প্রত্যাশা ডেস্ক : ইউক্রেনের ধারাবাহিক সামরিক ব্যর্থতার পর এবার প্রতিশোধ নেওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছেন ক্ষ্যাপাটে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। শনিবার প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের প্রাক্তন সহযোগী নাইল গার্ডিনার।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি এক্সপ্রেসকে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে নাইল গার্ডিনার বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন না যে পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার পর্যন্ত যাবেন। তিনি বলেন, পরমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার সম্পর্কে রাশিয়ার বাগাড়ম্বরের উদ্দেশ্য হচ্ছে ভয় দেখানো। তারা সব ধরনের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে এবং পশ্চিমা জোটকে বিভক্ত করার চেষ্টা করছে। পুতিনকে অত্যন্ত রাগান্বিত ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করে নাইল গার্ডিনার বলেন, রুশ নেতাকে অবমূল্যায়ন করা উচিত নয়। তার মাথায় সব সময় প্রতিশোধের চিন্তা থাকে।
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের তিন মাসেরও বেশি সময়ের মাথায় নাইল গার্ডিনারের এমন মন্তব্য এলো। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, রক্তক্ষয়ী এই যুদ্ধের ফলে দেশটির হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। নিজেদের বাড়িঘর থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছে ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ। যুদ্ধক্ষেত্রে জোরালো প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়ে কিয়েভের মতো এলাকাগুলো থেকে সরে গেলেও ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় রুশ বাহিনী বেশ কিছু সাফল্য পেয়েছে। বিশেষ করে ডনবাসের মস্কোর অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি লিমান নামে ডনবাসের কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ঘোষণা দেয় সেখানকার রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। যদিও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দাবি করেছেন, ডনবাস আবারও ইউক্রেনের হবে। এর মধ্য দিয়ে তিনি আদতে অঞ্লটির নিয়ন্ত্রণ হারানোর বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন। এর মধ্যেই অবশ্য ডেনমার্ক থেকে হারপুন অ্যান্টি শিপ মিসাইল এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্বচালিত হাউইটজার পেতে শুরু করেছে কিয়েভ। এর ফলে রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনীয় বাহিনীর প্রতিরোধ আরও জোরালো হবে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ। দক্ষিণ ইউক্রেনের ওডেসা আঞ্চলিক সামরিক প্রশাসনের মুখপাত্র সের্হি ব্রাচুক। তিনি বলেছেন, ‘এত বেশি হারপুন আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে যে আমরা কৃষ্ণ সাগরে রাশিয়ার পুরো নৌবহর ডুবিয়ে দিতে পারি।’
ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের ধারণা, এই যুদ্ধে নিজেদের প্রায় ২০ হাজার সদস্যকে হারিয়েছে রুশ বাহিনী। এর মধ্যে শীর্ষস্থানীয় ডজনখানেক জেনারেলও রয়েছেন। এ ধরনের ঘটনা স্বভাবতই ফ্রন্টলাইনে থাকা রুশ সেনাদের মনোবলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। সংবাদমাধ্যম নিউজউইক বলছে, কিছু ক্ষেত্রে রুশ সেনারা নির্দেশ পালন বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি যুদ্ধে অংশগ্রহণ এড়াতে নিজেদের যানবাহনে ভাঙচুরেরও খবর পাওয়া গেছে। এই ধরনের ক্ষয়ক্ষতির মধ্যেই রাশিয়ান রাজনীতিবিদ এবং দেশটির মিডিয়া পারমাণবিক অস্ত্রের সম্ভাব্য ব্যবহার সম্পর্কে হুমকিমূলক বার্তা বাড়িয়েছে। এই সপ্তাহের শুরুর দিকে জাতীয়তাবাদী দল রডিনার (মাতৃভূমি) নেতা আলেক্সি ঝুরাভলিভ ইঙ্গিত করেন, রাশিয়া যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার আগেই ইউরোপ ছাঁই হয়ে যাবে। পুতিন নিজে এখনও সরাসরি পারমাণবিক হামলার পরিকল্পনার কথা না বললেও বেশ কয়েকজন পশ্চিমা কর্মকর্তা বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করেছেন। এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন তারা।
উল্লেখ্য, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন আক্রমণ করে রাশিয়া। দেশটির দাবি, তারা ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ পরিচালনা করছে। তবে ইউক্রেন ও পশ্চিমারা এই আক্রমণকে বিনা উসকানিতে আগ্রাসী যুদ্ধ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। চলমান যুদ্ধে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও বেসামরিক হত্যার অভিযোগ এনেছে পশ্চিমারা। তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে মস্কো।
ব্যর্থতার পর প্রতিশোধের পথে ‘ক্ষ্যাপাটে পুতিন’?
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ