ঢাকা ১১:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫

শুধু আইনি লড়াই নয়, আইনি সহায়তার রাষ্ট্র হোক

  • আপডেট সময় : ১১:২১:৫৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ জুলাই ২০২২
  • ১৮৬ বার পড়া হয়েছে

ফারজানা কাশেমী : আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বা আইন দ্বারা বাধ্যগত বাক্যসমূহ শুধুমাত্র পুঁথিগত সমাচারমাত্র। আইনের যথাযথ প্রয়োগ উপরোক্ত বাক্যের ভাবগত অর্থ সুনিশ্চিত করতে পারে। প্রচলিত আইনে অপরাধের ধরন, শাস্তি, ব্যাখ্যা স্পষ্টত থাকলেও সর্বজনবিদিত হয়ত নয়। যদিও, রমহড়ৎধহপব ড়ভ ষধি রং হড় বীপঁংব. আইনসিদ্ধ উপায়ে সকল অপরাধের শাস্তি যথাযথ সময়ে কার্যকর করা সম্ভব হলে হয়ত মানুষের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা কিছু অংশে হ্রাস পেতো।
বাংলাদেশে প্রচলিত চবহধষ ঈড়ফব, ১৮৬০ এ মারামারিকে তুচ্ছ অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে ও শাস্তি উল্লেখ আছে। তেমনি গণধোলাইকে ও চবহধষ ঈড়ফব, ১৮৬০ শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
যদিও গণধোলাই-এর আসামি চিহ্নিতকরণ এক জটিল সমীকরণ। বেশকিছু বছর আগে সাভারের আমিন বাজারে শবেবরাত-এর রাতে কিছুসংখ্যক ছাত্রকে ডাকাত সন্দেহে গণধোলাই দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে সেই ছাত্রদের প্রাণহানি হয়। অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা দায়েরের মধ্যে আইনের প্রয়োগ সীমাবদ্ধতার চক্করে আইনের উদ্দেশ্য অনেকাংশে ব্যাহত হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে খুলনা বিভাগে ডাঃ রাকিব নামের এক চিকিৎসক গণধোলাইয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। এই নিষ্ঠুর ও বর্বরোচিত হত্যার বিচার সুনিশ্চিতকরণ সময়োপযোগী দাবি। প্রতিটি পেশাজীবীর নিরাপদ কর্মস্থল হয়ত আইন প্রয়োগের মাধ্যমে নিশ্চিতকরণ কিছু অংশে সম্ভবপর। তাই বাস্তবিক অর্থে আইনের প্রয়োগ কার্যত অর্থে অপরাধ নির্মূলে সহায়ক হিসেবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে।
রাজধানীর স্বনামধন্য বেসরকারি হাসপাতাল টহরঃবফ ঐড়ংঢ়রঃধষ এ সাইফুল নামের এক কর্মচারি কর্তৃক আইসিউতে এক নারী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন। উক্ত ঘটনার জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পুলিশ আটক করেছিল। মহামারির সময়ে খুলনায় এক হাসপাতালের কর্মচারি দ্বারা করোনা আক্রান্ত নারীর যৌন হয়রানির অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে।
ঝবীঁধষ ঙভভবহফবৎ ও ঝবীঁধষ উরংড়ৎফবৎ -এর মধ্যকার পার্থক্য নিশ্চিতকরণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যাবশ্যকীয়। মানসিক বিকারগ্রস্ত, মানসিক ভারসাম্যহীনসহ সকল মানসিক রোগীর চিকিৎসা আশু প্রয়োজন। গড়ে ২৮ জন ব্যক্তি প্রতিদিন আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যা বা অপমৃত্যু রোধে আইনের প্রয়োগ বিদ্যমান। ১৮ বছরের নিচে কোনো অপরাধীর শাস্তির পরির্বতে তাকে আইনগতভাবে সংশোধন কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
ঈৎরসড়মবহরপ ঐরংঃড়ৎু ও অপরাধের বিচার করার জন্য প্রয়োজন। ঐশী নামের এক কিশোরী নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তার বাবা, মাকে খুন করেছিল। আলোচিত সেই ঘটনায় এই কিশোরীর সর্বোচ্চ শাস্তি রহিত হয়েছে তার ঈৎরসড়মবহরপ ঐরংঃড়ৎু বিবেচনায়। তাই অপরাধ বিবেচনায় ব্যক্তির বয়স, মানসিক অবস্থা, অপরাধের ধরন, প্রকৃত কারণ নির্ধারণের নিমিত্তে অপরাধীর শাস্তি সুনিশ্চিতকরণ প্রয়োজন। আইনের বাস্তবিক দিক বিবেচনায়, আইনের কার্যত প্রয়োগে অপরাধীর বিচার হোক। মানবিক হোক মানুষ। অপরাধের নৃশংসতা দূরীকরণে আইন হোক সহায়ক। বেড়াজালের আইন নয়, সকলের বোধ্যগম্য আইন। তাই শুধু আইনি লড়াই নয়, আইনি সহায়তার রাষ্ট্র হোক।
লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

শুধু আইনি লড়াই নয়, আইনি সহায়তার রাষ্ট্র হোক

আপডেট সময় : ১১:২১:৫৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ জুলাই ২০২২

ফারজানা কাশেমী : আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বা আইন দ্বারা বাধ্যগত বাক্যসমূহ শুধুমাত্র পুঁথিগত সমাচারমাত্র। আইনের যথাযথ প্রয়োগ উপরোক্ত বাক্যের ভাবগত অর্থ সুনিশ্চিত করতে পারে। প্রচলিত আইনে অপরাধের ধরন, শাস্তি, ব্যাখ্যা স্পষ্টত থাকলেও সর্বজনবিদিত হয়ত নয়। যদিও, রমহড়ৎধহপব ড়ভ ষধি রং হড় বীপঁংব. আইনসিদ্ধ উপায়ে সকল অপরাধের শাস্তি যথাযথ সময়ে কার্যকর করা সম্ভব হলে হয়ত মানুষের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা কিছু অংশে হ্রাস পেতো।
বাংলাদেশে প্রচলিত চবহধষ ঈড়ফব, ১৮৬০ এ মারামারিকে তুচ্ছ অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে ও শাস্তি উল্লেখ আছে। তেমনি গণধোলাইকে ও চবহধষ ঈড়ফব, ১৮৬০ শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
যদিও গণধোলাই-এর আসামি চিহ্নিতকরণ এক জটিল সমীকরণ। বেশকিছু বছর আগে সাভারের আমিন বাজারে শবেবরাত-এর রাতে কিছুসংখ্যক ছাত্রকে ডাকাত সন্দেহে গণধোলাই দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে সেই ছাত্রদের প্রাণহানি হয়। অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা দায়েরের মধ্যে আইনের প্রয়োগ সীমাবদ্ধতার চক্করে আইনের উদ্দেশ্য অনেকাংশে ব্যাহত হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে খুলনা বিভাগে ডাঃ রাকিব নামের এক চিকিৎসক গণধোলাইয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। এই নিষ্ঠুর ও বর্বরোচিত হত্যার বিচার সুনিশ্চিতকরণ সময়োপযোগী দাবি। প্রতিটি পেশাজীবীর নিরাপদ কর্মস্থল হয়ত আইন প্রয়োগের মাধ্যমে নিশ্চিতকরণ কিছু অংশে সম্ভবপর। তাই বাস্তবিক অর্থে আইনের প্রয়োগ কার্যত অর্থে অপরাধ নির্মূলে সহায়ক হিসেবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে।
রাজধানীর স্বনামধন্য বেসরকারি হাসপাতাল টহরঃবফ ঐড়ংঢ়রঃধষ এ সাইফুল নামের এক কর্মচারি কর্তৃক আইসিউতে এক নারী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন। উক্ত ঘটনার জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পুলিশ আটক করেছিল। মহামারির সময়ে খুলনায় এক হাসপাতালের কর্মচারি দ্বারা করোনা আক্রান্ত নারীর যৌন হয়রানির অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে।
ঝবীঁধষ ঙভভবহফবৎ ও ঝবীঁধষ উরংড়ৎফবৎ -এর মধ্যকার পার্থক্য নিশ্চিতকরণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যাবশ্যকীয়। মানসিক বিকারগ্রস্ত, মানসিক ভারসাম্যহীনসহ সকল মানসিক রোগীর চিকিৎসা আশু প্রয়োজন। গড়ে ২৮ জন ব্যক্তি প্রতিদিন আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যা বা অপমৃত্যু রোধে আইনের প্রয়োগ বিদ্যমান। ১৮ বছরের নিচে কোনো অপরাধীর শাস্তির পরির্বতে তাকে আইনগতভাবে সংশোধন কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
ঈৎরসড়মবহরপ ঐরংঃড়ৎু ও অপরাধের বিচার করার জন্য প্রয়োজন। ঐশী নামের এক কিশোরী নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তার বাবা, মাকে খুন করেছিল। আলোচিত সেই ঘটনায় এই কিশোরীর সর্বোচ্চ শাস্তি রহিত হয়েছে তার ঈৎরসড়মবহরপ ঐরংঃড়ৎু বিবেচনায়। তাই অপরাধ বিবেচনায় ব্যক্তির বয়স, মানসিক অবস্থা, অপরাধের ধরন, প্রকৃত কারণ নির্ধারণের নিমিত্তে অপরাধীর শাস্তি সুনিশ্চিতকরণ প্রয়োজন। আইনের বাস্তবিক দিক বিবেচনায়, আইনের কার্যত প্রয়োগে অপরাধীর বিচার হোক। মানবিক হোক মানুষ। অপরাধের নৃশংসতা দূরীকরণে আইন হোক সহায়ক। বেড়াজালের আইন নয়, সকলের বোধ্যগম্য আইন। তাই শুধু আইনি লড়াই নয়, আইনি সহায়তার রাষ্ট্র হোক।
লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ