ঢাকা ০৯:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫

দিনাজপুরে নারী নির্যাতন বেড়েছে, মাসে ১০৮ মামলা

  • আপডেট সময় : ১১:২৫:১২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ অগাস্ট ২০২২
  • ৮৪ বার পড়া হয়েছে

দিনাজপুর প্রতিনিধি : গত ২৯ জুলাই সন্ধ্যায় খানসামায় এক নারীকে ধর্ষণ করে হত্যা করে ধানখেতে ফেলে যায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় তার ১০ বছর বয়সি শিশুকন্যাকেও নির্যাতন করা হয়। ঘটনার ২৫ দিনেও রহস্য উন্মোচিত বা অপরাধী গ্রেফতার হয়নি। এরইমধ্যে ওই এলাকার মানুষ মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন। শুধু তাই নয়, গত ৭ আগস্ট যৌতুকের দাবিতে বিরলের এক গৃহবধূকে মারধর ও মাথার চুল কেটে ন্যাড়া করে দেয় স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ি। গত ৬ জুলাই ঘোড়াঘাটে ১৪ বছর বয়সি এক কিশোরী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়। এছাড়া গত ১০ এপ্রিল ফুলবাড়ীতে এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণ করে তিন যুবক। এ সময় তারা ঘটনা প্রকাশ না করতে হত্যাসহ ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।
এই কয়েকটি নয়, জেলায় প্রতি মাসেই গড়ে ১০৮টি নারী-শিশু ধর্ষণ বা নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হচ্ছে। পাশাপাশি এসব নির্যাতনের ঘটনা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। এতে করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার কর্মী, আইনজীবী ও আন্দোলনকারীরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে জেলায় ইয়াসমিনকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় প্রতিবাদ করে সাত জন প্রাণ দিয়েছিল, সেখানে নারী নির্যাতনের ঘটনা দিন দিন বাড়চে। অথচ এই ইয়াসমিন ট্র্যাজেডিকে কেন্দ্র করে ২৪ আগস্ট দেশব্যাপী পালিত হচ্ছে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস।
দিনাজপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই আদালতে নির্যাতন ও ধর্ষণ মামলা দায়ের হয়েছে এক হাজার ২৭৬টি। সেই হিসাবে গড়ে প্রতি মাসে দায়ের হয়েছে ১০৬টি মামলা। আবার চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২২ আগস্ট পর্যন্ত ৮ মাসে এই আদালতে মামলা হয়েছে ৮৭১টি। সেই হিসাবে গড়ে প্রতিমাসে ১০৮টি দাঁড়ায়। যা গত বছরের তুলনায় বেশি।
আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাড. তৈয়বা বেগম বলেন, শুধুমাত্র দিনাজপুর জেলার আদালতেই সাড়ে চার হাজারের বেশি নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা বিচারাধীন রয়েছে। প্রতিনিয়তই এসব ঘটনা ঘটছে, মামলা হচ্ছে। কিন্তু মামলার দীর্ঘসূত্রতা রয়েছে। মামলা হওয়া, চার্জশিট প্রদান, চার্জগঠন, সাক্ষী, আর্গুমেন্ট, গ্রেফতার সবকিছু মিলে অনেক সময় ব্যয় হয়। ফলে বাদীও নিরাশ হয়ে যায়, সাক্ষীরা কোনোভাবে আপসে চলে আসে। দীর্ঘসূত্রতায় মামলার সংখ্যা বাড়ছে, অপরাধীরা কৌশল পাল্টাচ্ছে। আমরা বারবার চাচ্ছি এসব মামলার সঠিক বিচার হতে। পাশাপাশি সচেতনতাও সৃষ্টি করতে হবে।
নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কাজ করছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পল্লী শ্রী। তাদের হিসাব মতে- চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে জুন মাস পর্যন্ত সারা দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন চার হাজার ৭৬৯ জন নারী। এর মধ্যে ধর্ষণের পর মৃত্যু হয়েছে ২৪ জনের। ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ৭২ জন নারীকে। আত্মহত্যা করেছেন ছয় নারী। স্বামী কর্তৃক হত্যার শিকার হয়েছেন ৯৪ জন নারী। জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত সারা দেশে পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন ২৮৮ নারী, রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন ২৫১ জন। একই সময়ে ২৪৮ জন শিশু হত্যার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ৬ থেকে ১২ বছর বয়সি রয়েছে ১০৭ জন। মামলা হয়েছে ১১৪টি। ৫৫৯জন বিভিন্নভাবে শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ১৭৮জন শিশু ৬ থেকে ১২ বছর বয়সি রয়েছে। মামলা হয়েছে ৩১১টি।
পল্লী শ্রীর নির্বাহী পরিচালক শামীম আরা বেগম বলেন, মামলার দীর্ঘসূত্রতা ও প্রভাবশালীদের কারণে প্রতিনিয়তই এসব ঘটনা বাড়ছে। নারী ও শিশু ধর্ষণ ও নির্যাতন কমাতে হলে আইনের প্রয়োগ আরও সুদৃঢ় করতে হবে। পাশাপাশি সবাইকে সচেতন হতে হবে। আমরা যদি পরিবার থেকে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই, তাহলে এসব ঘটনা আর ঘটবে না। আমরা কাজ করছি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ করতে, কিন্তু এটা দমন করা কারো একার পক্ষে সম্ভব না।
ইয়াসমিন আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী দিনাজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল বলেন, ইয়াসমিনকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনার পর সেই সময় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিনাজপুরবাসীর পাশে থেকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। বর্তমান সরকার নারী ধর্ষণ ও নির্যাতন প্রতিরোধে কাজ করছে। নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা প্রতিরোধে সবাইকে এক যোগে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। পাশাপাশি নির্যাতনের ঘটনায় হওযা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির দাবি করেন এই সংসদ সদস্য।
উল্লেখ্য, ১৯৯৫ সালের ২৪ আগস্ট জেলার কাহারোল উপজেলার দশমাইলের অদূরে কতিপয় বিপথগামী পুলিশের হাতে ধর্ষণের শিকার হন কিশোরী ইয়াসমিন। এর প্রতিবাদ জানান দিনাজপুরের সাধারণ মানুষ। শুরু হয় তীব্র আন্দোলন। আন্দোলনের এক পর্যায়ে বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ বিনা উসকানিতে গুলি চালায়। এতে সামু, কাদের, সিরাজসহ সাত জন প্রাণ হারান। আহত হন তিনশ’র বেশি আন্দোলনকারী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শহরে ১৪৪ ধারা (কারফিউ) জারি করা হয়। শহরে নামানো হয় তৎকালীন বিডিআর। এরপর দিনাজপুর থেকে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ ১৩ উপজেলার সব পুলিশকে একযোগে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যা ঘটনায় তিনটি মামলা হয়। ওই সময়ে প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলাগুলো পরিচালনা করেন অ্যাড. এম. আব্দুর রহিম। দায়ের হওয়া মামলাটি তিনটি আদালতে ১২৩ দিন বিচার কাজ শেষে ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট তৎকালীন রংপুরের জেলা ও দায়রা জজ আব্দুল মতিন রায় ঘোষণা করেন। মামলার রায়ে আসামি পুলিশের এএসআই মঈনুল, কনস্টেবল আব্দুস সাত্তার ও পুলিশের পিকআপভ্যান চালক অমৃত লাল বর্মণের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ বিধান ’৯৫-এর ৬ (৪) ধারায় ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুর আদেশ দেওয়া হয়। এছাড়া আলামত নষ্ট, সত্য গোপন ও অসহযোগিতার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এএসআই মঈনুলকে আরও পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদ-ে দ-িত করা হয়। পরে আদালতের দেওয়া রায় রংপুর কারাগারে বাস্তবায়ন করা হয়। ঘটনার সময় থেকে দিনটি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
এদিকে ইয়াসমিন ট্র্যাজেডি দিবসে দশমাইল মোড়ে অবস্থিত ইয়াসমিনের স্মৃতিসৌধে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ, ইয়াসমিনের কবর জিয়ারত, দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়াও ইয়াসমিনের মা শরীফা বেগম তার বাড়িতে দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ ও দোয়ার আয়োজন করেছেন বলে জানা গেছে।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

দিনাজপুরে নারী নির্যাতন বেড়েছে, মাসে ১০৮ মামলা

আপডেট সময় : ১১:২৫:১২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ অগাস্ট ২০২২

দিনাজপুর প্রতিনিধি : গত ২৯ জুলাই সন্ধ্যায় খানসামায় এক নারীকে ধর্ষণ করে হত্যা করে ধানখেতে ফেলে যায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় তার ১০ বছর বয়সি শিশুকন্যাকেও নির্যাতন করা হয়। ঘটনার ২৫ দিনেও রহস্য উন্মোচিত বা অপরাধী গ্রেফতার হয়নি। এরইমধ্যে ওই এলাকার মানুষ মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন। শুধু তাই নয়, গত ৭ আগস্ট যৌতুকের দাবিতে বিরলের এক গৃহবধূকে মারধর ও মাথার চুল কেটে ন্যাড়া করে দেয় স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ি। গত ৬ জুলাই ঘোড়াঘাটে ১৪ বছর বয়সি এক কিশোরী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়। এছাড়া গত ১০ এপ্রিল ফুলবাড়ীতে এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণ করে তিন যুবক। এ সময় তারা ঘটনা প্রকাশ না করতে হত্যাসহ ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।
এই কয়েকটি নয়, জেলায় প্রতি মাসেই গড়ে ১০৮টি নারী-শিশু ধর্ষণ বা নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হচ্ছে। পাশাপাশি এসব নির্যাতনের ঘটনা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। এতে করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার কর্মী, আইনজীবী ও আন্দোলনকারীরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে জেলায় ইয়াসমিনকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় প্রতিবাদ করে সাত জন প্রাণ দিয়েছিল, সেখানে নারী নির্যাতনের ঘটনা দিন দিন বাড়চে। অথচ এই ইয়াসমিন ট্র্যাজেডিকে কেন্দ্র করে ২৪ আগস্ট দেশব্যাপী পালিত হচ্ছে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস।
দিনাজপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই আদালতে নির্যাতন ও ধর্ষণ মামলা দায়ের হয়েছে এক হাজার ২৭৬টি। সেই হিসাবে গড়ে প্রতি মাসে দায়ের হয়েছে ১০৬টি মামলা। আবার চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২২ আগস্ট পর্যন্ত ৮ মাসে এই আদালতে মামলা হয়েছে ৮৭১টি। সেই হিসাবে গড়ে প্রতিমাসে ১০৮টি দাঁড়ায়। যা গত বছরের তুলনায় বেশি।
আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাড. তৈয়বা বেগম বলেন, শুধুমাত্র দিনাজপুর জেলার আদালতেই সাড়ে চার হাজারের বেশি নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা বিচারাধীন রয়েছে। প্রতিনিয়তই এসব ঘটনা ঘটছে, মামলা হচ্ছে। কিন্তু মামলার দীর্ঘসূত্রতা রয়েছে। মামলা হওয়া, চার্জশিট প্রদান, চার্জগঠন, সাক্ষী, আর্গুমেন্ট, গ্রেফতার সবকিছু মিলে অনেক সময় ব্যয় হয়। ফলে বাদীও নিরাশ হয়ে যায়, সাক্ষীরা কোনোভাবে আপসে চলে আসে। দীর্ঘসূত্রতায় মামলার সংখ্যা বাড়ছে, অপরাধীরা কৌশল পাল্টাচ্ছে। আমরা বারবার চাচ্ছি এসব মামলার সঠিক বিচার হতে। পাশাপাশি সচেতনতাও সৃষ্টি করতে হবে।
নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কাজ করছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পল্লী শ্রী। তাদের হিসাব মতে- চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে জুন মাস পর্যন্ত সারা দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন চার হাজার ৭৬৯ জন নারী। এর মধ্যে ধর্ষণের পর মৃত্যু হয়েছে ২৪ জনের। ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ৭২ জন নারীকে। আত্মহত্যা করেছেন ছয় নারী। স্বামী কর্তৃক হত্যার শিকার হয়েছেন ৯৪ জন নারী। জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত সারা দেশে পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন ২৮৮ নারী, রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন ২৫১ জন। একই সময়ে ২৪৮ জন শিশু হত্যার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ৬ থেকে ১২ বছর বয়সি রয়েছে ১০৭ জন। মামলা হয়েছে ১১৪টি। ৫৫৯জন বিভিন্নভাবে শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ১৭৮জন শিশু ৬ থেকে ১২ বছর বয়সি রয়েছে। মামলা হয়েছে ৩১১টি।
পল্লী শ্রীর নির্বাহী পরিচালক শামীম আরা বেগম বলেন, মামলার দীর্ঘসূত্রতা ও প্রভাবশালীদের কারণে প্রতিনিয়তই এসব ঘটনা বাড়ছে। নারী ও শিশু ধর্ষণ ও নির্যাতন কমাতে হলে আইনের প্রয়োগ আরও সুদৃঢ় করতে হবে। পাশাপাশি সবাইকে সচেতন হতে হবে। আমরা যদি পরিবার থেকে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই, তাহলে এসব ঘটনা আর ঘটবে না। আমরা কাজ করছি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ করতে, কিন্তু এটা দমন করা কারো একার পক্ষে সম্ভব না।
ইয়াসমিন আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী দিনাজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল বলেন, ইয়াসমিনকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনার পর সেই সময় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিনাজপুরবাসীর পাশে থেকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। বর্তমান সরকার নারী ধর্ষণ ও নির্যাতন প্রতিরোধে কাজ করছে। নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা প্রতিরোধে সবাইকে এক যোগে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। পাশাপাশি নির্যাতনের ঘটনায় হওযা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির দাবি করেন এই সংসদ সদস্য।
উল্লেখ্য, ১৯৯৫ সালের ২৪ আগস্ট জেলার কাহারোল উপজেলার দশমাইলের অদূরে কতিপয় বিপথগামী পুলিশের হাতে ধর্ষণের শিকার হন কিশোরী ইয়াসমিন। এর প্রতিবাদ জানান দিনাজপুরের সাধারণ মানুষ। শুরু হয় তীব্র আন্দোলন। আন্দোলনের এক পর্যায়ে বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ বিনা উসকানিতে গুলি চালায়। এতে সামু, কাদের, সিরাজসহ সাত জন প্রাণ হারান। আহত হন তিনশ’র বেশি আন্দোলনকারী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শহরে ১৪৪ ধারা (কারফিউ) জারি করা হয়। শহরে নামানো হয় তৎকালীন বিডিআর। এরপর দিনাজপুর থেকে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ ১৩ উপজেলার সব পুলিশকে একযোগে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যা ঘটনায় তিনটি মামলা হয়। ওই সময়ে প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলাগুলো পরিচালনা করেন অ্যাড. এম. আব্দুর রহিম। দায়ের হওয়া মামলাটি তিনটি আদালতে ১২৩ দিন বিচার কাজ শেষে ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট তৎকালীন রংপুরের জেলা ও দায়রা জজ আব্দুল মতিন রায় ঘোষণা করেন। মামলার রায়ে আসামি পুলিশের এএসআই মঈনুল, কনস্টেবল আব্দুস সাত্তার ও পুলিশের পিকআপভ্যান চালক অমৃত লাল বর্মণের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ বিধান ’৯৫-এর ৬ (৪) ধারায় ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুর আদেশ দেওয়া হয়। এছাড়া আলামত নষ্ট, সত্য গোপন ও অসহযোগিতার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এএসআই মঈনুলকে আরও পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদ-ে দ-িত করা হয়। পরে আদালতের দেওয়া রায় রংপুর কারাগারে বাস্তবায়ন করা হয়। ঘটনার সময় থেকে দিনটি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
এদিকে ইয়াসমিন ট্র্যাজেডি দিবসে দশমাইল মোড়ে অবস্থিত ইয়াসমিনের স্মৃতিসৌধে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ, ইয়াসমিনের কবর জিয়ারত, দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়াও ইয়াসমিনের মা শরীফা বেগম তার বাড়িতে দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ ও দোয়ার আয়োজন করেছেন বলে জানা গেছে।