আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যে পূর্বাভাস আইএমএফ এর আগে দিয়েছিল, ইউক্রেইন যুদ্ধের বিরূপ প্রভাবের বিষয়টি হিসাবে নিয়ে এখন তা পুরো এক শতাংশ পয়েন্ট কমিয়ে দিয়েছে এ আন্তর্জাতিক সংস্থা।
রয়টার্স জানিয়েছে, ইউক্রেইনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের কারণে মূল্যস্ফীতি এখন অনেক দেশের জন্যই ‘বিপদ’ হয়ে উঠেছে বলে হুঁশিয়ার করেছে আইএমএফ।
আইএমএফের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকে বলা হয়েছে, যুদ্ধের কারণে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে বলে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। রাশিয়ার জ্বালানি খাতের ওপর পশ্চিমা অবরোধ আরও বাড়ানো হলে বৈশ্বিক উৎপাদনে আরও একটি বড় ধস নামবে। আর চীন আবারও কোভিড-১৯ এর কারণে লকডাউন ঘোষণা করেছে, এ বিষয়টিও আইএমএফের পূর্বাভাস কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। সংস্থাটি বলেছে, জ্বালানি, খাদ্য ও অন্যান্য পণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রবণতা ঝুঁকিতে থাকা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সামাজিক অস্থিরতা বাড়িয়ে দিতে পারে।
বছরে দ্বিতীয়বারের মতো পূর্বাভাস কমিয়ে আইএমএফ জানিয়েছে, ২০২২ সালে ও ২০২৩ সালে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ হারে বাড়তে পারে বিশ্বের মোট উৎপাদন, যা জানুয়ারিতে ঘোষিত ২০২২ সালের পূর্বাভাস থেকে দশমিক ৮ শতাংশ পয়েন্ট এবং ২০২৩ সালের জন্য দশমিক ২ শতাংশ পয়েন্ট কম। ইউক্রেইনে চলমান যুদ্ধের কারণেই মূলত পূর্বাভাসে এই কাঁটছাঁট করা হয়েছে।
আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা মঙ্গলবার খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক এক প্যানেল আলোচনায় বলেন, “ইউক্রেইনে রাশিয়ার অভিযানের জন্য কতটা মূল্য চুকাতে হচ্ছে? একটা সংকটের ওপরে আরেকটি সংকট, তার সঙ্গে যোগ হচ্ছে মানুষের প্রাণহানি এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ব্যাপক ধাক্কা।”
যুদ্ধের প্রভাব : আইএমএফের হিসাবে এ বছর ইউক্রেইনের অর্থনীতি ৩৫ শতাংশ সঙ্কুচিত হবে, রাশিয়ার সঙ্কোচন হবে সাড়ে ৮ শতাংশ। আর এই দুই দেশসহ ইউরোপের অর্থনীতির সার্বিক সংকোচন হবে ২ দশমিক ৯ শতাংশ। সংস্থার মুখ্য অর্থনীতিবিদ পিয়েরে-অলিভিয়ার গুরিনচেস এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, রাশিয়ার জ্বালানি রপ্তানির বিরুদ্ধে পশ্চিমারা অবরোধ দিলে ২০২৩ সালে রাশিয়ার জিডিপির সঙ্কোচন দ্বিগুণ হয়ে যাবে, অর্থাৎ ১৭ শতাংশ সংকোচন হবে তাদের ডিজিপি প্রবৃদ্ধির হারে।
রাশিয়ার জ্বালানির ওপর অতিনির্ভরশীল ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই বছরের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হারের পূর্বাভাস ১ দশমিক ১ শতাংশ পয়েন্ট কমিয়েছে আইএমএফ। এছাড়া আগামী বছর অন্য বড় অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে ব্রিটেনে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধীর হবে এবং অনেক বেশী সময় ধরে মূল্যস্ফীতির ধাক্কা সইতে হবে তাদের। পশ্চিমা অবরোধ দেওয়া হলে জ্বালানির দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে আস্থার সংকট ও আর্থিক বাজারে টালমাটাল অবস্থার কারণে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস থেকে আরও দুই শতাংশ পয়েন্ট কমিয়ে দিতে হতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন গুরিনচেস। আইএমএফ জানিয়েছে, রাশিয়ার সেনা অভিযানের কারণে এরইমধ্যে ইউক্রেইন ছেড়ে আসা উদ্বাস্তুর সংখ্যা ৫০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে, যা বড় ধরনের মানবিক সংকট সৃষ্টি করেছে।
গুরেনচেস বলেন, মূল্যস্ফীতির উর্ধ্বগতির লাগাম টানতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো মুদ্রানীতি আরও কঠোর করছে, এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও অবরোধ দেওয়া হলে, মুদ্রানীতি কঠোর করার পদক্ষেপ আরও গতি পাবে, যার কারণে সংকটে বাড়বে উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলোর জন্য।
রাশিয়ার তেল, গ্যাস ও ধাতুর সরবরাহ কমে যাওয়া এবং আন্তর্জাতিক বাজারে রাশিয়া ও ইউক্রেইনের উৎপাদিত গম ও ভুট্টার অভাব – সাব-সাহারান আফ্রিকা, উত্তর আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, ককেশাস ও মধ্য এশিয়া এবং ইউরোপে পণ্যের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বাড়িয়ে দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে নি¤œ আয়ের পরিবারগুলো সবচেয়ে বেশি ভুগছে।
আইএমএফ জানিয়েছে, মধ্য-মেয়াদী পূর্বাভাসে তারা সব ক্ষেত্রেই কাঁটছাঁট করেছে, শুধু পণ্য রপ্তানিকারকেরা এই জ্বালানি ও খাদ্য পণ্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে লাভবান হবেন।
স্পষ্ট বিপদ : আইএমএফ জানিয়েছে, এখনকার পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা ধারণা করছে, যুদ্ধের কারণে ভোগ্য পণ্যের দাম বৃদ্ধির চাপ বাড়তে থাকায় মূল্যস্ফীতি আগের চেয়ে দীর্ঘতর হবে। সংস্থাটি সতর্ক করেছে, চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্যহীনতা বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। ২০২২ সালের পূর্বাভাসে মূল্যস্ফীতির হার উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোতে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ এবং উদীয়মান ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোতে ৮ দশমিক ৭ শতাংশ হবে। জানুয়ারির পূর্বাভাসে এই হার ছিলো যথাক্রমে ১ দশমিক ৮ শতাংশ ও ২ দশমিক ৮ শতাংশ। পিয়েরে-অলিভিয়ার গুরিনচেস বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভসহ অনেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এরইমধ্যে সংকোচনশীল মুদ্রানীতিতে চলে গেছে। যুদ্ধের কারণে যে বিঘœ দেখা দিয়েছে তা অর্থনীতির ওপর এসব চাপকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
ইউক্রেইনে যুদ্ধের প্রভাবে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমালো আইএমএফ
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ