নিজস্ব প্রতিবেদক : মহামারির কারণে প্রায় দুই বছর পর বর্ণিল আয়োজনে উদযাপন হতে যাচ্ছে বাংলা নববর্ষ। এ উপলক্ষে ব্যবসায়ীরাও নিয়েছেন প্রস্তুতি। কিন্তু নেই ভালো বেচাকেনা। ফলে হতাশ রাজধানীর দোয়েল চত্ত্বরের মৃৎ ও কারুপণ্যের ব্যবসায়ীরা। বাংলা নববর্ষে মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার দোয়েল চত্ত্বরে জমে ওঠে বৈশাখী কেনাকাটা। সেখানে থাকে বাহারি পাতিল, একতারা-দোতারা ও ঘর সাজানোর বিভিন্ন জিনিস।
এবারও উৎসবটি কেন্দ্র করে হাড়ি, প্লেট, মাটির তৈরি মগ, চায়ের কাপ, ফুলদানি, নকশী ঘুড়ি, শোপিস, মেয়েদের মাটির গয়না নিয়ে এসেছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু পর্যাপ্ত ক্রেতা না থাকায় বেশিরভাগ পণ্যই অবিক্রীত থাকার আশঙ্কা করছেন বিক্রেতারা। গতকাল বুধবার দুপুরে দোকানগুলোতে দেখা যায়, বেশিরভাগ বিক্রেতা অলস সময় পার করছেন। ক্রেতা না থাকায় বসেছিলেন মোবাইল নিয়ে। তারা বলছেন, করোনার সময় পহেলা বৈশাখ উদযাপন হয়নি। এবার যেহেতু লকডাউন নেই বাড়তি বেচাকেনার আশা করেছিলেন। রমজান মাসে পহেলা বৈশাখ ও দ্রব্যমূল্য বাড়ায় এবার আশানুরূপ বিক্রি হচ্ছে না বলে জানান ব্যবসায়ীরা। প্রায় এক যুগ ধরে মৃৎ ও কারুপণ্যের ব্যবসা করছেন হালেম মাতবর। তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘বেচাকেনা যদি হইতো তাহলে এই ফুটপাতে দাঁড়ানোর সুযোগ পাইতেন না, আপনার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হতো না। এইবার মাত্র দুইটা অর্ডার পাইছি। এক যায়গায় ৭০টা ডুগডুগি আরেক যায়গায় কিছু নকশা করা পাতিলের।’ তিনি বলেন, ‘দুই বছর আগের বৈশাখে প্রচুর বেচাকেনা হইছে। বৈশাখের আগের দিন, আবার বৈশাখের দিনও বসার সুযোগ থাকতো না। এইবার খুচরা বিক্রি হচ্ছে। কেউ ৪-৫টা কুলা নিচ্ছে। এই হলো অবস্থা।’ শিক্ষক দম্পতি কাসফিয়া-হাসনাত জানান, বৈশাখ উপলক্ষে নয়, এমনিতেই কেনাকাটা করতে এসেছেন। বলেন, ঘর সাজানোর জিনিস দেখছি। কয়েকটা হাড়ি নেবো, আর কাঠের কিছু আইটেম। সাইফুল ইসলাম নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, বড় বড় কোম্পানিগুলো আগে প্রচুর অর্ডার দিতো। অফিস সাজানোর পাশাপাশি কর্মীদের উপহার দিতো এখান থেকে। মাটির পাতিল, মুখোশ, ঘুড়ি এমন রকমারি জিনিসের অর্ডার দিতো। সেটা ২০-৩০ লাখ টাকার অর্ডারও পেয়েছি। কিন্তু এবারের বাস্তবতা ভিন্ন, সবারই বাজেট ছোট। ৫০০-৪০০ পিসের বদলে এখন ৫০- ৬০ পিস নিচ্ছে। আর প্রি অর্ডারও গেছে কমে। তিনি আরও বলেন, এবার দোকান করে চা খাওয়ার পয়সাও উঠবে না। সবাই কম করে পণ্য নিচ্ছে। সাধারণ সময়ের চেয়েও বেচাকেনা কম। ২৮ বছর ধরে ব্যবসা করা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, জিনিসপত্রের যে দাম বাড়ছে শৌখিন পণ্য কিনতে মানুষ এখন ভাবছে। আবার রমজান মাসে অনেকেই বাসা থেকে বের হতে চান না। রমজানে আসলে পহেলা বৈশাখ জমে না। আরিফুল ইসলাম নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, গতবার যে অর্ডার পেয়েছি এবার তার ২০ ভাগ পেয়েছি। এই সময়ে মাটির বাসন, ডিনার সেট, ঘর সাজানোর আইটেম ভালো চলে, তবে এইবার একবারে লেজেগোবরে অবস্থা। জিনিসপত্রের ঊর্ধ্বগতির পাশাপাশি মেট্রোরেলের কারণে দোকান স্থানান্তরের কথাও জানালেন অনেক ব্যবসায়ী। হালেম মাতবর বলেন, ‘এইখানের ৪০ জনের মতো ব্যবসায়ী আগে কার্জনের বিপরীত রাস্তায় বসতাম। এখন বাংলা একাডেমির সড়কে। রাস্তা জুড়ে মেট্রোরেলের কাজ, ফুটপাতে নির্মাণ সামগ্রী পড়ে আছে এই অবস্থায় ক্রেতা আসতে পারে না।’
নববর্ষে কারুপণ্যের বাজারে মন্দা
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ