করানো, রান্না করানো, ঘর গুছানো, ফার্নিচার ঝাড়পোছ, গাছে পানি দেয়া-সব কিছুই ডিকটেশন দিতেন তিনি। আর একটু নিয়মের হেরফের হলেই স্বামী আর পুত্রের চোখ রাঙানি তো ছিলোই। আর এই অবস্থার মধ্যেই গত বছর সংসার থেকে টুক করে ঝরে পড়লেন এই নারী। এখন আর তার সংসারে তেমন কোন ঝামেলা চোখে পড়ে না। বাবা আর ছেলেতে মিলে ভালোই সংসার সামলাচ্ছে। অথচ তিনি বেঁচে থাকতে এক ফোঁটাও শান্তি দেয়নি-না বাপ, না ছেলে।
এই বান্টির মায়ের কথা যত ভাবি-ততই ভারাক্রান্ত হয় মন। যত দিন যাচ্ছে নারীদের উপর দায়িত্বের পাহাড় জড়ো হচ্ছে। ঘরে বাইরে এসব দায়িত্ব সামাল দিতে গিয়ে নিজের জন্য সময়ই বের করতে পারছে না তারা। এই মহামারী পরিস্থিতিতে অনেক পরিবারের অর্থ উপার্জনের দায়টাও তো এসে পড়েছে নারীরই ঘাড়ে। তাই বলে গৃহস্থালীর কাজ কিন্তু ঠিকই আছে তার। আর এইভাবে দুই দায়িত্ব পালন করতে করতে চিড়ে চ্যাপ্টা অবস্থা এক এক জনের। অথচ এই সমাজে নারীর শ্রমের কোনও দাম নাই। এখনও তাদের সাজগোজ আর পোশাক নিয়ে কটাক্ষ করতে ব্যস্ত এই অবিবেচক নিষ্ঠুর সমাজ।
লেখক : সাংবাদিক ও অনুবাদক