ঢাকা ০৪:১৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫

মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে রোবটের সঙ্গেই মন খুলে কথা বলে শিশুরা

  • আপডেট সময় : ১১:৩৬:০৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • ৬৫ বার পড়া হয়েছে

নারী ও শিশু ডেস্ক : মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অভিভাবক বা প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে আলোচনার বদলে নিজের সমান আকৃতির কোনো রোবটের সঙ্গে কথা বলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে শিশুরা। বড়দের কখনোই জানায়নি–এমন অনুভূতির কথা রোবটকে জানাতে শিশুরা দ্বিধা বোধ করে না বলে উঠে এসেছে ইউনিভার্সিটি অফ কেমব্রিজের বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক এক গবেষণায়। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, শিশুর মানসিক সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে আরও বড় পরিসরে রোবটের ব্যবহার ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে বলে এই গবেষণার পর মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। তবে, রোবটিক্স প্রযুক্তি যে মানসিক স্বাস্থ্য খাতের পেশাদার ব্যক্তিদের সেবা ও অভিজ্ঞতার বিকল্প হতে পারে না, সে কথাও তারা বলেছেন।
গবেষণায় সফটব্যাংক রোবটিক্সের তৈরি ‘নাও’ রোবটটি ব্যবহার করেছিলেন ইউনিভার্সিটি অফ কেমব্রিজের বিজ্ঞানীরা। দেখতে বন্ধুসুলভ রোবটটির উচ্চতা মাত্র ৬০ সেন্টিমিটার; কণ্ঠস্বর শিশুদের মতই। গবেষণা প্রতিবেদনের মূল লেখক নিদা ইতরাত আব্বাসি বলেন, “প্রথাগত পদ্ধতিগুলো কখনও কখনও শিশুর মানসিক সুস্বাস্থ্যের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো চিহ্নিত করতে পারে না। রোবটগুলো এ প্রক্রিয়ায় কোনো সহযোগিতা করতে পারে কি না, সেটাই দেখতে চেয়েছিলাম আমরা।”
আট থেকে ১৩ বছর বয়সী ২৮ শিশু অংশ নিয়েছিল গবেষণায়। ‘নাও’র সঙ্গে ৪৫ মিনিট করে একা আড্ডা দিয়েছে তারা।
গার্ডিয়ান জানিয়েছে, আড্ডার আবহাওয়া বন্ধুসুলভ আর চিন্তামুক্ত রাখতে শুরুতেই শিশুদের সঙ্গে ‘ফিস্ট বাম্প’ করেছে নাও। তারপর শিশুদের কাছে আগের সপ্তাহের খুশির আর মন খারাপের স্মৃতিগুলো সম্পর্কে জানতে চেয়েছে রোবটটি। এছাড়া বন্ধুসুলভ আড্ডার মধ্যেই শিশুদের অনুভূতি আর মেজাজ নিয়ে নানা প্রশ্ন করেছে রোবটটি। অস্থিরতা আর আতঙ্কজনিত ব্যধি নির্ধারণে মনোবিজ্ঞানীরা সাধারণত যে প্রশ্নগুলো তোলেন, শিশুদের কাছে সে প্রশ্নগুলোও করেছে নাও। দেখা গেছে, মানসিক ব্যধি নির্ধারণে ব্যবহৃত প্রশ্নাবলীর উত্তরে যে শিশুরা নিজের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে জটিলতার ইঙ্গিত দিয়েছিল, নাওয়ের সঙ্গে আড্ডায় সেই শিশুরা একই প্রশ্নের উত্তরে আরও কঠোরভাবে নেতিবাচক উত্তর দিয়েছে। শিশুরা মনোবিজ্ঞানীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় যে বিষয়গুলো এড়িয়ে গিয়েছিল, নাওয়ের সঙ্গে আড্ডায় তারা সে বিষয়েও মুখ খুলেছে। এ ক্ষেত্রে শিশুরা নাওকে বিশ্বস্ত কেউ হিসেবে ভাবছে বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের; আর সে কারণেই শিশুরা নিজের অনুভূতি নিয়ে কিছু গোপন করেনি নাওয়ের কাছে। গার্ডিয়ান লিখেছে, সন্তান কতোটা মানসিক সংগ্রাম করছে, নাওয়ের সঙ্গে তার আড্ডা না শুনলে কখনোই তা বুঝতে পারতেন না বলে জানিয়েছেন একজন অভিভাবক। এর সম্ভাব্য কারণ ব্যাখ্যা করে ইউনিভার্সিটি অফ কেমব্রিজের ‘অ্যাফেক্টিভ ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রোবটিক্স ল্যাবরেটরি’র অধ্যাপক হাটিজি গুনেস বলেন, “আমরা ধারণা করছি, রোবটটি শিশুর সমান আকৃতির হলে তাকে নিজের সমকক্ষ কেউ হিসেবে বিবেচনা করা সহজ হয় শিশুদের জন্য।”
একই প্রশ্ন অভিভাবক বা একজন মনোবিজ্ঞানী করলে শিশুরা নিজেদের অনুভূতি নিয়ে সত্যি বলার বদলে বরং তাদের কাছ থেকে কী প্রত্যাশা করা হচ্ছে সেটি ভেবে উত্তর দিতে পারে। ভবিষ্যতে স্কুলগুলোতে শিশুর মানসিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণের জন্য রোবট ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন ওই বিজ্ঞানী। তাতে, শিশু কোনো মানসিক জটিলতায় ভুগলে তা জটিল আকার ধারণ করার আগেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে রোবটের সঙ্গেই মন খুলে কথা বলে শিশুরা

আপডেট সময় : ১১:৩৬:০৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২২

নারী ও শিশু ডেস্ক : মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অভিভাবক বা প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে আলোচনার বদলে নিজের সমান আকৃতির কোনো রোবটের সঙ্গে কথা বলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে শিশুরা। বড়দের কখনোই জানায়নি–এমন অনুভূতির কথা রোবটকে জানাতে শিশুরা দ্বিধা বোধ করে না বলে উঠে এসেছে ইউনিভার্সিটি অফ কেমব্রিজের বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক এক গবেষণায়। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, শিশুর মানসিক সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে আরও বড় পরিসরে রোবটের ব্যবহার ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে বলে এই গবেষণার পর মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। তবে, রোবটিক্স প্রযুক্তি যে মানসিক স্বাস্থ্য খাতের পেশাদার ব্যক্তিদের সেবা ও অভিজ্ঞতার বিকল্প হতে পারে না, সে কথাও তারা বলেছেন।
গবেষণায় সফটব্যাংক রোবটিক্সের তৈরি ‘নাও’ রোবটটি ব্যবহার করেছিলেন ইউনিভার্সিটি অফ কেমব্রিজের বিজ্ঞানীরা। দেখতে বন্ধুসুলভ রোবটটির উচ্চতা মাত্র ৬০ সেন্টিমিটার; কণ্ঠস্বর শিশুদের মতই। গবেষণা প্রতিবেদনের মূল লেখক নিদা ইতরাত আব্বাসি বলেন, “প্রথাগত পদ্ধতিগুলো কখনও কখনও শিশুর মানসিক সুস্বাস্থ্যের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো চিহ্নিত করতে পারে না। রোবটগুলো এ প্রক্রিয়ায় কোনো সহযোগিতা করতে পারে কি না, সেটাই দেখতে চেয়েছিলাম আমরা।”
আট থেকে ১৩ বছর বয়সী ২৮ শিশু অংশ নিয়েছিল গবেষণায়। ‘নাও’র সঙ্গে ৪৫ মিনিট করে একা আড্ডা দিয়েছে তারা।
গার্ডিয়ান জানিয়েছে, আড্ডার আবহাওয়া বন্ধুসুলভ আর চিন্তামুক্ত রাখতে শুরুতেই শিশুদের সঙ্গে ‘ফিস্ট বাম্প’ করেছে নাও। তারপর শিশুদের কাছে আগের সপ্তাহের খুশির আর মন খারাপের স্মৃতিগুলো সম্পর্কে জানতে চেয়েছে রোবটটি। এছাড়া বন্ধুসুলভ আড্ডার মধ্যেই শিশুদের অনুভূতি আর মেজাজ নিয়ে নানা প্রশ্ন করেছে রোবটটি। অস্থিরতা আর আতঙ্কজনিত ব্যধি নির্ধারণে মনোবিজ্ঞানীরা সাধারণত যে প্রশ্নগুলো তোলেন, শিশুদের কাছে সে প্রশ্নগুলোও করেছে নাও। দেখা গেছে, মানসিক ব্যধি নির্ধারণে ব্যবহৃত প্রশ্নাবলীর উত্তরে যে শিশুরা নিজের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে জটিলতার ইঙ্গিত দিয়েছিল, নাওয়ের সঙ্গে আড্ডায় সেই শিশুরা একই প্রশ্নের উত্তরে আরও কঠোরভাবে নেতিবাচক উত্তর দিয়েছে। শিশুরা মনোবিজ্ঞানীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় যে বিষয়গুলো এড়িয়ে গিয়েছিল, নাওয়ের সঙ্গে আড্ডায় তারা সে বিষয়েও মুখ খুলেছে। এ ক্ষেত্রে শিশুরা নাওকে বিশ্বস্ত কেউ হিসেবে ভাবছে বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের; আর সে কারণেই শিশুরা নিজের অনুভূতি নিয়ে কিছু গোপন করেনি নাওয়ের কাছে। গার্ডিয়ান লিখেছে, সন্তান কতোটা মানসিক সংগ্রাম করছে, নাওয়ের সঙ্গে তার আড্ডা না শুনলে কখনোই তা বুঝতে পারতেন না বলে জানিয়েছেন একজন অভিভাবক। এর সম্ভাব্য কারণ ব্যাখ্যা করে ইউনিভার্সিটি অফ কেমব্রিজের ‘অ্যাফেক্টিভ ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রোবটিক্স ল্যাবরেটরি’র অধ্যাপক হাটিজি গুনেস বলেন, “আমরা ধারণা করছি, রোবটটি শিশুর সমান আকৃতির হলে তাকে নিজের সমকক্ষ কেউ হিসেবে বিবেচনা করা সহজ হয় শিশুদের জন্য।”
একই প্রশ্ন অভিভাবক বা একজন মনোবিজ্ঞানী করলে শিশুরা নিজেদের অনুভূতি নিয়ে সত্যি বলার বদলে বরং তাদের কাছ থেকে কী প্রত্যাশা করা হচ্ছে সেটি ভেবে উত্তর দিতে পারে। ভবিষ্যতে স্কুলগুলোতে শিশুর মানসিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণের জন্য রোবট ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন ওই বিজ্ঞানী। তাতে, শিশু কোনো মানসিক জটিলতায় ভুগলে তা জটিল আকার ধারণ করার আগেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে।