নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকার জুরাইনে ট্রাফিক সার্জেন্টসহ চার পুলিশ সদস্যকে মারধরের ঘটনায় করা মামলায় ইয়াসিন আরাফাত ভূইয়া নামের এক আইনজীবীসহ পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত।
ঘটনার পরদিন গতকাল বুধবার ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে আসামিদের হাজির করা হয়। আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসামিদের সাত দিনের জন্য হেফাজতে চাইলেও বিচারক তিন দিন হেফাজতের আদেশ দেন।
অন্য আসামিরা হলেন- মোটরসাইকেলচালক সোহাগ উল ইসলাম রনি এবং শরিফ, নাহিদ ও রাসেল। মামলার আরেক আসামি ইয়াসমিন জাহান নিশাত ভূঁইয়াকে আদালত জামিন দিয়েছে বলে জানান ঢাকার পুলিশ প্রসিকিউশন প্রধান উপ-কমিশনার মো. জাফর হোসেন। তিনি বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা শ্যামপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন্স) খন্দকার জালাল উদ্দিন মাহমুদ ৫ জনের রিমান্ড এবং একজনকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করলে আদালত এই আদেশ দেন।
পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার সকালে রাস্তার উল্টো দিক দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সময় চালক মো. রনি ও আরোহী তার স্ত্রী নিশাত ভুইয়াকে আটকে কাগজপত্র দেখতে চান কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট আলী হোসেন। পরে দুজনকে কাছের পুলিশবক্সে নেওয়া হলে রনির স্ত্রী উত্তেজিত হয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন। তখন আশেপাশে থাকা লোকজন ‘নারী লাঞ্ছনার অভিযোগ তুলে’ সার্জেন্টকে মারধর করে এবং পুলিশবক্স গুঁড়িয়ে দেয়। এ সময় সার্জেন্টকে উদ্ধার করতে আসা অন্য দুই পুলিশ সদস্যও আহত হন। পুলিশ জানায়, রনি ঘটনার সময় নিজেকে ‘বার্তা বিচিত্রা’ পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয় দেন। যদিও বুধবার তার পক্ষে জামিনের আবেদনে তাকে আইনজীবী হিসাবে উল্লেখ করা হয়। পুলিশ জানায়, মঙ্গলবারের ঘটনায় আহত সার্জেন্ট আলী হোসেনের হাতে ২১টি সেলাই দিতে হয়েছে। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে নেওয়া হয়। আহত অন্য পুলিশ সদস্যরা হলেন- ট্রাফিক কনস্টেবল সিরাজুল ইসলাম, শ্যামপুর থানার উপ-পরিদর্শক উৎপল চন্দ্র ও এসআই সাকিব।
হামলার ঘটনার পর মঙ্গলবার ওয়ারি ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্ট আলী হোসেন শ্যামপুর থানায় পুলিশের উপর হামলা, পুলিশের কাজে বাধা, হত্যাচেষ্টা ও সরকারি স্থাপনা ভাঙচুরের অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় ৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১ থেকে ২ হাজার জনকে আসামি করা হয়। বুধবার আসামিদের পক্ষে জামিন চান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি কাজী নজিবুল্লাহ হীরু, সাইদুর রহমান মানিক, আব্দুর রহমান সরদার, মিজানুর রহমান মামুন, ফিরোজুর রহমান মন্টু। শুনানির সময় ৪ পুলিশ সদস্যের সহায়তায় রনিকে আদালতে উপস্থিত করা হয়। তার শারীরিক অবস্থা ভালো দেখাচ্ছিল না। তবে তার স্ত্রী নিশাতকে স্বাভাবিক দেখা গেছে।
আদালত প্রাঙ্গণে হৈচৈ, প্রতিবাদ : আইনজীবী ইয়াসিন ও রনিকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ড চাওয়ায় আদালত প্রাঙ্গণে কয়েকশ আইনজীবী জমায়েত হয়ে এজলাসে হৈ চৈ করতে শুরু করেন। তখন আইনজীবী নেতারা তাদের শান্ত করেন। শুনানির পর রিমান্ডের আদেশ শুনে আইনজীবীরা আবারও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের পুরোনো ভবনের নিচে এবং আদালতের বারান্দায় স্লোগান দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে আইনজীবীরা আদালত ভবনের প্রবেশপথের কলাপসিবল গেইটও বন্ধ করে দেন।
জুরাইনে পুলিশ পেটানোর ঘটনায় ৫ জন রিমান্ডে
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ