নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৮ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪ এবং নারী ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬ জন। এর আগে ২০১১ সালে জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ৪০ লাখ ৪৩ হাজার ৬৯৭।
গতকাল বুধবার জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২ এর প্রাথমিক তথ্যে এ কথা জানানো হয়। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ তথ্য উপস্থাপন করেন ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২১’ প্রকল্প পরিচালক দিলদার হোসেন। তিনি বলেন, ‘জনমিতিক তথ্য আমরা মাঠ থেকে যা পেয়েছি, তা সরাসরি আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি। এটি প্রাথমিক প্রতিবেদন।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ। আরও উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
জনশুমারির তথ্য বলছে , এই জনসংখ্যার ১১ কোটি ৩০ লাখ ৬৩ হাজার ৫৮৭ জন পল্লি এলাকায় থাকেন এবং ৫ কোটি ২০ লাখ ৯ হাজার ৭২ জন শহরে থাকেন। মোট জনসংখ্যার মধ্যে হিজড়া জনগোষ্ঠী মাত্র ১২ হাজার ৬২৯ জন। তাদের মধ্যে ৬ হাজার ২৮৩ জন পল্লি এলাকায় এবং ৬ হাজার ৩৪৬ জন শহরে বসবাস করেন। এর মধ্যে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংখ্যা ১৬ লাখ ৫০ হাজার ১৫৯ জন। দেশে প্রথমবারের মতো ডিজিটাল পদ্ধতিতে জনশুমারির কাজ শুরু হয় গত ১৫ মে। সারা দেশে একযোগে ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৬৯৭ জন গণনাকারী ডিজিটাল পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ‘রিপোর্ট অন বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস-২০২০’ হালনাগাদ জরিপে ১ জানুয়ারি, ২০২১ পর্যন্ত দেশের মোট জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৯১ লাখ। সেই হিসাবে জনসংখ্যা কমেছে।
হিন্দু জনসংখ্যা আরও কমল : দেশে এখন মুসলমানের সংখ্যা ৯১ শতাংশ। সনাতন ধর্মাবলম্বী ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ। ২০১১ সালের জনশুমারিতে হিন্দু ছিল ৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ। বৌদ্ধধর্মাবলম্বী ছিল শূন্য দশমিক ৬১ শতাংশ। আগের শুমারিতে ছিল শূন্য দশমিক ৬২ শতাংশ। ২০১১ সালের জনশুমারির চেয়ে এবারের জনশুমারিতে হিন্দু জনসংখ্যা কমল দশমিক ৫৯ শতাংশ।
বিবিএস-এর প্রথম ডিজিটাল ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’-এর প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সেখানে এক অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন বিবিএসের প্রকল্প পরিচালক দিলদার হোসেন।
স্বাধীন দেশে প্রথম জনশুমারি হয় ১৯৭৪ সালে। তখন হিন্দু জনসংখ্যা ছিল ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ। এরপর আরও চারটি জনশুমারি হয়েছে। সর্বশেষ ২০১১ সালের জনশুমারিতে দেখা গেছে, দেশের মোট জনসংখ্যার ৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ হিন্দু।
বিবিএসের ২০১১ সালের জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রতিবেদনে দেশে হিন্দু জনসংখ্যা কমে যাওয়ার দুটি কারণ উল্লেখ করা হয়। প্রথমত, হিন্দুদের আউট মাইগ্রেশন হচ্ছে, অর্থাৎ হিন্দুরা দেশ ছাড়ছে। দ্বিতীয়ত, হিন্দু জনগোষ্ঠীর মধ্যে মোট প্রজনন হার বা টোটাল ফার্টিলিটি রেট তুলনামূলক কম। অর্থাৎ হিন্দু দম্পতিরা তুলনামূলকভাবে কম সন্তান জন্ম দেন।
প্রাথমিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জনসংখ্যার বার্ষিক গড় বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ২২। ২০১১ সালের জনশুমারিতে জনসংখ্যার গড় বৃদ্ধির হার ছিল ১ দশমিক ৩৭। জনসংখ্যার ঘনত্ব বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১১৯ জন। ২০১১ সালের শেষ জনশুমারিতে যা ছিল ৯৭৬ জন। সাক্ষরতার হার বেড়ে হয়েছে ৭৪ দশমিক ৬৬। আগের শুমারিতে ছিল ৫১ দশমিক ৭৭ শতাংশ। সারা দেশে গত ১৫ জুন একযোগে শুরু হয় জনশুমারি ও গৃহগণনা কার্যক্রম। গত ২১ জুন জনশুমারি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলায় বন্যা শুরু হওয়ায় এসব জেলায় শুমারি কার্যক্রম ২৮ জুন পর্যন্ত চলে।
১৮-২০ কোটি অনুমাননির্ভর, জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৫১ লাখ : জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, অনেকেই আলোচনায় বলেন— বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি না এখন ১৮ কোটি হয়ে গেছে। কেউ বলছে, ১৮ কোটি না ২০ কোটি হয়ে গেছে। এই যে বিভিন্ন আলোচনা এগুলো অনুমাননির্ভর। সেই জায়গা থেকে এখন আমরা সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারছি আজকে আমাদের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ। কাজেই এই জায়গাটি অনেক বড় অর্জন।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর প্রাথমিক তথ্য প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি। শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, এই শুমারির মাধ্যমেই কিন্তু আমরা সেটা পেয়েছি। তার মাঝে আমরা এটাও দেখতে পারছি— জনসংখ্যার কত ভাগ নারী, কত ভাগ পুরুষ। সেখানে দেখা যাচ্ছে নারীদের সংখ্যা কিছুটা বেশি। কাজেই সরকারের সব উন্নয়ন কাজের মূলধারায় নারীকে সম্পৃক্ত করা কত যে গুরুত্বপূর্ণ সেটিও আজকে এই প্রতিবেদনে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। তিনি আরও বলেন, শুমারির রিপোর্টের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ের একটি নিবিড় যোগসূত্র আছে। যেমন এখানে আলোচনায় এসেছে প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা কত। তারা কী বিদেশি নাগরিক নাকি অনেকেই স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। এই কথাগুলো উঠে আসছে। কাজেই কতদূর পর্যন্ত আমরা সেই বিশ্লেষণ নিয়ে যাবো, সেটাও আমাদেরকে ভাবতে হবে। যত বেশি যাওয়া যাবে ততো ভালো, কারণ আরও সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যাবে।
প্রথমবারের মতো পুরুষের চেয়ে বেড়েছে নারী : দেশের জনসংখ্যা গণনার তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। মাঠ পর্যায়ে মূল শুমারি শেষ হওয়ার মাত্র এক মাসের মাথায় প্রাথমিক রিপোর্ট করল বিবিএস। জনশুমারি অনুযায়ী, দেশে প্রথমবারের মতো পুরুষের চেয়ে বেড়েছে নারী। দেশে মোট পুরুষের সংখ্যা ৮ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪ জন, নারী ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের জনসংখ্যা ১২ হাজার ৬২৯ জন। জনশুমারি অনুযায়ী দেশে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেশি।
রাজধানীতে সবচেয়ে বেশি মানুষের বসবাস : বর্তমানে রাজধানী ঢাকাতে বসবাস করেন ১ কোটি ১২ লাখ ১৯ হাজার ৭০৮ জন। অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার ১৬ ভাগের একভাগ। বিবিএস প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ঢাকা শহরে ৬০ লাখ ৭৯ হাজার ৩৬৫ জন পুরুষ ও ৫১ লাখ ৩৮ হাজার ৬৯২ জন নারী বসবাস করেন। আর তৃতীয় লিঙ্গের জনসংখ্যাও ঢাকা শহরে বেশি, ১ হাজার ৬১৫ জন।
২৮.৬৫ শতাংশ মানুষ অবিবাহিত : বর্তমানে দেশে শতকরা ২৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ মানুষ অবিবাহিত রয়েছেন বলে জানিয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। ১০ বছর ও তার বেশি বয়সী জনসংখ্যার বৈবাহিক অবস্থার শতকরা হারে এ হিসাব করেছে বিবিএস। জনশুমারি ২০২২-এর প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি ১০০ জনের মধ্যে গড়ে অবিবাহিত ২৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ। বিবাহিত ৬৫ দশমিক ২৬ শতাংশ। বিধবা কিংবা বিপতœীক ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ। তালাকপ্রাপ্ত শূন্য দশমিক ৪২ শতাংশ। আলাদা থাকেন শূন্য দশমিক ৩৭ শতাংশ।
বিশুদ্ধ পানি পান করেন দেশের শতভাগ মানুষ : দেশের মোট জনসংখ্যার শতভাগই বিশুদ্ধ খাবার পানি পাচ্ছেন বলে জানানো হয়েছে ২০২২ সালে প্রকাশিত জনশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদনে। মোট পানির উৎসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পানি ব্যবহার হয় টিউবওয়েলের। এরপর আছে সাপ্লাই ও পুকুর/নদী/খাল/লেকের পানি। খাবার পানির প্রধান উৎস জরিপে বলা হয়, সব বিভাগেই শতভাগ মানুষ বিশুদ্ধ খাবার পানি পাচ্ছে। এর মধ্যে গভীর/অগভীর টিউবওয়েলের পানি পান করেন ৮৫ শতাংশ, সাপ্লাই পানি পান করেন ১১ দশমিক ৭৪ শতাংশ, বোতলজাত পানি পান করেন শূন্য দশমিক ৫৯ শতাংশ, কূপের পানি পান করেন শূন্য দশমিক ৩৫ শতাংশ, পুকুর/নদী/খাল/লেকের পানি পান করেন শূন্য দশমিক ৮৯ শতাংশ, ঝরনা/ছড়ার পানি পান করেন শূন্য দশমিক ১২ শতাংশ, বৃষ্টির পানি পান করেন শূন্য দশমিক ৪২ শতাংশ এবং অন্যান্য উপায়ে শূন্য দশমিক ২৪ শতাংশ মানুষ পানি পান করেন।
৫ বছরের বেশি বয়সীদের ৫৫.৮৯ শতাংশের হাতে মোবাইল ফোন : দেশের জনগোষ্ঠীর পাঁচ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সীদের মধ্যে মোবাইল ফোন আছে ৫৫ দশমিক ৮৯ শতাংশের। এই বয়সী পুরুষদের মধ্যে মোবাইল ফোন আছে ৬৬ দশমিক ৫৩ শতাংশের, আর নারীদের মধ্যে আছে ৪৫ দশমিক ৫৩ শতাংশের হাতে। সম্প্রতি পরিচালিত জনশুমারি ও গৃহগণনায় এ চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৮ বিভাগের মধ্যে পাঁচ বছর ও তদূর্ধ্ব, ১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব- এই দুই ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী ঢাকা বিভাগে। ওই দুই ক্যাটাগরিতে সর্বনি¤œ মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী সিলেট বিভাগে। ঢাকার পাঁচ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে ৬২ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশের মোবাইল ফোন রয়েছে। আর এই বিভাগে ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে ৮৯ দশমিক ২৬ শতাংশেরই মোবাইল ফোন আছে। অন্যদিকে সিলেট বিভাগে পাঁচ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে ৪৭ দশমিক ৫৫ শতাংশের মোবাইল ফোন রয়েছে, আর ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে ৮২ দশমিক ৯৬ শতাংশের মোবাইল ফোন আছে। ইন্টারনেট ব্যবহারের হিসাবে দেখা গেছে, দেশের জনগোষ্ঠীর পাঁচ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে ৩০ দশমিক ৬৮ শতাংশই ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। ১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী অর্থাৎ প্রাপ্ত বয়স্কদের ৭২ দশমিক ৩১ শতাংশই মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন ৮৬ দশমিক ৭২ শতাংশ। প্রাপ্ত বয়স্ক নারীদের মধ্যে মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ। প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে ৩৭ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। এই বয়সী ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর মধ্যে ৪৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ পুরুষ এবং ২৮ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ নারী।
নির্ভরশীলতার হার সবচেয়ে কম ঢাকায় : দেশের জনগোষ্ঠীর মধ্যে নির্ভরশীলতার অনুপাত ৫২ দশমিক ৬৪ শতাংশ। যা পল্লী এলাকায় ৫৬ দশমিক ০৯ শতাংশ এবং শহর এলাকায় ৪৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এ ছাড়া নির্ভরশীলতার অনুপাত ময়মনসিংহ বিভাগে সর্বোচ্চ ৬০ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং ঢাকা বিভাগে সর্বনি¤œ ৪৬ দশমিক ৩২ শতাংশ। প্রকল্প পরিচালক মো. দিলদার হোসেন জানান, নির্ভরশীলতার হার বরিশালে ৫৭ দশমিক ৭২, চট্টগ্রামে ৫৯ দশমিক ৯৭, খুলনায় ৪৮, রাজশাহীতে ৪৮ দশমিক ৮৯, রংপুরে ৫৩ দশমিক ০৯ এবং সিলেটে ৬০ দশমিক ১০ শতাংশ।
দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ