ঢাকা ০৩:৫৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

অ্যাপল ডেইলির শেষ সংস্করণ কিনতে হংকংবাসীদের ভিড়

  • আপডেট সময় : ১১:৫৫:৩৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুন ২০২১
  • ৫৬ বার পড়া হয়েছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থি সংবাদপত্র অ্যাপল ডেইলির সর্বশেষ সংখ্যার কপি কিনতে গতকাল বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় ভোররাতে ভিড় করেছিলেন শহরটির বাসিন্দারা। জাতীয় নিরাপত্তা আইনের কঠোর ব্যবস্থার লক্ষ্যে পরিণত হওয়ায় প্রতিষ্ঠার ২৬ বছর পর এদিন শেষ সংখ্যা প্রকাশের মধ্য দিয়ে জনপ্রিয় এই সংবাদপত্রটি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সংবাদপত্রটির জন্য এর সমর্থকদের মধ্যে প্রবল আবেগের প্রকাশ দেখা গেছে, শেষ সংখ্যার জন্য মধ্যরাতের পর থেকেই তারা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ভোররাতে হংকংয়ের শ্রমজীবীদের আবাসিক এলাকা মংককে একটি সংবাদপত্রের দোকানের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা সেই (৬০) বলেন, ‘গত কয়েক রাত আমি ভালোভাবে ঘুমাতে পারিনি। আশা করছি প্রতিবেদকরা তাদের বিশ্বাসের প্রতি সৎ থাকবেন এবং কঠোর পরিশ্রম করে যাবেন।’ গতকাল বৃহস্পতিবার অ্যাপল ডেইলি ১০ লাখ কপি ছাপানো হয়েছে, এ সংখ্যা নিয়মিত চলিত সংখ্যার চেয়ে ১০ গুণেরও বেশি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
এই সংবাদপত্রটির বন্ধ হয়ে যাওয়াকে চীন নিয়ন্ত্রিত হংকংয়ের গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বড় ধরনের ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। গত বছর বেইজিং নগরীটির ওপর নিরাপত্তা আইন আরোপ করার পর এর চাপে অবাধ ও উন্মুক্ত গণমাধ্যমের কেন্দ্র হিসেবে হংকংয়ের মর্যাদা নষ্ট হতে চলেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত বছরের অগাস্টে সংবাদপত্রটির মালিক বেইজিংয়ের কট্টর সমালোচক ধনকুবের জিমি লাইকে গ্রেপ্তারের পর থেকেই অ্যাপল ডেইলি চাপে ছিল। সমালোচকরা বলছেন, সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশ হংকংয়ের ভিন্নমতাবলম্বীদের দমনের জন্য নিরাপত্তা আইনটি ব্যবহার করা হচ্ছে; কিন্তু সমালোচকদের এ অভিযোগ বেইজিং ও হংকংয়ের কর্তৃপক্ষগুলো প্রত্যাখ্যান করেছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি তারা শ্রদ্ধাশীল হলেও তা সীমাহীন নয়, হংকং ও চীনের কর্মকর্তারা এমনটিই বলে আসছেন।
পত্রিকাটির বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন জাতীয় নিরাপত্তা আইন ভঙ্গ করেছে এমন অভিযোগে গত সপ্তাহে অ্যাপল ডেইলির কার্যালয়ে হংকংয়ের পুলিশ অভিযান চালায়। জাতীয় নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে হংকংয়ে সংবাদপত্র কার্যালয়ে সেই ছিল প্রথম পুলিশি অভিযান। ওই দিন পুলিশের ৫০০ সদস্য সংবাদপত্রটির বার্তাকক্ষে প্রবেশ করে।
তারা সাংবাদিকদের কম্পিউটার ও নোটবুক তল্লাশি করে এবং পাঁচ জন নির্বাহী কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে। বার্তাকক্ষের কম্পিউটারগুলোর সামনেও পুলিশ কর্মকর্তাদের বসে থাকতে দেখা যায়। পরে কোম্পানি সংশ্লিষ্ট এক কোটি ৮০ লাখ হংকং ডলারের সম্পদও জব্দ করা হয়; গ্রেপ্তার করা হয় পত্রিকাটির প্রধান সম্পাদককে। ট্যাবলয়েড এ পত্রিকাটি চীন ও হংকংয়ের শাসকদের সমালোচনায় মুখর ছিল। এর প্রতিষ্ঠাতা জিমি লাই একাধিক অভিযোগ মাথায় নিয়ে আগে থেকেই কারাগারে দিন কাটাচ্ছেন।
অ্যাপল ডেইলি এর আগে তাদের পত্রিকার কার্যক্রম চলবে না বন্ধ হবে সে বিষয়ে শুক্রবার এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছিল; কিন্তু তার দুই দিন আগেই বুধবার মূল কোম্পানির কাছ থেকে ট্যাবলয়েডটি বন্ধের ঘোষণা আসে। সম্পদ জব্দের কারণে হাতে থাকা সামান্য অর্থ দিয়ে ‘মাত্র কয়েক সপ্তাহ’ স্বাভাবিক কার্যক্রম চালানো সম্ভব বলে সেসময় জানিয়েছিল তারা।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

অ্যাপল ডেইলির শেষ সংস্করণ কিনতে হংকংবাসীদের ভিড়

আপডেট সময় : ১১:৫৫:৩৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুন ২০২১

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থি সংবাদপত্র অ্যাপল ডেইলির সর্বশেষ সংখ্যার কপি কিনতে গতকাল বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় ভোররাতে ভিড় করেছিলেন শহরটির বাসিন্দারা। জাতীয় নিরাপত্তা আইনের কঠোর ব্যবস্থার লক্ষ্যে পরিণত হওয়ায় প্রতিষ্ঠার ২৬ বছর পর এদিন শেষ সংখ্যা প্রকাশের মধ্য দিয়ে জনপ্রিয় এই সংবাদপত্রটি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সংবাদপত্রটির জন্য এর সমর্থকদের মধ্যে প্রবল আবেগের প্রকাশ দেখা গেছে, শেষ সংখ্যার জন্য মধ্যরাতের পর থেকেই তারা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ভোররাতে হংকংয়ের শ্রমজীবীদের আবাসিক এলাকা মংককে একটি সংবাদপত্রের দোকানের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা সেই (৬০) বলেন, ‘গত কয়েক রাত আমি ভালোভাবে ঘুমাতে পারিনি। আশা করছি প্রতিবেদকরা তাদের বিশ্বাসের প্রতি সৎ থাকবেন এবং কঠোর পরিশ্রম করে যাবেন।’ গতকাল বৃহস্পতিবার অ্যাপল ডেইলি ১০ লাখ কপি ছাপানো হয়েছে, এ সংখ্যা নিয়মিত চলিত সংখ্যার চেয়ে ১০ গুণেরও বেশি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
এই সংবাদপত্রটির বন্ধ হয়ে যাওয়াকে চীন নিয়ন্ত্রিত হংকংয়ের গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বড় ধরনের ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। গত বছর বেইজিং নগরীটির ওপর নিরাপত্তা আইন আরোপ করার পর এর চাপে অবাধ ও উন্মুক্ত গণমাধ্যমের কেন্দ্র হিসেবে হংকংয়ের মর্যাদা নষ্ট হতে চলেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত বছরের অগাস্টে সংবাদপত্রটির মালিক বেইজিংয়ের কট্টর সমালোচক ধনকুবের জিমি লাইকে গ্রেপ্তারের পর থেকেই অ্যাপল ডেইলি চাপে ছিল। সমালোচকরা বলছেন, সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশ হংকংয়ের ভিন্নমতাবলম্বীদের দমনের জন্য নিরাপত্তা আইনটি ব্যবহার করা হচ্ছে; কিন্তু সমালোচকদের এ অভিযোগ বেইজিং ও হংকংয়ের কর্তৃপক্ষগুলো প্রত্যাখ্যান করেছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি তারা শ্রদ্ধাশীল হলেও তা সীমাহীন নয়, হংকং ও চীনের কর্মকর্তারা এমনটিই বলে আসছেন।
পত্রিকাটির বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন জাতীয় নিরাপত্তা আইন ভঙ্গ করেছে এমন অভিযোগে গত সপ্তাহে অ্যাপল ডেইলির কার্যালয়ে হংকংয়ের পুলিশ অভিযান চালায়। জাতীয় নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে হংকংয়ে সংবাদপত্র কার্যালয়ে সেই ছিল প্রথম পুলিশি অভিযান। ওই দিন পুলিশের ৫০০ সদস্য সংবাদপত্রটির বার্তাকক্ষে প্রবেশ করে।
তারা সাংবাদিকদের কম্পিউটার ও নোটবুক তল্লাশি করে এবং পাঁচ জন নির্বাহী কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে। বার্তাকক্ষের কম্পিউটারগুলোর সামনেও পুলিশ কর্মকর্তাদের বসে থাকতে দেখা যায়। পরে কোম্পানি সংশ্লিষ্ট এক কোটি ৮০ লাখ হংকং ডলারের সম্পদও জব্দ করা হয়; গ্রেপ্তার করা হয় পত্রিকাটির প্রধান সম্পাদককে। ট্যাবলয়েড এ পত্রিকাটি চীন ও হংকংয়ের শাসকদের সমালোচনায় মুখর ছিল। এর প্রতিষ্ঠাতা জিমি লাই একাধিক অভিযোগ মাথায় নিয়ে আগে থেকেই কারাগারে দিন কাটাচ্ছেন।
অ্যাপল ডেইলি এর আগে তাদের পত্রিকার কার্যক্রম চলবে না বন্ধ হবে সে বিষয়ে শুক্রবার এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছিল; কিন্তু তার দুই দিন আগেই বুধবার মূল কোম্পানির কাছ থেকে ট্যাবলয়েডটি বন্ধের ঘোষণা আসে। সম্পদ জব্দের কারণে হাতে থাকা সামান্য অর্থ দিয়ে ‘মাত্র কয়েক সপ্তাহ’ স্বাভাবিক কার্যক্রম চালানো সম্ভব বলে সেসময় জানিয়েছিল তারা।