নিজস্ব প্রতিবেদক : বাণিজ্যিক সহযোগিতা সম্প্রসারণে বাংলাদেশ ও কম্বোডিয়ার মধ্যে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে গত বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কের হোটেল লোটে প্যালেসে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। পরে রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “কম্বোডিয়ার সাথে বাণিজ্য সহযোগিতার ক্ষেত্র আরও প্রসারের লক্ষ্যে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট করার প্রস্তাব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রীও তাতে একমত পোষণ করেন।” মোমেন বলেন, বাংলাদেশ ও কম্বোডিয়ার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিষয়গুলো নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। তা ছাড়া কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে চাল রপ্তানির বিষয়ে একটি চুক্তি করার আগ্রহ দেখান।
সেই সাথে কম্বোডিয়ায় কৃষিভিত্তিক বিনিয়োগ, ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানান হুন সেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী জানান, তাদের অনেক জমি পড়ে আছে, তাদের আবহাওয়াটাও ভালো। বৃষ্টি হয়, নদীও আছে। “তারা সেইজন্য আমাদের অনেক দিন ধরেই বলছে, তাদের ওখানে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা গিয়ে জমি নিতে পারেন। সেইখানে শস্য উৎপাদন করতে পারেন এবং সেগুলো তারা ওই দেশেও বিক্রি করতে পারে, বাংলাদেশেও বিক্রি করতে পারেন। সেই সুযোগ তারা আমাদের দেবে।”
কম্বোডিয়ায় বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি আছেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, তারা বিভিন্ন নির্মাণ কাজ, আইটি খাতে নিয়োজিত রয়েছেন। “আসিয়ানের সভাপতি হিসেবে কম্বোডিয়া রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সকল প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করেছে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী।”
কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতুর খুব প্রশংসা করেছেন জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে মোমেন বলেন, “তিনি বললেন যে, তারও অনেকগুলো সেতু গড়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু কোভিডের কারণে সেতুগুলো হয়নি।
“মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উনাকে বললেন যে, আমাদের এই ব্যাপারে অভিজ্ঞ লোক রয়েছে সেতু বানানোর। আপনার প্রয়োজনে আমরা তাদের পাঠাব। আপনি চাইলে আমরা সেটা দিতে পারি।” কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মহাপরিচালক আন্তোনিও ভিতোরিনো এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করেন। মোমেন বলেন, “প্রধানমন্ত্রী তাকে (ভিতোরিনো) বলেন, কোভিড মহামারী ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী অভিবাসী প্রেরণকারী দেশগুলো বেশকিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য কার্যকর সুপারিশ দিয়ে আইওএম সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে সহযোগিতা করতে পারে।” এ ছাড়া লিবিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশে পাচারের শিকার বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য আইওএমকে ধন্যবাদ জানান বাংলাদেশের সরকারপ্রধান। মোমেন বলেন, আইওএম মহাপরিচালক অভিবাসীদের কল্যাণের জন্য বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করেন এবং ভবিষ্যতে সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো আরো প্রসারিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদিন কসোভোর প্রেসিডেন্ট ভিজোসা ওসমানি সদরিউর সঙ্গেও বৈঠক করেন। বাংলাদেশ ও কসোভোর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হয় তাদের মধ্যে। এছাড়া বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধিরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করেন বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
কম্বোডিয়ার সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ