ঢাকা ০৭:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫

ক্যারিয়ার গঠনে গুণাবলী ও দক্ষতা

  • আপডেট সময় : ০২:১৯:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ জুলাই ২০২২
  • ৫৮৪ বার পড়া হয়েছে

ক্যাম্পাস ও ক্যারিয়ার ডেস্ক : ভালোভাবে ক্যারিয়ার গঠনের জন্য কিছু বিশেষ গুণ ও দক্ষতা অর্জন জরুরি। নিচে কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো-
ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি : কোন বিষয়কে ভালোভাবে নেওয়া বা ওই বিষয়ের প্রতি ভালো মনোভাব পোষণ করা বা ইতিবাচক মানসিকতার মাধ্যমে গ্রহণ করায় হলো ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি।
আত্মসচেতনতা : নিজের ব্যাপারে সচেতনতা। নিজের ভালোমন্দ উপলব্ধি করাই আত্মসচেতনতা।
আত্মবিশ্বাস : আত্মবিশ্বাস বা আত্মপ্রত্যয় হলো নিজের শক্তিমত্তা, সক্ষমতা ও যোগ্যতা সম্পর্কে দৃঢ় বিশ্বাস।
দৃঢপ্রত্যয় : ব্যাপক আগ্রহ ও সুদৃঢ় মনোবলসহ কোন কাজ করাই দৃঢ় প্রত্যয়।
শ্রদ্ধা, পারস্পারিক নির্ভরশীলতা ও আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক : সমাজের সবার কাছে গ্রহণযোগ্য কাঙ্ক্ষিত বিশেষ চারিত্রিক গুণাবলী হলো শ্রদ্ধাবোধ। সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ এর মাধ্যমে পারস্পারিক নির্ভরশীলতার সৃষ্টি হয়। আর ব্যক্তির সাথে ব্যাক্তির সম্পর্ক হলো আন্তঃ ব্যক্তিক সম্পর্ক।
সততা, পেশাগত নৈতিকতা ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধা : সত্য ও ন্যায়ের পথে চলা, দায়িত্ববোধ, নিয়মানুবর্তিতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিততা ও বিধিবিধান মেনে চলা। আইন ও আইন গত সিদ্ধান্তের উপর অটল থাকা ও বাস্তবায়ন করা ও গুরুত্বপূর্ণ।
ইতিবাচক প্রতিযোগিতা ও সহযোগিতার মনোভাব : নিজের সাথে নিজের প্রতিযোগিতা ই হলো ইতিবাচক প্রতিযোগিতা। আর অন্যের বিপদে সহায়তা করার মানসিকতা হলো সহযোগিতার মনোভাব।
নেতৃত্ব, উদ্যোগ ও কাজের প্রতি আগ্রহ : সুনির্দিষ্ট কার্যকলাপ পরিচালনার জন্য অনেকের মধ্যে সমন্বয় করা ও সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করাই হলো নেতৃত্ব। নতুন নতুন কাজে জড়িত হওয়া হলো উদ্যোগ ও আনন্দের সাথে কাজ সম্পন্ন করায় হলো আগ্রহ।
শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা : স্বাস্থ্যহীন দেহ ও মন নিয়ে ভালো থাকা যায় না। তাই এ ব্যাপারে সচেতন থাকা।
সহমর্মিতা : হৃদয়ের গভীরতম অংশ থেকে উৎসারিত অনুভূতি হলো সহমর্মিতা।
জেন্ডার সংবেদনাশীলতা : নারী পুরুষের সহ অবস্থান ও সমান সুযগের ধারণাকে সামনে রেখে কর্মসম্পাদন প্রক্রিয়াকে জেন্ডার সংবেদনশীলতা বলে।
বিশ্লেষণ করা ও সৃজনশীল চিন্তন ক্ষমতা : প্রথাগত কাঠামোর বাইরে চিন্তা করার দক্ষতা হলো সৃজনশীল চিন্তন ক্ষমতা। কোন ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করাই হলো বিশ্লেষণ করা।
সমস্যা সমাধান ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষমতা : কঠিন বাস্তবতার সময় সঠিক সিধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে পরিত্রাণ পাওয়ার পাওয়াই হলো সক্ষমতার গুণ।
চাপ মোকাবেলা : বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ধাক্কা/ঝুঁকি মোকাবেলা করার ক্ষমতা।
সময় ব্যবস্থাপনা : সময়ের কাজ সময়ের আগেই শেষ করার চেষ্টা ই সময় ব্যবস্থাপনা।
প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা : যুগের সাথথে তাল মিলিয়ে দ্রুত কাজ সম্পাদন করার জন্য নিত্যনতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করার সক্ষমতা থাকা।
গাণিতিক দক্ষতা : হিসাব নিকাশে দক্ষতা।
নান্দনিক দৃষ্টিভঙ্গি : সুন্দরভাবে কাজ করা, উপস্থাপন করার যে বোধ, মনোভাব বা মানসিকতা ই হলো নান্দনিক দৃষ্টিভঙ্গি। এই সকল ক্ষেত্রে উন্নয়নের মাধ্যমেই ক্যারিয়ার এ সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ সম্ভব।
ক্যারিয়ার শুরু করার আগে যা যা জেনে রাখা প্রয়োজন : সহজভাবে বলতে গেলে ক্যারিয়ার মানে কর্মজীবন। ভালো চাকরি কিংবা ব্যাবসা আমাদের দেশে সবথেকে বেশি গ্রহণযোগ্য ক্যারিয়ার অপশন। ইদানীং তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ফ্রিল্যান্সিং কিংবা উদ্যোক্তা হওয়ার ঝোঁকও। তবে শুধুমাত্র ব্যক্তির পেশাই তার ক্যারিয়ার নয়, এটি হচ্ছে ক্যারিয়ারের প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। তাই ক্যারিয়ার গঠনের ক্ষেত্রে বুঝে-শুনে ও সতর্কতার সাথে পেশা নির্বাচন করা জরুরি।
ক্যারিয়ার গঠনের উদ্দেশ্যে পেশা নির্বাচনের প্রাথমিক ধাপ শুরু হয় ছাত্রজীবনেই। যদিও আমাদের দেশের চিত্রে শিক্ষার্থীকে নিজের পছন্দের বিষয় বেছে নেওয়ার চেয়ে পারিবারিক ও সামাজিক দৃষ্টিকোণে সেরা এমন বিষয়ই বেছে নিতে দেখা যায় বেশি। আর সেদিক থেকে প্রথমেই থাকে বিজ্ঞান বিভাগ। এক্ষেত্রে পড়াশোনা শেষে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ক্যারিয়ার গঠন বেশি গুরুত্ব পায়। তাছাড়া দেখা যায় বিবিএ-এমবিএ, আইন, ইংরেজি, লোক প্রশাসন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ইত্যাদি গুরুত্ব পায়।
ক্যারিয়ার গঠনের ক্ষেত্রে নিজের ইচ্ছা বা যে কাজে আপনি দক্ষ সেটাকে প্রাধান্য দেওয়াই বেশি ভালো। আর নিজের পছন্দের কোনো বিষয় যদি না থেকে থাকে সেক্ষেত্রে চাকরির বাজার মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। এর পাশাপাশি কিছু সাধারণ বিষয়েও দক্ষতা অর্জন করা জরুরি যা যেকোনো পেশাতেই কাজে লাগে। আর এই প্রস্তুতি আপনি অনেক আগে থেকেই নেওয়া শুরু করতে পারেন। এই প্রস্তুতির ক্ষেত্রে যেসব বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে পারেন–
ভাষাগত দক্ষতা অর্জন: জন্মগতভাবে আমাদের মাতৃভাষা বাংলা বলেই যে এই ভাষার প্রতি আমরা খুব একটা গুরুত্ব দেবো না ব্যাপারটা কিন্তু তেমন নয়। সঠিক ও সুন্দর উচ্চারণে কথা বলতে পারা একপ্রকার দক্ষতা। যা চাকরি, ব্যাবসায় বা যেকোনো পেশাতেই খুব কাজে লাগে। তাই সঠিক উচ্চারণ, ভাষার সুন্দর ব্যবহার, ব্যাকরণ ইত্যাদি জানাও জরুরি। একইভাবে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতাও আপনার জন্য খুবই জরুরি। ইংরেজির দক্ষতা আপনাকে অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে রাখবে। তাই বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় দক্ষ হওয়াটা চাকরি প্রত্যাশীদের জন্য খুবই জরুরি। এর পাশাপাশি যারা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চান তাদের জন্য বাংলা, ইংরেজির পাশাপাশি আরো একটি ভাষা শিখে নেওয়াটা ক্যারিয়ার দৌড়ের জন্য লাভজনক। বাংলা ও ইংরেজির পাশাপাশি তৃতীয় কোনো ভাষা হিসেবে চাইনিজ, জাপানিজ, ফ্রেঞ্চ, জার্মান কিংবা স্প্যানিশ শিখে নেওয়া যেতে পারে।
কম্পিউটার বিষয়ক দক্ষতা: বর্তমানে প্রায় সব কর্মক্ষেত্রেই ম্যানুয়াল ডকুমেন্টেশন বাদ দিয়ে কম্পিউটারের ব্যবহার বেড়েছে। কম্পিউটারের ব্যবহার কাজের গতি বৃদ্ধি করে, সময়ও বাঁচায়। তাই ছোটো-বড়ো অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই এখন কম্পিউটার নির্ভর। অফিসিয়াল যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হলো ই-মেইল। ই-মেইল পাঠানো, তাতে ডকুমেন্ট এটাচ করা, সিসি, বিসিসি ইত্যাদি বিষয়ে সঠিক জ্ঞান থাকা জরুরি। এছাড়াও মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল ও পাওয়ার পয়েন্ট–কমপক্ষে এই তিনটি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতেই হবে। নিয়মিত বিভিন্ন বিষয়ে টাইপ করা, হিসাব রাখা, ব্যক্তিগত বিষয়ে প্রেজেন্টেশন তৈরি করা–এসব বিষয়েও দক্ষ হতে হবে।
প্রশিক্ষণ গ্রহণ: যেকোনো বিষয়েই দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ অনেক বেশি কাজে দেয়। তাই আপনার আগ্রহের বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারেন। এতে ওই বিষয়ে আগে জানা না থাকলে নতুনভাবে জানতে পারবেন বা জেনে থাকলেও সেটা আরো ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারবেন। ক্যারিয়ার স্টার্ট-আপ সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করতে পারেন। ক্যারিয়ার ফেস্ট, সেমিনার, টাইম ম্যানেজমেন্ট, লিডারশিপ ডেভেলপমেন্ট, উইনিং ইন্টারভিউ, মাইক্রোসফট অফিস প্রোগ্রাম-সহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণে সময় সুযোগ করে অংশ নিতে পারেন। বর্তমানে অনলাইনেও অনেক ভালো প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ আছে। ঘরে বসে সেটাকেও কাজে লাগাতে পারেন।
এক্সট্রা-কারিকুলার একটিভিটি: অনেকেই এক্সট্রা কারিকুলার একটিভিটিতে গুরুত্ব দেয় না বা এতে সময় দেওয়াকে সময়ের অপচয় হিসেবে দেখে। তবে বাস্তব জীবনে এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটি আপনাকে অনেকভাবে দক্ষ হতে সাহায্য করে। স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা বিভিন্ন ক্লাব বা সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকে তাদেরকেই ক্যারিয়ারের শুরুতেই অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী দেখা যায়। এসব ক্লাব বা সংগঠন করার কারণে মানুষের সাথে যোগাযোগ দক্ষতা তৈরি হয়, নেতৃত্বের গুণাবলি প্রকাশিত হয় এবং কাজের সুযোগও বেশি পাওয়া যায়। তাই এখনো যদি কোনো সংগঠনের সাথে যুক্ত না থাকেন তবে শুরু করতে পারেন।
নেটওয়ার্ক তৈরি করা: ক্যারিয়ার গঠনের ক্ষেত্রে নেটওয়ার্ক তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আপনি যদি চাকরি করতে আগ্রহী হন তবে চাকরি পেতে সহযোগিতা করবে, আপনি যদি ব্যাবসায়ে আগ্রহী হন ব্যাবসা বাড়াতে সহযোগিতা করবে নেটওয়ার্কিং। সর্বোপরি নেটওয়ার্কিং আপনার দেখার পরিধি বাড়াবে, জানার পরিধি বাড়াবে। ফলে ক্যারিয়ারের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে নেটওয়ার্কিং থাকা একজন মানুষ সবসময়ই বাড়তি সুবিধা পায়।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ক্যারিয়ার গঠনে গুণাবলী ও দক্ষতা

আপডেট সময় : ০২:১৯:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ জুলাই ২০২২

ক্যাম্পাস ও ক্যারিয়ার ডেস্ক : ভালোভাবে ক্যারিয়ার গঠনের জন্য কিছু বিশেষ গুণ ও দক্ষতা অর্জন জরুরি। নিচে কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো-
ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি : কোন বিষয়কে ভালোভাবে নেওয়া বা ওই বিষয়ের প্রতি ভালো মনোভাব পোষণ করা বা ইতিবাচক মানসিকতার মাধ্যমে গ্রহণ করায় হলো ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি।
আত্মসচেতনতা : নিজের ব্যাপারে সচেতনতা। নিজের ভালোমন্দ উপলব্ধি করাই আত্মসচেতনতা।
আত্মবিশ্বাস : আত্মবিশ্বাস বা আত্মপ্রত্যয় হলো নিজের শক্তিমত্তা, সক্ষমতা ও যোগ্যতা সম্পর্কে দৃঢ় বিশ্বাস।
দৃঢপ্রত্যয় : ব্যাপক আগ্রহ ও সুদৃঢ় মনোবলসহ কোন কাজ করাই দৃঢ় প্রত্যয়।
শ্রদ্ধা, পারস্পারিক নির্ভরশীলতা ও আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক : সমাজের সবার কাছে গ্রহণযোগ্য কাঙ্ক্ষিত বিশেষ চারিত্রিক গুণাবলী হলো শ্রদ্ধাবোধ। সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ এর মাধ্যমে পারস্পারিক নির্ভরশীলতার সৃষ্টি হয়। আর ব্যক্তির সাথে ব্যাক্তির সম্পর্ক হলো আন্তঃ ব্যক্তিক সম্পর্ক।
সততা, পেশাগত নৈতিকতা ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধা : সত্য ও ন্যায়ের পথে চলা, দায়িত্ববোধ, নিয়মানুবর্তিতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিততা ও বিধিবিধান মেনে চলা। আইন ও আইন গত সিদ্ধান্তের উপর অটল থাকা ও বাস্তবায়ন করা ও গুরুত্বপূর্ণ।
ইতিবাচক প্রতিযোগিতা ও সহযোগিতার মনোভাব : নিজের সাথে নিজের প্রতিযোগিতা ই হলো ইতিবাচক প্রতিযোগিতা। আর অন্যের বিপদে সহায়তা করার মানসিকতা হলো সহযোগিতার মনোভাব।
নেতৃত্ব, উদ্যোগ ও কাজের প্রতি আগ্রহ : সুনির্দিষ্ট কার্যকলাপ পরিচালনার জন্য অনেকের মধ্যে সমন্বয় করা ও সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করাই হলো নেতৃত্ব। নতুন নতুন কাজে জড়িত হওয়া হলো উদ্যোগ ও আনন্দের সাথে কাজ সম্পন্ন করায় হলো আগ্রহ।
শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা : স্বাস্থ্যহীন দেহ ও মন নিয়ে ভালো থাকা যায় না। তাই এ ব্যাপারে সচেতন থাকা।
সহমর্মিতা : হৃদয়ের গভীরতম অংশ থেকে উৎসারিত অনুভূতি হলো সহমর্মিতা।
জেন্ডার সংবেদনাশীলতা : নারী পুরুষের সহ অবস্থান ও সমান সুযগের ধারণাকে সামনে রেখে কর্মসম্পাদন প্রক্রিয়াকে জেন্ডার সংবেদনশীলতা বলে।
বিশ্লেষণ করা ও সৃজনশীল চিন্তন ক্ষমতা : প্রথাগত কাঠামোর বাইরে চিন্তা করার দক্ষতা হলো সৃজনশীল চিন্তন ক্ষমতা। কোন ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করাই হলো বিশ্লেষণ করা।
সমস্যা সমাধান ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষমতা : কঠিন বাস্তবতার সময় সঠিক সিধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে পরিত্রাণ পাওয়ার পাওয়াই হলো সক্ষমতার গুণ।
চাপ মোকাবেলা : বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ধাক্কা/ঝুঁকি মোকাবেলা করার ক্ষমতা।
সময় ব্যবস্থাপনা : সময়ের কাজ সময়ের আগেই শেষ করার চেষ্টা ই সময় ব্যবস্থাপনা।
প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা : যুগের সাথথে তাল মিলিয়ে দ্রুত কাজ সম্পাদন করার জন্য নিত্যনতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করার সক্ষমতা থাকা।
গাণিতিক দক্ষতা : হিসাব নিকাশে দক্ষতা।
নান্দনিক দৃষ্টিভঙ্গি : সুন্দরভাবে কাজ করা, উপস্থাপন করার যে বোধ, মনোভাব বা মানসিকতা ই হলো নান্দনিক দৃষ্টিভঙ্গি। এই সকল ক্ষেত্রে উন্নয়নের মাধ্যমেই ক্যারিয়ার এ সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ সম্ভব।
ক্যারিয়ার শুরু করার আগে যা যা জেনে রাখা প্রয়োজন : সহজভাবে বলতে গেলে ক্যারিয়ার মানে কর্মজীবন। ভালো চাকরি কিংবা ব্যাবসা আমাদের দেশে সবথেকে বেশি গ্রহণযোগ্য ক্যারিয়ার অপশন। ইদানীং তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ফ্রিল্যান্সিং কিংবা উদ্যোক্তা হওয়ার ঝোঁকও। তবে শুধুমাত্র ব্যক্তির পেশাই তার ক্যারিয়ার নয়, এটি হচ্ছে ক্যারিয়ারের প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। তাই ক্যারিয়ার গঠনের ক্ষেত্রে বুঝে-শুনে ও সতর্কতার সাথে পেশা নির্বাচন করা জরুরি।
ক্যারিয়ার গঠনের উদ্দেশ্যে পেশা নির্বাচনের প্রাথমিক ধাপ শুরু হয় ছাত্রজীবনেই। যদিও আমাদের দেশের চিত্রে শিক্ষার্থীকে নিজের পছন্দের বিষয় বেছে নেওয়ার চেয়ে পারিবারিক ও সামাজিক দৃষ্টিকোণে সেরা এমন বিষয়ই বেছে নিতে দেখা যায় বেশি। আর সেদিক থেকে প্রথমেই থাকে বিজ্ঞান বিভাগ। এক্ষেত্রে পড়াশোনা শেষে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ক্যারিয়ার গঠন বেশি গুরুত্ব পায়। তাছাড়া দেখা যায় বিবিএ-এমবিএ, আইন, ইংরেজি, লোক প্রশাসন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ইত্যাদি গুরুত্ব পায়।
ক্যারিয়ার গঠনের ক্ষেত্রে নিজের ইচ্ছা বা যে কাজে আপনি দক্ষ সেটাকে প্রাধান্য দেওয়াই বেশি ভালো। আর নিজের পছন্দের কোনো বিষয় যদি না থেকে থাকে সেক্ষেত্রে চাকরির বাজার মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। এর পাশাপাশি কিছু সাধারণ বিষয়েও দক্ষতা অর্জন করা জরুরি যা যেকোনো পেশাতেই কাজে লাগে। আর এই প্রস্তুতি আপনি অনেক আগে থেকেই নেওয়া শুরু করতে পারেন। এই প্রস্তুতির ক্ষেত্রে যেসব বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে পারেন–
ভাষাগত দক্ষতা অর্জন: জন্মগতভাবে আমাদের মাতৃভাষা বাংলা বলেই যে এই ভাষার প্রতি আমরা খুব একটা গুরুত্ব দেবো না ব্যাপারটা কিন্তু তেমন নয়। সঠিক ও সুন্দর উচ্চারণে কথা বলতে পারা একপ্রকার দক্ষতা। যা চাকরি, ব্যাবসায় বা যেকোনো পেশাতেই খুব কাজে লাগে। তাই সঠিক উচ্চারণ, ভাষার সুন্দর ব্যবহার, ব্যাকরণ ইত্যাদি জানাও জরুরি। একইভাবে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতাও আপনার জন্য খুবই জরুরি। ইংরেজির দক্ষতা আপনাকে অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে রাখবে। তাই বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় দক্ষ হওয়াটা চাকরি প্রত্যাশীদের জন্য খুবই জরুরি। এর পাশাপাশি যারা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চান তাদের জন্য বাংলা, ইংরেজির পাশাপাশি আরো একটি ভাষা শিখে নেওয়াটা ক্যারিয়ার দৌড়ের জন্য লাভজনক। বাংলা ও ইংরেজির পাশাপাশি তৃতীয় কোনো ভাষা হিসেবে চাইনিজ, জাপানিজ, ফ্রেঞ্চ, জার্মান কিংবা স্প্যানিশ শিখে নেওয়া যেতে পারে।
কম্পিউটার বিষয়ক দক্ষতা: বর্তমানে প্রায় সব কর্মক্ষেত্রেই ম্যানুয়াল ডকুমেন্টেশন বাদ দিয়ে কম্পিউটারের ব্যবহার বেড়েছে। কম্পিউটারের ব্যবহার কাজের গতি বৃদ্ধি করে, সময়ও বাঁচায়। তাই ছোটো-বড়ো অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই এখন কম্পিউটার নির্ভর। অফিসিয়াল যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হলো ই-মেইল। ই-মেইল পাঠানো, তাতে ডকুমেন্ট এটাচ করা, সিসি, বিসিসি ইত্যাদি বিষয়ে সঠিক জ্ঞান থাকা জরুরি। এছাড়াও মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল ও পাওয়ার পয়েন্ট–কমপক্ষে এই তিনটি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতেই হবে। নিয়মিত বিভিন্ন বিষয়ে টাইপ করা, হিসাব রাখা, ব্যক্তিগত বিষয়ে প্রেজেন্টেশন তৈরি করা–এসব বিষয়েও দক্ষ হতে হবে।
প্রশিক্ষণ গ্রহণ: যেকোনো বিষয়েই দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ অনেক বেশি কাজে দেয়। তাই আপনার আগ্রহের বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারেন। এতে ওই বিষয়ে আগে জানা না থাকলে নতুনভাবে জানতে পারবেন বা জেনে থাকলেও সেটা আরো ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারবেন। ক্যারিয়ার স্টার্ট-আপ সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করতে পারেন। ক্যারিয়ার ফেস্ট, সেমিনার, টাইম ম্যানেজমেন্ট, লিডারশিপ ডেভেলপমেন্ট, উইনিং ইন্টারভিউ, মাইক্রোসফট অফিস প্রোগ্রাম-সহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণে সময় সুযোগ করে অংশ নিতে পারেন। বর্তমানে অনলাইনেও অনেক ভালো প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ আছে। ঘরে বসে সেটাকেও কাজে লাগাতে পারেন।
এক্সট্রা-কারিকুলার একটিভিটি: অনেকেই এক্সট্রা কারিকুলার একটিভিটিতে গুরুত্ব দেয় না বা এতে সময় দেওয়াকে সময়ের অপচয় হিসেবে দেখে। তবে বাস্তব জীবনে এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটি আপনাকে অনেকভাবে দক্ষ হতে সাহায্য করে। স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা বিভিন্ন ক্লাব বা সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকে তাদেরকেই ক্যারিয়ারের শুরুতেই অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী দেখা যায়। এসব ক্লাব বা সংগঠন করার কারণে মানুষের সাথে যোগাযোগ দক্ষতা তৈরি হয়, নেতৃত্বের গুণাবলি প্রকাশিত হয় এবং কাজের সুযোগও বেশি পাওয়া যায়। তাই এখনো যদি কোনো সংগঠনের সাথে যুক্ত না থাকেন তবে শুরু করতে পারেন।
নেটওয়ার্ক তৈরি করা: ক্যারিয়ার গঠনের ক্ষেত্রে নেটওয়ার্ক তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আপনি যদি চাকরি করতে আগ্রহী হন তবে চাকরি পেতে সহযোগিতা করবে, আপনি যদি ব্যাবসায়ে আগ্রহী হন ব্যাবসা বাড়াতে সহযোগিতা করবে নেটওয়ার্কিং। সর্বোপরি নেটওয়ার্কিং আপনার দেখার পরিধি বাড়াবে, জানার পরিধি বাড়াবে। ফলে ক্যারিয়ারের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে নেটওয়ার্কিং থাকা একজন মানুষ সবসময়ই বাড়তি সুবিধা পায়।