ঢাকা ০৮:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫

প্রয়াণ দিবসে ফুলেল শ্রদ্ধায় জাতীয় কবিকে স্মরণ

  • আপডেট সময় : ১২:৩৩:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ অগাস্ট ২০২২
  • ৯২ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৬তম প্রয়াণ দিবসে তার সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
গতকাল শনিবার সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে কবির সমাধিতে বিভিন্ন শিক্ষা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন শ্রদ্ধা নিবেদন করে। অসাম্প্রদায়িক ও মানবতাবদী চেতনায় তারা বিদ্রোহী কবিকে স্মরণ করে। সকাল সাড়ে ৭টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করেন। এরপর সমাধি প্রাঙ্গণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা কবির সমাধিতে যান। সেখানে প্রথমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে এবং পরে দলের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তারা। আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ দলের নেতাকর্মীরা জাতীয় কবিকে ফুলেল শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। কবি নজরুলের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আখতারুজ্জামান বলেন, “জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সাম্যের কবি, অসাম্প্রদায়িক ও মানবতার কবি। বঙ্গবন্ধু ও কবি নজরুলের মধ্যে একটি অসাধারণ সখ্য ছিল।
“বঙ্গবন্ধুই মূলত কবি নজরুলকে দরিদ্রপীড়িত জীবনাচার থেকে উদ্ধার করে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। দুজনই মানবতাবাদী, অসাম্প্রদায়িক ও উদার জীবন দর্শন। অনেক বিশাল কবির সাহিত্য সম্ভার। তার সাহিত্য সম্ভারে নানাবিধ মূল্যবোধ ও নানা ধরনের ভাবদর্শন।”
উপাচার্য বলেন, “তার মধ্যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলার স্পৃহা ছিল। তার মধ্য আছে ধর্মীয় মূল্যবোধ প্রতিপালনের ইঙ্গিত। তার কবিতা গান মানুষকে সব সময় অনুপ্রেরণা দেবে, বিশ্বের যেকোন প্রান্তের যেকোন মানবগোষ্ঠী যেকোন পরিস্থতিতে তার ভাবদর্শন মানুষ অনুসরণ করবে। তার মধ্য দিয়েই এ কবি অমর হয়ে থাকবেন।”
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, “তিনি (নজরুল) মানুষের একটি ব্যক্তিসত্ত্বা এবং স্বাধীনসত্ত্বার বোধকে জাগ্রত করার সংগ্রাম করেছেন। জাতিসত্ত্বা নিয়ে একটি জাতিরাষ্ট্র হতে পারে, তার স্বপ্নদ্রষ্টা হলেন নজরুল; আর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।”
বাংলা ১৩০৬ সনের ১১ জ্যৈষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কবি নজরুল ইসলাম। মৃত্যুর কয়েক বছর আগে তাকে বাংলাদেশে এনে নাগরিকত্ব ও জাতীয় কবির মর্যাদা দেওয়া হয়। ১৩৮৩ সনের ১২ ভাদ্র তিনি মারা যান। কবির ৪৬তম প্রয়াণ দিবসে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, নজরুল গবেষণা কেন্দ্র, নজরুল একাডেমি, কবি কাজী নজরুল ইনস্টিটিউট, জাতীয় জাদুঘর, নজরুল চর্চা কেন্দ্র ‘বাঁশরী’, বাসদ, ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের পক্ষ থেকে সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
নজরুল অসাম্প্রদায়িক চেতনায় স্মরণীয়: কাদের : অসাম্প্রদায়িক মানবতাবাদী চেতনার জন্য জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, নজরুল শুধু সমকালের নন, তিনি সর্বকালের। আমরা তাকে বেশি করে মনে করব, তার অসাম্প্রদায়িক মানবতাবাদী চেতনার জন্য। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, “এই আগস্ট মাসে বঙ্গবন্ধু, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ও আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রয়াণ হয়েছে। তারা সর্বকালের সেরা তিন জন বাঙালি, সবার সেরা বঙ্গবন্ধু। “যৌবনের কবি, বিদ্রোহের কবি, প্রেমের কবি, ব্যাথার কবি নজরুল আজও প্রাসঙ্গিক। তিনি মৃত্যুর এত বছর পরেও প্রাসঙ্গিক, চিরদিন থাকবে তার এই প্রাসঙ্গিকতা।” কাদের বলেন, “অসাম্প্রদায়িক মানবতাবাদী চেতনার প্রতিষ্ঠার জন্য বঙ্গবন্ধু থেকে যে সংগ্রাম শুরু হয়েছে, আমরা আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি।” দেশে একটি শ্রেণি সাম্প্রদায়িকতার পৃষ্ঠপোষকতা করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আজকে গণতন্ত্রের নামে, মুক্তিযুদ্ধের নামে বর্ণচোর মুক্তিযোদ্ধা, বর্ণচোরা সাম্প্রদায়িক শক্তি, গণতন্ত্রবিরোধী শক্তি, এদেরকে আজকে চিহ্নিত করতে হবে, প্রতিরোধ করতে হবে, পরাজিত করতে হবে। একথাগুলো বলেই আমরা আজকে জাতীয় কবির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।” শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির সংগ্রামের অনুপ্রেরণা নজরুল: রিজভী : বর্তমানে দেশে ‘ভয়ঙ্কর দুঃসময়’ যাচ্ছে দাবি করে এর বিরুদ্ধে ‘লড়াই করতে’ জাতীয় কবির চেতনাকেই প্রাসঙ্গিক বলে মনে করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, “এক ভয়ঙ্কর দুঃশাসনের মধ্যে আমাদের দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। দেশের এমন পরিস্থিতিতে নজরুলের লেখনি আমাদের প্রতিটি মুহূর্তে প্রেরণা যোগায়, সাহস দিয়ে যাচ্ছে। সুতরাং এ রকম একটা পরিবেশে নজরুল খুবই প্রাসঙ্গিক।”
নজরুলের সমাধি প্রাঙ্গণে রিজভী সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের সংগ্রামের প্রধান অনুপ্রেরণা হলেন নজরুল। তিনি তার লেখনী দিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। এজন্য তিনি দুঃশাসনের অভিঘাতের শিকার হয়েছেন। “তিনি কারাগারে গেছেন, নানা ধরনের অত্যাচারের শিকার হয়েছেন। আজকে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও জনগণের নাগরিক স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়নি। এখনও কথা বলতে গেলে, চলাচল করতে গেলে, জীবন যাপন করতে গেলে ভীতির সঞ্চার হয়। “তাই এরকম একটি সময়ে নজরুল খুবই প্রাসঙ্গিক। নজরুলের কবিতা-গানই আমাদের সাহসের অনুপ্রেরণা জোগায়।”
নজরুলকে বিশ্ব মানবতার কবি, দ্রোহের কবি হিসাবে বর্ণনা করে এই বিএনপি নেতা বলেন, “নজরুল অন্যায় অত্যাচার অবিচারের বিরুদ্ধে, গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। আবার অন্যদিকে প্রেম ভালোবাসায় ভাসিয়ে দিয়েছেন মানুষকে। মায়া ভালোবাসা ও মানুষের সাথে মানুষের বন্ধনের জন্য লেখনীর মাধ্যমে জাগ্রত করেছেন।
“নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু বলেছিলেন- ‘আমরা যখন যুদ্ধে যাব নজরুলের গান গাইব, আমরা যখন মিছিলে যাব তখন নজরুলের গান গাইব, আমরা যখন কারাগারে যাব তখনও নজরুলের গান গাইব।’ আজও এ গণতন্ত্র হারা বাংলাদেশে আমরা নজরুলের গান গাই, কবিতা আবৃত্তি করি।”
শ্রদ্ধা জানানোর সময় রিজভীর সঙ্গে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিক সিকদার, জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাসের সদস্য সচিব জাকির হোসেন রোকন উপস্থিত ছিলেন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

প্রয়াণ দিবসে ফুলেল শ্রদ্ধায় জাতীয় কবিকে স্মরণ

আপডেট সময় : ১২:৩৩:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ অগাস্ট ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৬তম প্রয়াণ দিবসে তার সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
গতকাল শনিবার সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে কবির সমাধিতে বিভিন্ন শিক্ষা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন শ্রদ্ধা নিবেদন করে। অসাম্প্রদায়িক ও মানবতাবদী চেতনায় তারা বিদ্রোহী কবিকে স্মরণ করে। সকাল সাড়ে ৭টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করেন। এরপর সমাধি প্রাঙ্গণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা কবির সমাধিতে যান। সেখানে প্রথমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে এবং পরে দলের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তারা। আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ দলের নেতাকর্মীরা জাতীয় কবিকে ফুলেল শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। কবি নজরুলের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আখতারুজ্জামান বলেন, “জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সাম্যের কবি, অসাম্প্রদায়িক ও মানবতার কবি। বঙ্গবন্ধু ও কবি নজরুলের মধ্যে একটি অসাধারণ সখ্য ছিল।
“বঙ্গবন্ধুই মূলত কবি নজরুলকে দরিদ্রপীড়িত জীবনাচার থেকে উদ্ধার করে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। দুজনই মানবতাবাদী, অসাম্প্রদায়িক ও উদার জীবন দর্শন। অনেক বিশাল কবির সাহিত্য সম্ভার। তার সাহিত্য সম্ভারে নানাবিধ মূল্যবোধ ও নানা ধরনের ভাবদর্শন।”
উপাচার্য বলেন, “তার মধ্যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলার স্পৃহা ছিল। তার মধ্য আছে ধর্মীয় মূল্যবোধ প্রতিপালনের ইঙ্গিত। তার কবিতা গান মানুষকে সব সময় অনুপ্রেরণা দেবে, বিশ্বের যেকোন প্রান্তের যেকোন মানবগোষ্ঠী যেকোন পরিস্থতিতে তার ভাবদর্শন মানুষ অনুসরণ করবে। তার মধ্য দিয়েই এ কবি অমর হয়ে থাকবেন।”
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, “তিনি (নজরুল) মানুষের একটি ব্যক্তিসত্ত্বা এবং স্বাধীনসত্ত্বার বোধকে জাগ্রত করার সংগ্রাম করেছেন। জাতিসত্ত্বা নিয়ে একটি জাতিরাষ্ট্র হতে পারে, তার স্বপ্নদ্রষ্টা হলেন নজরুল; আর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।”
বাংলা ১৩০৬ সনের ১১ জ্যৈষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কবি নজরুল ইসলাম। মৃত্যুর কয়েক বছর আগে তাকে বাংলাদেশে এনে নাগরিকত্ব ও জাতীয় কবির মর্যাদা দেওয়া হয়। ১৩৮৩ সনের ১২ ভাদ্র তিনি মারা যান। কবির ৪৬তম প্রয়াণ দিবসে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, নজরুল গবেষণা কেন্দ্র, নজরুল একাডেমি, কবি কাজী নজরুল ইনস্টিটিউট, জাতীয় জাদুঘর, নজরুল চর্চা কেন্দ্র ‘বাঁশরী’, বাসদ, ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের পক্ষ থেকে সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
নজরুল অসাম্প্রদায়িক চেতনায় স্মরণীয়: কাদের : অসাম্প্রদায়িক মানবতাবাদী চেতনার জন্য জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, নজরুল শুধু সমকালের নন, তিনি সর্বকালের। আমরা তাকে বেশি করে মনে করব, তার অসাম্প্রদায়িক মানবতাবাদী চেতনার জন্য। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, “এই আগস্ট মাসে বঙ্গবন্ধু, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ও আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রয়াণ হয়েছে। তারা সর্বকালের সেরা তিন জন বাঙালি, সবার সেরা বঙ্গবন্ধু। “যৌবনের কবি, বিদ্রোহের কবি, প্রেমের কবি, ব্যাথার কবি নজরুল আজও প্রাসঙ্গিক। তিনি মৃত্যুর এত বছর পরেও প্রাসঙ্গিক, চিরদিন থাকবে তার এই প্রাসঙ্গিকতা।” কাদের বলেন, “অসাম্প্রদায়িক মানবতাবাদী চেতনার প্রতিষ্ঠার জন্য বঙ্গবন্ধু থেকে যে সংগ্রাম শুরু হয়েছে, আমরা আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি।” দেশে একটি শ্রেণি সাম্প্রদায়িকতার পৃষ্ঠপোষকতা করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আজকে গণতন্ত্রের নামে, মুক্তিযুদ্ধের নামে বর্ণচোর মুক্তিযোদ্ধা, বর্ণচোরা সাম্প্রদায়িক শক্তি, গণতন্ত্রবিরোধী শক্তি, এদেরকে আজকে চিহ্নিত করতে হবে, প্রতিরোধ করতে হবে, পরাজিত করতে হবে। একথাগুলো বলেই আমরা আজকে জাতীয় কবির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।” শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির সংগ্রামের অনুপ্রেরণা নজরুল: রিজভী : বর্তমানে দেশে ‘ভয়ঙ্কর দুঃসময়’ যাচ্ছে দাবি করে এর বিরুদ্ধে ‘লড়াই করতে’ জাতীয় কবির চেতনাকেই প্রাসঙ্গিক বলে মনে করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, “এক ভয়ঙ্কর দুঃশাসনের মধ্যে আমাদের দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। দেশের এমন পরিস্থিতিতে নজরুলের লেখনি আমাদের প্রতিটি মুহূর্তে প্রেরণা যোগায়, সাহস দিয়ে যাচ্ছে। সুতরাং এ রকম একটা পরিবেশে নজরুল খুবই প্রাসঙ্গিক।”
নজরুলের সমাধি প্রাঙ্গণে রিজভী সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের সংগ্রামের প্রধান অনুপ্রেরণা হলেন নজরুল। তিনি তার লেখনী দিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। এজন্য তিনি দুঃশাসনের অভিঘাতের শিকার হয়েছেন। “তিনি কারাগারে গেছেন, নানা ধরনের অত্যাচারের শিকার হয়েছেন। আজকে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও জনগণের নাগরিক স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়নি। এখনও কথা বলতে গেলে, চলাচল করতে গেলে, জীবন যাপন করতে গেলে ভীতির সঞ্চার হয়। “তাই এরকম একটি সময়ে নজরুল খুবই প্রাসঙ্গিক। নজরুলের কবিতা-গানই আমাদের সাহসের অনুপ্রেরণা জোগায়।”
নজরুলকে বিশ্ব মানবতার কবি, দ্রোহের কবি হিসাবে বর্ণনা করে এই বিএনপি নেতা বলেন, “নজরুল অন্যায় অত্যাচার অবিচারের বিরুদ্ধে, গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। আবার অন্যদিকে প্রেম ভালোবাসায় ভাসিয়ে দিয়েছেন মানুষকে। মায়া ভালোবাসা ও মানুষের সাথে মানুষের বন্ধনের জন্য লেখনীর মাধ্যমে জাগ্রত করেছেন।
“নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু বলেছিলেন- ‘আমরা যখন যুদ্ধে যাব নজরুলের গান গাইব, আমরা যখন মিছিলে যাব তখন নজরুলের গান গাইব, আমরা যখন কারাগারে যাব তখনও নজরুলের গান গাইব।’ আজও এ গণতন্ত্র হারা বাংলাদেশে আমরা নজরুলের গান গাই, কবিতা আবৃত্তি করি।”
শ্রদ্ধা জানানোর সময় রিজভীর সঙ্গে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিক সিকদার, জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাসের সদস্য সচিব জাকির হোসেন রোকন উপস্থিত ছিলেন।