ঢাকা ০২:৪৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫

কৃষিজাত পণ্য সম্ভাবনা দেখানো কৃষিপণ্য রপ্তানি একাধিক সমস্যায়

  • আপডেট সময় : ০১:৪০:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • ৭৯ বার পড়া হয়েছে

বাণিজ্য ডেস্ক : নতুন খাত হিসেবে রপ্তানিতে আশা দেখাচ্ছিল কৃষিজাত পণ্য। পাঁচ বছরের ব্যবধানে এই খাতের পণ্য রপ্তানি বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। গত দুই অর্থবছরের প্রতিটিতে ১০০ কোটি ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে। তবে চলতি ২০২২–২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই থেকে রপ্তানি কমে যায়। আগস্টে অবশ্য রপ্তানি কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও সামগ্রিকভাবে দুই মাসে কৃষিপণ্য রপ্তানি কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে ৬ কোটি ৩৯ লাখ ডলারের কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি হয়, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৫ শতাংশ কম। আগস্টে ১১ কোটি ৪৩ লাখ ডলারের কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয় ৫ শতাংশ। দুই মাসে কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানি কমেছে ১৪ শতাংশ। কৃষিজাত পণ্যের মধ্যে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, তাজা ও হিমায়িত সবজি রপ্তানি হয়। রপ্তানিকারকেরা বলছেন, বছরখানেক ধরে অধিকাংশ গন্তব্যে জাহাজভাড়া কয়েক গুণ বেড়েছে। ‘আমাদের পণ্যের চূড়ান্ত দাম খুবই কম। কাঁচামাল, প্যাকেজিং ও জাহাজভাড়া বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের দাম বেড়েছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পণ্যের চূড়ান্ত দাম বাড়ানো যাচ্ছে না। কারণ, সেটি করলে ক্রেতারা আর পণ্য কিনতে চান না। তাই পরিমাণ হ্রাস, উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ নানা কায়দা করে টিকে থাকার চেষ্টা হচ্ছে। কাজটি বড় প্রতিষ্ঠান সহজে পারলেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান ততটা পারছে না।’ ছৈয়দ মুহাম্মদ সোয়াইব হাছান, হিফস অ্যাগ্রোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সাবেক সহসভাপতি গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত প্যাকেজিং পণ্যের দাম ৩৭ শতাংশ, ডলারের দাম ২০ থেকে ২৫ শতাংশ আর সাম্প্রতিক সময়ে ময়দার দাম ৫৪ শতাংশ বেড়েছে। সয়াবিন তেলের দামও বাড়তি। এসব কারণে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমেছে অধিকাংশ কারখানার। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানি ছিল ৬৭ কোটি ডলার। সর্বশেষ ২০২১–২২ অর্থবছরে সেটি বেড়ে ১১৬ কোটিতে ওঠে। গত দুই অর্থবছরে যথাক্রমে ১৯ ও ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে তাজা ও হিমায়িত উভয় ধরনের সবজিই রপ্তানি হয়। কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে সবজির হিস্যা সাড়ে ৮ শতাংশ। গত অর্থবছরে কৃষিজাত পণ্যের সামগ্রিক রপ্তানি বাড়লেও সবজি ছিল নি¤œমুখী। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ৭৪ লাখ ডলারের সবজি রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭৫ শতাংশ কম। সবজি রপ্তানিকারকেরা বলছেন, করোনার পর উড়োজাহাজভাড়া বেড়ে যাওয়ায় ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে সবজি রপ্তানি কমেছে। ইউরোপের দেশগুলোতে করোনার আগে প্রতিকেজি সবজি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজে ১৫০ টাকায় পাঠানো যেত। বর্তমানে লাগছে ২৫০ টাকার কাছাকাছি।

‘ভারতের ব্যবসায়ীরা আমাদের বাজার দখল করছেন।’ তিনি জানান, করোনার আগে দেশে দুই শতাধিক সবজি রপ্তানিকারক ছিলেন। বর্তমানে তা কমে ১০০ থেকে ১৫০ জনে নেমে এসেছে।
মোহাম্মদ মনসুর, বাংলাদেশ ফ্রুট, ভেজিটেবল অ্যান্ড অ্যালায়েড প্রডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফভিএপিইএ) সাধারণ সম্পাদক একইভাবে মধ্যপ্রাচ্যে উড়োজাহাজভাড়া বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। এই সুযোগে বাজারটি দখল করছেন ভারতের ব্যবসায়ীরা। ঢাকা থেকে মধ্যপ্রাচ্যগামী যাত্রীবাহী উড়োজাহাজে প্রচুর পোশাক যায়। পোশাকের ক্ষেত্রে যে ভাড়া আদায় করা হয়, সেই একই ভাড়া সবজির বেলায়ও রাখা হচ্ছে। ফলে সবজির দাম বেড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে ভারত থেকে মধ্যপ্রাচ্যগামী উড়োজাহাজে পোশাক রপ্তানি হয় না বলে কম ভাড়ায় সবজি রপ্তানি করতে পারেন সেই দেশের রপ্তানিকারকেরা। বাংলাদেশ ফ্রুট, ভেজিটেবল অ্যান্ড অ্যালায়েড প্রডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফভিএপিইএ) সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভারতের ব্যবসায়ীরা আমাদের বাজার দখল করছেন।’ তিনি জানান, করোনার আগে দেশে দুই শতাধিক সবজি রপ্তানিকারক ছিলেন। বর্তমানে তা কমে ১০০ থেকে ১৫০ জনে নেমে এসেছে। কৃষিজাত পণ্যের মধ্যে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের হিস্যাই বেশি। প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের মধ্যে মসলা, চানাচুর, ঝালমুড়ি, বিস্কুট, সস, জেলি, আলুপুরি, পাঁপড়, নুডলস, চকলেট, বিভিন্ন ধরনের আচার, জুস, ফ্রুট ড্রিংক, চিপস ইত্যাদি রপ্তানি হয়। প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান প্রাণ গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট ও কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় কঠিন সময় যাচ্ছে। তবে আমরা উৎপাদনের ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে সামগ্রিক রপ্তানি কমলেও আমাদের কমেনি।’ বর্তমানে ১৮টি দেশে বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, পানীয় ও মসলা রপ্তানি করে হিফস অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ। গত বছর প্রতিষ্ঠানটি ৩২ লাখ মার্কিন ডলারের প্রক্রিয়াজাত খাদ্য রপ্তানি করেছে। হিফস অ্যাগ্রোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সাবেক সহসভাপতি ছৈয়দ মুহাম্মদ সোয়াইব হাছান গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের পণ্যের চূড়ান্ত দাম খুবই কম। কাঁচামাল, প্যাকেজিং ও জাহাজভাড়া বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের দাম বেড়েছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পণ্যের চূড়ান্ত দাম বাড়ানো যাচ্ছে না। কারণ, সেটি করলে ক্রেতারা আর পণ্য কিনতে চান না। তাই পরিমাণ হ্রাস, উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ নানা কায়দা করে টিকে থাকার চেষ্টা হচ্ছে। কাজটি বড় প্রতিষ্ঠান সহজে পারলেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান ততটা পারছে না।’ সোয়াইব হাছান আরও বলেন, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের সম্ভাবনা অনেক। তাই রপ্তানির জন্য যেসব কাঁচামাল আমদানি করা হয়, সেসবের শুল্ক কমানো দরকার। একই সঙ্গে ডলারের দামও একটি সুস্থির জায়গা নিতে হবে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

কৃষিজাত পণ্য সম্ভাবনা দেখানো কৃষিপণ্য রপ্তানি একাধিক সমস্যায়

আপডেট সময় : ০১:৪০:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২

বাণিজ্য ডেস্ক : নতুন খাত হিসেবে রপ্তানিতে আশা দেখাচ্ছিল কৃষিজাত পণ্য। পাঁচ বছরের ব্যবধানে এই খাতের পণ্য রপ্তানি বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। গত দুই অর্থবছরের প্রতিটিতে ১০০ কোটি ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে। তবে চলতি ২০২২–২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই থেকে রপ্তানি কমে যায়। আগস্টে অবশ্য রপ্তানি কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও সামগ্রিকভাবে দুই মাসে কৃষিপণ্য রপ্তানি কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে ৬ কোটি ৩৯ লাখ ডলারের কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি হয়, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৫ শতাংশ কম। আগস্টে ১১ কোটি ৪৩ লাখ ডলারের কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয় ৫ শতাংশ। দুই মাসে কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানি কমেছে ১৪ শতাংশ। কৃষিজাত পণ্যের মধ্যে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, তাজা ও হিমায়িত সবজি রপ্তানি হয়। রপ্তানিকারকেরা বলছেন, বছরখানেক ধরে অধিকাংশ গন্তব্যে জাহাজভাড়া কয়েক গুণ বেড়েছে। ‘আমাদের পণ্যের চূড়ান্ত দাম খুবই কম। কাঁচামাল, প্যাকেজিং ও জাহাজভাড়া বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের দাম বেড়েছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পণ্যের চূড়ান্ত দাম বাড়ানো যাচ্ছে না। কারণ, সেটি করলে ক্রেতারা আর পণ্য কিনতে চান না। তাই পরিমাণ হ্রাস, উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ নানা কায়দা করে টিকে থাকার চেষ্টা হচ্ছে। কাজটি বড় প্রতিষ্ঠান সহজে পারলেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান ততটা পারছে না।’ ছৈয়দ মুহাম্মদ সোয়াইব হাছান, হিফস অ্যাগ্রোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সাবেক সহসভাপতি গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত প্যাকেজিং পণ্যের দাম ৩৭ শতাংশ, ডলারের দাম ২০ থেকে ২৫ শতাংশ আর সাম্প্রতিক সময়ে ময়দার দাম ৫৪ শতাংশ বেড়েছে। সয়াবিন তেলের দামও বাড়তি। এসব কারণে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমেছে অধিকাংশ কারখানার। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানি ছিল ৬৭ কোটি ডলার। সর্বশেষ ২০২১–২২ অর্থবছরে সেটি বেড়ে ১১৬ কোটিতে ওঠে। গত দুই অর্থবছরে যথাক্রমে ১৯ ও ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে তাজা ও হিমায়িত উভয় ধরনের সবজিই রপ্তানি হয়। কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে সবজির হিস্যা সাড়ে ৮ শতাংশ। গত অর্থবছরে কৃষিজাত পণ্যের সামগ্রিক রপ্তানি বাড়লেও সবজি ছিল নি¤œমুখী। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ৭৪ লাখ ডলারের সবজি রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭৫ শতাংশ কম। সবজি রপ্তানিকারকেরা বলছেন, করোনার পর উড়োজাহাজভাড়া বেড়ে যাওয়ায় ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে সবজি রপ্তানি কমেছে। ইউরোপের দেশগুলোতে করোনার আগে প্রতিকেজি সবজি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজে ১৫০ টাকায় পাঠানো যেত। বর্তমানে লাগছে ২৫০ টাকার কাছাকাছি।

‘ভারতের ব্যবসায়ীরা আমাদের বাজার দখল করছেন।’ তিনি জানান, করোনার আগে দেশে দুই শতাধিক সবজি রপ্তানিকারক ছিলেন। বর্তমানে তা কমে ১০০ থেকে ১৫০ জনে নেমে এসেছে।
মোহাম্মদ মনসুর, বাংলাদেশ ফ্রুট, ভেজিটেবল অ্যান্ড অ্যালায়েড প্রডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফভিএপিইএ) সাধারণ সম্পাদক একইভাবে মধ্যপ্রাচ্যে উড়োজাহাজভাড়া বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। এই সুযোগে বাজারটি দখল করছেন ভারতের ব্যবসায়ীরা। ঢাকা থেকে মধ্যপ্রাচ্যগামী যাত্রীবাহী উড়োজাহাজে প্রচুর পোশাক যায়। পোশাকের ক্ষেত্রে যে ভাড়া আদায় করা হয়, সেই একই ভাড়া সবজির বেলায়ও রাখা হচ্ছে। ফলে সবজির দাম বেড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে ভারত থেকে মধ্যপ্রাচ্যগামী উড়োজাহাজে পোশাক রপ্তানি হয় না বলে কম ভাড়ায় সবজি রপ্তানি করতে পারেন সেই দেশের রপ্তানিকারকেরা। বাংলাদেশ ফ্রুট, ভেজিটেবল অ্যান্ড অ্যালায়েড প্রডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফভিএপিইএ) সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভারতের ব্যবসায়ীরা আমাদের বাজার দখল করছেন।’ তিনি জানান, করোনার আগে দেশে দুই শতাধিক সবজি রপ্তানিকারক ছিলেন। বর্তমানে তা কমে ১০০ থেকে ১৫০ জনে নেমে এসেছে। কৃষিজাত পণ্যের মধ্যে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের হিস্যাই বেশি। প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের মধ্যে মসলা, চানাচুর, ঝালমুড়ি, বিস্কুট, সস, জেলি, আলুপুরি, পাঁপড়, নুডলস, চকলেট, বিভিন্ন ধরনের আচার, জুস, ফ্রুট ড্রিংক, চিপস ইত্যাদি রপ্তানি হয়। প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান প্রাণ গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট ও কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় কঠিন সময় যাচ্ছে। তবে আমরা উৎপাদনের ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে সামগ্রিক রপ্তানি কমলেও আমাদের কমেনি।’ বর্তমানে ১৮টি দেশে বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, পানীয় ও মসলা রপ্তানি করে হিফস অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ। গত বছর প্রতিষ্ঠানটি ৩২ লাখ মার্কিন ডলারের প্রক্রিয়াজাত খাদ্য রপ্তানি করেছে। হিফস অ্যাগ্রোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সাবেক সহসভাপতি ছৈয়দ মুহাম্মদ সোয়াইব হাছান গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের পণ্যের চূড়ান্ত দাম খুবই কম। কাঁচামাল, প্যাকেজিং ও জাহাজভাড়া বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের দাম বেড়েছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পণ্যের চূড়ান্ত দাম বাড়ানো যাচ্ছে না। কারণ, সেটি করলে ক্রেতারা আর পণ্য কিনতে চান না। তাই পরিমাণ হ্রাস, উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ নানা কায়দা করে টিকে থাকার চেষ্টা হচ্ছে। কাজটি বড় প্রতিষ্ঠান সহজে পারলেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান ততটা পারছে না।’ সোয়াইব হাছান আরও বলেন, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের সম্ভাবনা অনেক। তাই রপ্তানির জন্য যেসব কাঁচামাল আমদানি করা হয়, সেসবের শুল্ক কমানো দরকার। একই সঙ্গে ডলারের দামও একটি সুস্থির জায়গা নিতে হবে।