ঢাকা ১২:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫

ক্যাম্পাসে গৃহবন্দি বর্ষা

  • আপডেট সময় : ০৯:৫২:০৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুন ২০২১
  • ১০০ বার পড়া হয়েছে

ইমন ইসলাম : গ্রীষ্মের প্রচ- দাবদাহ আর তাপদাহে উষ্কখুষ্ক প্রকৃতিকে ঠান্ডা ও শীতলতার পরশ ছুঁয়ে দিতে হাজির সৌন্দর্যের রানি বর্ষা ঋতু। ঘনকালো মেঘের বুক চিরে ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টিতে মুখরিত চারপাশ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রকৃতির রানি বিরাজমান।
অবিরাম বারি বর্ষণ জাবি ক্যাম্পাসে এনে দিয়েছে সজীবতা। ক্যাম্পাসজুড়ে রয়েছে অসংখ্য কদম, হিজল আর জারুল গাছ। কদম গাছে ফুটেছে কদম ফুল, হিজল বাগানে হিজল আর জারুল গাছে ফুটেছে জারুল ফুল। কদম ফুলের সাদা-হলুদের বাহারি মিশ্রন ক্যাম্পাসজুড়ে শোভা ছড়াচ্ছে। ঝিরঝির বৃষ্টিতে ক্যাম্পাসের গাছে গাছে বসেছে বর্ষার সংগীত উৎসব। পাখিরা যেন গ্রীষ্মের হাফ ছেড়ে বৃষ্টির তালে তালে নৃত্য পরিবেশন করছে।
লাল সবুজের আস্তরনে নির্মিত জাবি ক্যাম্পাসে নতুন মাত্রা যোগ করেছে প্রাণের বর্ষা। সবুজের আবরণ ভেদ করে বৃষ্টির ফোঁটায় নিমজ্জিত ক্যাম্পাসের পিচ ঢালা রাস্তা। ঝিরঝির বাদলে ক্যাম্পাসের লাল ইটের দেয়ালগুলো যেন নতুন রূপে সেজেছে। ক্যাম্পাসের লেকগুলো জলে পরিপূর্ণ হয়ে উঠছে। তরুণ-তরুণীরা মেতেছেন বৃষ্টি ভেজা উৎসবে। কেউ বা দল বেঁধে অবিরাম বারিধারায় মেতেছেন কেউবা রঙিন ছাতা হাতে বেরিয়েছেন বর্ষা বরণে। টিপ টিপ বৃষ্টি আর ঠান্ডা শীতল হাওয়া, যেন প্রকৃতিকে গ্রাস করেছে।
প্রতিবারের মতো এবারও বর্ষা এসেছে ক্যাম্পাস রাঙাতে। তবে বর্ষা এসেছে ঠিকই, তবে ক্যাম্পাসে নেই কোনো আমেজ। করোনার কারণে শিক্ষার্থী শূন্য ফাঁকা ক্যাম্পাসে নেই বর্ষা বরণে কোনো উৎসব। যেন নীরবেই চলে এসেছে বর্ষা। যে বর্ষায় ভিজবে বলে শপথ করেছিল সবাই, সেই বর্ষা এসেছে ঠিকই, তবে নেই ভেজার আমেজ। বর্ষার দিনে যে বটতলায় বসতো চা আর খিচূড়ি খাবার উৎসব, সেই বটতলায় চলছে শোকের উৎসব। যে টিএসসি মেতে থাকতো গিটারের টুংটাং বর্ষার গীতে, সেই টিএসসিতে চলছে দুর্ভিক্ষের টুংটাং গীত। যে চৌরঙ্গী মোড়ে দল বেঁধে বৃষ্টি বিলাস হতো, সেই চৌরঙ্গী মোড়ে এখন বেদনার বিলাপ হচ্ছে।
বর্ষা আসলে ক্যাম্পাসের প্রকৃতি যেন জেগে উঠতো রবীন্দ্র সংগীতের উদ্দীপ্ত কণ্ঠে, সেই ক্যাম্পাস যেন আজ নজরুল সংগীতের বিদ্রোহী কণ্ঠে জাগরণের আহ্বান জানাচ্ছে।
বর্ষার সাজে ক্যাম্পাস সেজেছে ঠিকই, তবে সেই সাজ উপভোগের নেই কেউ। বর্ষার সময় ক্যাম্পাসপ্রেমীরা মেতে উঠতো বৃষ্টি ভেজা ফুটবল উৎসবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠসহ শহীদ সালাম-বরকত হল মাঠ, শহীদ রফিক -জব্বার হল মাঠ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠ, ভিসি মাঠে যেন ফুটবল উৎসবে মেতে উঠতো সবাই। বারিধারার অবিরাম বর্ষণে ফুটবল খেলা যেন বর্ষা উৎসবকে করতো আরও মুখরিত।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী বাড়িতে বসে বর্ষা উৎসব উপভোগ করছে। ক্যাম্পাসের আসেপাশে অবস্থান করা শিক্ষার্থীরা ঠিকই ক্যাম্পাসের বর্ষা উৎসবে মেতেছে। নিজেদের মতো করে তারা ঠিকই বরণ করে নিয়েছে প্রাণের বারিধারাকে।
গৃহবন্দী জীবনকে একটু আনন্দঘন করতে বৃষ্টি ভেজা হতে পারে একটি মাধ্যম। ক্যাম্পাসের বর্ষা উৎসব শশরীরে উপভোগ করতে না পারলেও শিক্ষার্থীরা অনলাইনে উপভোগ করার চেষ্টা করছেন। খুব দ্রুত পরিস্থিতি যেন স্বাভাবিক হয়ে ওঠে এবং ক্যাম্পাসে ফিরে যেন তারা আবার প্রাণের বর্ষা উৎসবে মেতে উঠতে পারে, এমনটাই প্রত্যাশা শিক্ষার্থীদের।
লেখক: শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ক্যাম্পাসে গৃহবন্দি বর্ষা

আপডেট সময় : ০৯:৫২:০৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুন ২০২১

ইমন ইসলাম : গ্রীষ্মের প্রচ- দাবদাহ আর তাপদাহে উষ্কখুষ্ক প্রকৃতিকে ঠান্ডা ও শীতলতার পরশ ছুঁয়ে দিতে হাজির সৌন্দর্যের রানি বর্ষা ঋতু। ঘনকালো মেঘের বুক চিরে ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টিতে মুখরিত চারপাশ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রকৃতির রানি বিরাজমান।
অবিরাম বারি বর্ষণ জাবি ক্যাম্পাসে এনে দিয়েছে সজীবতা। ক্যাম্পাসজুড়ে রয়েছে অসংখ্য কদম, হিজল আর জারুল গাছ। কদম গাছে ফুটেছে কদম ফুল, হিজল বাগানে হিজল আর জারুল গাছে ফুটেছে জারুল ফুল। কদম ফুলের সাদা-হলুদের বাহারি মিশ্রন ক্যাম্পাসজুড়ে শোভা ছড়াচ্ছে। ঝিরঝির বৃষ্টিতে ক্যাম্পাসের গাছে গাছে বসেছে বর্ষার সংগীত উৎসব। পাখিরা যেন গ্রীষ্মের হাফ ছেড়ে বৃষ্টির তালে তালে নৃত্য পরিবেশন করছে।
লাল সবুজের আস্তরনে নির্মিত জাবি ক্যাম্পাসে নতুন মাত্রা যোগ করেছে প্রাণের বর্ষা। সবুজের আবরণ ভেদ করে বৃষ্টির ফোঁটায় নিমজ্জিত ক্যাম্পাসের পিচ ঢালা রাস্তা। ঝিরঝির বাদলে ক্যাম্পাসের লাল ইটের দেয়ালগুলো যেন নতুন রূপে সেজেছে। ক্যাম্পাসের লেকগুলো জলে পরিপূর্ণ হয়ে উঠছে। তরুণ-তরুণীরা মেতেছেন বৃষ্টি ভেজা উৎসবে। কেউ বা দল বেঁধে অবিরাম বারিধারায় মেতেছেন কেউবা রঙিন ছাতা হাতে বেরিয়েছেন বর্ষা বরণে। টিপ টিপ বৃষ্টি আর ঠান্ডা শীতল হাওয়া, যেন প্রকৃতিকে গ্রাস করেছে।
প্রতিবারের মতো এবারও বর্ষা এসেছে ক্যাম্পাস রাঙাতে। তবে বর্ষা এসেছে ঠিকই, তবে ক্যাম্পাসে নেই কোনো আমেজ। করোনার কারণে শিক্ষার্থী শূন্য ফাঁকা ক্যাম্পাসে নেই বর্ষা বরণে কোনো উৎসব। যেন নীরবেই চলে এসেছে বর্ষা। যে বর্ষায় ভিজবে বলে শপথ করেছিল সবাই, সেই বর্ষা এসেছে ঠিকই, তবে নেই ভেজার আমেজ। বর্ষার দিনে যে বটতলায় বসতো চা আর খিচূড়ি খাবার উৎসব, সেই বটতলায় চলছে শোকের উৎসব। যে টিএসসি মেতে থাকতো গিটারের টুংটাং বর্ষার গীতে, সেই টিএসসিতে চলছে দুর্ভিক্ষের টুংটাং গীত। যে চৌরঙ্গী মোড়ে দল বেঁধে বৃষ্টি বিলাস হতো, সেই চৌরঙ্গী মোড়ে এখন বেদনার বিলাপ হচ্ছে।
বর্ষা আসলে ক্যাম্পাসের প্রকৃতি যেন জেগে উঠতো রবীন্দ্র সংগীতের উদ্দীপ্ত কণ্ঠে, সেই ক্যাম্পাস যেন আজ নজরুল সংগীতের বিদ্রোহী কণ্ঠে জাগরণের আহ্বান জানাচ্ছে।
বর্ষার সাজে ক্যাম্পাস সেজেছে ঠিকই, তবে সেই সাজ উপভোগের নেই কেউ। বর্ষার সময় ক্যাম্পাসপ্রেমীরা মেতে উঠতো বৃষ্টি ভেজা ফুটবল উৎসবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠসহ শহীদ সালাম-বরকত হল মাঠ, শহীদ রফিক -জব্বার হল মাঠ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠ, ভিসি মাঠে যেন ফুটবল উৎসবে মেতে উঠতো সবাই। বারিধারার অবিরাম বর্ষণে ফুটবল খেলা যেন বর্ষা উৎসবকে করতো আরও মুখরিত।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী বাড়িতে বসে বর্ষা উৎসব উপভোগ করছে। ক্যাম্পাসের আসেপাশে অবস্থান করা শিক্ষার্থীরা ঠিকই ক্যাম্পাসের বর্ষা উৎসবে মেতেছে। নিজেদের মতো করে তারা ঠিকই বরণ করে নিয়েছে প্রাণের বারিধারাকে।
গৃহবন্দী জীবনকে একটু আনন্দঘন করতে বৃষ্টি ভেজা হতে পারে একটি মাধ্যম। ক্যাম্পাসের বর্ষা উৎসব শশরীরে উপভোগ করতে না পারলেও শিক্ষার্থীরা অনলাইনে উপভোগ করার চেষ্টা করছেন। খুব দ্রুত পরিস্থিতি যেন স্বাভাবিক হয়ে ওঠে এবং ক্যাম্পাসে ফিরে যেন তারা আবার প্রাণের বর্ষা উৎসবে মেতে উঠতে পারে, এমনটাই প্রত্যাশা শিক্ষার্থীদের।
লেখক: শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।