নারী ও শিশু প্রতিবেদন :বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আইএসডিই বাংলাদেশের উদ্যোগে রাইজ এসআরএইচআর সম্পর্কে জানার মাধ্যমে সহনশীলতা বাড়ানো ও ক্ষমতায়ন-১ (মডিউল) ও মডিউল-২ এর সমন্বয়ে ৬ দিনব্যাপী একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কর্মশালায় বক্তারা বলেন, পত্রিকার পাতা বা টিভির পর্দা খুললেই প্রতিনিয়ত জোরপূর্বক ধর্ষণ বা খুনের সংবাদ ভেসে উঠছে। কিছু বিকারগ্রস্থ মানুষের যৌন হিংসার বলি হয়ে অনেকে অকালে ঝরে পড়তে বাধ্য হচ্ছেন। প্রতিটি নারী-পুরুষের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার মানুষের মৌলিক মানবাধিকারে অবিচ্ছেদ্য অংশ। এ অধিকার সুরক্ষায় রাষ্ট্র ও সমাজ সমানভাবে এগিয়ে না আসলে নারীর প্রতি সব প্রকার বৈষম্য, সহিংষতা ও অপরাধ বন্ধ হবে না।
বক্তারা আরও বলেন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও মানুষের আচরণগত অভ্যাসে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু তার সঙ্গে সাধারণ মানুষ পরিচিত না হলে পরিবর্তিত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা কঠিন হবে। আইএসডিই বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এস এম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন সরকারি মহসিন কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক পরিবেশবিদ ও মুক্তিযোদ্ধা ড. ইদ্রিস আলী, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও ক্যাব চট্টগ্রামের সহ-সভাপতি এম নাসিরুল হক, চিকিৎসক লুসি খান ও রেড অরেঞ্জ কমিউনিকেশনের প্রকল্প সমন্বয়কারী আবু উমায়ের। আইএসডিইর মাস্টার ট্রেইনার জহুরুল ইসলামের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন আইএসডিই কর্মসূচি সমন্বয়কারী মো. জাহাঙ্গীর আলম, মানব সম্পদ সমন্বয়কারী শম্পা কে নাহার, রোহিঙ্গা রেসপন্স কর্মসূচির ব্যবস্থাপক জসিম উদ্দীন, প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা নিপা দাস, আসিফ নুর হাসনাত, উম্মে রুমানা আক্তার, এ আর অন্তরা রাজু প্রমূখ। অধ্যাপক ড. ইদ্রিস আলী বলেন, বর্তমান সরকারের নানামুখী কার্যক্রমে নারীদের সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়গুলোতে অংশ নেওয়া ব্যাপকভাবে বেড়েছে। কিন্তু যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার সুরক্ষায় সরকারি-বেসরকারি কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় নারী-শিশুরা প্রতিনিয়তই সহিংষতার শিকার হচ্ছে।
সাংবাদিক এম নাসিরুল হক বলেন, যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার সুরক্ষায় তৃণমূলে সাধারণ মানুষের বিবেককে জাগ্রত করা, নির্যাতনের শিকার ও নারীরা যেন যথাযথ আইনি প্রতিকার পান, সে বিষয়ে সমাজের সব স্তরের প্রতিবাদী মানুষগুলোকে সংগঠিত করা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া দরকার। গণমাধ্যমগুলোতেও নারীর প্রতি সহিংসতার প্রকৃত তথ্য তুলে ধরা দরকার।
আইএসডিই বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এস এম নাজের হোসাইন বলেন, প্রতিটি মানুষের যৌন এবং প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার ও সুরক্ষা পাবার কথা থাকলেও মানুষের অজ্ঞতার কারণে অধিকার ভূলণ্ঠিত হচ্ছে। অনেকের ধারণা নারীর প্রধান কাজ সন্তানপ্রসব ও প্রতিপালন করা। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছার কারণে কেউ নারী আবার কেউ পুরুষ হয়ে জন্ম নেন।
তিনি বলেন, পৃথিবীর অনেক কিছুই এখন পরিবর্তিত হয়ে গেছে। নারী আর পুরুষের বৈষম্য এখন আর সেভাবে নেই। নারীকে শুধু যৌন দাসী হিসেবে বিবেচনা করার চিন্তা মাথা থেকে বাদ দিয়ে মানুষ হিসেবে চিন্তা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান হিসেবে আইএসডিই প্রতিষ্ঠার পর থেকে নারী ও শিশুর অধিকার সুরক্ষায় নানামুখী কর্মসূচি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। আইএসডিই নারীর জন্য মর্যদাপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। এজন্য সমাজে পরিবর্তনকামী মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন নাগরিকদের সংগঠিত করে সমাজ পরিবর্তনে অঙ্গীকারবদ্ধ প্রতিষ্ঠানটি।
নেদারল্যান্ডসের দাতাসংস্থা সিমাভির আর্থিক সহায়তায় রয়েল ট্রপিক্যাল ইনস্টিটিউট কেআইটির উদ্যোগে রেড অরেঞ্জ, এফপিএবি ও আইএসডিই বাংলাদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন ‘এসআরএইচআর সম্পর্কে জানার মাধ্যমে সহনশীলতা বাড়ানো ও ক্ষমতায়ন-রাইজ’ প্রকল্পের আওতায় আইএসডিইর মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য ৬ দিনব্যাপী এ প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন করা হয়েছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এ বিষয়ে তথ্যগুলো মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষদের জানাবেন। কর্মশালায় আইএসডিই বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার ২৫ জন কর্মকর্তা অংশ নেন। –
নারীর প্রতি যৌন ও পারিবারিক সহিংসতা বাড়ছেই
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ