ঢাকা ০৭:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫

জীবন যখন ভীষণ কুৎসিত

  • আপডেট সময় : ০৯:৩১:০২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • ১২৯ বার পড়া হয়েছে

ফারজানা কাশেমী : “সমাজ তো আর একদিনে তৈরি হয় নি”!
আহারে জীবন! বিচিত্র বিধিব্যবস্থা। আবহমান নিয়ম, নিয়মের সাথে সঙ্গতি।
জীবনের প্রয়োজন আর সময়ের নিয়মে মানুষ সঙ্গী খুঁজে। সমাজবদ্ধ মানুষের আদি, অকৃত্রিম আশ্রয়স্থল, ঠাঁই, ভরসা তার সঙ্গী।
সঙ্গীহীন ব্যক্তিকে সমাজব্যবস্থার গোড়াপত্তন ধিক্কার জানায় বহুবিধ পন্থায়। সঙ্গীহীন ব্যক্তিকে অনাহুত হিসেবে প্রদর্শন করতে সমাজ ব্যবস্থার বৃদ্ধাঙ্গুলি বেশ পাকাপোক্ত। সঙ্গীহীন মানুষ যেন অশুচি। প্রতিনিয়ত সঙ্গীহীন জীবনকে অপদস্ত করতে বেশ পারদর্শী আমাদের শক্ত মজবুত গাথুনীতে গড়া এই সমাজ। সঙ্গী হিসেবে কে কার যোগ্য বা মানানসই বা ভারসাম্যপূর্ণ তা সমাজ নির্ধারণ করে দিবে। বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গী নির্বাচন করতে তথাকথিত সমাজ অভিজ্ঞ। তাই সঙ্গী নির্বাচন ব্যক্তি চাহিদাকেন্দ্রিক নয়, সমাজের রুচি নির্ভর।
সঙ্গীর যোগ্যতা, অযোগ্যতা, দুর্বলতা, পারদর্শিতাও সমাজ নির্ধারণ করে দিবে। সঙ্গীর বয়স, গোত্র, ধর্ম, বর্ণ নির্ধারণ করবে সমাজ। সমবয়সী সঙ্গী নির্ধারণে সমাজ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়। কম বয়স্ক সঙ্গী নির্বাচনে সমাজ কলুষিত হয়। বয়স্ক সঙ্গী নির্বাচনে সমাজ লোভের ফাঁদ দেখতে পেয়ে লজ্জিত হয়। বিচিত্র সেলুকাস এই সমাজ। এই সমাজে প্রতিটি মানুষ গিনিপিগ। মানুষকে হাস্যরসের উপকরণ করে সমাজ। নিয়মের বেড়াজালে ক্ষণে ক্ষণে এই সমাজ মানুষকে খুন করে। সমাজের ঁেবধে দেওয়া নিয়মে নিস্পেষিত হয় মানুষের জীবন, আয়োজন। সমাজের কোন পরিমিত বোধ নেই। বোধের অভাবে অপূর্ণই রয়ে যায় জীবনের পিছুটান। প্রথাগত বিধিবহির্ভূত মানদ-ের উপস্থাপনা এই সমাজ স্বীকৃতি দিতে অপারগ। তবে মৃত্যুর করুণ ফাঁদে উস্কে দেয়া এই নির্লিপ্ত সমাজ জীবন নাশের অসহায়ত্বে কিছুটা দুঃখবোধ করে।
কলেজ শিক্ষিকা যখন ভালো থাকার সংকুলনে নিজ ছাত্রকে বিয়ে করেন, সে বিয়েতে তাকে হাস্যরসের উপকরণ করে তোলে আমাদের সমাজ। হয়তো সঙ্গীহীন এই শিক্ষিকার একাকী জীবন নিয়ে ও তাকে অসহনীয় যন্ত্রণার শিকার করে এই সমাজ। আজ মধ্যবয়সী এই শিক্ষিকার করুণ মৃত্যুতে তাকে বেঁচে থাকার অজস্র সুন্দর পাঠলিপি দিচ্ছে এই সমাজ। কখনো আবার এই সমাজ অকাতরে জীবন বিলীন হওয়া এই শিক্ষিকার জন্য কিছুটা শোক প্রদর্শন করছে। তথাপি অনুতপ্ত হচ্ছে না সমাজ; বিধিমালা আর সমাজপতি। সমাজের বলির পাঠা হয়ে, ইঁদুর-বিড়াল খেলায় প্রতিদিন গড়ে ২৮ জন মানুষ আতœহত্যা করছে। মৃত্যুর পর হয়তো নির্লজ্জ সমাজ বলে কি সমস্যা একবার তো আমাদের কে বলতে পারতো! ক্ষমাহীন আমাদের সমাজ। আজীবন মানুষ নামক অসহায় প্রাণ দোষী হয়, নির্দোষ এই সমাজ ব্যবস্থায়। ধিক্কার হেরে যাওয়া মানুষদের; যারা গা বাচিঁয়ে চলতে অপারগ। সমাজ শুধু নিয়ম, বিধিনিষেধ আর হিসেবের ছক নয়। সমাজ মানে ব্যক্তি, গোষ্ঠী, শ্রেণি। সমাজ মানে আমি, আপনি, আমরা। তাই বিচারের কাঠগড়ায় আমরা সবাই। অসহায়ত্ব, অপারগতার জঞ্জালে পরিপূর্ণ এই সমাজ আর আমরা তার অধিবাসী।
লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

আচরণবিধি লংঘন করে শাস্তি পেলেন দক্ষিণ আফ্রিকান অলরাউন্ডার

জীবন যখন ভীষণ কুৎসিত

আপডেট সময় : ০৯:৩১:০২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

ফারজানা কাশেমী : “সমাজ তো আর একদিনে তৈরি হয় নি”!
আহারে জীবন! বিচিত্র বিধিব্যবস্থা। আবহমান নিয়ম, নিয়মের সাথে সঙ্গতি।
জীবনের প্রয়োজন আর সময়ের নিয়মে মানুষ সঙ্গী খুঁজে। সমাজবদ্ধ মানুষের আদি, অকৃত্রিম আশ্রয়স্থল, ঠাঁই, ভরসা তার সঙ্গী।
সঙ্গীহীন ব্যক্তিকে সমাজব্যবস্থার গোড়াপত্তন ধিক্কার জানায় বহুবিধ পন্থায়। সঙ্গীহীন ব্যক্তিকে অনাহুত হিসেবে প্রদর্শন করতে সমাজ ব্যবস্থার বৃদ্ধাঙ্গুলি বেশ পাকাপোক্ত। সঙ্গীহীন মানুষ যেন অশুচি। প্রতিনিয়ত সঙ্গীহীন জীবনকে অপদস্ত করতে বেশ পারদর্শী আমাদের শক্ত মজবুত গাথুনীতে গড়া এই সমাজ। সঙ্গী হিসেবে কে কার যোগ্য বা মানানসই বা ভারসাম্যপূর্ণ তা সমাজ নির্ধারণ করে দিবে। বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গী নির্বাচন করতে তথাকথিত সমাজ অভিজ্ঞ। তাই সঙ্গী নির্বাচন ব্যক্তি চাহিদাকেন্দ্রিক নয়, সমাজের রুচি নির্ভর।
সঙ্গীর যোগ্যতা, অযোগ্যতা, দুর্বলতা, পারদর্শিতাও সমাজ নির্ধারণ করে দিবে। সঙ্গীর বয়স, গোত্র, ধর্ম, বর্ণ নির্ধারণ করবে সমাজ। সমবয়সী সঙ্গী নির্ধারণে সমাজ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়। কম বয়স্ক সঙ্গী নির্বাচনে সমাজ কলুষিত হয়। বয়স্ক সঙ্গী নির্বাচনে সমাজ লোভের ফাঁদ দেখতে পেয়ে লজ্জিত হয়। বিচিত্র সেলুকাস এই সমাজ। এই সমাজে প্রতিটি মানুষ গিনিপিগ। মানুষকে হাস্যরসের উপকরণ করে সমাজ। নিয়মের বেড়াজালে ক্ষণে ক্ষণে এই সমাজ মানুষকে খুন করে। সমাজের ঁেবধে দেওয়া নিয়মে নিস্পেষিত হয় মানুষের জীবন, আয়োজন। সমাজের কোন পরিমিত বোধ নেই। বোধের অভাবে অপূর্ণই রয়ে যায় জীবনের পিছুটান। প্রথাগত বিধিবহির্ভূত মানদ-ের উপস্থাপনা এই সমাজ স্বীকৃতি দিতে অপারগ। তবে মৃত্যুর করুণ ফাঁদে উস্কে দেয়া এই নির্লিপ্ত সমাজ জীবন নাশের অসহায়ত্বে কিছুটা দুঃখবোধ করে।
কলেজ শিক্ষিকা যখন ভালো থাকার সংকুলনে নিজ ছাত্রকে বিয়ে করেন, সে বিয়েতে তাকে হাস্যরসের উপকরণ করে তোলে আমাদের সমাজ। হয়তো সঙ্গীহীন এই শিক্ষিকার একাকী জীবন নিয়ে ও তাকে অসহনীয় যন্ত্রণার শিকার করে এই সমাজ। আজ মধ্যবয়সী এই শিক্ষিকার করুণ মৃত্যুতে তাকে বেঁচে থাকার অজস্র সুন্দর পাঠলিপি দিচ্ছে এই সমাজ। কখনো আবার এই সমাজ অকাতরে জীবন বিলীন হওয়া এই শিক্ষিকার জন্য কিছুটা শোক প্রদর্শন করছে। তথাপি অনুতপ্ত হচ্ছে না সমাজ; বিধিমালা আর সমাজপতি। সমাজের বলির পাঠা হয়ে, ইঁদুর-বিড়াল খেলায় প্রতিদিন গড়ে ২৮ জন মানুষ আতœহত্যা করছে। মৃত্যুর পর হয়তো নির্লজ্জ সমাজ বলে কি সমস্যা একবার তো আমাদের কে বলতে পারতো! ক্ষমাহীন আমাদের সমাজ। আজীবন মানুষ নামক অসহায় প্রাণ দোষী হয়, নির্দোষ এই সমাজ ব্যবস্থায়। ধিক্কার হেরে যাওয়া মানুষদের; যারা গা বাচিঁয়ে চলতে অপারগ। সমাজ শুধু নিয়ম, বিধিনিষেধ আর হিসেবের ছক নয়। সমাজ মানে ব্যক্তি, গোষ্ঠী, শ্রেণি। সমাজ মানে আমি, আপনি, আমরা। তাই বিচারের কাঠগড়ায় আমরা সবাই। অসহায়ত্ব, অপারগতার জঞ্জালে পরিপূর্ণ এই সমাজ আর আমরা তার অধিবাসী।
লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ