ঢাকা ০২:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫

বৈষম্যবিরোধী বিলে পরিবর্তন আসতে পারে

  • আপডেট সময় : ১২:০৪:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ মে ২০২২
  • ১০৪ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : সমান অধিকার এবং মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বৈষম্য নিরোধে সংসদে ওঠা বৈষম্যবিরোধী বিলে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। গতকাল বুধবার আইনটি নিয়ে বৈঠক করেছে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

গত ৫ এপ্রিল খসড়া আইনটি সংসদে তোলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। পরে সেটি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। সংবিধানের ২৭, ২৮ ও ২৯ অনুচ্ছেদে অনুযায়ী, সব ধরনের বৈষম্য নিরোধে এ আইনটি সংসদে প্রস্তাব করা হয়েছে। বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকার সাংবাদিকদের বলেন,‘বিলটির কিছু জায়গায় পরিবর্তন আনা দরকার বলে আমরা মনে করছি। আজকে দফাওয়ারি বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আরও একটা বৈঠক করা লাগবে। ওই বৈঠকের পর আমরা বিলটির ওপর সুপারিশ চূড়ান্ত করবো।’
কমিটির একজন সদস্য জানান, বৈঠকে কমিটির সদস্যরা বিলটি নিয়ে বিভিন্ন প্রস্তবনা দিয়েছেন। তারা বলেছেন, বৈষম্য হলে কোন আইনে বিচার হবে, তা বিলে স্পষ্ট করা হয়নি। সর্বসাধারণের সংজ্ঞাও স্পষ্ট নয়। দ- কী হবে সে বিষয়ে সুনিদির্ষ্ট ধারণা দেওয়া হয়নি। এছাড়া বৈষম্য প্রতিকারের জন্য বিভিন্ন ধাপের কথা বলা হয়েছে। যেটা দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি করবে বলে অনেকে মতামত দিয়েছেন। কমিটির সভাপতি বলেন, ‘সব প্রস্তাবনা নিয়ে আমরা আরও বিস্তারিত আলোচনা করবো। মনে হচ্ছে, কিছু পরিবর্তন আসতে পারে।’
কমিটির সদস্য বিএনপির রুমিন ফারহানা বলেন, তিনি প্রস্তাবিত আইনের ওপর কিছু বিষয় পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছেন। রুমিন বলেন, ‘বৈষম্যের সংজ্ঞায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষ্যমের কথা আসেনি। তাছাড়া কোন বৈষম্য করলে কী পরিমাণ জরিমানা হবে, সেটা সুনির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা হয়নি।’
প্রস্তাবিত আইনে বৈষম্য নিরোধে যে মনিটরিং কমিটি গঠন করার বিধান রাখা হয়েছে, তা ‘আমলা নির্ভর’ বলে অভিযোগ করেন রুমিন। বিলটি সংসদে ওঠার পর এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম এই আইন নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, খসড়া আইনটিতে ঘাটতি রয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, বৈষম্য নিরোধে একটি মনিটরিং কমিটি থাকবে, যার সভাপতি হবেন আইনমন্ত্রী। এছাড়া সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব বা তার মনোনীত অন্যূন যুগ্ম-সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা এর সদস্য হবেন। বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশেনের সভাপতি, মানবাধিকার ও সমাজসেবায় জড়িত এমন সংগঠনের তিন জন, দুই জন শ্রমিক প্রতিনিধি— যার মধ্যে এক জন চা শ্রমিক হবেন, বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের চার জন প্রতিনিধি, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর একজন প্রতিনিধি, দলিত সম্প্রদায়ের একজন প্রতিনিধি এর সদস্য হবেন। লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের একজন যুগ্মসচিব হবেন সদস্য সচিব। প্রতি তিন মাসে এই কমিটিকে কমপক্ষে একটি বৈঠক করতে হবে। লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের অধীনে একটি বৈষম্যবিরোধী সেল তৈরির বিধান রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী জাতীয় ও স্থানীয় কমিটি গঠনেরও সুযোগ রয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, কোনও বৈষম্যমূলক কাজ ঘটলে সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগী বা ঘটনা সম্পর্কে ‘সম্যক জ্ঞাত’ কোনও ব্যক্তি বা সংস্থা সংশ্লিষ্ট জেলা কমিটিতে লিখিত অভিযোগ জানাতে পারবেন। জেলা কমিটি ৩০ দিনের মধ্যে ঘটনা তদন্ত করবে। ঘটনা প্রমাণ হলে দায়ী ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিকারের ব্যবস্থা করবে।
জেলা কমিটি প্রতিকার করতে না পারলে বিভাগীয় কমিটির কাছে অভিযোগ জানানো যাবে। ওই কমিটি ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত ও প্রতিকারের ব্যবস্থা করবে। না করলে অভিযোগকারী জাতীয় কমিটির কাছে অভিযোগ দায়ের করতে পারবে। এই কমিটি ৪৫ দিনের মধ্যে প্রতিকারের ব্যবস্থা করবে। জাতীয় কমিটি যদি প্রতিকার করতে না পারে, তবে আদালতে মামলা দায়ের করা যাবে। বিলে বলা হয়েছে, দেওয়ানি কার্যবিধিতে যাই থাকুক না কেন, মামলা দায়েরের পর ৯০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করতে হবে। প্রয়োজনে আরও ১৫ দিন সময় পাবে আদালত। আদালত যথাযথ প্রতিকারের আদেশ এবং প্রয়োজনে আর্থিক জরিমানা আরোপ করতে পারবে। শহীদুজ্জামান সরকারের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, আব্দুল মজিদ খান, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, গে¬ারিয়া ঝর্ণা সরকার, রুমিন ফারহানা, সেলিম আলতাফ জর্জ এবং খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন অংশ নেন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ভিসা-গ্রিনকার্ড নীতিতে বড় পরিবর্তন আনছেন ট্রাম্প

বৈষম্যবিরোধী বিলে পরিবর্তন আসতে পারে

আপডেট সময় : ১২:০৪:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ মে ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : সমান অধিকার এবং মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বৈষম্য নিরোধে সংসদে ওঠা বৈষম্যবিরোধী বিলে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। গতকাল বুধবার আইনটি নিয়ে বৈঠক করেছে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

গত ৫ এপ্রিল খসড়া আইনটি সংসদে তোলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। পরে সেটি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। সংবিধানের ২৭, ২৮ ও ২৯ অনুচ্ছেদে অনুযায়ী, সব ধরনের বৈষম্য নিরোধে এ আইনটি সংসদে প্রস্তাব করা হয়েছে। বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকার সাংবাদিকদের বলেন,‘বিলটির কিছু জায়গায় পরিবর্তন আনা দরকার বলে আমরা মনে করছি। আজকে দফাওয়ারি বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আরও একটা বৈঠক করা লাগবে। ওই বৈঠকের পর আমরা বিলটির ওপর সুপারিশ চূড়ান্ত করবো।’
কমিটির একজন সদস্য জানান, বৈঠকে কমিটির সদস্যরা বিলটি নিয়ে বিভিন্ন প্রস্তবনা দিয়েছেন। তারা বলেছেন, বৈষম্য হলে কোন আইনে বিচার হবে, তা বিলে স্পষ্ট করা হয়নি। সর্বসাধারণের সংজ্ঞাও স্পষ্ট নয়। দ- কী হবে সে বিষয়ে সুনিদির্ষ্ট ধারণা দেওয়া হয়নি। এছাড়া বৈষম্য প্রতিকারের জন্য বিভিন্ন ধাপের কথা বলা হয়েছে। যেটা দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি করবে বলে অনেকে মতামত দিয়েছেন। কমিটির সভাপতি বলেন, ‘সব প্রস্তাবনা নিয়ে আমরা আরও বিস্তারিত আলোচনা করবো। মনে হচ্ছে, কিছু পরিবর্তন আসতে পারে।’
কমিটির সদস্য বিএনপির রুমিন ফারহানা বলেন, তিনি প্রস্তাবিত আইনের ওপর কিছু বিষয় পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছেন। রুমিন বলেন, ‘বৈষম্যের সংজ্ঞায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষ্যমের কথা আসেনি। তাছাড়া কোন বৈষম্য করলে কী পরিমাণ জরিমানা হবে, সেটা সুনির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা হয়নি।’
প্রস্তাবিত আইনে বৈষম্য নিরোধে যে মনিটরিং কমিটি গঠন করার বিধান রাখা হয়েছে, তা ‘আমলা নির্ভর’ বলে অভিযোগ করেন রুমিন। বিলটি সংসদে ওঠার পর এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম এই আইন নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, খসড়া আইনটিতে ঘাটতি রয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, বৈষম্য নিরোধে একটি মনিটরিং কমিটি থাকবে, যার সভাপতি হবেন আইনমন্ত্রী। এছাড়া সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব বা তার মনোনীত অন্যূন যুগ্ম-সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা এর সদস্য হবেন। বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশেনের সভাপতি, মানবাধিকার ও সমাজসেবায় জড়িত এমন সংগঠনের তিন জন, দুই জন শ্রমিক প্রতিনিধি— যার মধ্যে এক জন চা শ্রমিক হবেন, বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের চার জন প্রতিনিধি, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর একজন প্রতিনিধি, দলিত সম্প্রদায়ের একজন প্রতিনিধি এর সদস্য হবেন। লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের একজন যুগ্মসচিব হবেন সদস্য সচিব। প্রতি তিন মাসে এই কমিটিকে কমপক্ষে একটি বৈঠক করতে হবে। লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের অধীনে একটি বৈষম্যবিরোধী সেল তৈরির বিধান রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী জাতীয় ও স্থানীয় কমিটি গঠনেরও সুযোগ রয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, কোনও বৈষম্যমূলক কাজ ঘটলে সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগী বা ঘটনা সম্পর্কে ‘সম্যক জ্ঞাত’ কোনও ব্যক্তি বা সংস্থা সংশ্লিষ্ট জেলা কমিটিতে লিখিত অভিযোগ জানাতে পারবেন। জেলা কমিটি ৩০ দিনের মধ্যে ঘটনা তদন্ত করবে। ঘটনা প্রমাণ হলে দায়ী ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিকারের ব্যবস্থা করবে।
জেলা কমিটি প্রতিকার করতে না পারলে বিভাগীয় কমিটির কাছে অভিযোগ জানানো যাবে। ওই কমিটি ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত ও প্রতিকারের ব্যবস্থা করবে। না করলে অভিযোগকারী জাতীয় কমিটির কাছে অভিযোগ দায়ের করতে পারবে। এই কমিটি ৪৫ দিনের মধ্যে প্রতিকারের ব্যবস্থা করবে। জাতীয় কমিটি যদি প্রতিকার করতে না পারে, তবে আদালতে মামলা দায়ের করা যাবে। বিলে বলা হয়েছে, দেওয়ানি কার্যবিধিতে যাই থাকুক না কেন, মামলা দায়েরের পর ৯০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করতে হবে। প্রয়োজনে আরও ১৫ দিন সময় পাবে আদালত। আদালত যথাযথ প্রতিকারের আদেশ এবং প্রয়োজনে আর্থিক জরিমানা আরোপ করতে পারবে। শহীদুজ্জামান সরকারের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, আব্দুল মজিদ খান, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, গে¬ারিয়া ঝর্ণা সরকার, রুমিন ফারহানা, সেলিম আলতাফ জর্জ এবং খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন অংশ নেন।