ঢাকা ০৭:৪০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫

শিক্ষক হৃদয় ম-লের বিরুদ্ধে মামলার ধারা ও জামিন না হওয়ায় প্রশ্ন

  • আপডেট সময় : ০১:৫৩:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ এপ্রিল ২০২২
  • ৯৩ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : শ্রেণিকক্ষের আলোচনার সূত্র ধরে গ্রেপ্তার মুন্সীগঞ্জের স্কুল শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র ম-লের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার দুটি ধারায় মামলা করা হলেও ‘নিয়ম অনুযায়ী’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়র অনুমোদন নেওয়া হয়নি।
দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কারাবন্দি এই বিজ্ঞান শিক্ষককে কেন জামিন দেওয়া হচ্ছে না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবী, অধিকারকর্মী ও আইনের শিক্ষকরা। তারা বলছেন, আইনি প্রক্রিয়া ‘যথাযথভাবে না মেনে’ একজন শিক্ষককে এভাবে বিচারের মুখোমুখি করলে সাম্প্রদায়িক শক্তিই উৎসাহ পাবে। তখন শিক্ষকদের ‘অ্যাকাডেমিক ফ্রিডম’ বলে কিছু থাকবে না, তাতে অশিক্ষা আরও বাড়বে।
হৃদয় ম-ল মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক। ২১ বছর ধরে তিনি ওই স্কুলে বিজ্ঞান ও গণিত পড়িয়ে আসছেন।
যিনি মামলা করেছেন, সেই মো. আসাদ ওই স্কুলের একজন অফিস সহকারী (ইলেকট্রিশিয়ান)। তার করা মামলা পুলিশ নিয়েছে দ-বিধির ২৯৫ এবং ২৯৫/ক ধারায়। ওই দুই ধারায় ধর্মীয় উপসনালয়ের অনিষ্ট করা এবং ধর্ম অবমাননার বিচার হয়। সংবাদসংস্থা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এক বিশেষ প্রতিবেদনে বিস্তারিত জানিয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৬ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, ‘ব্লাসফেমি’র ধারায় মামলা করতে হলে আগেই সরকার বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে। সেটা ছাড়া কোনো মামলা নেওয়ার এখতিয়ার পুলিশের নাই।
“এখন পুলিশ বলছে, যে দুটি ধারায় মামলা হয়েছে, তার একটিতে অনুমোদন লাগে, আরেকটিতে লাগে না। এখানে আলাদা করার কোনো বিষয় নেই। ১৯৬ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, কোন কোন ক্ষেত্রে পূর্বানুমোদন নিতে হবে।”
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, যখনই এ আইনের ব্যবহার করতে হয়, তখন ‘সাংঘাতিক রকমভাবে’ চিন্তা-বিবেচনা করা দরকার। সেজন্যই মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমোদনের কথা বলা হয়েছে।
“এটা কিন্তু এই কারণেই, যাতে এটার অপব্যবহার না হয়। যখনই পূর্বানুমোদন না নিয়ে এটা ব্যবহার করা হচ্ছে, সেখানেই এটাকে আটকে দেওয়া উচিৎ ছিল। এবং আদালতের উচিৎ ছিল একজন নাগরিকের স্বাধীনতাকে প্রাধান্য দেওয়া এবং সে লক্ষ্যে কাজ করা।”
কেন এই মামলা : গত ২০ মার্চ দশম শ্রেণির একটি অনির্ধারিত ক্লাসে গিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা করছিলেন হৃদয় ম-ল। সেখানে একজন ছাত্র বিজ্ঞানের সঙ্গে ধর্মের তুলনা করে কিছু প্রশ্ন করে। হৃদয় ম-ল সেগুলোর জবাব দেন। ওই আলোচনা ক্লাসেরই এক ছাত্র মোবাইলে রেকর্ড করে এবং তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই ক্লাসের দুদিন পর কিছু ছাত্র ও স্থানীয় লোকজন মিলে হৃদয় ম-লের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে থানায় নিয়ে যায়। স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে। ওই রাতেই স্কুলের অফিস সহকারী আসাদ বাদী হয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে মামলা করলে সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় শিক্ষক হৃদয় ম-লকে। ২৮ মার্চ মুন্সীগঞ্জের বিচারিক হাকিম আদালতে জামিন আবেদন করেন হৃদয়, তা নাকচ করা হয়। এরপর সোমবার জেলা ও দায়রা জজ আদালতও তার জামিন নাকচ করে।
গত রোববার আবার জামিন শুনানি হবে জানিয়ে হৃদয় ম-লের আইনজীবী অজয় চক্রবর্তী বলেন, সেদিন জামিন হবে বলে তারা আশা করছেন।
কী আছে মামলায়? মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, শিক্ষক হৃদয় ম-ল সেদিন ক্লাসে ‘মনগড়া মত প্রকাশ করে’ ইসলাম ও এর পবিত্র গ্রন্থের ‘অবমাননা’ করেছেন এবং ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ দিয়েছেন।

পুলিশ যে দুই ধারায় মামলা রেকর্ড করেছে, তার মধ্যে দ-বিধির ২৯৫ ধারায় বলা হয়েছে, “যদি কোনো ব্যক্তি, এরূপ অভিপ্রায়ে বা এরূপ অবগতি সহকারে জনগণের যে কোনো শ্রেণির উপাসনালয় বা উক্ত শ্রেণির ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক পবিত্র বলে বিবেচিত কোনো বস্তু ধ্বংস, অনিষ্ট বা অপবিত্র করে যে, তদ্বারা জনগণের যে কোনো শ্রেণির ধর্মের প্রতি অবমাননা বলে বিবেচনা করার সম্ভাবনা রয়েছে, সে ব্যক্তি কারাদ-ে দ-িত হবে, যার মেয়াদ দুই বৎসর পর্যন্ত হতে পারে, বা জরিমানা বা উভয় দ-ে দ-িত হবে।”
আর ২৯৫/ক ধারায় বলা হয়েছে, “যদি কোনো ব্যক্তি, বাংলাদেশের নাগরিকদের যে কোনো শ্রেণির ধর্মীয় অনুভূতিতে কঠোর আঘাত হানার অভিপ্রায়ে স্বেচ্ছাকৃত ও বিদ্বেষাত্মকভাবে কথিত বা লিখিত শব্দাবলীর সাহায্যে বা দৃশ্যমান কল্পমূর্তির সাহায্যে উক্ত শ্রেণির ধর্ম বা ধর্মীয় বিশ্বাসকে অবমাননা করে বা অবমাননা করার উদ্যোগ গ্রহণ করে, সে ব্যক্তি কারাদ-ে দ-িত হবে, যার মেয়াদ দুই বৎসর পর্যন্ত হতে পারে, বা জরিমানা বা উভয়বিধ দ-ে দ-িত হবে।”
এ দুই ধারার মধ্যে প্রথমটি জামিনযোগ্য হলেও দ্বিতীয়টি, অর্থাৎ ২৯৫(ক) ’জামিন অযোগ্য’ ধারা বলে জানিয়েছেন হৃদয় ম-লের আইনজীবী অজয় চক্রবর্তী। তবে ‘জামিন অযোগ্য’ বলা হলেই যে কাউকে জামিন দেওয়া যায় না- বিষয়টি এমন নয় জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, “হত্যা মামলার আসামিকেও তো জামিন দেওয়া হয়। এটা একান্তই ম্যাজিস্ট্রেটের স্বীয় ক্ষমতা।
“আবার বলা হচ্ছে, ওই শিক্ষককে জামিন দিলে তার নিরাপত্তার সঙ্কট তৈরি হবে, তাকে মেরেও ফেলতে পারে। এমন যদি হয়, তাহলে তো গুরুতর বিষয়। আইনশৃঙ্খলা যদি না থাকে, তাহলে তো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেও মামলা হওয়া উচিৎ।”
বাদী কেন অফিস সহকারী? স্কুলের অফিস সহকারী কেন ওই মামলার বাদী হলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। তিনি বলেন, “একজন ইলেকট্রিশিয়ান কীভাবে একটি স্কুলকে প্রতিনিধিত্ব করে। তিনি যদি ব্যক্তিগতভাবে বাদী হতেন, তাহলে অসুবিধা ছিল না। কিন্তু প্রধান শিক্ষক নিজে না করে কেন তাকে মামলা করতে পাঠানো হল?”
এক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকারও সমালোচনা করেছেন স্থানীয় সাংসদ মৃণাল কান্তি দাস। তার অভিযোগ পুলিশের ‘নিষ্ক্রিয়তায়’ ঘটনা এতদূর গড়িয়েছে।
“একজন শিক্ষক যদি কোনো অপকর্ম করেই থাকে, তাহলে স্কুলে কি হেড মাস্টার নাই? উনি বাদী হতেন। স্কুলের একটা ইলেকট্রিশিয়ান, যে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল না, সে কী করে এই মামলার বাদী হয়? পুলিশ কীভাবে মামলার এফআইআর লিখে দেয়? পুলিশ কীভাবে তাকে গ্রেপ্তার করল? ওই ইলেকিট্রিশিয়ান জানেও না ওই মামলার মধ্যে কী লেখা আছে। পুলিশ কী করে মামলা লিখে তার স্বাক্ষর নেয়? এর জবাব কে দেবে?“
ক্ষমতাসীন দলের এ সাংসদ বলছেন, স্থানীয় প্রশাসন বা পুলিশ যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তাতে তিনি ‘মর্মাহত, লজ্জিত, ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ’। “আমি তো সবটাই জানি, সে একটা ষড়যন্ত্রের শিকার। এর চাইতে বেশি কিছু আমি আর না বলি।”
এ বিষয়ে মামলার বাদী আসাদের বক্তব্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানতে পারেনি। তবে মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেছেন, এই ঘটনা যেন আর বাড়তে না পারে, সেজন্য ‘যথাসাধ্য চেষ্টা’ পুলিশ করেছে।
বিপজ্জনক নজির : যেখানে আইনের ‘অপব্যবহার’ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, সেখানে হৃদয় ম-লের জামিন না হওয়াকে ‘দুঃখজনক’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক প্রধান অধ্যাপক মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, “ব্লাসফেমি আইনটাই খুব একটা ইতিবাচক আইন নয় আর কী। এবং এমন আইন থাকলে সেই আইনের একটা অপব্যবহারের সুযোগ থাকে।
“যখন এ ধরনের কোনো আইনের প্রয়োগ করা হয় দেশে, প্রয়োগের চেষ্টা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, তখন কিন্তু আদালতও এগুলোর ব্যাপারে একটা ধীরগতি এবং খুব দেখেশুনে চলার একটা নীতি অবলম্বন করতে চায়।
“কারণ, এই রকম আইনের প্রয়োগের বা এখানে জামিন দিয়ে কেউ রাষ্ট্রের বিরাগভাজন হতে চায় না। তারা বুঝতে চায়, রাষ্ট্র কীভাবে দেখবে বিষয়টা।”
আইনের এই শিক্ষক বলেন, “আমরা এখনও মনে করি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে একটা শ্রেণিকক্ষে একজন শিক্ষক তার ছাত্র-ছাত্রীর সাথে কী আলোচনা করছেন, সেখানে তাদের মুক্তবুদ্ধির চর্চার জন্য নানা প্রসঙ্গ আসতে পারে এবং সেটার ব্যাখ্যা হতে পারে। এটাকে কখনোই কোনো রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা উচিৎ না।
“একজন শিক্ষক যদি অশুভ উদ্দেশ্য নিয়ে এই কাজগুলো না করেন, তাহলে তার অ্যাকাডেমিক স্বাধীনতার বিষয়টি সুরক্ষিত থাকাই ভালো। এখানে আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, সেই শিক্ষক কিন্তু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ ও বিজ্ঞানের দিক দিয়ে বিষয়গুলো বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন, সেখানে একটি অশুভ উদ্দেশ্য নিয়ে এগুলো ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।” একজন শিক্ষককে এভাবে আটক করা ‘সাংঘাতিক নিন্দনীয়’ মন্তব্য করে মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান বলেন, “যারা এই রকম, শিক্ষকের বিরুদ্ধে বলছেন, কেন বলছেন চিন্তাভাবনা না করে শুধুমাত্র আইনের দোহাই দিয়ে একজনকে হেনস্তা করবেন, এটা কখনোই হওয়া উচিৎ নয়। “এটা বন্ধ হওয়া উচিৎ। বন্ধ না হলে আমাদের পড়াশোনা বা মুক্তবুদ্ধির চর্চা হুমকির মুখে পড়বে। এভাবে যদি আইনের অপব্যবহার করা হয়, একজন শিক্ষক ছাত্রকে বোঝাবে কীভাবে?”
হৃদয় ম-লের মুক্তির দাবিতে রাজপথে নাট্যশিল্পীরা : ‘ধর্ম অবমাননার’ অভিযোগে কারাগারে আছেন মুন্সীগঞ্জের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র ম-ল। তার মুক্তি ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তি প্রতিরোধের দাবিতে গতকাল শনিবার প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ। বেলা ১১টায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে এটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে সংহতি প্রকাশ করে অভিনয় শিল্পী সংঘ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, আই টি আই বাংলাদেশ কেন্দ্র, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ, চারু শিল্পী সংসদসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন। বিষয়টি নিয়ে পথনাটক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহাম্মদ গিয়াস বলেন, ‘বিজ্ঞানের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র ম-লের মুক্তি ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তি প্রতিরোধের দাবিতে আমাদের এই সমাবেশ। এখানে প্রায় সকল সাংস্কৃতিক সংগঠন আমাদের সঙ্গে একত্মতা প্রকাশ করেছেন। সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারকে আহ্বান জানিয়েছি।’
আয়োজনে বক্তব্য রাখেন নাট্যজন মামুনুর রশীদ, ঝুনা চৌধুরী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, গণশিল্পী সমন্বয় পরিষদের মানজারুল চৌধুরী, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের রফিকুল ইসলাম। এতে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন অনিকেত রাজেশ। পথনাটক পরিষদের সভাপতি মিজানুর রহমানের সভাপতিতে সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আহাম্মদ গিয়াস।
হৃদয় ম-লের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের উসকানি দেয় বহিরাগতরা : মুন্সীগঞ্জের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র ম-লকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে আটক করা হয়েছে। গ্রেফতারের আগে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় বহিরাগতদের ইন্ধনে স্কুলে কয়েকজন শিক্ষার্থী হৃদয় ম-লকে অপমান করারও চেষ্টা করে। পরে তারা সংঘবদ্ধভাবে শিক্ষকের বাড়িতে হামলারও চেষ্টা চালায়।
ঘটনার দিন স্কুলে যা ঘটেছিল তার বর্ণনা দিয়েছেন স্থানীয় এক সাংবাদিক। তিনি বলেন, একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে আন্দোলন হচ্ছে এরকম খবর পেয়ে আমি সেই স্কুলে যাই। স্কুলের ভেতর শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্থানে জটলা করে দাঁড়িয়েছিল। স্কুলের ভেতর বহিরাগত মানুষও ছিল অনেক। আমি কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলাম। তারা জানায়, নবী ও ধর্ম নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেছে তাদের স্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষক। তারা আমাকে বলছিল, বিজ্ঞান আগে না ধর্ম আগে, বিজ্ঞান আর ধর্মের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে শিক্ষক ধর্ম অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন। তবে ১০ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বললেও একজনও স্পষ্ট করে বলতে পারেনি তাদের স্যার আসলে কী বলেছেন।
এ সময় বহিরাগতদের ইন্ধনে শিক্ষককে অপমান করার চেষ্টা হয় বলে জানান ওই সাংবাদিক। তিনি বলেন, স্কুলে অবস্থানকালে দেখতে পাই কিছু শিক্ষার্থী জুতার মালা বানিয়ে নিয়ে এসেছেন। যে বানিয়ে এনেছে তার স্কুল ইউনিফর্ম ছিল না। সেই-ই মূলত শিক্ষার্থীদের একত্রিত করেছে আন্দোলনের জন্য। ওই কিশোর জুতার মালা নিয়ে এসে স্কুলের অফিসের সামনে গিয়ে বলছিল, স্যারকে জুতার মালা পরে এলাকা ঘুরতে হবে। এরপর সেখানে পুলিশ আসে। পুলিশ সবাইকে মাঠের সামনে একত্রিত করে বোঝানোর চেষ্টা করে।
পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আন্তরিক চেষ্টা চালায় জানিয়ে ওই সাংবাদিক বলেন, পুলিশের এএসপি তখন বলেন, তোমরা শান্ত হও, এ ঘটনা আমরা দেখছি। তোমরা ক্লাসে ফিরে যাও। আমাদের ওপর ভরসা রাখতে পারো। আমি তখন ছাত্রদের ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়েছিলাম। দুই জন বহিরাগত ব্যক্তি এ সময় ছাত্রদের উসকে দিয়ে বলেছে, ‘তোরা পুলিশের কথা শুনবি না। জুতার মালা পরে ঘুরতেই হবে।’ এ পরিস্থিতিতে বহিরাগত দুই জনের নাম-পরিচয় নিশ্চিত হতে পারিনি। ছাত্ররাও পুলিশের কথা শুনছিল না। এমনকি তারা পুলিশের কাছেও তাদের শিক্ষককে জুতার মালা পরে ঘুরতে বলে। কিন্তু পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। পরে বহিরাগত অনেক মানুষ স্কুলের ভিতর আসার চেষ্টা করে। তখন স্কুলের গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। ছাত্ররাও আরেকটি গেট দিয়ে বাইরে চলে যায়। তারা অনেক উত্তেজিত ছিল। এ সময় স্কুলের পাশেই ছাত্ররা শিক্ষকের বাসার সামনে গিয়ে কিছু একটা করার চেষ্টা করছিল। কিন্তু পুলিশ তা হতে দেয়নি। পরে শিক্ষককে পুলিশের গাড়িতে করে থানায় নেওয়া হয়।
শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র ম-লের স্ত্রী ববিতা হালদার বলেন, ঘটনার দিন আমি হাসপাতালে ডিউটিতে ছিলাম। আমার ছেলে ফোন করে জানায়, অনেক মানুষ লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের বাড়ি ঘেরাও করেছে। তারা দরজা ধাক্কাচ্ছিল। ওরা তার বাবাকে গালিগালাজ করছিল। তারা স্লোগান দিচ্ছিল- ম-লের গালে জুতা মারো তালে তালে। পরে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়।
প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দিন আহম্মেদ ঘটনা দিনের বর্ণনা দিয়ে বলেন, এসএসসি মডেল টেস্ট পরীক্ষার পর কিছু শিক্ষার্থী আমার কাছে একটি আবেদন নিয়ে আসে। তারা অভিযোগ করেন, শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র ম-ল আমাদের মহানবী মোহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তি করেছে। ছাত্ররা তার শাস্তি চায়। তখন আমি তাদের বলি, শিক্ষক যদি এ রকম কিছু বলে থাকে তাহলে শাস্তি হবে। শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করে ফেরত পাঠিয়ে দেই। কিন্তু, কিছুক্ষণ পর তারা স্কুলের মাঠে বিক্ষোভ শুরু করে, সেখানে স্থানীয়রাও ছিল। পরে মাইকিং করে বহিরাগতদের স্কুল মাঠ ত্যাগ করতে বলা হয়। তবে তা না হওয়ায় পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে ভেবে পুলিশকে খবর দেই।
এদিকে মামলার বাদী স্কুলের ইলেকট্রিশিয়ান মো. আসাদ বলেন, ঘটনার দিন আমি স্কুলেই ছিলাম। শিক্ষক ক্লাসে কি বলেছেন, তা আমি শুনিনি। শিক্ষার্থীরা যখন বিক্ষোভ করছিল, তখন তাদের কাছ থেকে শুনেছি শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র ম-ল ধর্ম অবমাননা করে ক্লাসে কথা বলেছেন। শিক্ষার্থীরা নাকি সেটা রেকর্ডও করেছে। কিন্তু, সেটাও আমি শুনিনি। তবে, প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে আমাকে মামলার বাদী বানানো হয়েছে। ঘটনা নিয়ে প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষক, অভিভাবক ও পুলিশরা নিজেদের মধ্যে অনেক কথাবার্তা বলেছেন। তবে সেসব আমি কিছুই জানি না। আমি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। মামলা বা আইনের কোনও ধারা বুঝি না। এমনকি ঠিকমতো রিডিংও পড়তে পারি না। এজাহার লিখে আমার সামনে পাঠ করে শোনানো হয়েছে। তারপরে আমি স্বাক্ষর করেছি।
উপজেলা চেয়ারম্যান আনিসউজ্জামান আনিস বলেন, ঘটনার দিন আমিসহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পুলিশ ও অন্যরা সেখানে উপস্থিত ছিলাম। আমরা শিক্ষার্থীদের বলি যে শিক্ষকের বিরুদ্ধে তোমাদের অভিযোগ তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিচার করা হবে। তোমরা শান্ত হও। শিক্ষার্থীরা প্রথমে সেটা মেনে নিয়েছিল। পরে বহিরাগতদের সঙ্গে নিয়ে শিক্ষকের বাসায় হামলা করার চেষ্টা করে। আমার ধারণা বহিরাগতরা বিষয়টিতে ইন্ধন দিয়েছে। তিনি জানান, স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আলমগীর বহিরাগত কারা ছিল ও কারা শিক্ষকের বিরুদ্ধে আন্দোলনে উসকানি দিয়েছে সে বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন। তবে, স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মহিউদ্দিন খান আলমগীরকে একাধিকবার কল দিলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে ‘অবদান’ অস্বীকারেই নাখোশ ট্রাম্প

শিক্ষক হৃদয় ম-লের বিরুদ্ধে মামলার ধারা ও জামিন না হওয়ায় প্রশ্ন

আপডেট সময় : ০১:৫৩:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ এপ্রিল ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : শ্রেণিকক্ষের আলোচনার সূত্র ধরে গ্রেপ্তার মুন্সীগঞ্জের স্কুল শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র ম-লের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার দুটি ধারায় মামলা করা হলেও ‘নিয়ম অনুযায়ী’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়র অনুমোদন নেওয়া হয়নি।
দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কারাবন্দি এই বিজ্ঞান শিক্ষককে কেন জামিন দেওয়া হচ্ছে না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবী, অধিকারকর্মী ও আইনের শিক্ষকরা। তারা বলছেন, আইনি প্রক্রিয়া ‘যথাযথভাবে না মেনে’ একজন শিক্ষককে এভাবে বিচারের মুখোমুখি করলে সাম্প্রদায়িক শক্তিই উৎসাহ পাবে। তখন শিক্ষকদের ‘অ্যাকাডেমিক ফ্রিডম’ বলে কিছু থাকবে না, তাতে অশিক্ষা আরও বাড়বে।
হৃদয় ম-ল মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক। ২১ বছর ধরে তিনি ওই স্কুলে বিজ্ঞান ও গণিত পড়িয়ে আসছেন।
যিনি মামলা করেছেন, সেই মো. আসাদ ওই স্কুলের একজন অফিস সহকারী (ইলেকট্রিশিয়ান)। তার করা মামলা পুলিশ নিয়েছে দ-বিধির ২৯৫ এবং ২৯৫/ক ধারায়। ওই দুই ধারায় ধর্মীয় উপসনালয়ের অনিষ্ট করা এবং ধর্ম অবমাননার বিচার হয়। সংবাদসংস্থা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এক বিশেষ প্রতিবেদনে বিস্তারিত জানিয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৬ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, ‘ব্লাসফেমি’র ধারায় মামলা করতে হলে আগেই সরকার বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে। সেটা ছাড়া কোনো মামলা নেওয়ার এখতিয়ার পুলিশের নাই।
“এখন পুলিশ বলছে, যে দুটি ধারায় মামলা হয়েছে, তার একটিতে অনুমোদন লাগে, আরেকটিতে লাগে না। এখানে আলাদা করার কোনো বিষয় নেই। ১৯৬ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, কোন কোন ক্ষেত্রে পূর্বানুমোদন নিতে হবে।”
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, যখনই এ আইনের ব্যবহার করতে হয়, তখন ‘সাংঘাতিক রকমভাবে’ চিন্তা-বিবেচনা করা দরকার। সেজন্যই মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমোদনের কথা বলা হয়েছে।
“এটা কিন্তু এই কারণেই, যাতে এটার অপব্যবহার না হয়। যখনই পূর্বানুমোদন না নিয়ে এটা ব্যবহার করা হচ্ছে, সেখানেই এটাকে আটকে দেওয়া উচিৎ ছিল। এবং আদালতের উচিৎ ছিল একজন নাগরিকের স্বাধীনতাকে প্রাধান্য দেওয়া এবং সে লক্ষ্যে কাজ করা।”
কেন এই মামলা : গত ২০ মার্চ দশম শ্রেণির একটি অনির্ধারিত ক্লাসে গিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা করছিলেন হৃদয় ম-ল। সেখানে একজন ছাত্র বিজ্ঞানের সঙ্গে ধর্মের তুলনা করে কিছু প্রশ্ন করে। হৃদয় ম-ল সেগুলোর জবাব দেন। ওই আলোচনা ক্লাসেরই এক ছাত্র মোবাইলে রেকর্ড করে এবং তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই ক্লাসের দুদিন পর কিছু ছাত্র ও স্থানীয় লোকজন মিলে হৃদয় ম-লের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে থানায় নিয়ে যায়। স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে। ওই রাতেই স্কুলের অফিস সহকারী আসাদ বাদী হয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে মামলা করলে সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় শিক্ষক হৃদয় ম-লকে। ২৮ মার্চ মুন্সীগঞ্জের বিচারিক হাকিম আদালতে জামিন আবেদন করেন হৃদয়, তা নাকচ করা হয়। এরপর সোমবার জেলা ও দায়রা জজ আদালতও তার জামিন নাকচ করে।
গত রোববার আবার জামিন শুনানি হবে জানিয়ে হৃদয় ম-লের আইনজীবী অজয় চক্রবর্তী বলেন, সেদিন জামিন হবে বলে তারা আশা করছেন।
কী আছে মামলায়? মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, শিক্ষক হৃদয় ম-ল সেদিন ক্লাসে ‘মনগড়া মত প্রকাশ করে’ ইসলাম ও এর পবিত্র গ্রন্থের ‘অবমাননা’ করেছেন এবং ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ দিয়েছেন।

পুলিশ যে দুই ধারায় মামলা রেকর্ড করেছে, তার মধ্যে দ-বিধির ২৯৫ ধারায় বলা হয়েছে, “যদি কোনো ব্যক্তি, এরূপ অভিপ্রায়ে বা এরূপ অবগতি সহকারে জনগণের যে কোনো শ্রেণির উপাসনালয় বা উক্ত শ্রেণির ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক পবিত্র বলে বিবেচিত কোনো বস্তু ধ্বংস, অনিষ্ট বা অপবিত্র করে যে, তদ্বারা জনগণের যে কোনো শ্রেণির ধর্মের প্রতি অবমাননা বলে বিবেচনা করার সম্ভাবনা রয়েছে, সে ব্যক্তি কারাদ-ে দ-িত হবে, যার মেয়াদ দুই বৎসর পর্যন্ত হতে পারে, বা জরিমানা বা উভয় দ-ে দ-িত হবে।”
আর ২৯৫/ক ধারায় বলা হয়েছে, “যদি কোনো ব্যক্তি, বাংলাদেশের নাগরিকদের যে কোনো শ্রেণির ধর্মীয় অনুভূতিতে কঠোর আঘাত হানার অভিপ্রায়ে স্বেচ্ছাকৃত ও বিদ্বেষাত্মকভাবে কথিত বা লিখিত শব্দাবলীর সাহায্যে বা দৃশ্যমান কল্পমূর্তির সাহায্যে উক্ত শ্রেণির ধর্ম বা ধর্মীয় বিশ্বাসকে অবমাননা করে বা অবমাননা করার উদ্যোগ গ্রহণ করে, সে ব্যক্তি কারাদ-ে দ-িত হবে, যার মেয়াদ দুই বৎসর পর্যন্ত হতে পারে, বা জরিমানা বা উভয়বিধ দ-ে দ-িত হবে।”
এ দুই ধারার মধ্যে প্রথমটি জামিনযোগ্য হলেও দ্বিতীয়টি, অর্থাৎ ২৯৫(ক) ’জামিন অযোগ্য’ ধারা বলে জানিয়েছেন হৃদয় ম-লের আইনজীবী অজয় চক্রবর্তী। তবে ‘জামিন অযোগ্য’ বলা হলেই যে কাউকে জামিন দেওয়া যায় না- বিষয়টি এমন নয় জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, “হত্যা মামলার আসামিকেও তো জামিন দেওয়া হয়। এটা একান্তই ম্যাজিস্ট্রেটের স্বীয় ক্ষমতা।
“আবার বলা হচ্ছে, ওই শিক্ষককে জামিন দিলে তার নিরাপত্তার সঙ্কট তৈরি হবে, তাকে মেরেও ফেলতে পারে। এমন যদি হয়, তাহলে তো গুরুতর বিষয়। আইনশৃঙ্খলা যদি না থাকে, তাহলে তো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেও মামলা হওয়া উচিৎ।”
বাদী কেন অফিস সহকারী? স্কুলের অফিস সহকারী কেন ওই মামলার বাদী হলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। তিনি বলেন, “একজন ইলেকট্রিশিয়ান কীভাবে একটি স্কুলকে প্রতিনিধিত্ব করে। তিনি যদি ব্যক্তিগতভাবে বাদী হতেন, তাহলে অসুবিধা ছিল না। কিন্তু প্রধান শিক্ষক নিজে না করে কেন তাকে মামলা করতে পাঠানো হল?”
এক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকারও সমালোচনা করেছেন স্থানীয় সাংসদ মৃণাল কান্তি দাস। তার অভিযোগ পুলিশের ‘নিষ্ক্রিয়তায়’ ঘটনা এতদূর গড়িয়েছে।
“একজন শিক্ষক যদি কোনো অপকর্ম করেই থাকে, তাহলে স্কুলে কি হেড মাস্টার নাই? উনি বাদী হতেন। স্কুলের একটা ইলেকট্রিশিয়ান, যে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল না, সে কী করে এই মামলার বাদী হয়? পুলিশ কীভাবে মামলার এফআইআর লিখে দেয়? পুলিশ কীভাবে তাকে গ্রেপ্তার করল? ওই ইলেকিট্রিশিয়ান জানেও না ওই মামলার মধ্যে কী লেখা আছে। পুলিশ কী করে মামলা লিখে তার স্বাক্ষর নেয়? এর জবাব কে দেবে?“
ক্ষমতাসীন দলের এ সাংসদ বলছেন, স্থানীয় প্রশাসন বা পুলিশ যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তাতে তিনি ‘মর্মাহত, লজ্জিত, ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ’। “আমি তো সবটাই জানি, সে একটা ষড়যন্ত্রের শিকার। এর চাইতে বেশি কিছু আমি আর না বলি।”
এ বিষয়ে মামলার বাদী আসাদের বক্তব্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানতে পারেনি। তবে মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেছেন, এই ঘটনা যেন আর বাড়তে না পারে, সেজন্য ‘যথাসাধ্য চেষ্টা’ পুলিশ করেছে।
বিপজ্জনক নজির : যেখানে আইনের ‘অপব্যবহার’ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, সেখানে হৃদয় ম-লের জামিন না হওয়াকে ‘দুঃখজনক’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক প্রধান অধ্যাপক মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, “ব্লাসফেমি আইনটাই খুব একটা ইতিবাচক আইন নয় আর কী। এবং এমন আইন থাকলে সেই আইনের একটা অপব্যবহারের সুযোগ থাকে।
“যখন এ ধরনের কোনো আইনের প্রয়োগ করা হয় দেশে, প্রয়োগের চেষ্টা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, তখন কিন্তু আদালতও এগুলোর ব্যাপারে একটা ধীরগতি এবং খুব দেখেশুনে চলার একটা নীতি অবলম্বন করতে চায়।
“কারণ, এই রকম আইনের প্রয়োগের বা এখানে জামিন দিয়ে কেউ রাষ্ট্রের বিরাগভাজন হতে চায় না। তারা বুঝতে চায়, রাষ্ট্র কীভাবে দেখবে বিষয়টা।”
আইনের এই শিক্ষক বলেন, “আমরা এখনও মনে করি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে একটা শ্রেণিকক্ষে একজন শিক্ষক তার ছাত্র-ছাত্রীর সাথে কী আলোচনা করছেন, সেখানে তাদের মুক্তবুদ্ধির চর্চার জন্য নানা প্রসঙ্গ আসতে পারে এবং সেটার ব্যাখ্যা হতে পারে। এটাকে কখনোই কোনো রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা উচিৎ না।
“একজন শিক্ষক যদি অশুভ উদ্দেশ্য নিয়ে এই কাজগুলো না করেন, তাহলে তার অ্যাকাডেমিক স্বাধীনতার বিষয়টি সুরক্ষিত থাকাই ভালো। এখানে আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, সেই শিক্ষক কিন্তু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ ও বিজ্ঞানের দিক দিয়ে বিষয়গুলো বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন, সেখানে একটি অশুভ উদ্দেশ্য নিয়ে এগুলো ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।” একজন শিক্ষককে এভাবে আটক করা ‘সাংঘাতিক নিন্দনীয়’ মন্তব্য করে মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান বলেন, “যারা এই রকম, শিক্ষকের বিরুদ্ধে বলছেন, কেন বলছেন চিন্তাভাবনা না করে শুধুমাত্র আইনের দোহাই দিয়ে একজনকে হেনস্তা করবেন, এটা কখনোই হওয়া উচিৎ নয়। “এটা বন্ধ হওয়া উচিৎ। বন্ধ না হলে আমাদের পড়াশোনা বা মুক্তবুদ্ধির চর্চা হুমকির মুখে পড়বে। এভাবে যদি আইনের অপব্যবহার করা হয়, একজন শিক্ষক ছাত্রকে বোঝাবে কীভাবে?”
হৃদয় ম-লের মুক্তির দাবিতে রাজপথে নাট্যশিল্পীরা : ‘ধর্ম অবমাননার’ অভিযোগে কারাগারে আছেন মুন্সীগঞ্জের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র ম-ল। তার মুক্তি ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তি প্রতিরোধের দাবিতে গতকাল শনিবার প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ। বেলা ১১টায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে এটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে সংহতি প্রকাশ করে অভিনয় শিল্পী সংঘ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, আই টি আই বাংলাদেশ কেন্দ্র, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ, চারু শিল্পী সংসদসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন। বিষয়টি নিয়ে পথনাটক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহাম্মদ গিয়াস বলেন, ‘বিজ্ঞানের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র ম-লের মুক্তি ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তি প্রতিরোধের দাবিতে আমাদের এই সমাবেশ। এখানে প্রায় সকল সাংস্কৃতিক সংগঠন আমাদের সঙ্গে একত্মতা প্রকাশ করেছেন। সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারকে আহ্বান জানিয়েছি।’
আয়োজনে বক্তব্য রাখেন নাট্যজন মামুনুর রশীদ, ঝুনা চৌধুরী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, গণশিল্পী সমন্বয় পরিষদের মানজারুল চৌধুরী, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের রফিকুল ইসলাম। এতে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন অনিকেত রাজেশ। পথনাটক পরিষদের সভাপতি মিজানুর রহমানের সভাপতিতে সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আহাম্মদ গিয়াস।
হৃদয় ম-লের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের উসকানি দেয় বহিরাগতরা : মুন্সীগঞ্জের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র ম-লকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে আটক করা হয়েছে। গ্রেফতারের আগে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় বহিরাগতদের ইন্ধনে স্কুলে কয়েকজন শিক্ষার্থী হৃদয় ম-লকে অপমান করারও চেষ্টা করে। পরে তারা সংঘবদ্ধভাবে শিক্ষকের বাড়িতে হামলারও চেষ্টা চালায়।
ঘটনার দিন স্কুলে যা ঘটেছিল তার বর্ণনা দিয়েছেন স্থানীয় এক সাংবাদিক। তিনি বলেন, একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে আন্দোলন হচ্ছে এরকম খবর পেয়ে আমি সেই স্কুলে যাই। স্কুলের ভেতর শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্থানে জটলা করে দাঁড়িয়েছিল। স্কুলের ভেতর বহিরাগত মানুষও ছিল অনেক। আমি কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলাম। তারা জানায়, নবী ও ধর্ম নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেছে তাদের স্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষক। তারা আমাকে বলছিল, বিজ্ঞান আগে না ধর্ম আগে, বিজ্ঞান আর ধর্মের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে শিক্ষক ধর্ম অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন। তবে ১০ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বললেও একজনও স্পষ্ট করে বলতে পারেনি তাদের স্যার আসলে কী বলেছেন।
এ সময় বহিরাগতদের ইন্ধনে শিক্ষককে অপমান করার চেষ্টা হয় বলে জানান ওই সাংবাদিক। তিনি বলেন, স্কুলে অবস্থানকালে দেখতে পাই কিছু শিক্ষার্থী জুতার মালা বানিয়ে নিয়ে এসেছেন। যে বানিয়ে এনেছে তার স্কুল ইউনিফর্ম ছিল না। সেই-ই মূলত শিক্ষার্থীদের একত্রিত করেছে আন্দোলনের জন্য। ওই কিশোর জুতার মালা নিয়ে এসে স্কুলের অফিসের সামনে গিয়ে বলছিল, স্যারকে জুতার মালা পরে এলাকা ঘুরতে হবে। এরপর সেখানে পুলিশ আসে। পুলিশ সবাইকে মাঠের সামনে একত্রিত করে বোঝানোর চেষ্টা করে।
পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আন্তরিক চেষ্টা চালায় জানিয়ে ওই সাংবাদিক বলেন, পুলিশের এএসপি তখন বলেন, তোমরা শান্ত হও, এ ঘটনা আমরা দেখছি। তোমরা ক্লাসে ফিরে যাও। আমাদের ওপর ভরসা রাখতে পারো। আমি তখন ছাত্রদের ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়েছিলাম। দুই জন বহিরাগত ব্যক্তি এ সময় ছাত্রদের উসকে দিয়ে বলেছে, ‘তোরা পুলিশের কথা শুনবি না। জুতার মালা পরে ঘুরতেই হবে।’ এ পরিস্থিতিতে বহিরাগত দুই জনের নাম-পরিচয় নিশ্চিত হতে পারিনি। ছাত্ররাও পুলিশের কথা শুনছিল না। এমনকি তারা পুলিশের কাছেও তাদের শিক্ষককে জুতার মালা পরে ঘুরতে বলে। কিন্তু পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। পরে বহিরাগত অনেক মানুষ স্কুলের ভিতর আসার চেষ্টা করে। তখন স্কুলের গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। ছাত্ররাও আরেকটি গেট দিয়ে বাইরে চলে যায়। তারা অনেক উত্তেজিত ছিল। এ সময় স্কুলের পাশেই ছাত্ররা শিক্ষকের বাসার সামনে গিয়ে কিছু একটা করার চেষ্টা করছিল। কিন্তু পুলিশ তা হতে দেয়নি। পরে শিক্ষককে পুলিশের গাড়িতে করে থানায় নেওয়া হয়।
শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র ম-লের স্ত্রী ববিতা হালদার বলেন, ঘটনার দিন আমি হাসপাতালে ডিউটিতে ছিলাম। আমার ছেলে ফোন করে জানায়, অনেক মানুষ লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের বাড়ি ঘেরাও করেছে। তারা দরজা ধাক্কাচ্ছিল। ওরা তার বাবাকে গালিগালাজ করছিল। তারা স্লোগান দিচ্ছিল- ম-লের গালে জুতা মারো তালে তালে। পরে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়।
প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দিন আহম্মেদ ঘটনা দিনের বর্ণনা দিয়ে বলেন, এসএসসি মডেল টেস্ট পরীক্ষার পর কিছু শিক্ষার্থী আমার কাছে একটি আবেদন নিয়ে আসে। তারা অভিযোগ করেন, শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র ম-ল আমাদের মহানবী মোহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তি করেছে। ছাত্ররা তার শাস্তি চায়। তখন আমি তাদের বলি, শিক্ষক যদি এ রকম কিছু বলে থাকে তাহলে শাস্তি হবে। শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করে ফেরত পাঠিয়ে দেই। কিন্তু, কিছুক্ষণ পর তারা স্কুলের মাঠে বিক্ষোভ শুরু করে, সেখানে স্থানীয়রাও ছিল। পরে মাইকিং করে বহিরাগতদের স্কুল মাঠ ত্যাগ করতে বলা হয়। তবে তা না হওয়ায় পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে ভেবে পুলিশকে খবর দেই।
এদিকে মামলার বাদী স্কুলের ইলেকট্রিশিয়ান মো. আসাদ বলেন, ঘটনার দিন আমি স্কুলেই ছিলাম। শিক্ষক ক্লাসে কি বলেছেন, তা আমি শুনিনি। শিক্ষার্থীরা যখন বিক্ষোভ করছিল, তখন তাদের কাছ থেকে শুনেছি শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র ম-ল ধর্ম অবমাননা করে ক্লাসে কথা বলেছেন। শিক্ষার্থীরা নাকি সেটা রেকর্ডও করেছে। কিন্তু, সেটাও আমি শুনিনি। তবে, প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে আমাকে মামলার বাদী বানানো হয়েছে। ঘটনা নিয়ে প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষক, অভিভাবক ও পুলিশরা নিজেদের মধ্যে অনেক কথাবার্তা বলেছেন। তবে সেসব আমি কিছুই জানি না। আমি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। মামলা বা আইনের কোনও ধারা বুঝি না। এমনকি ঠিকমতো রিডিংও পড়তে পারি না। এজাহার লিখে আমার সামনে পাঠ করে শোনানো হয়েছে। তারপরে আমি স্বাক্ষর করেছি।
উপজেলা চেয়ারম্যান আনিসউজ্জামান আনিস বলেন, ঘটনার দিন আমিসহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পুলিশ ও অন্যরা সেখানে উপস্থিত ছিলাম। আমরা শিক্ষার্থীদের বলি যে শিক্ষকের বিরুদ্ধে তোমাদের অভিযোগ তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিচার করা হবে। তোমরা শান্ত হও। শিক্ষার্থীরা প্রথমে সেটা মেনে নিয়েছিল। পরে বহিরাগতদের সঙ্গে নিয়ে শিক্ষকের বাসায় হামলা করার চেষ্টা করে। আমার ধারণা বহিরাগতরা বিষয়টিতে ইন্ধন দিয়েছে। তিনি জানান, স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আলমগীর বহিরাগত কারা ছিল ও কারা শিক্ষকের বিরুদ্ধে আন্দোলনে উসকানি দিয়েছে সে বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন। তবে, স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মহিউদ্দিন খান আলমগীরকে একাধিকবার কল দিলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।