ঢাকা ০২:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫

অন্যের জোরে টিকে থাকা আ.লীগের দেশ শাসনের অধিকার নেই: মির্জা ফখরুল

  • আপডেট সময় : ১২:০৯:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ অগাস্ট ২০২২
  • ৯৫ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় আওয়ামী লীগকে টিকিয়ে রাখতে পাশের দেশ ভারতকে অনুরোধ জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে দেশ শাসনের অধিকার আওয়ামী লীগ হারিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘যারা অন্যের আনুকূল্যে টিকে থাকে তাদেরকে এই দেশের সরকার পরিচালনা ও শাসন করবার কোনো অধিকার নেই।’
গতকাল শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ইউট্যাব আয়োজিত এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি গতকালও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ব্যাখ্যা তারা দেয়নি, অথচ পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার জায়গা থেকে সরে আসেননি। তিনি একটা বক্তব্য দিয়েছেন সেই বক্তব্যে তিনি আবার একই কথা এনশিওর (নিশ্চিত) করেছেন। তাই আমাদেরকে বুঝে নিতে হবে পরিষ্কার ভাষায়, যারা অন্যের আনুকূল্যে টিকে থাকে তাদের এই দেশের সরকার পরিচালনা ও শাসন করবার কোনো অধিকার নেই।’ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে মানুষের কোনো সম্পর্ক নেই মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার বাংলাদেশকে ইতোমধ্যে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। এই সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব বিশ্বাস করে না, যার প্রমাণ তারা একে একে দিয়ে যাচ্ছে।’
ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে এবং নিজেদেরকে স্বাধীন হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করে। আর আওয়ামী সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন ভারত সরকারকে আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য, এর অর্থ তারা এই কথা বলতে চান— ভারত সরকারের অনুকূলেই এই সরকার টিকে আছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যতবারই ক্ষমতায় এসেছে ততবারই তারা বর্গীদের ভূমিকা পালন করেছে। আজকে এই সরকার আমাদের ন্যূনতম যে অধিকার সেগুলো কেড়ে নিয়েছে।’ বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘একটি গণমাধ্যমে পরিষ্কার করে উঠে এসেছে গোয়েন্দা সংস্থার দ্বারা পরিচালিত আয়নাঘর নামে একটি টর্চার সেল আছে, সেখানে আমাদের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন মানুষকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়, টর্চার করা হয় দিনের পর দিন, মাসের পর মাস। কাউকে সেখানে মেরে ফেলা হয়, আবার কাউকে বছরের পর বছর সেখানে রেখে দেওয়া হয়। যারা সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছেন তারা ভাগ্যবান, স্টেটমেন্টগুলো এখন দিচ্ছেন, কথা বলতে শুরু করেছেন।’
‘বাংলাদেশ এখন পুরোপুরিভাবে একটি কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে’ মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে বড় অপরাধ হচ্ছে বাংলাদেশের আত্মাকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। আমাদের আত্মা ছিল একটি গণতান্ত্রিক আত্মা, আমাদের স্বপ্ন ছিল মুক্ত সমাজ সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।’ ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশকে স্থায়ীভাবে একটি অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিয়েছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক। এটা আমার কথা নয়, এটা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কথা, যিনি গণতন্ত্রের জন্য আজও বন্দি হয়ে আছেন। তিনি বলেছিলেন বাংলাদেশকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, ব্যর্থ রাষ্ট্র করা হচ্ছে, এখন তাই হচ্ছে। প্রত্যেকবার নির্বাচনের আগে জনগণকে ভোট দেওয়ার জন্য লড়াই করতে হবে সংগ্রাম করতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ও দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশকে আওয়ামী লীগ যতবারই ক্ষমতায় এসেছে ততোবারই তারা আমাদের আত্মা স্বপ্নকে ধ্বংস করেছে। এর জন্যই আওয়ামী লীগকে অবশ্যই ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। তাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে। বাংলাদেশকে ধ্বংস এবং ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার কারণ কী?’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দুঃখ হয় আমার, একটা দলের সাধারণ সম্পাদক, তিনি জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করেন। দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনাও বলে থাকেন জিয়াউর রহমান নাকি যুদ্ধ করেননি। জিয়াউর রহমানের নাকি বাইরে মুক্তিযোদ্ধার পোশাক ছিল, ভিতরে নাকি ছিল পাকিস্তানের চর, ধিক্কার দেই আমি যারা জিয়াউর রহমানের ভূমিকাকে অস্বীকার করে, তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে।’
আওয়ামী লীগ তাদের অপকর্ম-দুর্নীতি থেকে মানুষের মনকে অন্যদিকে নিয়ে যেতে চায় উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে দেশের মূল সংকট একটা, সেটা হলো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে। আওয়ামী লীগ জোর করে বিনা বুথে শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় যন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। এই আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরানো আমাদের পবিত্র দায়িত্ব।’
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

অন্যের জোরে টিকে থাকা আ.লীগের দেশ শাসনের অধিকার নেই: মির্জা ফখরুল

আপডেট সময় : ১২:০৯:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ অগাস্ট ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় আওয়ামী লীগকে টিকিয়ে রাখতে পাশের দেশ ভারতকে অনুরোধ জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে দেশ শাসনের অধিকার আওয়ামী লীগ হারিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘যারা অন্যের আনুকূল্যে টিকে থাকে তাদেরকে এই দেশের সরকার পরিচালনা ও শাসন করবার কোনো অধিকার নেই।’
গতকাল শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ইউট্যাব আয়োজিত এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি গতকালও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ব্যাখ্যা তারা দেয়নি, অথচ পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার জায়গা থেকে সরে আসেননি। তিনি একটা বক্তব্য দিয়েছেন সেই বক্তব্যে তিনি আবার একই কথা এনশিওর (নিশ্চিত) করেছেন। তাই আমাদেরকে বুঝে নিতে হবে পরিষ্কার ভাষায়, যারা অন্যের আনুকূল্যে টিকে থাকে তাদের এই দেশের সরকার পরিচালনা ও শাসন করবার কোনো অধিকার নেই।’ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে মানুষের কোনো সম্পর্ক নেই মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার বাংলাদেশকে ইতোমধ্যে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। এই সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব বিশ্বাস করে না, যার প্রমাণ তারা একে একে দিয়ে যাচ্ছে।’
ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে এবং নিজেদেরকে স্বাধীন হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করে। আর আওয়ামী সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন ভারত সরকারকে আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য, এর অর্থ তারা এই কথা বলতে চান— ভারত সরকারের অনুকূলেই এই সরকার টিকে আছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যতবারই ক্ষমতায় এসেছে ততবারই তারা বর্গীদের ভূমিকা পালন করেছে। আজকে এই সরকার আমাদের ন্যূনতম যে অধিকার সেগুলো কেড়ে নিয়েছে।’ বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘একটি গণমাধ্যমে পরিষ্কার করে উঠে এসেছে গোয়েন্দা সংস্থার দ্বারা পরিচালিত আয়নাঘর নামে একটি টর্চার সেল আছে, সেখানে আমাদের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন মানুষকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়, টর্চার করা হয় দিনের পর দিন, মাসের পর মাস। কাউকে সেখানে মেরে ফেলা হয়, আবার কাউকে বছরের পর বছর সেখানে রেখে দেওয়া হয়। যারা সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছেন তারা ভাগ্যবান, স্টেটমেন্টগুলো এখন দিচ্ছেন, কথা বলতে শুরু করেছেন।’
‘বাংলাদেশ এখন পুরোপুরিভাবে একটি কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে’ মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে বড় অপরাধ হচ্ছে বাংলাদেশের আত্মাকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। আমাদের আত্মা ছিল একটি গণতান্ত্রিক আত্মা, আমাদের স্বপ্ন ছিল মুক্ত সমাজ সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।’ ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশকে স্থায়ীভাবে একটি অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিয়েছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক। এটা আমার কথা নয়, এটা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কথা, যিনি গণতন্ত্রের জন্য আজও বন্দি হয়ে আছেন। তিনি বলেছিলেন বাংলাদেশকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, ব্যর্থ রাষ্ট্র করা হচ্ছে, এখন তাই হচ্ছে। প্রত্যেকবার নির্বাচনের আগে জনগণকে ভোট দেওয়ার জন্য লড়াই করতে হবে সংগ্রাম করতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ও দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশকে আওয়ামী লীগ যতবারই ক্ষমতায় এসেছে ততোবারই তারা আমাদের আত্মা স্বপ্নকে ধ্বংস করেছে। এর জন্যই আওয়ামী লীগকে অবশ্যই ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। তাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে। বাংলাদেশকে ধ্বংস এবং ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার কারণ কী?’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দুঃখ হয় আমার, একটা দলের সাধারণ সম্পাদক, তিনি জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করেন। দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনাও বলে থাকেন জিয়াউর রহমান নাকি যুদ্ধ করেননি। জিয়াউর রহমানের নাকি বাইরে মুক্তিযোদ্ধার পোশাক ছিল, ভিতরে নাকি ছিল পাকিস্তানের চর, ধিক্কার দেই আমি যারা জিয়াউর রহমানের ভূমিকাকে অস্বীকার করে, তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে।’
আওয়ামী লীগ তাদের অপকর্ম-দুর্নীতি থেকে মানুষের মনকে অন্যদিকে নিয়ে যেতে চায় উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে দেশের মূল সংকট একটা, সেটা হলো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে। আওয়ামী লীগ জোর করে বিনা বুথে শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় যন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। এই আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরানো আমাদের পবিত্র দায়িত্ব।’
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।