চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : মিরসরাইয়ে ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত ১১ তরুণের নামাজে জানাজা শেষে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় হাটহাজারী উপজেলার আমানবাজার এলাকার খন্দকিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঁচ জনের এবং বাকি ছয় জনের জানাজা নিজ নিজ এলাকায় সম্পন্ন হয়। এর আগে নিহত তরুণদের জানাজার মাঠ ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। বিভিন্ন এলাকার মানুষ জানাজায় সমবেত হন। এর আগে নিহত তরুণদের বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স মাঠে এসে পৌঁছালে মানুষ তাদের এক মুহূর্ত দেখার চেষ্টা করেন। নিহতরা হলেন-মাইক্রোচালক হাটহাজারী উপজেলার আজিম সাবরেজিস্ট্রার বাড়ির হাজী মো. ইউসুফের ছেলে গোলাম মোস্তফা নিরু (২৬), চিকনদ-ী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের আবু মুসা খানের বাড়ির মোতাহের হোসেনের ছেলে মোস্তফা মাসুদ রাকিব (১৯), ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মো. ইলিয়াছ ভুট্টোর ছেলে মোহাম্মদ হাসান (১৭), একই ওয়ার্ডে খোন্দকার পাড়ার আবদুল হামিদের ছেলে জিয়াউল হক সজীব (২২), মোজাফফর আহমেদের ছেলে মোসহাব আহমেদ হিশাম (১৬), ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আজিজ মেম্বার বাড়ির জানে আলমের ছেলে ওয়াহিদুল আলম জিসান (২৩), একই বাড়ির পারভেজের ছেলে সাগর (১৭) ও একই এলাকার আবদুল ওয়াদুদ মাস্টার বাড়ির আবদুল মাবুদের ছেলে ইকবাল হোসেন মারুফ (১৭) ও মজিদ আব্বাস চৌধুরী বাড়ির বাদশা চৌধুরীর ছেলে শিক্ষক রিদুয়ান চৌধুরী (২২), আব্দুল আজিজ বাড়ির মৃত পারভেজের ছেলে তাসমির হাসান (১৭), মনসুর আলমের ছেলে মো. মাহিম (১৭)।
এদিকে প্রিয়জনকে হারিয়ে নিহত স্বজনদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। নিহত স্বজনরা দুর্ঘটনায় দায়ী লাইনম্যানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
রেলওয়ের সেই গেটম্যান বরখাস্ত : চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ট্রেনের ধাক্কায় ১১ জন নিহতের ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন গেটম্যান সাদ্দাম হোসেন। গতকাল শনিবার দুপুরে তাকে বহিষ্কারের কথা জানায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। বহিষ্কারের বিষয়টি সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রামের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) আবুল কালাম আজাদ। তিনি জানান, দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সাদ্দামকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে সাদ্দামের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত শুক্রবার সন্ধ্যায় গেটম্যান সাদ্দাম হোসেনকে মিরসরাই লেভেল ক্রসিং এলাকা থেকে আটক করে পুলিশ। এর আগে শনিবার সকালে সাদ্দাম হোসেনকে আসামি করে মামলা করেন রেলওয়ে পুলিশের (জিআরপি) এএসআই জহির।
শুক্রবার (২৯ জুলাই) দুপুর পৌনে ২টার দিকে শিক্ষার্থীদের নিয়ে মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া পানির ঝরনা দেখতে যান কোচিং সেন্টারের শিক্ষকরা। সেখান থেকে ফেরার পথে দুপুরে খৈয়াছড়া রেল স্টেশনের কাছে লেভেল ক্রসিং অতিক্রম করার সময় মাইক্রোবাসটির সঙ্গে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী ট্রেন মহানগর প্রভাতীর ধাক্কা লাগে। ট্রেনটি প্রায় এক কিলোমিটার দূরে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যায় মাইক্রোবাসটিকে। দুমড়েমুচড়ে যায় যানটি। ঘটনাস্থলেই মারা যান ১১ জন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ছয়জনকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠান। দুর্ঘটনার পর বন্ধ হয়ে যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল যোগাযোগ। পরে রিলিফ ট্রেন এসে দুর্ঘটনাকবলিত মাইক্রোবাসটিকে সরিয়ে ফেলার পর স্বাভাবিক হয় রেল চলাচল। এদিকে এ দুর্ঘটনার পরপরই বিভাগীয় পার্সোনেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আনছার আলীকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
পারিবারিক কবরস্থানে শায়িত ১১ তরুণ রেলওয়ের সেই গেটম্যান বরখাস্ত
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ