নিজস্ব প্রতিবেদক : ঈদের আর বাকি ১০ দিন। তার আগেই শুরু হবে ঈদ যাত্রা। গত দুই বছর করোনার প্রভাবের কারণে মানুষ তেমনভাবে বাড়ি যেতে পারেননি। তাই এবার ব্যাপকভাবে মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদ উদযাপন করতে ছুটে যাবে গ্রামের বাড়ি। তবে ঈদের ছুটি শুরু হলেই মানুষ সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন সড়কপথে। এ বছর অধিকাংশ এলাকাতে সড়কের অবস্থা আগের চেয়ে ভালো হলেও যানবাহনের চাপের কারণে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে ভোগান্তি পোহাতে হতে পারে সাধারণ যাত্রীদের। তবে কোনো হয়রানি ছাড়া যাতে ঈদ করতে যাওয়া মানুষজন নির্বিঘেœ বাড়ি পৌঁছাতে পারেন সে জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একই সঙ্গে ঈদের আগে সফিপুর নির্মাণাধীন ফ্লাইওভার ব্রিজ ছেড়ে দেওয়ার কথা রয়েছে।
আশঙ্কা করা হচ্ছে এবারের ঈদ যাত্রায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চলাচলকারী ঘরমুখো যাত্রীরা বেশি ভোগান্তির শিকার হতে পারেন। এ পথেই উত্তরবঙ্গের ২৩ টি জেলার মানুষ যাতায়াত করে থাকেন। সচেতন মহল মনে করেন ঈদ দোরগোড়ায় চলে এসেছে কিন্তু এবারও সড়কপথে ঈদ যাত্রায় তেমন কোনো সুখবর নেই। সড়কের দু’পাশে মেরামতের কাজ, খানাখন্দক আর ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর ও গাজীপুর সদরের নাওজোরের উড়ালসড়কের শেষ অংশের কাজ হতে পারে ঈদযাত্রায় গলার কাটা।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে ২০ তারিখ থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি তাদের দেওয়া তথ্য ঠিক থাকে তবে মহাসড়ক যানজটের তীব্র আকার ধারণ করবে। কারণ বৃষ্টির কারণে ঈদের আগে গোঁজামিল দেওয়া সড়কের ক্ষত বেড়িয়ে আসতে পারে। ফলে ভোগান্তি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাজীপুরেই ছোট-বড় প্রায় ৫ হাজার শিল্পকারখানা রয়েছে। এইসব কারখানার বেশিরভাগ শ্রমিক উত্তরবঙ্গের। এছাড়া ঢাকা ও নারায়নগঞ্জ থেকে ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড় হয়ে অনেক মানুষ উত্তরবঙ্গে প্রবেশ করেন। মূলত ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের ঘরমুখো মানুষ নবীনগর হয়ে চন্দ্রায় প্রবেশ করবে। আর গাজীপুর সদর, টঙ্গী, শ্রীপুরের শ্রমিকরা গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তা ও কোনাবাড়ি হয়ে প্রবেশ করবে চন্দ্রায়।
বিড়ম্বনার অন্যতম আরো একটি কারণ কিছু সংঘবদ্ধ চক্র যানবাহনের কৃত্রিম সঙ্কটের সৃষ্টি করে। এছাড়াও যত্রতত্র অবৈধ গাড়ি পার্কিং, অনিয়মতান্ত্রিকভাবে ইউটার্ন নেওয়া, রিকশা, ঠেলাগাড়ি, ট্রাক, লরিসহ সব যানবাহনের চালকদের ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবনতা ভোগান্তি অন্যতম কারণ।
যানজটের আরেকটি কারণ হলো সড়ক-মহাসড়কের ওপর বিশৃঙ্খলভাবে বারোয়ারি পণ্যের মেলা ও হাট-বাজার স্থাপন। এছাড়াও ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চলাচলও যানজটের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিভিন্ন কারখানার মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২৭ রমজান অর্থাৎ ২৮ ও ২৯ এপ্রিল থেকে শিল্পকারখানা ছুটি হবে। একসঙ্গে সব শিল্পকারখানা ছুটি হওয়ার কারণে যানজট দেখা দিতে পারে। তারা আরো জানান, অনেক এলাকার শ্রমিকরা একসঙ্গে ঈদ উপলক্ষে বাড়ি যান। সে জন্য তাদের ভাড়া করা ১০/১৫ টি বাস কারখানার সামনে মহাসড়কের ওপর দাঁড় করানো থাকে। এতে সড়কগুলোতে যানজট সৃষ্টি হতে পারে।
এদিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী তুরাগ ব্রিজ থেকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়ক পথ। ওই সড়কে গত কয়েক বছর ধরে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। যার কারণে ওই সড়ক অতিক্রম করতে এখন সময় লাগে তিনি-চার ঘণ্টা। কখনো কখনো এর চেয়েও বেশি। তাই ঈদ যাত্রায় এবার চরম ভোগান্তির আশঙ্কা করছেন ওই পথে চলাচলকারীরা।
গাজীপুর পরিবহন শ্রমিক নেতা সুলতান সরকার জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কে চান্দনা চৌরাস্তা ও ভোগড়া বাইপাস সড়ক ঢাকার অত্যন্ত ব্যস্ততম ও গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত। প্রতিদিন গুরুত্বপূর্ণ এই দুটি সড়ক দিয়ে হাজার হাজার যাত্রীবাহী বাসসহ পণ্যবাহী ট্রাক, লরি চলাচল করে। গত দুই বছরের চেয়ে এবার কয়েকগুণ বেশি মানুষ গ্রামের বাড়ি যাবেন। যার ফলে ঈদে ব্যাপক চাপ পড়বে মহাসড়কে।
হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চন্দ্রা মোড়ে উত্তরবঙ্গগামী কোনো বাস, ট্রাক রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে যাত্রী তুলতে দেওয়া হবে না। নিদিষ্ট কয়েকটি স্থানে যেমন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠ থেকে যাত্রী উঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়াও ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কের ওয়ালটন কোম্পানির সামনে, নন্দন পার্ক, জিরানী বাজারসহ যে সব স্থানে রোড ডিভাইডারের কাটা আছে সেগুলো ঈদের আগেই বন্ধ করে দেওয়া হবে।
সালনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফিরোজ হোসেন বলেন, ঈদে উত্তরবঙ্গগামী মানুষের যানজটের ভোগান্তি কমাতে অতিরিক্ত ২০০ জন অফিসার ও ফোর্স চন্দ্রা মোড়ে কাজ করবে। ঈদের যাত্রা সুন্দর ও নিরাপদ করতে হাইওয়ে পুলিশসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ২৪ ঘণ্টা কাজ করে যাবে। তবে ঈদের আগে সফিপুর নির্মাণাধীন ফ্লাইওভার ব্রিজ ছেড়ে দেওয়ার কথা রয়েছে। ব্রিজটা খুলে দিলে যানজট অনেকটা লাঘব হবে।
ফ্লাইওভারের প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপক সাখাওয়াৎ হোসেন ও সহকারী প্রকৌশলী মো. নুরুজ্জামান জানান, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের উদ্যোগে এডিবির অর্থায়নে সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) সড়ক সংযোগ প্রকল্পের আওতায় জয়দেবপুর, চন্দ্রা ও টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা মহাসড়কে সফিপুর ও নাওজোর ফ্লাইওভারের কাজ প্রায় শেষ। গাডার ও স্লাপের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। আশা করছি ঈদের আগেই অন্তত ১৫ দিন যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে। ঈদের পর ফ্লাইওভার আবারও বন্ধ করে অবশিষ্ট কাজ শেষ করা হবে।