ঢাকা ০৪:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫

অবশেষে আমদানির চাপ কমছে

  • আপডেট সময় : ১২:০৩:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ মে ২০২২
  • ১৩৭ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ সংবাদদাতা : অবশেষে আমদানির চাপ কমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কয়েক মাস ধরে আমদানি ব্যয়ের যে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ছিল তা অনেকাংশে কমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারিতে আমদানি ব্যয় হয়েছিল ৮৩২ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। পরের মাস মার্চে আমদানি ব্যয় হয়েছে ৭৭২ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। অর্থাৎ আগের মাসের তুলনায় গত মাসে ৬০ কোটি ডলার কম ব্যয় হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী গত ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি টানা এই তিন মাস ধরে ৮ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ব্যয় হয়েছে আমদানিতে। মার্চ মাসে এটি ৭ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত মার্চ মাসে পণ্য আমদানি ব্যয় বেড়েছে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৫ শতাংশ। যদিও আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে আমদানি ব্যয় বেড়েছিল আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫০ শতাংশের বেশি। তথ্য বলছে, গত জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ মাসে সার্বিকভাবে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৪৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ। সেখানে জুলাই থেকে মার্চ এই ৯ মাসে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৪৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ। অর্থাৎ এক মাসের আমদানি ব্যয় কমার প্রভাবে সার্বিক আমদানি ব্যয় তিন শতাংশ কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বছরখানেক আগে যেখানে সামগ্রিক আমদানি দায় পরিশোধ করতে হতো সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার থেকে ৪ বিলিয়ন ডলার। এখন তা দ্বিগুণ হয়েছে। পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে যেখানে আমদানি দায় পরিশোধ করতে হয়েছে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার, গত ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে হয়েছে প্রায় সাড়ে ৮ বিলিয়ন ডলার। এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে প্রায় ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যাংকগুলোকে জোগান দেওয়া হয়েছে। এদিকে বুধবার (১১ মে) বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪১ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলারে নেমে গেছে; যা দুই বছরের আগের অবস্থানে চলে গেছে। বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে সর্বোচ্চ ৫ মাসের আমদানি দায় মেটানো যাবে। এর আগে ২০২০ সালের নভেম্বরে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪১ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মহামারি করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার পর থেকেই দেশে আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার আগে মাসে আমদানি খাতে গড়ে ৪ থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার খরচ হতো। করোনার মধ্যে তা কমে গড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। কিন্তু চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরু থেকেই আমদানিতে উল্লম্ফন লক্ষ্য করা যায়। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৫ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়। আগস্টে তা বেড়ে ৬ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলারে ওঠে। সেপ্টেম্বরে তা গিয়ে ঠেকে ৭ বিলিয়ন ডলারে। অক্টোবরে পণ্য আমদানিতে ব্যয় হয় ৭ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার। নভেম্বরে তা বেড়ে ৭.৮৫ বিলিয়ন ডলারে উঠে। ডিসেম্বরে তা আরও বেড়ে ৮ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে। জানুয়ারি মাসে ৮ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা ফেব্রুয়ারি মাসে আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৮ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। মার্চ মাসে আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৭ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার।
এদিকে ডলার সংকট কাটিয়ে উঠতে অপেক্ষাকৃত কম প্রয়োজনীয় ও বিলাসী পণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণে আরও কড়াকড়ি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অর্থাৎ এখন থেকে এলসি (ঋণপত্র) খুলতে নগদ মার্জিন হার বাড়িয়ে ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার(১০ মে) নেওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ এই পদক্ষেপে বিদেশ থেকে গাড়ি, টিভি, ফ্রিজ, এসির মত বিলাস পণ্য আমদানিতে এলসির মার্জিন হার তিন গুণ বাড়ানো হয়েছে। তবে জরুরি ও নিত্যপণ্য আমদানিতে মার্জিন ঋণ সংক্রান্ত আগের নির্দেশনা বহাল থাকবে। এর আগে গত ১১ এপ্রিলেই জরুরি ছাড়া অন্য পণ্য আমদানিতে একদফা কড়াকড়ি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন এলসি খোলার ক্ষেত্রে নগদ মার্জিন হার ন্যূনতম ২৫ শতাংশ সংরক্ষণের নির্দেশনা দেওয়া হয়। আগে এ হার ব্যাংক তার গ্রাহকের সঙ্গে সম্পর্কের ভিত্তিতে ঠিক করত। ব্যাংকগুলোকে দেওয়া নতুন নির্দেশনায় বিলাসবহুল গাড়ি ও গৃহস্থালি পণ্য সামগ্রী আমদানি নিরুৎসাহিত করতে বেশি কড়াকড়ি করা হয়।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

অবশেষে আমদানির চাপ কমছে

আপডেট সময় : ১২:০৩:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ মে ২০২২

বিশেষ সংবাদদাতা : অবশেষে আমদানির চাপ কমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কয়েক মাস ধরে আমদানি ব্যয়ের যে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ছিল তা অনেকাংশে কমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারিতে আমদানি ব্যয় হয়েছিল ৮৩২ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। পরের মাস মার্চে আমদানি ব্যয় হয়েছে ৭৭২ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। অর্থাৎ আগের মাসের তুলনায় গত মাসে ৬০ কোটি ডলার কম ব্যয় হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী গত ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি টানা এই তিন মাস ধরে ৮ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ব্যয় হয়েছে আমদানিতে। মার্চ মাসে এটি ৭ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত মার্চ মাসে পণ্য আমদানি ব্যয় বেড়েছে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৫ শতাংশ। যদিও আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে আমদানি ব্যয় বেড়েছিল আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫০ শতাংশের বেশি। তথ্য বলছে, গত জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ মাসে সার্বিকভাবে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৪৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ। সেখানে জুলাই থেকে মার্চ এই ৯ মাসে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৪৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ। অর্থাৎ এক মাসের আমদানি ব্যয় কমার প্রভাবে সার্বিক আমদানি ব্যয় তিন শতাংশ কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বছরখানেক আগে যেখানে সামগ্রিক আমদানি দায় পরিশোধ করতে হতো সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার থেকে ৪ বিলিয়ন ডলার। এখন তা দ্বিগুণ হয়েছে। পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে যেখানে আমদানি দায় পরিশোধ করতে হয়েছে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার, গত ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে হয়েছে প্রায় সাড়ে ৮ বিলিয়ন ডলার। এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে প্রায় ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যাংকগুলোকে জোগান দেওয়া হয়েছে। এদিকে বুধবার (১১ মে) বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪১ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলারে নেমে গেছে; যা দুই বছরের আগের অবস্থানে চলে গেছে। বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে সর্বোচ্চ ৫ মাসের আমদানি দায় মেটানো যাবে। এর আগে ২০২০ সালের নভেম্বরে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪১ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মহামারি করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার পর থেকেই দেশে আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার আগে মাসে আমদানি খাতে গড়ে ৪ থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার খরচ হতো। করোনার মধ্যে তা কমে গড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। কিন্তু চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরু থেকেই আমদানিতে উল্লম্ফন লক্ষ্য করা যায়। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৫ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়। আগস্টে তা বেড়ে ৬ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলারে ওঠে। সেপ্টেম্বরে তা গিয়ে ঠেকে ৭ বিলিয়ন ডলারে। অক্টোবরে পণ্য আমদানিতে ব্যয় হয় ৭ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার। নভেম্বরে তা বেড়ে ৭.৮৫ বিলিয়ন ডলারে উঠে। ডিসেম্বরে তা আরও বেড়ে ৮ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে। জানুয়ারি মাসে ৮ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা ফেব্রুয়ারি মাসে আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৮ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। মার্চ মাসে আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৭ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার।
এদিকে ডলার সংকট কাটিয়ে উঠতে অপেক্ষাকৃত কম প্রয়োজনীয় ও বিলাসী পণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণে আরও কড়াকড়ি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অর্থাৎ এখন থেকে এলসি (ঋণপত্র) খুলতে নগদ মার্জিন হার বাড়িয়ে ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার(১০ মে) নেওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ এই পদক্ষেপে বিদেশ থেকে গাড়ি, টিভি, ফ্রিজ, এসির মত বিলাস পণ্য আমদানিতে এলসির মার্জিন হার তিন গুণ বাড়ানো হয়েছে। তবে জরুরি ও নিত্যপণ্য আমদানিতে মার্জিন ঋণ সংক্রান্ত আগের নির্দেশনা বহাল থাকবে। এর আগে গত ১১ এপ্রিলেই জরুরি ছাড়া অন্য পণ্য আমদানিতে একদফা কড়াকড়ি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন এলসি খোলার ক্ষেত্রে নগদ মার্জিন হার ন্যূনতম ২৫ শতাংশ সংরক্ষণের নির্দেশনা দেওয়া হয়। আগে এ হার ব্যাংক তার গ্রাহকের সঙ্গে সম্পর্কের ভিত্তিতে ঠিক করত। ব্যাংকগুলোকে দেওয়া নতুন নির্দেশনায় বিলাসবহুল গাড়ি ও গৃহস্থালি পণ্য সামগ্রী আমদানি নিরুৎসাহিত করতে বেশি কড়াকড়ি করা হয়।