ঢাকা ০৪:১২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫

শিশুর মুটিয়ে যাওয়া নিয়ে যা জানা জরুরি

  • আপডেট সময় : ১১:৪৫:০৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • ৯০ বার পড়া হয়েছে

ফাতেমা সিদ্দিকী ছন্দা : বিশ্বজুড়েই চোখে পড়ার মতো বেড়েছে শিশুর মুটিয়ে যাওয়ার প্রবণতা যা চাইল্ডহুড ওবেসিটি নামে পরিচিত। শিশু, কিশোর বা প্রাপ্তবয়স্ক সবার জন্যই মুটিয়ে যাওয়া একটি মারাত্মক হেলথ কনসার্ন। ছোট বয়স থেকেই অতিরিক্ত ওজনের সমস্যা থাকলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
চাইল্ডহুড ওবেসিটি কী : চাইল্ড ওবেসিটি একটি জটিল রোগ। এই অবস্থায় শিশুর ওজন তার বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী অনেক বেড়ে যায়। শিশুর মেটাবলিক ইনডেক্স যদি ৯৫ পার্সেন্টাইলের ওপরে চলে যায়, তবে শিশুর ওবেসিটি হিসেবে গণ্য করা হয়। এটি বেসাল মেটাবলিক পার্সেন্টাইল চার্ট ব্যবহার করে মাপা হয়। এছাড়া যদি শিশুর ওজন তার জন্য নির্দিষ্ট মাপের থেকে ২০ শতাংশ বেশি হয়, তাহলে বুঝবেন বাচ্চার ওবেসিটির সমস্যা রয়েছে। এই রোগের কারণে নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। করোনারি হার্ট ডিসিজ, ফ্যাটি লিভার, ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশনের মতো জটিল শারীরিক সমস্যা কিংবা উদ্বেগ, হতাশা অথবা আতœবিশ্বাস কমে যাওয়ার মতো সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে মুটিয়ে যাওয়া শিশু। এছাড়া অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে যাওয়া কিংবা সহপাঠীদের বুলিংয়ের স্বীকার হওয়াও ওবেস শিশুর জন্য স্বাভাবিক।
কী কারণে শিশু মুটিয়ে যায়? শিশু অনেক কারণেই মুটিয়ে যেতে পারে। বাবা মাকে মনে রাখতে হবে যে একবার ওজন বাড়া শুরু হলে তা প্রতিরোধ করা খুব কঠিন। তাই কারণগুলো জেনে ওজন বাড়ার আগেই সচেতন হওয়া জরুরি।
কৌটার দুধ খাওয়ানো : বুকের দুধ না খাওয়ানোর কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে শিশুর ওজন বেড়ে যেতে পারে। অনেক সময় কৌটার দুধ শিশুর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমায় ও স্থূলতা বাড়ায়।
অস্বাস্থ্যকর খাবারে অভ্যস্ত করে তোলা : সঠিকভাবে পরিপূরক খাবারের সঙ্গে শিশুকে পরিচিত না করানো আরেকটি কারণ। শিশুর বয়স ৬ মাস হলে ধীরে ধীরে তাকে বাইরের খাবারের সঙ্গে পরিচিত করতে হবে। এ সময় খাদ্য তালিকায় স্বাস্থ্যকর খাবার রাখতে হবে। শিশু খেতে না চাইলেই তাকে বাইরের খাবার দেওয়া যাবে না। এতে ধীরে ধীরে শিশু স্বাভাবিক খাবারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে ও বাইরের খাবারে অভ্যস্ত হয়ে যায়। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে শিশু মুটিয়ে যায়।
শিশুকে গ্যাজেট দেখিয়ে খাওয়ানো : আজকাল অনেক বাবা মা মোবাইল বা টিভি দেখিয়ে দেখিয়ে শিশুকে খাওয়ান। এই অভ্যস্ততার কারণে শিশু কিছুটা বড় হলে টিভি কিংবা মোবাইলের দিকে মনোযোগের কারণে পরিমাণে বেশি খেয়ে ফেলে। ফলে বেড়ে যায় মেদ।
খেলাধুলার প্রবণতা কমে যাওয়া : মোবাইলে গেম খেলা, ইউটিউব দেখা কিংবা টিভি দেখার আধিক্য বেড়ে যাওয়ায় আজকাল শিশুদের পরিশ্রম করে খেলার প্রবণতা কমে গেছে। এছাড়া খেলার মাঠের অপ্রতুলতা ও সঙ্গীর অভাবেও শিশুরা খেলাধুলা বিমুখ হয়ে পড়েছে। চাইল্ডহুড ওবেসিটি বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ এটি।
করণীয় : শিশুর মুটিয়ে যাওয়া আটকাতে বাবা-মাকে সচেতন হতে হবে। বুকে পর্যাপ্ত দুধ থাকলে ৬ মাস পর্যন্ত শিশুকে বুকের দুধের বাইরে আর কোনও খাবার দেবেন না। এরপর তাকে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে উৎসাহ দিন। সুন্দর করে সাজিয়ে খাবার পরিবেশন করুন ও গল্প বলতে বলতে খাওয়ানোর অভ্যাস করুন। শিশুকে নিজ হাতে খেতে দিলেও খাবারের প্রতি তার আগ্রহ বাড়বে। জাঙ্ক ফুড বা বাইরের খাবার যতটুকু সম্ভব এড়িয়ে চলবেন। শিশু জাঙ্ক ফুড খেতে চাইলে দুই সপ্তাহে একদিন বা মাসে দুইবার এভাবে রুটিন বেধে দিন। টিভি দেখতে দেখতে খাওয়া ও চিপস, কোল্ডড্রিংক খাওয়ার অভ্যাস প্রশ্রয় দেবেন না। শিশুকে খেলাধুলায় উৎসাহ দিন।
লেখক: ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান অ্যান্ড নিউট্রিশানিস্ট

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

শিশুর মুটিয়ে যাওয়া নিয়ে যা জানা জরুরি

আপডেট সময় : ১১:৪৫:০৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২

ফাতেমা সিদ্দিকী ছন্দা : বিশ্বজুড়েই চোখে পড়ার মতো বেড়েছে শিশুর মুটিয়ে যাওয়ার প্রবণতা যা চাইল্ডহুড ওবেসিটি নামে পরিচিত। শিশু, কিশোর বা প্রাপ্তবয়স্ক সবার জন্যই মুটিয়ে যাওয়া একটি মারাত্মক হেলথ কনসার্ন। ছোট বয়স থেকেই অতিরিক্ত ওজনের সমস্যা থাকলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
চাইল্ডহুড ওবেসিটি কী : চাইল্ড ওবেসিটি একটি জটিল রোগ। এই অবস্থায় শিশুর ওজন তার বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী অনেক বেড়ে যায়। শিশুর মেটাবলিক ইনডেক্স যদি ৯৫ পার্সেন্টাইলের ওপরে চলে যায়, তবে শিশুর ওবেসিটি হিসেবে গণ্য করা হয়। এটি বেসাল মেটাবলিক পার্সেন্টাইল চার্ট ব্যবহার করে মাপা হয়। এছাড়া যদি শিশুর ওজন তার জন্য নির্দিষ্ট মাপের থেকে ২০ শতাংশ বেশি হয়, তাহলে বুঝবেন বাচ্চার ওবেসিটির সমস্যা রয়েছে। এই রোগের কারণে নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। করোনারি হার্ট ডিসিজ, ফ্যাটি লিভার, ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশনের মতো জটিল শারীরিক সমস্যা কিংবা উদ্বেগ, হতাশা অথবা আতœবিশ্বাস কমে যাওয়ার মতো সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে মুটিয়ে যাওয়া শিশু। এছাড়া অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে যাওয়া কিংবা সহপাঠীদের বুলিংয়ের স্বীকার হওয়াও ওবেস শিশুর জন্য স্বাভাবিক।
কী কারণে শিশু মুটিয়ে যায়? শিশু অনেক কারণেই মুটিয়ে যেতে পারে। বাবা মাকে মনে রাখতে হবে যে একবার ওজন বাড়া শুরু হলে তা প্রতিরোধ করা খুব কঠিন। তাই কারণগুলো জেনে ওজন বাড়ার আগেই সচেতন হওয়া জরুরি।
কৌটার দুধ খাওয়ানো : বুকের দুধ না খাওয়ানোর কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে শিশুর ওজন বেড়ে যেতে পারে। অনেক সময় কৌটার দুধ শিশুর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমায় ও স্থূলতা বাড়ায়।
অস্বাস্থ্যকর খাবারে অভ্যস্ত করে তোলা : সঠিকভাবে পরিপূরক খাবারের সঙ্গে শিশুকে পরিচিত না করানো আরেকটি কারণ। শিশুর বয়স ৬ মাস হলে ধীরে ধীরে তাকে বাইরের খাবারের সঙ্গে পরিচিত করতে হবে। এ সময় খাদ্য তালিকায় স্বাস্থ্যকর খাবার রাখতে হবে। শিশু খেতে না চাইলেই তাকে বাইরের খাবার দেওয়া যাবে না। এতে ধীরে ধীরে শিশু স্বাভাবিক খাবারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে ও বাইরের খাবারে অভ্যস্ত হয়ে যায়। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে শিশু মুটিয়ে যায়।
শিশুকে গ্যাজেট দেখিয়ে খাওয়ানো : আজকাল অনেক বাবা মা মোবাইল বা টিভি দেখিয়ে দেখিয়ে শিশুকে খাওয়ান। এই অভ্যস্ততার কারণে শিশু কিছুটা বড় হলে টিভি কিংবা মোবাইলের দিকে মনোযোগের কারণে পরিমাণে বেশি খেয়ে ফেলে। ফলে বেড়ে যায় মেদ।
খেলাধুলার প্রবণতা কমে যাওয়া : মোবাইলে গেম খেলা, ইউটিউব দেখা কিংবা টিভি দেখার আধিক্য বেড়ে যাওয়ায় আজকাল শিশুদের পরিশ্রম করে খেলার প্রবণতা কমে গেছে। এছাড়া খেলার মাঠের অপ্রতুলতা ও সঙ্গীর অভাবেও শিশুরা খেলাধুলা বিমুখ হয়ে পড়েছে। চাইল্ডহুড ওবেসিটি বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ এটি।
করণীয় : শিশুর মুটিয়ে যাওয়া আটকাতে বাবা-মাকে সচেতন হতে হবে। বুকে পর্যাপ্ত দুধ থাকলে ৬ মাস পর্যন্ত শিশুকে বুকের দুধের বাইরে আর কোনও খাবার দেবেন না। এরপর তাকে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে উৎসাহ দিন। সুন্দর করে সাজিয়ে খাবার পরিবেশন করুন ও গল্প বলতে বলতে খাওয়ানোর অভ্যাস করুন। শিশুকে নিজ হাতে খেতে দিলেও খাবারের প্রতি তার আগ্রহ বাড়বে। জাঙ্ক ফুড বা বাইরের খাবার যতটুকু সম্ভব এড়িয়ে চলবেন। শিশু জাঙ্ক ফুড খেতে চাইলে দুই সপ্তাহে একদিন বা মাসে দুইবার এভাবে রুটিন বেধে দিন। টিভি দেখতে দেখতে খাওয়া ও চিপস, কোল্ডড্রিংক খাওয়ার অভ্যাস প্রশ্রয় দেবেন না। শিশুকে খেলাধুলায় উৎসাহ দিন।
লেখক: ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান অ্যান্ড নিউট্রিশানিস্ট