বিনোদন ডেস্ক : গতকাল সোমবার ছিল বিশ্ব সংগীত দিবস। করোনাসৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে দেশে দিবসটি পালিত না হলেও সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ মনে করেন, পৃথিবীতে করোনা নামের অসুর বিচরণ করছে। কেউ সুরের মধ্যে নেই। মানুষ স্তব্ধ। তবে করোনা-অসুরের বিনাশ শেষে পৃথিবী আবার সংগীতময় হবে। সোমবার (২১ জুন) দুপুরে দিবসটি নিয়ে অনলাইন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে দেশবরেণ্য এই শিল্পী এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশের সংগীত ভা-ার সমৃদ্ধ। এ কথা জানিয়ে কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, ‘আমরা জাতি হিসেবে ভাষা, সংস্কৃতির জন্য যুদ্ধ করেছি। পৃথিবীর যেকোনো দেশের সংগীতের সঙ্গে সংমিশ্রণ হলে সংস্কৃতি আরো সমৃদ্ধ হয়। যদিও আমাদের সংগীতের ভা-ার এত বেশি সমৃদ্ধ যে, বর্হিবিশ্বের উপর নির্ভর না করলেও চলে। আমাদের ফোক গান কানায় কানায় পূর্ণ। প্রতিটি অঞ্চলে আমাদের সংগীতের মহাজন, সাধক বা বাউল রয়েছেন। তারা সংগীতকে সমৃদ্ধ করেছেন। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সেসব সংগীতও যদি কুড়িয়ে একত্রিত করতে পারি তাহলে আর কিছুই লাগে না।’ দেশীয় সংগীত বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দিতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন? এমন প্রশ্নের উত্তরে বাংলা আধুনিক গানের জনপ্রিয় এই শিল্পী বলেন, ‘আমরা এখন গ্লোবালাইজেশনের যুগে আছি। আমাদের গানগুলো আরো বেশি অলঙ্কৃত করে বর্হিবিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষির কাছে উপস্থাপন করা উচিত। ভারতীয় সিনেমা সিঙ্গাপুরেও দেখা হয়। এ ক্ষেত্রে সাব টাইটেল থাকে। সাব টাইটেল থাকলে দর্শক কমিউনিকেট করতে পারে। আমাদের গানের ক্ষেত্রেও সাব টাইটেল ব্যবহার করা উচিত। গানের সামারিও তৈরি করা যেতে পারে। এতে কমিউনিকেট করতে সুবিধা হ
কলকাতায় রিয়েলিটি শোয়ে ফোক গান ব্যবহার করা হচ্ছে। অধিকাংশই আমাদের ফোক। মানুষ সেগুলো আগ্রহ ভরে গ্রহণ করছে। আমাদের জিনিস অন্যরা নিয়ে কাজ করছে, অথচ আমরা পারছি না। নতুন প্রজন্মকে দেশীয় সংস্কৃতির দিকে ধাবিত করতে হবে বলে মনে করেন কুমার বিশ্বজিৎ। তিনি বলেন, ‘না হলে এটি আমাদের জন্য অনেক বেশি অ্যালার্মিং হবে, তারা পর-সংস্কৃতির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। এমনিতেই বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা বর্হিবিশ্বের গানের প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়েছে। এটা চলতে থাকলে আমরা সাংস্কৃতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়ব- যা হবে সবচেয়ে ভয়ানক!’
সিঙ্গারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের যুগ্ম-আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন কুমার বিশ্বজিৎ। এই সংগঠনের পক্ষ থেকে শিল্পীদের স্বার্থে পদক্ষেপ নেয়া হয়। এ বিষয়ে কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, ‘গানের মানুষ ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শিল্পীদের মধ্যে বাউলিপনা থাকে। অর্থ-বৈভবের দিকে তারা ছোটেন না। সারাক্ষণ সৃষ্টির পেছনে পড়ে থাকেন। কিন্তু শিল্পীর সৃষ্টি তৃতীয় পক্ষ উপভোগ করছে। এ বিষয়ে আগে তারা ভাবে না। শেষ বয়সে গিয়ে প্রশ্ন জাগে- আমি কী করলাম? নিজের জন্য বা পরিবারের জন্য তো কিছু করিনি! অথচ দেখা যায় তিনি সংগীতের বিশাল ভা-ার করে গেছেন। এই শিল্পীরা কেন শেষ বয়সে দুস্থ হবেন? একটি সিস্টেমে এনে শিল্পীর এই ন্যায্য প্রাপ্য যাতে তাকে বুঝিয়ে দেওয়া যায়- এ জন্যই এই সংগঠন।’ ১৯৮২ সালের ২১ জুন বিশ্ব সংগীত দিবসের প্রবর্তন হয় ফ্রান্সে। ১৯৮৫ সালের ২১ জুন ইউরোপ এবং পরবর্তী সময়ে তা বিশ্বে মর্যাদা লাভ করে। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ১১০টি দেশ দিবসটি উদযাপন করে। বাংলাদেশেও দুই দশকের বেশি সময় ধরে সংগীত দিবস পালিত হয়ে আসছে। যদিও করোনাসৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে বর্তমানে দেশে দিবসটি পালিত হচ্ছে না।
করোনা শেষে পৃথিবী আবার সংগীতময় হবে : কুমার বিশ্বজিৎ
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ