নিজস্ব প্রতিবেদক : সর্বজনীন পেনশনের পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা ঘোষণা করার উদোগ নিয়েছে সরকার। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে এর রূপরেখা ঘোষণা দেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এরই মধ্যে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছে অর্থ বিভাগ। এতে বলা হয়েছে, আগামী অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে এই কর্মসূচির পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করা হবে। দেশের উপযুক্ত নাগরিকরা পেনশনের জন্য হিসাব খুলতে পারবেন পরের অর্থবছরের শুরুতে। অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুলাই থেকে কার্যক্রমটি পুরাদমে চালু হবে। জানা গেছে, রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী মার্চ থেকে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা পরীক্ষমূলক শুরু করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে। এরই মধ্যে এ-সংক্রান্ত একটি কর্তৃপক্ষ গঠনের আইনের খসড়া তৈরি করে সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মতামত সংগ্রহ করা হচ্ছে। সম্প্রতি অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আবদুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় খসড়াটি চূড়ান্ত হয়েছে। অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চলতি মাসেই এ আইনের খসড়াটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে। সেখানে অনুমোদন পেলে জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনেই এটি বিল আকারে পাস হবে। বিল পাসের পর দ্রুত সময়ের মধ্যে অথরিটি গঠন করার পরিকল্পনা রয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের। এর পরপরই জরুরিভাবে দক্ষ ও কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে- যারা আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যে সর্বজনীন পেনশন প্রোডাক্ট তৈরি করবেন। অর্থাৎ নাগরিকরা কত টাকা কতদিন ধরে জমা করতে পারবেন, জমার বিপরীতে কী সুবিধা পাবেন, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জমার ব্যবস্থা কেমন হবে, সর্বোচ্চ কত জমা দেওয়া যাবে ইত্যাদি ঠিক করবেন। এ জন্য সর্বজনীন পেনশন বিধিমালা প্রণয়ন করা হবে। ওই কর্মকর্তা বলেন, এ মুহূর্তে সরকার দুটি বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে। যার একটি ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব মোকাবিলা করা। অন্যটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই আগামী বছরের জুলাই থেকে পুরাদমে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করা। অর্থ সচিব সভায় জানান, সব কিছু পরিস্কার করেই পেনশন চালু করা হবে। প্রস্তাবিত পেনশন ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য দিক: ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সকল কর্মক্ষম নাগরিক এ ব্যবস্থায় অংশ নিতে পারবেন। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীরাও এতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের আপাতত এ ব্যবস্থার বাইরে রাখা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে সরকার প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে। কেউ ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা পরিশোধ করলে মাসিক পেনশন পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন। অর্থ বিভাগ পেনশন সুবিধার একটি আনুমানিক হিসাব দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ধরা যাক, কোনো ব্যক্তি ১৮ বছর বয়স থেকে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত পেনশন স্কিমে নিয়মিত প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে চাঁদা দিয়েছে। এই তহবিলের সুদহার যদি ১০ শতাংশ এবং আনুতোষিক ৮ শতাংশ হয়, তাহলে তিনি ৬০ বছরের পর থেকে ৮০ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতি মাসে ৬৪ হাজার ৭৭৬ টাকা পাবেন। কেউ ৩০ বছর বয়স থেকে চাঁদা দেওয়া শুরু করলে এবং অন্যান্য শর্ত অপরিবর্তিত থাকলে তিনি মাসিক পেনশন পাবেন ১৮ হাজার ৯০৮ টাকা। চাঁদার পরিমাণ যত বেশি হবে পেনশন সুবিধা আনুপাতিক হারে তত বাড়বে।