ঢাকা ০৯:১০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫

২০২২ কি ইতিহাসের সবচেয়ে শুষ্ক বছর?

  • আপডেট সময় : ০২:৩৮:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • ১২৬ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : চলতি গ্রীষ্মে ইউরোপ ও চীনের অনেক অংশ তাপমাত্রার চরম অবস্থা দেখছে, আফ্রিকার শুষ্কতা লাখ লাখ মানুষকে অনাহারের ঝুঁকিতে ফেলেছে আর দীর্ঘদিন ধরেই পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের ঘাটতিতে ভুগছে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চল। আরও উষ্ণ ও শুষ্ক মৌসুম দিন দিন স্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে বলে বিজ্ঞানীরা জানালেও বিগত কয়েক মাস লিখিত ইতিহাসের সবচেয়ে শুষ্ক মাস কিনা, বিবিসির এক প্রতিবেদনে তারই বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখা হয়েছে।
পৃথিবী কতটা শুষ্ক? শুষ্কতা পরিমাপের জন্য বিজ্ঞানীরা যেসব পদ্ধতি ব্যবহার করেন, তার একটিতে উপগ্রহের ছবির সাহায্যে মাটির আর্দ্রতা পরিমাপ করা।ওই পদ্ধতিতে গত তিন মাসের শুষ্কতার সঙ্গে এই শতাব্দীর শুরু থেকে এ পর্যন্ত গড় শুষ্কতার তুলনা করে সাম্প্রতিক চরম আবহাওয়ার প্যাটার্নের একটি চিত্র হাজির করার চেষ্টা করেছে বিবিসি।
দেখা গেছে, ইউরোপের বেশিরভাগ অংশে চলতি গ্রীষ্মে ২০০১ থেকে ২০১৬ সালের গড়ের তুলনায় বেশি শুষ্ক পরিস্থিতি দেখা গেছে। এর বাইরে চীনের পশ্চিম অংশও তীব্র শুষ্ক পরিস্থিতি দেখছে, অনেক এলাকা ভয়াবহ খরায় ভুগছে। সাহারা মরুভূমি সংলগ্ন আফ্রিকার কিছু অংশ এবং যুক্তরাষ্ট্রও গুরুতর শুষ্ক পরিস্থিতি পার করছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিবেশগত কর্মসূচি কোপার্নিকাসের তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপের এবারের গ্রীষ্মের খরা সম্ভবত মহাদেশটির ৫০০ বছরের ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে খরা।
আগস্টের শেষভাগে এই শুষ্ক মৌসুমের ‘সর্বোচ্চ পর্যায়ে’ ইউরোপের প্রায় অর্ধেকই ‘মাটির আর্দ্রতার ঘাটতি’ দেখেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ইউরোপ আরও বেশি ও লাগাতার খরা দেখতে পাবে। আর চলতি বছরের শুষ্ক পরিস্থিতি কৃষি, পরিবহন ও জ্বালানি উৎপাদনে প্রভাব ফেলবে।
ইউরোপের অন্যতম প্রধান নদী ও মাল পরিবহনের রুট রাইনের পানি চলতি গ্রীষ্মে এতটাই নেমে গেছে, যে জাহাজ চলাচলে ব্যাপক বিঘœ ঘটেছে। জুন থেকে অগাস্ট রেকর্ডে সবচেয়ে উষ্ণ তিন মাস হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়েছে এবং অগাস্টে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক প্রতিবেদনে আরও অন্তত তিন মাস ‘গরম ও শুষ্ক’ দিন থাকবে বলে ধারণা দেওয়া হয়েছে। ইউরোপ আগেও শুষ্ক মওসুম দেখেছে, কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাপমাত্রার নতুন নতুন রেকর্ড গড়ার পাশাপাশি গ্রীষ্ম ক্রমাগত উষ্ণ হতে দেখা যাচ্ছে। “টানা ৫ বছর খরা হয়েছে, এই বছর ইউরোপজুড়ে যে খরা, তা কয়েকশ বছরের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক। কেবল কম বৃষ্টিই নয়, দিন দিন পরিবেশ উষ্ণ হয়ে উঠছে, যে কারণে সবমিলিয়ে মাটির আর্দ্রতা কমছে,” বলেছেন পোস্টড্যাম ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট ইম্প্যাক্ট রিসার্চের ড. ফ্রেড হাটেরমান।
চীনের খরা, বন্যা : চলতি গ্রীষ্মে, চীন দীর্ঘ উচ্চ তাপমাত্রার সময়কাল পার করেছে, যা দুই মাসেরও বেশি স্থায়ী ছিল। এটি ১৯৬০ সালে রেকর্ড রাখা শুরুর পর থেকে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ছিল, বলছে চীনের আবহাওয়া বিষয়ক কর্তৃপক্ষ। তীব্র গরম এবং বৃষ্টিপাতের মারাত্মক ঘাটতির ফলে চীনের সবচেয়ে বড় নদী ইয়াংসি সঙ্কুচিত হচ্ছে। চীনের সরকারি হিসাব অনুযায়ী, অগাস্টে নদীটির নিষ্কাশন এলাকায় স্বাভাবিকের তুলনায় ৬০ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। দেশটির দক্ষিণের বিশাল অংশ যখন খরায় খাবি খাচ্ছে, তখন উত্তরে তুমুল বৃষ্টিপাত নিয়ে এসেছে বন্যা। উত্তর চীনের লিয়াও নদীর পানির স্তর ১৯৬১ সালের পর এবারই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে। দেশজুড়ে ২০১২ সাল থেকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণও ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে বলে চীনের বার্ষিক জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক গবেষণা বলছে।
জুলাইয়ে চীন সরকার ৮টি খরা সতর্কতা ও ১৩ হাজারের বেশি বৃষ্টি সতর্কতা জারি করেছিল। ২০১৯ সালের একই সময়ে দেশটি ২৮টির বেশি খরা সতর্কতা ও ১০ হাজার তীব্র বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি করেছিল। একই সময়ে ব্যাপক বর্ষা ও শুষ্ক পরিস্থিতি বিশ্বজুড়েই জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশিষ্ট্য হিসেবে হাজির হয়েছে। “যখন সাইবেরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে খরার অঞ্চল বৃদ্ধি পায়, তখন সেখানকার পানি সরে অন্যত্র ছোট একটি এলাকায় পড়ে, তাতে বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়,” বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সের পানি বিশেষজ্ঞ পিটার গ্লিক।
আফ্রিকায় দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি : খরা পরিস্থিতি ইথিওপিয়ার পূর্বাঞ্চল, কেনিয়ার উত্তরাঞ্চল ও সোমালিয়ার ২২ লাখ মানুষকে অনাহারের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। “মহাদেশের ওই অংশে উচ্চ তাপমাত্রার পাশাপাশি তিন বছর ধরে কম বৃষ্টিপাত হচ্ছে,” বলেছে অক্সফাম। সোমালিয়ায় মার্চ থেকে মে মৌসুমে গত ছয় দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। ডিআর কঙ্গো ও উগান্ডার বিশাল অংশও গড়ের তুলনায় বেশি শুষ্ক পরিস্থিতি দেখছে। কিন্তু মাটির আর্দ্রতার পরিমাণ দক্ষিণ সুদান, মৌরিতানিয়া ও সেনেগালের মতো মহাদেশটির কিছু কিছু দেশে যে তীব্র বন্যা হচ্ছে তাও দেখাচ্ছে। আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের অনেক অংশ এখন গড়ের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ বৃষ্টিপাত দেখছে।
২০১০ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত খরা ও বন্যার পরিমাণ ১৯৭০ থেকে ১৯৭৯ সালের তুলনায় যথ্রাক্রমে তিন ও দশগুণ বেশি হয়েছে বলে ২০২১ সালে দেওয়া বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের খরা পরিস্থিতি : বছরের পর বছর ধরে শুষ্ক ও গরম আবহাওয়া দেখা যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে খরা পরিস্থিতি দিন দিন স্বাভাবি বিষয়ে পরিণত হচ্ছে। ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এক হাজার ২০০ বছরের মধ্যে গত দুই দশকই যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চল সবচেয়ে তীব্র খরা পরিস্থিতি দেখেছে। চলতি গ্রীষ্মেও গরম ও শুষ্ক আবহাওয়া বেশ কয়েকটি রাজ্যে দাবানল সৃষ্টি করেছে, জলাধারে পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। আরিজোনা ও ইউটাহজুড়ে বিস্তৃত যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম জলাধার লেক পাওয়েলের পানির স্তর ১৯৬০-র দিকে পানি ভর্তি করার পর সর্বনি¤œ স্তরে আছে বলে জানিয়েছে নাসা। জলবায়ু সংক্রান্ত একাধিক মডেল বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই অঞ্চলে সামনের দশকগুলোতেও গড়ের তুলনায় অনেক কম বৃষ্টিপাত হওয়ার ধারা অব্যাহত থাকবে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

ভূমিকম্পে শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত, রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত

২০২২ কি ইতিহাসের সবচেয়ে শুষ্ক বছর?

আপডেট সময় : ০২:৩৮:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২

প্রত্যাশা ডেস্ক : চলতি গ্রীষ্মে ইউরোপ ও চীনের অনেক অংশ তাপমাত্রার চরম অবস্থা দেখছে, আফ্রিকার শুষ্কতা লাখ লাখ মানুষকে অনাহারের ঝুঁকিতে ফেলেছে আর দীর্ঘদিন ধরেই পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের ঘাটতিতে ভুগছে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চল। আরও উষ্ণ ও শুষ্ক মৌসুম দিন দিন স্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে বলে বিজ্ঞানীরা জানালেও বিগত কয়েক মাস লিখিত ইতিহাসের সবচেয়ে শুষ্ক মাস কিনা, বিবিসির এক প্রতিবেদনে তারই বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখা হয়েছে।
পৃথিবী কতটা শুষ্ক? শুষ্কতা পরিমাপের জন্য বিজ্ঞানীরা যেসব পদ্ধতি ব্যবহার করেন, তার একটিতে উপগ্রহের ছবির সাহায্যে মাটির আর্দ্রতা পরিমাপ করা।ওই পদ্ধতিতে গত তিন মাসের শুষ্কতার সঙ্গে এই শতাব্দীর শুরু থেকে এ পর্যন্ত গড় শুষ্কতার তুলনা করে সাম্প্রতিক চরম আবহাওয়ার প্যাটার্নের একটি চিত্র হাজির করার চেষ্টা করেছে বিবিসি।
দেখা গেছে, ইউরোপের বেশিরভাগ অংশে চলতি গ্রীষ্মে ২০০১ থেকে ২০১৬ সালের গড়ের তুলনায় বেশি শুষ্ক পরিস্থিতি দেখা গেছে। এর বাইরে চীনের পশ্চিম অংশও তীব্র শুষ্ক পরিস্থিতি দেখছে, অনেক এলাকা ভয়াবহ খরায় ভুগছে। সাহারা মরুভূমি সংলগ্ন আফ্রিকার কিছু অংশ এবং যুক্তরাষ্ট্রও গুরুতর শুষ্ক পরিস্থিতি পার করছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিবেশগত কর্মসূচি কোপার্নিকাসের তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপের এবারের গ্রীষ্মের খরা সম্ভবত মহাদেশটির ৫০০ বছরের ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে খরা।
আগস্টের শেষভাগে এই শুষ্ক মৌসুমের ‘সর্বোচ্চ পর্যায়ে’ ইউরোপের প্রায় অর্ধেকই ‘মাটির আর্দ্রতার ঘাটতি’ দেখেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ইউরোপ আরও বেশি ও লাগাতার খরা দেখতে পাবে। আর চলতি বছরের শুষ্ক পরিস্থিতি কৃষি, পরিবহন ও জ্বালানি উৎপাদনে প্রভাব ফেলবে।
ইউরোপের অন্যতম প্রধান নদী ও মাল পরিবহনের রুট রাইনের পানি চলতি গ্রীষ্মে এতটাই নেমে গেছে, যে জাহাজ চলাচলে ব্যাপক বিঘœ ঘটেছে। জুন থেকে অগাস্ট রেকর্ডে সবচেয়ে উষ্ণ তিন মাস হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়েছে এবং অগাস্টে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক প্রতিবেদনে আরও অন্তত তিন মাস ‘গরম ও শুষ্ক’ দিন থাকবে বলে ধারণা দেওয়া হয়েছে। ইউরোপ আগেও শুষ্ক মওসুম দেখেছে, কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাপমাত্রার নতুন নতুন রেকর্ড গড়ার পাশাপাশি গ্রীষ্ম ক্রমাগত উষ্ণ হতে দেখা যাচ্ছে। “টানা ৫ বছর খরা হয়েছে, এই বছর ইউরোপজুড়ে যে খরা, তা কয়েকশ বছরের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক। কেবল কম বৃষ্টিই নয়, দিন দিন পরিবেশ উষ্ণ হয়ে উঠছে, যে কারণে সবমিলিয়ে মাটির আর্দ্রতা কমছে,” বলেছেন পোস্টড্যাম ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট ইম্প্যাক্ট রিসার্চের ড. ফ্রেড হাটেরমান।
চীনের খরা, বন্যা : চলতি গ্রীষ্মে, চীন দীর্ঘ উচ্চ তাপমাত্রার সময়কাল পার করেছে, যা দুই মাসেরও বেশি স্থায়ী ছিল। এটি ১৯৬০ সালে রেকর্ড রাখা শুরুর পর থেকে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ছিল, বলছে চীনের আবহাওয়া বিষয়ক কর্তৃপক্ষ। তীব্র গরম এবং বৃষ্টিপাতের মারাত্মক ঘাটতির ফলে চীনের সবচেয়ে বড় নদী ইয়াংসি সঙ্কুচিত হচ্ছে। চীনের সরকারি হিসাব অনুযায়ী, অগাস্টে নদীটির নিষ্কাশন এলাকায় স্বাভাবিকের তুলনায় ৬০ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। দেশটির দক্ষিণের বিশাল অংশ যখন খরায় খাবি খাচ্ছে, তখন উত্তরে তুমুল বৃষ্টিপাত নিয়ে এসেছে বন্যা। উত্তর চীনের লিয়াও নদীর পানির স্তর ১৯৬১ সালের পর এবারই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে। দেশজুড়ে ২০১২ সাল থেকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণও ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে বলে চীনের বার্ষিক জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক গবেষণা বলছে।
জুলাইয়ে চীন সরকার ৮টি খরা সতর্কতা ও ১৩ হাজারের বেশি বৃষ্টি সতর্কতা জারি করেছিল। ২০১৯ সালের একই সময়ে দেশটি ২৮টির বেশি খরা সতর্কতা ও ১০ হাজার তীব্র বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি করেছিল। একই সময়ে ব্যাপক বর্ষা ও শুষ্ক পরিস্থিতি বিশ্বজুড়েই জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশিষ্ট্য হিসেবে হাজির হয়েছে। “যখন সাইবেরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে খরার অঞ্চল বৃদ্ধি পায়, তখন সেখানকার পানি সরে অন্যত্র ছোট একটি এলাকায় পড়ে, তাতে বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়,” বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সের পানি বিশেষজ্ঞ পিটার গ্লিক।
আফ্রিকায় দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি : খরা পরিস্থিতি ইথিওপিয়ার পূর্বাঞ্চল, কেনিয়ার উত্তরাঞ্চল ও সোমালিয়ার ২২ লাখ মানুষকে অনাহারের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। “মহাদেশের ওই অংশে উচ্চ তাপমাত্রার পাশাপাশি তিন বছর ধরে কম বৃষ্টিপাত হচ্ছে,” বলেছে অক্সফাম। সোমালিয়ায় মার্চ থেকে মে মৌসুমে গত ছয় দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। ডিআর কঙ্গো ও উগান্ডার বিশাল অংশও গড়ের তুলনায় বেশি শুষ্ক পরিস্থিতি দেখছে। কিন্তু মাটির আর্দ্রতার পরিমাণ দক্ষিণ সুদান, মৌরিতানিয়া ও সেনেগালের মতো মহাদেশটির কিছু কিছু দেশে যে তীব্র বন্যা হচ্ছে তাও দেখাচ্ছে। আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের অনেক অংশ এখন গড়ের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ বৃষ্টিপাত দেখছে।
২০১০ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত খরা ও বন্যার পরিমাণ ১৯৭০ থেকে ১৯৭৯ সালের তুলনায় যথ্রাক্রমে তিন ও দশগুণ বেশি হয়েছে বলে ২০২১ সালে দেওয়া বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের খরা পরিস্থিতি : বছরের পর বছর ধরে শুষ্ক ও গরম আবহাওয়া দেখা যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে খরা পরিস্থিতি দিন দিন স্বাভাবি বিষয়ে পরিণত হচ্ছে। ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এক হাজার ২০০ বছরের মধ্যে গত দুই দশকই যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চল সবচেয়ে তীব্র খরা পরিস্থিতি দেখেছে। চলতি গ্রীষ্মেও গরম ও শুষ্ক আবহাওয়া বেশ কয়েকটি রাজ্যে দাবানল সৃষ্টি করেছে, জলাধারে পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। আরিজোনা ও ইউটাহজুড়ে বিস্তৃত যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম জলাধার লেক পাওয়েলের পানির স্তর ১৯৬০-র দিকে পানি ভর্তি করার পর সর্বনি¤œ স্তরে আছে বলে জানিয়েছে নাসা। জলবায়ু সংক্রান্ত একাধিক মডেল বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই অঞ্চলে সামনের দশকগুলোতেও গড়ের তুলনায় অনেক কম বৃষ্টিপাত হওয়ার ধারা অব্যাহত থাকবে।