নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি নিমচন্দ্র ভৌমিক বলেছেন, দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। গণতন্ত্র চাইলে ৭২-এর সংবিধান মানতে হবে। ধর্মনিরেপক্ষতা মানতে হবে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নিপীড়ন সম্ভব নয়।
গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তাফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদ আয়োজিত ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বাজেট বৈষম্য শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন সূচকে পাকিস্তানের থেকে এগিয়ে যাচ্ছি। গণতন্ত্রের বদলে ধর্মীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা হলে পাকিস্তান বা আফগানিস্তানের মতো মসজিদে বোমা হামলা করবে জঙ্গিরা। এদেশেও মসজিদে ঈদের জামাতে হামলা হয়েছে। এজন্য তামাশা করে লাভ নেই। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে। কিন্তু এখন ধর্মীয় বৈষম্য চরম পর্যায়ে রয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বাসী হলে মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী হতে হবে, মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী হলে জাতীয় চার নীতি মানতে হবে।
এসময় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেছে, আমরা ভেবেছিলাম ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর সংখ্যালঘুদের অবস্থার পরিবর্তন হবে। বরং তা না হয়ে আরও কমেছে। আমরা সংখ্যালঘুদের নিয়ে বৈষম্যের অবসান চাই।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রানা দাশ গুপ্ত সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য চিত্র তুলে ধরে বলেন, বাজেটে ধর্মীয় সংখ্যাগুরুসম্প্রদায়ের জন্য মোট বরাদ্দের হার ৯৭.৮৭% এবং ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্যে ২.১৩%। অনুরূপভাবে পূর্ববর্তী ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট পরিচালন ব্যয়ের পরিমান ২৭৮.৬০ কোটি টাকা। তার মধ্যে বাংলাদেশ সচিবালয় ধর্ম বিষয়কমন্ত্রণালয়ের পরিচালন ব্যয় ১০.৭৫ কোটি টাকা বাদ দেওয়ার পর ২৬৭.৮৫ কোটি টাকার মধ্যে ২৬১.৮৩ কোটি টাকা দেশের ধর্মীয় সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের জন্যে এবং ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৬.২ কোটি টাকা। অর্থ্যৎ ধর্মীয় সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের জন্য মোট বরদ্দের হার ৯৭.৭৫% ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্যে মোটবরাদ্দের হার ২.২৫%।
তিনি আরও বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি বর্তমান বাজেটে সমগ্র দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও সংস্কারের জন্যে ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত অর্থ্যাৎ উক্ত খাতে ৫ অর্থবছরে ২৬২.৯৫ কোটি টাকার প্রকল্প ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অর্থাৎ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে অথমন্ত্রীর ঘোষিত ২০০ কোটি টাকার ৫ বছরে বৃদ্ধি পেয়ে ২৬২.৯৫ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে আশা করেছিলাম ২০১৬-১৭ সালে ঘোষিত অর্থমন্ত্রীর ২০০ কোটি টাকা পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর মঠ-মন্দির সংস্কারে সংশ্লিষ্ট অর্থবছরে ব্যয়িত হবে এবং তৎপরবর্তী অর্থবছরগুলোতে জনসংখ্যার অনুপাতিক হারে বরাদ্দের মাধ্যমে বাজেটে তার প্রতিফলন ঘটবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের সঙ্গে বলতে হয় ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর প্রতি বাজেট বরাদ্দ সীমাহীন অবজ্ঞা, অবহেলা, বৈষম্যের এক সুস্পষ্ট প্রমাণ। এ সংবাদ সম্মেলন থেকে আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
সংবাদ সম্মেলনে ৪ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো :
১. ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন ও কল্যাণে জাতীয় রাজস্ব বাজেট থেকে বার্ষিক বরাদ্দ প্রদান করে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টসমূহকে ‘ফাউন্ডেশন’-এ রূপান্তরিত করে বিরাজমান ধর্মীয় বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে সকল ধর্মসম্প্রদায়ের জন্যে উন্নয়নের কার্যক্রমকে অধিকতর সম্প্রসারিত করা হোক।
২. সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয় কার্যত সংবিধানের ২ক অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রধর্মের পক্ষে কাজ করছে বিধায় এ অনুচ্ছেদের অন্য অংশে বিধৃত হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ধর্মের সম-অধিকার বাস্তবায়নার্থে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও উন্নয়নের জন্যে সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা হোক।
৩. ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সার্বিক আর্থ সামাজিক উন্নয়নে বরাদ্দ নিরুপণকল্পে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সঠিক শুমারির উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক।
৪. ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি সম্পাদন ও ধর্মীয় সংস্কৃতির উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মডেল মন্দির/প্যাগোডা/গীর্জা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনে বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হোক। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন, এ্যাড. সুব্রত চৌধুরী, মহীন্দ্র নাথ চন্দ্র প্রমুখ।
‘গণতন্ত্র চাইলে ৭২-এর সংবিধান মানতে হবে’
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ