নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ম্যাজিস্ট্রেট ও দায়রা আদালতসহ বিভিন্ন ধরনের ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করা গেলেও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলার আসামিরা সেই সুযোগ পাচ্ছেন না।
জামিনের আবেদনের জন্য আত্মসমপর্ণ করতে না পেরে অনেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে হেনস্থার শিকার হচ্ছেন অথবা তাদের পালিয়ে থাকতে হচ্ছে।
বিশেষ করে ২০১৯ সালের জুন মাসের পর দুদকের সমন্বিত কার্যালয়গুলোতে দায়ের হওয়া মামলাগুলোতে আত্মসমর্পণ নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে।
এক মাস ২০ দিন বন্ধ থাকার পর গত ২২ মে নি¤œ আদালতে আত্মসমর্পণের সুযোগ দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
এতে বলা হয়, শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব মেনে ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি/ব্যক্তিরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল ও সাইবার ট্রাইব্যুনালসমূহে আত্মসমর্পণ করতে পারবেন।
তবে দুদকের মামলায় আমলি আদালত হিসেবে মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ (মেট্রো সিনিয়র স্পেশাল জজ) আদালত কাজ করে। আর বিচারিক আদালত হিসেবে স্পেশাল জজ আদালতগুলোও কাজ করে।
ঢাকার আইনজীবীরা বলছেন, সুপ্রিম কোর্টের জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে ‘স্পেশাল জজ বা সিনিয়র স্পেশাল জজ’ আদালতের নাম না থাকায় দুদকের মামলার আসামিরা আত্মসমর্পণ করতে পারছেন না।
ঢাকার জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আমিনুল গণী টিটো বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অন্য বিশেষ জজ আদালত বন্ধ থাকলেও মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত আত্মসমর্পণের জন্য খোলা রাখা উচিত। প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্টের মৌখিক অনুমতিতে দুদকের মামলায় আত্মসমর্পণের সুযোগ দেওয়া উচিত।
“শুধু এ ক্ষেত্রেই নয়, হয় আদালত ফুল লকড আর না হয় ফুল ওপেনড হওয়া উচিত। ‘ইন বিটুইন’ কিছু করা উচিত নয়, হাফ ডান কিছু হয় না। তাহলে বিচার ব্যবস্থার ক্ষতি হয়। তাছাড়া অভিযুক্তরা কোথায় যাবে?“
অবৈধ সম্পদ অর্জন ও পাচারের মামলায় ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (আইএলএফএসএল) হিসাব বিভাগে জুনিয়র অফিসার পদে চাকরি করতেন এক নারী। তার স্বামী জানান, সেখানে আট মাস চাকরি করে দুটি মামলার আসামি হয়েছেন তার স্ত্রী।
ওই ব্যক্তি বলেন, “দুই বছর আগে চাকরি ছেড়ে দিলেও বিনা দোষে আসামি হতে হয়েছে তাকে। আমার স্ত্রী অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে এখন চাকরিরত। আত্মসমর্পণের সুযোগ না থাকায় তার বিরুদ্ধে হওয়া মামলায় জামিন নেওয়া যাচ্ছে না। তাই খুব বিপদে আছি।”
এ বিষয়ে দুদকের কৌঁসুলি মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, “জুডিশিয়ারি নিয়ে মন্তব্য করব না। লোকজন অসুবিধার মধ্যে থাকলেও সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন সিদ্ধান্ত না দিলে তো আমাদের কিছু করার নেই।”
তবে এক্ষেত্রে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদনের সুযোগ একেবারে বন্ধ রয়েছে বলে মনে করছেন না আরেক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী।
তিনি বলেন, এক্ষেত্রে জামিনের জন্য উচ্চ আদালতে যাওয়ার পথ খোলা রয়েছে। একটা পথ বন্ধ হলে বিকল্প রয়েছে। যে আসামি ‘সারেন্ডার’ করবে সে উচ্চ আদালতে গিয়ে দরখাস্ত দিতে পারে।
“কারণ ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৮ ধারায় একই রকমের ‘কনকারেন্ট’ এখতিয়ার রয়েছে মাননীয় বিশেষ জজের এবং মহামান্য হাই কোর্টের। সেই পথতো তার রুদ্ধ করা হয় নাই। এখানেই (নি¤œ আদালত/জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ) করতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই।”
করোনাভাইরাস মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে বিধিনিষেধের মধ্যে ২ এপ্রিল বন্ধ হয়ে যায় আদালতের সব বিচার কার্যক্রম। গত ১২ এপ্রিল ভার্চুয়ালি হাজতি আসামিদের জামিন শুনানির সুযোগ দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।
এরপর ধাপে ধাপে নালিশি (সিআর) মামলা দায়ের, আপিল ও রিভিশন দায়েরসহ বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হলেও দুদকের মামলায় এখনো আত্মসমর্পণ করে জামিন চাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়নি।
কোভিড: আত্মসমর্পণের ‘সুযোগ না পেয়ে’ বিপাকে দুদকের আসামিরা
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ