ঢাকা ০৪:০৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫

মুছে যাবে অমলের নামটা

  • আপডেট সময় : ০৯:৪৭:২১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ এপ্রিল ২০২২
  • ১৯১ বার পড়া হয়েছে

ফারজানা কাশেমী : অমল কান্তি রোদ্দুর হতে চেয়েছিল। অমল কান্তি দূরারোগ্য ক্যান্সারে হেরে গিয়েছিল। জীবন অমল কান্তিকে ক্ষমা করেনি। কতবার অমল কান্তি মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত অমল কান্তি মৃত্যুর কাছে আতœসমর্পণ করেছিল। অমল কান্তি এক দুরুন্ত স্বপ্নের নাম। আবার কারো স্বপ্নের সারথি। অমল কান্তি হার না এক অপরাজেয় যোদ্ধা। অমল কান্তি মিছিলে যেত, অধিকারের কথা বলতো। গুলি বা বারুদের ভয়ে অমল কান্তি কুঁকড়ে যায়নি।
অমল কান্তি মানুষের ব্যাধি নিরাময়ের জন্য নিজেই সচেষ্ট ছিল। অমল কান্তি চিকিৎসা শাস্ত্রের সবচেয়ে জটিল বিষয়ে নিজের পারদর্শিতা জাহির করেছিল।
আহারে অমল কান্তি। একটা হোঁচটে অমল কান্তির জীবনের রঙিন দিনগুলো হারিয়ে ফেলেছিল। যেই অমল কান্তি কতশত মানুষের রোগের চিকিৎসা করতো, সেই অমল কান্তির রোগ নিরাময়ে সবাই ব্যর্থ হয়েছিল। যেই অমল কান্তির কতশত সার্জারি সফল হতো, সেই অমল কান্তির সার্জারি সফল হয়নি। তবুও অমল কান্তি বাস্তবতার নামান্তর অস্তিত্বের বেড়াজালে শুধু বাঁচতে চেয়েছিল। আমাদের অমল কান্তি টিকে থাকতে চেয়েছিল। অমল কান্তি হার না মানা যোদ্ধা হতে চেয়েছিল। বিধিবাম অমল কান্তি হেরে গিয়েছিল। অমল কান্তির হাজারো কষ্ট উপেক্ষিত হয়েছে বেঁচে থাকার ন্যূনতম আয়োজন আর অনুভূতি প্রকাশে।
অজস্র প্রতিবন্ধকতা, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ও অমল কান্তি ভালবেসেছিল। অমল কান্তি জিতে যাবার প্রত্যয়ে স্বপ্ন বুনেছিল। অমল কান্তি ঘর বাঁধার প্রস্তুতি নিয়েছিল। ঝড়, বৃষ্টিতেও তার কাছের মানুষকে আগলে রাখতে সচেষ্ট ছিল। অমল কান্তি নিঃস্বার্থভাবে ভালবেসে ছিল। অমল কান্তি তার কাছের মানুষকে অধিকার, পরম যতœ, কর্তব্য আর ভালবাসায় পরিপূর্ণ করতে চেয়েছিল। আমাদের অমল কান্তি ছবি আঁকতো। তবুও বাস্তবতায় অমল কান্তির জীবন তুলির আঁচড়ের মতো মনোমুগ্ধকর হয়নি। অমল কান্তি কবিতা লিখতো। নবারুণ নিয়ে অমল কান্তির কলম চলতো। প্রতিভাবান অমল কান্তি নিজের প্রতিভায় তার কঠোর পথ রুখতে পারেনি। অমল কান্তি হেরে গিয়েছে। অমল কান্তি তার কাছের মানুষের মান ভাঙানোর কত-শত চেষ্টা করতো। কবিতা লিখতো। অমল কান্তি তার কাছের মানুষের কাছে চিঠি লিখতো। অমল কান্তি আর তার কাছের মানুষ গল্পে বিভোর হতো। প্রায়শই অমল কান্তির কাছের মানুষ সকাল বেলা অমল কান্তির চিঠি পেতো। অমল কান্তি সেই মানুষ যে তার কাছের মানুষকে তার প্রায়শই প্রতিটি পদক্ষেপ জানাতো। কোন একদিন প্রচ- বুক ফাটা কষ্টে অমল কান্তির নিঃশ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছিল চিরতরে। চিরকালের জন্য অমল কান্তি নিস্তব্ধ হয়। সেই নিস্তব্ধতার সময় একটি বারও তার কাছের মানুষ কাছ থেকে বিদায় নেয়নি। হয়তো প্রিয়জনের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সাধ্য কোন মানুষের থাকে না। অমল কান্তির কাছের মানুষ আজও অমল কান্তির চিঠির অপেক্ষা করে। আহারে সময়! এই অপেক্ষার অবসান কবে অমল কান্তির কাছের মানুষ জানে না।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মেঘনার মুক্তি চেয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে ২৭ বিশিষ্ট নারীর স্মারকলিপি

মুছে যাবে অমলের নামটা

আপডেট সময় : ০৯:৪৭:২১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ এপ্রিল ২০২২

ফারজানা কাশেমী : অমল কান্তি রোদ্দুর হতে চেয়েছিল। অমল কান্তি দূরারোগ্য ক্যান্সারে হেরে গিয়েছিল। জীবন অমল কান্তিকে ক্ষমা করেনি। কতবার অমল কান্তি মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত অমল কান্তি মৃত্যুর কাছে আতœসমর্পণ করেছিল। অমল কান্তি এক দুরুন্ত স্বপ্নের নাম। আবার কারো স্বপ্নের সারথি। অমল কান্তি হার না এক অপরাজেয় যোদ্ধা। অমল কান্তি মিছিলে যেত, অধিকারের কথা বলতো। গুলি বা বারুদের ভয়ে অমল কান্তি কুঁকড়ে যায়নি।
অমল কান্তি মানুষের ব্যাধি নিরাময়ের জন্য নিজেই সচেষ্ট ছিল। অমল কান্তি চিকিৎসা শাস্ত্রের সবচেয়ে জটিল বিষয়ে নিজের পারদর্শিতা জাহির করেছিল।
আহারে অমল কান্তি। একটা হোঁচটে অমল কান্তির জীবনের রঙিন দিনগুলো হারিয়ে ফেলেছিল। যেই অমল কান্তি কতশত মানুষের রোগের চিকিৎসা করতো, সেই অমল কান্তির রোগ নিরাময়ে সবাই ব্যর্থ হয়েছিল। যেই অমল কান্তির কতশত সার্জারি সফল হতো, সেই অমল কান্তির সার্জারি সফল হয়নি। তবুও অমল কান্তি বাস্তবতার নামান্তর অস্তিত্বের বেড়াজালে শুধু বাঁচতে চেয়েছিল। আমাদের অমল কান্তি টিকে থাকতে চেয়েছিল। অমল কান্তি হার না মানা যোদ্ধা হতে চেয়েছিল। বিধিবাম অমল কান্তি হেরে গিয়েছিল। অমল কান্তির হাজারো কষ্ট উপেক্ষিত হয়েছে বেঁচে থাকার ন্যূনতম আয়োজন আর অনুভূতি প্রকাশে।
অজস্র প্রতিবন্ধকতা, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ও অমল কান্তি ভালবেসেছিল। অমল কান্তি জিতে যাবার প্রত্যয়ে স্বপ্ন বুনেছিল। অমল কান্তি ঘর বাঁধার প্রস্তুতি নিয়েছিল। ঝড়, বৃষ্টিতেও তার কাছের মানুষকে আগলে রাখতে সচেষ্ট ছিল। অমল কান্তি নিঃস্বার্থভাবে ভালবেসে ছিল। অমল কান্তি তার কাছের মানুষকে অধিকার, পরম যতœ, কর্তব্য আর ভালবাসায় পরিপূর্ণ করতে চেয়েছিল। আমাদের অমল কান্তি ছবি আঁকতো। তবুও বাস্তবতায় অমল কান্তির জীবন তুলির আঁচড়ের মতো মনোমুগ্ধকর হয়নি। অমল কান্তি কবিতা লিখতো। নবারুণ নিয়ে অমল কান্তির কলম চলতো। প্রতিভাবান অমল কান্তি নিজের প্রতিভায় তার কঠোর পথ রুখতে পারেনি। অমল কান্তি হেরে গিয়েছে। অমল কান্তি তার কাছের মানুষের মান ভাঙানোর কত-শত চেষ্টা করতো। কবিতা লিখতো। অমল কান্তি তার কাছের মানুষের কাছে চিঠি লিখতো। অমল কান্তি আর তার কাছের মানুষ গল্পে বিভোর হতো। প্রায়শই অমল কান্তির কাছের মানুষ সকাল বেলা অমল কান্তির চিঠি পেতো। অমল কান্তি সেই মানুষ যে তার কাছের মানুষকে তার প্রায়শই প্রতিটি পদক্ষেপ জানাতো। কোন একদিন প্রচ- বুক ফাটা কষ্টে অমল কান্তির নিঃশ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছিল চিরতরে। চিরকালের জন্য অমল কান্তি নিস্তব্ধ হয়। সেই নিস্তব্ধতার সময় একটি বারও তার কাছের মানুষ কাছ থেকে বিদায় নেয়নি। হয়তো প্রিয়জনের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সাধ্য কোন মানুষের থাকে না। অমল কান্তির কাছের মানুষ আজও অমল কান্তির চিঠির অপেক্ষা করে। আহারে সময়! এই অপেক্ষার অবসান কবে অমল কান্তির কাছের মানুষ জানে না।