ঢাকা ০৬:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের আঁধারে কাসেমিরোর আলো

  • আপডেট সময় : ১১:০৯:৫৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ অগাস্ট ২০২২
  • ৮৪ বার পড়া হয়েছে

ক্রীড়া ডেস্ক : গত কয়েকদিনের ঘটনাপ্রবাহে দলবদলটি অনেকটা নিশ্চিতই হয়ে গিয়েছিল। বাকি ছিল স্রেফ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। সেটিও হয়ে গেল শুক্রবার। রিয়াল মাদ্রিদের মাঝমাঠের বড় ভরসা, ক্লাবের অনেক সাফল্যের নায়ক কাসেমিরো এখন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের। দুই ক্লাবই শুক্রবার বিবৃতি দিয়ে জানায়, সান্তিয়াগো বের্নাবেউ ছেড়ে কাসেমিরোর নতুন ঠিকানা হতে যাচ্ছে ওল্ড ট্র্যাফোর্ড। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর, অসাধারণ পারফরম্যান্সে মাদ্রিদে গ্রেট হয়ে ওঠা এই ব্রাজিলিয়ানকে ৬ কোটি পাউন্ডে দলে টেনেছে ইউনাইটেড। সঙ্গে পারফরম্যান্সভিত্তিক বাড়তি থাকবে আরও ১ কোটি পাউন্ড। চুক্তি হতে যাচ্ছে চার বছরের জন্য, সুযোগ থাকবে পরে আরও এক বছর বাড়ানোর। নতুন মৌসুমের শুরুতে এমন কিছুর আভাস ছিল না। তবে গত মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে শীর্ষ চারে থাকতে না পারা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এবারও লিগের শুরুটা করেছে বাজে। মাঠের ফুটবলে ধুঁকতে থাকা দল একজন মিডফিল্ডার খুঁজছিল হন্যে হয়ে। বার্সেলোনা থেকে ফ্রেংকি ডি ইয়ংকে আনার অনেক চেষ্টা তারা করলেও আপাতত তা থমকে আছে। আরও দু-একজন নিয়েও তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে। এক পর্যায়ে তাদের নজর পড়ে কাসেমিরোর দিকে।
আপাত দৃষ্টিতে কাসেমিরোর রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়ার কোনো বাস্তবতা ছিল না। ক্লাবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলারদের একজন তিনি। ক্লাবও তাকে সেই মর্যাদা দিয়ে থাকে। কাসেমিরো শুরুতে প্রস্তাব উড়িয়ে দিয়েছিলেন বলেই নানা সংবাদমাধ্যমের খবর। তবে নতুন প্রস্তাবে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কাসেমিরোর বেতন রিয়ালের চেয়ে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়িয়ে দেওয়ার পর তিনি আগ্রহী হন বলে খবরে প্রকাশ। রয়টার্সের খবর, ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে তার বেতন হতে যাচ্ছে বছরে ১ কোটি ৬০ লাখ ইউরো। এছাড়া, ৩০ বছর বয়সে এসে আরও চার-পাঁচ বছরর ক্যারিয়ার নিশ্চয়তাও হয়তো তাকে উৎসাহী করেছে প্রস্তাবটি নিতে। ২০১৩ সালে ব্রাজিলিয়ান ক্লাব সাও পাওলো থেকে রিয়াল মাদ্রিদে পা রাখেন কাসেমিরো। তারকাখচিত দলে নিজের জায়গা করে নিতে সময় কিছুটা লেগে যায় বটে। ক্রমে তিনি নিজেও হয়ে ওঠেন রিয়ালের উজ্জ্বল নক্ষত্র। ৯ বছরের এই পথচলায় সম্ভব সব দলীয় অর্জনের স্বাদ তিনি পেয়েছেন। রিয়ালের হয়ে জিতেছেন তিনি পাঁচটি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, তিনটি করে লা লিগা, উয়েফা সুপার কাপ, স্প্যানিশ সুপার কাপ ও ক্লাব বিশ্বকাপ, একটি কোপা দেল রে। দলের সেসব সাফল্যে তার ছিল বড় অবদান। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে পাদপ্রদীপের আলো হয়তো ততটা পাননি, তবে দিনের পর দিন নিজের কাজটা করে গেছেন ক্লান্তিহীন। লুকা মদ্রিচ ও টনি ক্রুসের সঙ্গে কাসেমিরোকে নিয়ে গড়ে ওঠা ‘ত্রয়ী’ ক্লাব ফুটবলের ইতিহাসে পৌঁছে গেছে কিংবদন্তির উচ্চতায়। রিয়ালের প্রতি প্রতি তার নিবেদনও ছিল প্রশ্নাতীত। রিয়াল মাদ্রিদের বিদায়ী বিবৃতিতে তার প্রতি ক্লাবের অনুরাগ ফুটে উঠল পরিষ্কারভাবেই। “কাসেমিরোর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা জানাচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদ। সে এমন এক ফুটবলার যে এখন ক্লাবের কিংবদন্তি। ২০১৩ সালে ২০ বছর বয়সে ক্লাবে পা রাখার পর থেকে আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল অধ্যায়টিতে দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলারদের একজন সে। একজন আদর্শ ফুটবলার সে, ক্লাবের হয়ে যে নিজের সবটুকু উজাড় করে দিয়েছে। রিয়াল মাদ্রিদ তার ঘর ছিল, ঘর হয়েই থাকবে।”
এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গা, অহেলিয়া চুয়ামেনির মতো তরুণদের ক্লাবে নিয়ে আসায় সম্প্রতি কাসেমিরোর চ্যালেঞ্জটা বেড়ে গিয়েছিল বটে। তবে অভিজ্ঞতা ও নির্ভরতার জায়গায় এখনও তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। আরও অন্তত বছর দুয়েক তার কাছ থেকে সর্বোচ্চটা পাওয়ার আশা রিয়াল করতেই পারত। তবে শেষ পর্যন্ত কাসেমিরোর চাওয়ায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি ক্লাব। শুক্রবার দলের অনুশীলনে গিয়ে কোচ কার্লো আনচেলত্তিকে নিজের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানান কাসেমিরো। কোচ পরে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কাসেমিরোর চাওয়াকে তারা সম্মান জানিয়েছেন। “আজকে সকালে আমাদের কথা হয়েছে। সে নতুন একটা চ্যালেঞ্জ, নতুন সুযোগ নিতে চায়। এখান থেকে পেছনে ফেরার আর সুযোগ ছিল না। আমি সেটা অনুধাবন করতে পেরেছি, ক্লাবও তা বুঝতে পারছে। এই দলের হয়ে ও ক্লাবের হয়ে সে যা করেছে, তার প্রতি আমাদের সম্মান দেখাতেই হবে।” “রিয়াল মাদ্রিদ এমন একজন ফুটবলারকে হারাল, যে মদ্রিচ ও ক্রুসের মতো মিডফিল্ডারদের সঙ্গে দারুণ বন্ধন গড়ে তুলেছিল আপন মহিমা নিয়ে। দলের গুরুত্বপূর্ণ একজন ছিল সে, সাফল্যের পেছনে তার ছিল বড় ভূমিকা।” সব মিলিয়ে এখন তার নতুন অভিযানের পালা। চরম দুঃসময়ে তার আগমণে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সামনে খানিকটা আশার আলো।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের আঁধারে কাসেমিরোর আলো

আপডেট সময় : ১১:০৯:৫৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ অগাস্ট ২০২২

ক্রীড়া ডেস্ক : গত কয়েকদিনের ঘটনাপ্রবাহে দলবদলটি অনেকটা নিশ্চিতই হয়ে গিয়েছিল। বাকি ছিল স্রেফ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। সেটিও হয়ে গেল শুক্রবার। রিয়াল মাদ্রিদের মাঝমাঠের বড় ভরসা, ক্লাবের অনেক সাফল্যের নায়ক কাসেমিরো এখন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের। দুই ক্লাবই শুক্রবার বিবৃতি দিয়ে জানায়, সান্তিয়াগো বের্নাবেউ ছেড়ে কাসেমিরোর নতুন ঠিকানা হতে যাচ্ছে ওল্ড ট্র্যাফোর্ড। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর, অসাধারণ পারফরম্যান্সে মাদ্রিদে গ্রেট হয়ে ওঠা এই ব্রাজিলিয়ানকে ৬ কোটি পাউন্ডে দলে টেনেছে ইউনাইটেড। সঙ্গে পারফরম্যান্সভিত্তিক বাড়তি থাকবে আরও ১ কোটি পাউন্ড। চুক্তি হতে যাচ্ছে চার বছরের জন্য, সুযোগ থাকবে পরে আরও এক বছর বাড়ানোর। নতুন মৌসুমের শুরুতে এমন কিছুর আভাস ছিল না। তবে গত মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে শীর্ষ চারে থাকতে না পারা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এবারও লিগের শুরুটা করেছে বাজে। মাঠের ফুটবলে ধুঁকতে থাকা দল একজন মিডফিল্ডার খুঁজছিল হন্যে হয়ে। বার্সেলোনা থেকে ফ্রেংকি ডি ইয়ংকে আনার অনেক চেষ্টা তারা করলেও আপাতত তা থমকে আছে। আরও দু-একজন নিয়েও তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে। এক পর্যায়ে তাদের নজর পড়ে কাসেমিরোর দিকে।
আপাত দৃষ্টিতে কাসেমিরোর রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়ার কোনো বাস্তবতা ছিল না। ক্লাবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলারদের একজন তিনি। ক্লাবও তাকে সেই মর্যাদা দিয়ে থাকে। কাসেমিরো শুরুতে প্রস্তাব উড়িয়ে দিয়েছিলেন বলেই নানা সংবাদমাধ্যমের খবর। তবে নতুন প্রস্তাবে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কাসেমিরোর বেতন রিয়ালের চেয়ে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়িয়ে দেওয়ার পর তিনি আগ্রহী হন বলে খবরে প্রকাশ। রয়টার্সের খবর, ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে তার বেতন হতে যাচ্ছে বছরে ১ কোটি ৬০ লাখ ইউরো। এছাড়া, ৩০ বছর বয়সে এসে আরও চার-পাঁচ বছরর ক্যারিয়ার নিশ্চয়তাও হয়তো তাকে উৎসাহী করেছে প্রস্তাবটি নিতে। ২০১৩ সালে ব্রাজিলিয়ান ক্লাব সাও পাওলো থেকে রিয়াল মাদ্রিদে পা রাখেন কাসেমিরো। তারকাখচিত দলে নিজের জায়গা করে নিতে সময় কিছুটা লেগে যায় বটে। ক্রমে তিনি নিজেও হয়ে ওঠেন রিয়ালের উজ্জ্বল নক্ষত্র। ৯ বছরের এই পথচলায় সম্ভব সব দলীয় অর্জনের স্বাদ তিনি পেয়েছেন। রিয়ালের হয়ে জিতেছেন তিনি পাঁচটি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, তিনটি করে লা লিগা, উয়েফা সুপার কাপ, স্প্যানিশ সুপার কাপ ও ক্লাব বিশ্বকাপ, একটি কোপা দেল রে। দলের সেসব সাফল্যে তার ছিল বড় অবদান। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে পাদপ্রদীপের আলো হয়তো ততটা পাননি, তবে দিনের পর দিন নিজের কাজটা করে গেছেন ক্লান্তিহীন। লুকা মদ্রিচ ও টনি ক্রুসের সঙ্গে কাসেমিরোকে নিয়ে গড়ে ওঠা ‘ত্রয়ী’ ক্লাব ফুটবলের ইতিহাসে পৌঁছে গেছে কিংবদন্তির উচ্চতায়। রিয়ালের প্রতি প্রতি তার নিবেদনও ছিল প্রশ্নাতীত। রিয়াল মাদ্রিদের বিদায়ী বিবৃতিতে তার প্রতি ক্লাবের অনুরাগ ফুটে উঠল পরিষ্কারভাবেই। “কাসেমিরোর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা জানাচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদ। সে এমন এক ফুটবলার যে এখন ক্লাবের কিংবদন্তি। ২০১৩ সালে ২০ বছর বয়সে ক্লাবে পা রাখার পর থেকে আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল অধ্যায়টিতে দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলারদের একজন সে। একজন আদর্শ ফুটবলার সে, ক্লাবের হয়ে যে নিজের সবটুকু উজাড় করে দিয়েছে। রিয়াল মাদ্রিদ তার ঘর ছিল, ঘর হয়েই থাকবে।”
এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গা, অহেলিয়া চুয়ামেনির মতো তরুণদের ক্লাবে নিয়ে আসায় সম্প্রতি কাসেমিরোর চ্যালেঞ্জটা বেড়ে গিয়েছিল বটে। তবে অভিজ্ঞতা ও নির্ভরতার জায়গায় এখনও তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। আরও অন্তত বছর দুয়েক তার কাছ থেকে সর্বোচ্চটা পাওয়ার আশা রিয়াল করতেই পারত। তবে শেষ পর্যন্ত কাসেমিরোর চাওয়ায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি ক্লাব। শুক্রবার দলের অনুশীলনে গিয়ে কোচ কার্লো আনচেলত্তিকে নিজের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানান কাসেমিরো। কোচ পরে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কাসেমিরোর চাওয়াকে তারা সম্মান জানিয়েছেন। “আজকে সকালে আমাদের কথা হয়েছে। সে নতুন একটা চ্যালেঞ্জ, নতুন সুযোগ নিতে চায়। এখান থেকে পেছনে ফেরার আর সুযোগ ছিল না। আমি সেটা অনুধাবন করতে পেরেছি, ক্লাবও তা বুঝতে পারছে। এই দলের হয়ে ও ক্লাবের হয়ে সে যা করেছে, তার প্রতি আমাদের সম্মান দেখাতেই হবে।” “রিয়াল মাদ্রিদ এমন একজন ফুটবলারকে হারাল, যে মদ্রিচ ও ক্রুসের মতো মিডফিল্ডারদের সঙ্গে দারুণ বন্ধন গড়ে তুলেছিল আপন মহিমা নিয়ে। দলের গুরুত্বপূর্ণ একজন ছিল সে, সাফল্যের পেছনে তার ছিল বড় ভূমিকা।” সব মিলিয়ে এখন তার নতুন অভিযানের পালা। চরম দুঃসময়ে তার আগমণে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সামনে খানিকটা আশার আলো।