ঢাকা ০৫:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫

খরায় পুড়ছে পাট গাছ, শঙ্কায় কৃষক

  • আপডেট সময় : ০২:৩১:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই ২০২২
  • ৩০৮ বার পড়া হয়েছে

রংপুর প্রতিনিধি : প্রচ- রোদ, অতিরিক্ত তাপমাত্রা আর অনাবৃষ্টির কারণে পাট গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। আবাদ স্থানের কাছে-কিনারে পানি না পেয়ে পাট গাছ জাগ দিতে পারছেন না অনেক চাষি। কেউ কেউ কাটা পাট গরুর গাড়ি বা মহিষের গাড়িতে করে দূরে কোনো পানির এলাকায় নিয়ে যাচ্ছে জাগ দিয়ে পাট পচানোর জন্য। অনেক কৃষক শ্যালো মেশিন ও মোটরের পানি দিয়ে পাট জাগ দিচ্ছেন বাড়তি খরচ করে। ফাগুন মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে চৈত্র মাসের শেষ সপ্তাহের মধ্যে কৃষকরা জমিতে পাট বীজ বপণ করেন। কিন্তু এ বছর বৃষ্টি না হওয়ায় সময়মতো জমিতে পাটের বীজ বপন করা যায়নি। তাই অন্যান্য বছরের তুলনায় পাট আবাদ কম হয়েছে। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আঞ্চলিক উপ-পরিচালক মাহবুবর রহমান জানান, চলতি বছর লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর, গাইবান্ধা ও নীলফামারীতে ৫১ হাজার ৬২৭ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করেছেন। গত বছর পাট চাষের জমির পরিমাণ ছিল ৫৬ হাজার ৪১২ হেক্টর। এ বছর পাট চাষ হয়েছে রংপুরে ৯ হাজার ২৫৫ হেক্টর, কুড়িগ্রামে ১৬ হাজার ৫৭৭ হেক্টর, নীলফামারীতে ৬ হাজার ৭১০ হেক্টর, লালমনিরহাট ৪ হাজার ৮৫ হেক্টর ও গাইবান্ধায় ১৫ হাজার হেক্টর। পাটের আঁশ উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৫৮০ মেট্রিক টন। সরেজমিনে বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষক পানির অভাবে পাটের জাগ দিতে পারছে না। বর্ষাকালে খাল-বিল, নদী-নালা বৃষ্টির পানিতে কানায়-কানায় ভরে যায়। কিন্তু এবার আগাম বৃষ্টি হলেও বর্ষায় বৃষ্টি নেই। তাই বিপাকে পড়তে হয়েছে কৃষক ও পাটচাষিদের। রংপুর সদর উপজেলার মমিনপুর ইউনিয়নের পক্কি ফান্ধার রমেশ উদ্দিন (৫০) বলেন, স্যালো মেশিনে সেচ দিয়ে ৪ বিঘা জমিতে পাট আবাদ করেছেন। পাট বীজ জমিতে বোনা থেকে শুরু করে কাটা, ধুয়ে বাজারে বিক্রি করা পর্যন্ত প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ৬ শ থেকে ৭ শ টাকা হলেও শ্রমিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। “আবার পাট কাটার পর চাষিরা গরুর গাড়ি বা মহিষের গাড়িতে করে পানি সমৃদ্ধ এলাকায় নিয়ে যাচ্ছে জাগ দিয়ে পাট পচানোর জন্য। অনেক কৃষক বাধ্য হয়ে শ্যালো মেশিন ও মোটরের পানি দিয়ে পাট জাগ দিতে গিয়ে বাড়তি খরচ করছেন।” রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার টেপা মধুপুর ইউনিয়নের মুধুপুর গ্রামের বিকাশ চন্দ্র (৪০) বলেন, “ভাই গো, আমরা কৃষক মানুষ। কৃষি আবাদ করে চলে হামার সংসার। আমি মানুষের জমি বর্গা নিয়ে ৬০ শতাংশ জমিতে কোষ্টা (পাট) লাগাইছি। জলের অভাবে জাগ (পচা) দিতে পারছি না। কী করব তাই চিন্তাই আছি দাদা।” গংগাচড়া উপজেলার গজঘণ্টা ইউনিয়নের বালাটারীর রাশেদুল ইসলাম (৪৫) বলেন, “ভাই পানি তো নাই; পাট কাটতে পারছি না। পাট কাটলে তো পানিতে পচাতে হবে। আমরা যে খালে পাট পচাই সে খালে তো পানি নাই। যদি পানি হয় তাহলে পাট পচাতে পারব। না হলে কেটে খরি করতে হবে। আর পাট আবাদ করব না। “একদিকে পানি নাই; আর অন্য দিকে পাট কাটা লেবার পাওয়া যায় না। যদিও পাওয়া যায় তারপর দাম বেশি চায়। আমরা কোন দিকে যাব ভাই।” যেখানে ফলন ভালো হয়েছে সেখানে বিঘা প্রতি ৮ মণ এবং যেখানে ফলন খারাপ হয়েছে সেখানে বিঘা প্রতি ২ মণ পাট হয়েছে বলে জানান কৃষকেরা। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল বলেন, রংপুর জেলায় ৯ হাজার ২৫৬ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। ফলন তুলনামূলক ভালো হয়েছে। তবে শ্রমিক সঙ্কটের কারণে পাট ঘরে তুলতে বেশি টাকা ব্যয় হওয়ায় লোকসানের আশঙ্কা করছে কৃষকরা। ন্যায্যমূল্য পেলে এই লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবে। বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের রংপুর আঞ্চলিক কর্মকর্তা আবু ফজল মোল্লা বলেন, অনাবৃষ্টির কারণে কৃষকরা পাট পচাতে পারছেন না। রিবন রোটিং পদ্ধতিতে পাট পচানোর জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এক সময় সমতলে প্রচুর পরিমাণে পাট চাষ হতো। এখন সেসব জমিতে খাদ্যশস্য উৎপাদন করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। এ কারণে পাট চাষ এখন মূলত পরিত্যক্ত জমি ও চর এলাকায় হচ্ছে।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

অনেক বছর পর সত্যিকারের গণতান্ত্রিক ভোট হবে: প্রধান উপদেষ্টা

খরায় পুড়ছে পাট গাছ, শঙ্কায় কৃষক

আপডেট সময় : ০২:৩১:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই ২০২২

রংপুর প্রতিনিধি : প্রচ- রোদ, অতিরিক্ত তাপমাত্রা আর অনাবৃষ্টির কারণে পাট গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। আবাদ স্থানের কাছে-কিনারে পানি না পেয়ে পাট গাছ জাগ দিতে পারছেন না অনেক চাষি। কেউ কেউ কাটা পাট গরুর গাড়ি বা মহিষের গাড়িতে করে দূরে কোনো পানির এলাকায় নিয়ে যাচ্ছে জাগ দিয়ে পাট পচানোর জন্য। অনেক কৃষক শ্যালো মেশিন ও মোটরের পানি দিয়ে পাট জাগ দিচ্ছেন বাড়তি খরচ করে। ফাগুন মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে চৈত্র মাসের শেষ সপ্তাহের মধ্যে কৃষকরা জমিতে পাট বীজ বপণ করেন। কিন্তু এ বছর বৃষ্টি না হওয়ায় সময়মতো জমিতে পাটের বীজ বপন করা যায়নি। তাই অন্যান্য বছরের তুলনায় পাট আবাদ কম হয়েছে। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আঞ্চলিক উপ-পরিচালক মাহবুবর রহমান জানান, চলতি বছর লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর, গাইবান্ধা ও নীলফামারীতে ৫১ হাজার ৬২৭ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করেছেন। গত বছর পাট চাষের জমির পরিমাণ ছিল ৫৬ হাজার ৪১২ হেক্টর। এ বছর পাট চাষ হয়েছে রংপুরে ৯ হাজার ২৫৫ হেক্টর, কুড়িগ্রামে ১৬ হাজার ৫৭৭ হেক্টর, নীলফামারীতে ৬ হাজার ৭১০ হেক্টর, লালমনিরহাট ৪ হাজার ৮৫ হেক্টর ও গাইবান্ধায় ১৫ হাজার হেক্টর। পাটের আঁশ উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৫৮০ মেট্রিক টন। সরেজমিনে বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষক পানির অভাবে পাটের জাগ দিতে পারছে না। বর্ষাকালে খাল-বিল, নদী-নালা বৃষ্টির পানিতে কানায়-কানায় ভরে যায়। কিন্তু এবার আগাম বৃষ্টি হলেও বর্ষায় বৃষ্টি নেই। তাই বিপাকে পড়তে হয়েছে কৃষক ও পাটচাষিদের। রংপুর সদর উপজেলার মমিনপুর ইউনিয়নের পক্কি ফান্ধার রমেশ উদ্দিন (৫০) বলেন, স্যালো মেশিনে সেচ দিয়ে ৪ বিঘা জমিতে পাট আবাদ করেছেন। পাট বীজ জমিতে বোনা থেকে শুরু করে কাটা, ধুয়ে বাজারে বিক্রি করা পর্যন্ত প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ৬ শ থেকে ৭ শ টাকা হলেও শ্রমিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। “আবার পাট কাটার পর চাষিরা গরুর গাড়ি বা মহিষের গাড়িতে করে পানি সমৃদ্ধ এলাকায় নিয়ে যাচ্ছে জাগ দিয়ে পাট পচানোর জন্য। অনেক কৃষক বাধ্য হয়ে শ্যালো মেশিন ও মোটরের পানি দিয়ে পাট জাগ দিতে গিয়ে বাড়তি খরচ করছেন।” রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার টেপা মধুপুর ইউনিয়নের মুধুপুর গ্রামের বিকাশ চন্দ্র (৪০) বলেন, “ভাই গো, আমরা কৃষক মানুষ। কৃষি আবাদ করে চলে হামার সংসার। আমি মানুষের জমি বর্গা নিয়ে ৬০ শতাংশ জমিতে কোষ্টা (পাট) লাগাইছি। জলের অভাবে জাগ (পচা) দিতে পারছি না। কী করব তাই চিন্তাই আছি দাদা।” গংগাচড়া উপজেলার গজঘণ্টা ইউনিয়নের বালাটারীর রাশেদুল ইসলাম (৪৫) বলেন, “ভাই পানি তো নাই; পাট কাটতে পারছি না। পাট কাটলে তো পানিতে পচাতে হবে। আমরা যে খালে পাট পচাই সে খালে তো পানি নাই। যদি পানি হয় তাহলে পাট পচাতে পারব। না হলে কেটে খরি করতে হবে। আর পাট আবাদ করব না। “একদিকে পানি নাই; আর অন্য দিকে পাট কাটা লেবার পাওয়া যায় না। যদিও পাওয়া যায় তারপর দাম বেশি চায়। আমরা কোন দিকে যাব ভাই।” যেখানে ফলন ভালো হয়েছে সেখানে বিঘা প্রতি ৮ মণ এবং যেখানে ফলন খারাপ হয়েছে সেখানে বিঘা প্রতি ২ মণ পাট হয়েছে বলে জানান কৃষকেরা। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল বলেন, রংপুর জেলায় ৯ হাজার ২৫৬ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। ফলন তুলনামূলক ভালো হয়েছে। তবে শ্রমিক সঙ্কটের কারণে পাট ঘরে তুলতে বেশি টাকা ব্যয় হওয়ায় লোকসানের আশঙ্কা করছে কৃষকরা। ন্যায্যমূল্য পেলে এই লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবে। বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের রংপুর আঞ্চলিক কর্মকর্তা আবু ফজল মোল্লা বলেন, অনাবৃষ্টির কারণে কৃষকরা পাট পচাতে পারছেন না। রিবন রোটিং পদ্ধতিতে পাট পচানোর জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এক সময় সমতলে প্রচুর পরিমাণে পাট চাষ হতো। এখন সেসব জমিতে খাদ্যশস্য উৎপাদন করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। এ কারণে পাট চাষ এখন মূলত পরিত্যক্ত জমি ও চর এলাকায় হচ্ছে।