ঢাকা ০২:৪৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫

জীবন যখন ভীষন কুৎসিত

  • আপডেট সময় : ০১:১৯:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • ১৫৫ বার পড়া হয়েছে

ফারজানা কাশেমী : “সমাজ তো আর একদিনে তৈরী হয় নি”!আহারে জীবন! বিচিত্র বিধিব্যবস্থা। আবহমান নিয়ম, নিয়মের সাথে সংঙ্গতি।জীবনের প্রয়োজন আর সময়ের নিয়মে মানুষ সঙ্গী খুঁজে। সমাজবদ্ধ মানুষের আদি, অকৃত্রিম আশ্রয়স্থল, ঠাই, ভরসা তার সঙ্গী। সঙ্গীহীন ব্যক্তি কে সমাজব্যবস্থার গোড়াপত্তন ধিক্কার জানায় বহুবিধ পন্থায়। সঙ্গীহীন ব্যক্তিকে অনাহুত হিসেবে প্রদর্শন করতে সমাজ ব্যবস্থার বৃদ্ধাঙ্গুলী বেশ পাকাপোক্ত। সঙ্গীহীন মানুষ যেন অশুচি।প্রতিনিয়ত সঙ্গীহীন জীবন কে অপদস্ত করতে বেশ পারদর্শী আমাদের শক্ত মজবুত গাথুনীতে গড়া এই সমাজ। সঙ্গী হিসেবে কে কার যোগ্য বা মানানসই বা ভারসাম্যপূর্ণ তা সমাজ নির্ধারন করে দিবে। বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গী নির্বাচন করতে তথাকথিত সমাজ অভিজ্ঞ। তাই সঙ্গী নির্বাচন ব্যক্তি চাহিদা কেন্দ্রিক নয়, সমাজের রুচি নির্ভর। সঙ্গীর যোগ্যতা, অযোগ্যতা, দুর্বলতা, পারদর্শীতা ও সমাজ নির্ধারন করে দিবে। সঙ্গীর বয়স, গোত্র, ধর্ম, বর্ণ নির্ধারণ করবে সমাজ। সম বয়সী সঙ্গী নির্ধারনে সমাজ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়। কম বয়স্ক সঙ্গী নির্বাচনে সমাজ কুলসিত হয়। বয়স্ক সঙ্গী নির্বাচনে সমাজ লোভের ফাঁদ দেখতে পেয়ে লজ্জিত হয়। বিচিত্র সেলুকাস এই সমাজ। এই সমাজে প্রতিটি মানুষ গিনিপিগ। মানুষকে হাস্যরসের উপকরণ করে সমাজ।নিয়মের বেড়াজালে ক্ষণে ক্ষণে এই সমাজ মানুষ কে খুন করে। সমাজের বেধে দেওয়া নিয়মে নিস্পেসিত হয় মানুষের জীবন, আয়োজন। সমাজের কোন পরিমিত বোধ নেই। বোধের অভাবে অপূর্ণই রয়ে যায় জীবনের পিছুটান। প্রথাগত বিধিবহির্ভূত মানদ-ের উপস্থাপনা এই সমাজ স্বীকৃতি দিতে অপারগ। তবে মৃত্যুর করুন ফাঁদে উস্কে দেয়া এই নিলিপ্ত সমাজ জীবন নাশের অসহায়ত্বে কিছুটা দুঃখবোধ করে। কলেজ শিক্ষিকা যখন ভালো থাকার সংকুলনে নিজ ছাত্র কে বিয়ে সে বিয়েতে তাকে হাস্যরসের উপকরণ করে তুলে আমাদের সমাজ। হয়তো সঙ্গীহীন এই শিক্ষিকার একাকী জীবন নিয়ে ও তাকে অসহনীয় যন্ত্রণার শিকার করে এই সমাজ। আজ মধ্যবয়সী এই শিক্ষিকার করুণ মৃত্যুতে তাকে বেঁচে থাকার অজস্র সুন্দর পাঠলিপি দিচ্ছে এই সমাজ। কখনো আবার এই সমাজ অকাতরে জীবন বিলীন হওয়া এই শিক্ষিকার জন্য কিছুটা শোক প্রদর্শন করছে। তথাপি অনুতপ্ত হচ্ছে না সমাজ, বিধিমালা আর সমাজপতি। সমাজের বলির পাঠা হয়ে, ঈদূর বিড়াল খেলায় প্রতিদিন গড়ে ২৮ জন মানুষ আতœহত্যা করছে। মৃত্যুর পর হয়তো নিলজ্জ সমাজ বলে কি সমস্যা একবার তো আমাদের কে বলতে পারত! ক্ষমাহীন আমাদের সমাজ। আজীবন মানুষ নামক অসহায় প্রাণ দোষী হয় নির্দোষ এই সমাজ ব্যবস্থায়। ধিক্কার হেরে যাওয়া মানুষদের যারা গা বাচিঁয়ে চলতে অপারগ। সমাজ শুধু নিয়ম, বিধিনিষেধ আর হিসেবের ছক নয়। সমাজ মানে ব্যক্তি, গোষ্ঠী, শ্রেণী। সমাজ মানে আমি, আপনি, আমরা। তাই বিচারের কাঠগড়ায় আমরা সবাই। অসহায়ত্ব, অপারগতার জঞ্জালে পরিপূর্ণ এই সমাজ আর আমরা তার অধিবাসী।

ফারজানা কাশেমী
আইনজীবী
সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

জীবন যখন ভীষন কুৎসিত

আপডেট সময় : ০১:১৯:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২

ফারজানা কাশেমী : “সমাজ তো আর একদিনে তৈরী হয় নি”!আহারে জীবন! বিচিত্র বিধিব্যবস্থা। আবহমান নিয়ম, নিয়মের সাথে সংঙ্গতি।জীবনের প্রয়োজন আর সময়ের নিয়মে মানুষ সঙ্গী খুঁজে। সমাজবদ্ধ মানুষের আদি, অকৃত্রিম আশ্রয়স্থল, ঠাই, ভরসা তার সঙ্গী। সঙ্গীহীন ব্যক্তি কে সমাজব্যবস্থার গোড়াপত্তন ধিক্কার জানায় বহুবিধ পন্থায়। সঙ্গীহীন ব্যক্তিকে অনাহুত হিসেবে প্রদর্শন করতে সমাজ ব্যবস্থার বৃদ্ধাঙ্গুলী বেশ পাকাপোক্ত। সঙ্গীহীন মানুষ যেন অশুচি।প্রতিনিয়ত সঙ্গীহীন জীবন কে অপদস্ত করতে বেশ পারদর্শী আমাদের শক্ত মজবুত গাথুনীতে গড়া এই সমাজ। সঙ্গী হিসেবে কে কার যোগ্য বা মানানসই বা ভারসাম্যপূর্ণ তা সমাজ নির্ধারন করে দিবে। বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গী নির্বাচন করতে তথাকথিত সমাজ অভিজ্ঞ। তাই সঙ্গী নির্বাচন ব্যক্তি চাহিদা কেন্দ্রিক নয়, সমাজের রুচি নির্ভর। সঙ্গীর যোগ্যতা, অযোগ্যতা, দুর্বলতা, পারদর্শীতা ও সমাজ নির্ধারন করে দিবে। সঙ্গীর বয়স, গোত্র, ধর্ম, বর্ণ নির্ধারণ করবে সমাজ। সম বয়সী সঙ্গী নির্ধারনে সমাজ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়। কম বয়স্ক সঙ্গী নির্বাচনে সমাজ কুলসিত হয়। বয়স্ক সঙ্গী নির্বাচনে সমাজ লোভের ফাঁদ দেখতে পেয়ে লজ্জিত হয়। বিচিত্র সেলুকাস এই সমাজ। এই সমাজে প্রতিটি মানুষ গিনিপিগ। মানুষকে হাস্যরসের উপকরণ করে সমাজ।নিয়মের বেড়াজালে ক্ষণে ক্ষণে এই সমাজ মানুষ কে খুন করে। সমাজের বেধে দেওয়া নিয়মে নিস্পেসিত হয় মানুষের জীবন, আয়োজন। সমাজের কোন পরিমিত বোধ নেই। বোধের অভাবে অপূর্ণই রয়ে যায় জীবনের পিছুটান। প্রথাগত বিধিবহির্ভূত মানদ-ের উপস্থাপনা এই সমাজ স্বীকৃতি দিতে অপারগ। তবে মৃত্যুর করুন ফাঁদে উস্কে দেয়া এই নিলিপ্ত সমাজ জীবন নাশের অসহায়ত্বে কিছুটা দুঃখবোধ করে। কলেজ শিক্ষিকা যখন ভালো থাকার সংকুলনে নিজ ছাত্র কে বিয়ে সে বিয়েতে তাকে হাস্যরসের উপকরণ করে তুলে আমাদের সমাজ। হয়তো সঙ্গীহীন এই শিক্ষিকার একাকী জীবন নিয়ে ও তাকে অসহনীয় যন্ত্রণার শিকার করে এই সমাজ। আজ মধ্যবয়সী এই শিক্ষিকার করুণ মৃত্যুতে তাকে বেঁচে থাকার অজস্র সুন্দর পাঠলিপি দিচ্ছে এই সমাজ। কখনো আবার এই সমাজ অকাতরে জীবন বিলীন হওয়া এই শিক্ষিকার জন্য কিছুটা শোক প্রদর্শন করছে। তথাপি অনুতপ্ত হচ্ছে না সমাজ, বিধিমালা আর সমাজপতি। সমাজের বলির পাঠা হয়ে, ঈদূর বিড়াল খেলায় প্রতিদিন গড়ে ২৮ জন মানুষ আতœহত্যা করছে। মৃত্যুর পর হয়তো নিলজ্জ সমাজ বলে কি সমস্যা একবার তো আমাদের কে বলতে পারত! ক্ষমাহীন আমাদের সমাজ। আজীবন মানুষ নামক অসহায় প্রাণ দোষী হয় নির্দোষ এই সমাজ ব্যবস্থায়। ধিক্কার হেরে যাওয়া মানুষদের যারা গা বাচিঁয়ে চলতে অপারগ। সমাজ শুধু নিয়ম, বিধিনিষেধ আর হিসেবের ছক নয়। সমাজ মানে ব্যক্তি, গোষ্ঠী, শ্রেণী। সমাজ মানে আমি, আপনি, আমরা। তাই বিচারের কাঠগড়ায় আমরা সবাই। অসহায়ত্ব, অপারগতার জঞ্জালে পরিপূর্ণ এই সমাজ আর আমরা তার অধিবাসী।

ফারজানা কাশেমী
আইনজীবী
সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ