ঢাকা ০৯:৫৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

অনাথ থেকে শতকোটিপতি অলিগার্ক

  • আপডেট সময় : ০১:২২:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ মার্চ ২০২২
  • ১১২ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : তিন বছর বয়সে অনাথ হওয়া রোমান আব্রামোভিচ এক সময় হয়ে ওঠেন বিশ্বের অন্যমত শীর্ষ ধনী; এখন তাকে দেখতে হচ্ছে জীবনের আরেক দিক; রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে তাকে হারাতে হচ্ছে ব্যবসা আর মর্যাদা।
২০০৩ সালে যুক্তরাজ্যের চেলসি ফুটবল ক্লাবটি কিনে নেওয়ার পর এই রুশ ধনকুবের বলেছিলেন, “আমার প্রতি মানুষের কৌতুহল তিন-চার দিন থাকবে, তারপর সেটা কেটে যাবে, আমি নিশ্চিত। তারা ভুলে যাবে আমি কে, আর সেটাই আমি চাই।”
এখন অবশ্য পরিস্থিতি সেরকম নেই। বিশেষ করে গত কয়েক সপ্তাহের ঘটনাবলী তাকে আড়ালে থাকতে দিচ্ছে না।
বিবিসি এক প্রতিবেদনে লিখেছে, যুক্তরাজ্যে রোমান আব্রামোভিচের ব্যবসা আর লেনদেনের তথ্য আরও ভালোভাবে নিরীক্ষা করার দাবি তোলা হচ্ছিল বহু বছর ধরে। তবে ব্রিটিশ সরকার তাতে গা করেনি।
কিন্তু ইউক্রেইনে রাশিয়া যুদ্ধ বাধিয়ে দেওয়ার পর যুক্তরাজ্যও আর আব্রামোভিচকে ছাড় দিতে পারছে না। সেদেশে তার সম্পদ অবরুদ্ধ করেছে ব্রিটিশ সরকার, এর মধ্যে তার মালিকানাধীন বাড়ি, শিল্পকর্ম এবং চেলসি ফুটবল ক্লাবও রয়েছে। তার ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়েছে।
ইউক্রেইনে রুশ সেনা অভিযানে প্রেসিডেন্ট পুতিনকে সমর্থন যোগানোর অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।
তার মত মানুষের জন্য এটা বড় ধরনের পতন, বিশেষ করে যিনি কিছুদিন আগেও ব্রিটিশ ফুটবলের একজন প্রভাবশালী চরিত্র ছিলেন।
বিবিসি লিখেছে, আব্রামোভিচের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ সরকারের এই ব্যবস্থা নিয়ে ক্রীড়ামোদীরা দ্বিধা বিভক্ত। তাদের একটি অংশ অবশ্য ওই নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থনই দিয়েছে। তবে আব্রামোভিচ এর আগেও বিপদের মোকাবেলা করেছেন, বিশেষ করে তরুণ বয়সে।
অনাথ থেকে ধনকুবের
আজকের ইউক্রেইন সীমান্ত থেকে কয়েকশ মাইল দূরে, রাশিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমের সারাতোভে ১৯৬৬ সালে রোমান আরকাদিয়েভিচ আব্রামোভিচের জন্ম।
তরুণ রোমান আব্রামোভিচ। ছবি: ইস্টটুওয়েস্ট নিউজ/বিবিসিতরুণ রোমান আব্রামোভিচ। ছবি: ইস্টটুওয়েস্ট নিউজ/বিবিসিতার বয়স যখন এক বছর, রক্তের বিষক্রিয়ায় তার মায়ের মৃত্যু হয়। দুই বছর পর একটি ক্রেইন দুর্ঘটনায় মারা যান বাবা।
এরপর আব্রামোভিচের বেড়ে ওঠা শুরু হয় আত্মীয়-স্বজনদের কাছে, রাশিয়ার উত্তর-পশ্চিমে কোমিতে। সেসব দিনে টাকা-পয়সার টানাটানি আর শীতকালের ঠা-া, দুটোই ছিল প্রবল।
গার্ডিয়ানকে দেওয়া বিরল এক সাক্ষাৎকারে আব্রামোভিচ একবার বলেছিলেন, “সত্যি কথা বলতে কি, আমার শৈশবটা খুব খারাপ কেটেছে তা বলা যায় না। শৈশবের বিষয়গুলোকে তুলনা করা যায় না আসলে। কেউ গাজর খায়, কেউ খায় ক্যান্ডি- দুটোর স্বাদই ভালো। শিশু অবস্থায় আপনি পার্থক্য করতে পারেন না।”
আব্রামোভিচ স্কুলের চৌহদ্দি ছাড়েন ষোলতে, তারপর মেকানিক হিসেবে কাজ করেন। মস্কোতে প্লাস্টিকের খেলনা বিক্রি শুরুর আগে রেড আর্মিতেও ছিলেন।
পরে তিনি ব্যবসা বদলে সুগন্ধীর ব্যবসায় নামেন। সমটাও অনুকূল ছিল। সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভের অধীনে সোভিয়েত ইউনিয়ন তখন পশ্চিমা বিশ্বের সামনে দুয়ার খুলতে শুরু করেছে। আব্রামোভিচের মত উদ্যোক্তাদের জন্য তখন দারুণ সুযোগ।
‘বুনো পূব’
সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙন এবং খনিজ সম্পদের ওপর রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ উটে যাওয়ার পর আব্রামোভিচের কপাল খুলে যায়, যৌবনেই আব্রামোভিচের হাতে ধরা দেয় সৌভাগ্য।
বিবিসি লিখেছে, ১৯৯৫ সালে একটি নিলামে কারচুপির মাধ্যমে ২৫ কোটি ডলারে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেল কোম্পানি সিবনেফট কিনে নেন আব্রামোভিচ। ২০০৫ সালে সেটাই তিনি আবার সরকারের কাছে বিক্রি করেন এক হাজার ৩০০ কোটি ডলারে।
রোমান আব্রামোভিচের মালিকানায় বিপুল সাফল্য পেয়েছে চেলসি। ছবি: রয়টার্সরোমান আব্রামোভিচের মালিকানায় বিপুল সাফল্য পেয়েছে চেলসি। ছবি: রয়টার্সতার আইনজীবীদের দাবি, আব্রামোভিচ দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন – এমন অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।
যদিও ২০১২ সালে যুক্তরাজ্যের একটি আদালতে তিনি স্বীকার করেছিলেন, সিবনেফট সংক্রান্ত চুক্তি এগিয়ে নিতে তিনি অবৈধ লেনদেন করেছিলেন।
১৯৯০ এর দশকে ‘অ্যালুমিনিয়াম যুদ্ধে’ জড়িয়ে পড়েন আব্রামোভিচ, যেখানে অলিগার্করা- সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর যারা রাতারাতি বিপুল সম্পদ ও রাজনৈতিক ক্ষমতা হস্তগত করেছিলেন, ওই বিশাল শিল্পখাতের নিয়ন্ত্রণ পেতে তারা লড়াইয়ে লিপ্ত হন।
২০১১ সালে আব্রামোভিচ বলেছিলেন, ওই সময় প্রতি তিন দিনে অন্তত একজনকে খুন হত। নিজের নিরাপত্তা নিয়ে ওই সময় তাকে যে হুমকি মোকাবেলা করতে হয়েছে, সেটাই তাকে একজন একগুঁয়ে মানুষে পরিণত করে।
তবে আব্রামোভিচ যে একজন কঠিন লোক, বিশৃঙ্খলার মধ্যেই কয়েকশ কোটি পাউন্ডের মালিক বনে যাওয়া তার একটি প্রমাণ।
রাজনীতিতে প্রবেশ
প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিনের একজন মিত্র হয়ে ওঠার মধ্য দিয়ে সোভিয়েত-পরবর্তী মস্কোর পরিম-লে একজন রাজনৈতিক খেলোয়াড়ে পরিণত হন আব্রামোভিচ। এমনকি ক্রেমলিনে একটি অ্যাপার্টমেন্টও বরাদ্দ পেয়েছিলেন কিছুদিনের জন্য।
ধারণা করা হয়, ১৯৯৯ সালে ইয়েলৎসিন পদত্যাগ করলে, তার উত্তরসূরী হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণকারী প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক কেজিবি স্পাই ভ্লাদিমির পুতিনকে যারা সমর্থন দিয়েছিলেন, তাদের একজন ছিলেন আব্রামোভিচ।
ধারণা করা হয়, পুতিন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সময় তাকে সমর্থন দিয়েছিলেন আব্রামোভিচ। ছবি: রয়টার্সধারণা করা হয়, পুতিন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সময় তাকে সমর্থন দিয়েছিলেন আব্রামোভিচ। ছবি: রয়টার্সপুতিন নিজেকে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠা করার প্রক্রিয়ায় অলিগার্কদের ওপর নিজের কর্তৃত্ব পেতে চেয়েছিলেন। সে সময় তার প্রতি যারা আনুগত্য দেখাননি, তাদের কয়েকজনকে কারাগারে পাঠানো হয়, অনেকে নির্বাসিত হন।
আব্রামোভিচকে কোনোটাই করতে হয়নি। ২০০০ সালে তিনি রাশিয়ার উত্তর-পূর্বে সুবিধাবঞ্চিত এলাকা চুকোৎকার গভর্নরের দায়িত্ব পান। সমাজসেবায় নিজের অর্থ বিনিয়োগ করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তবে ২০০৮ সালে তিনি গভর্নরের পদ থেকে সরে দাঁড়ান।
এই পুরো সময়ে তিনি নিজের ব্যবসায়িক স্বার্থ ঠিকই রক্ষা করে গেছেন। সম্পদের পাহাড়ে বসে শিল্পকর্ম, বাড়ি, গাড়ি কিনে গেছেন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

অনাথ থেকে শতকোটিপতি অলিগার্ক

আপডেট সময় : ০১:২২:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ মার্চ ২০২২

প্রত্যাশা ডেস্ক : তিন বছর বয়সে অনাথ হওয়া রোমান আব্রামোভিচ এক সময় হয়ে ওঠেন বিশ্বের অন্যমত শীর্ষ ধনী; এখন তাকে দেখতে হচ্ছে জীবনের আরেক দিক; রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে তাকে হারাতে হচ্ছে ব্যবসা আর মর্যাদা।
২০০৩ সালে যুক্তরাজ্যের চেলসি ফুটবল ক্লাবটি কিনে নেওয়ার পর এই রুশ ধনকুবের বলেছিলেন, “আমার প্রতি মানুষের কৌতুহল তিন-চার দিন থাকবে, তারপর সেটা কেটে যাবে, আমি নিশ্চিত। তারা ভুলে যাবে আমি কে, আর সেটাই আমি চাই।”
এখন অবশ্য পরিস্থিতি সেরকম নেই। বিশেষ করে গত কয়েক সপ্তাহের ঘটনাবলী তাকে আড়ালে থাকতে দিচ্ছে না।
বিবিসি এক প্রতিবেদনে লিখেছে, যুক্তরাজ্যে রোমান আব্রামোভিচের ব্যবসা আর লেনদেনের তথ্য আরও ভালোভাবে নিরীক্ষা করার দাবি তোলা হচ্ছিল বহু বছর ধরে। তবে ব্রিটিশ সরকার তাতে গা করেনি।
কিন্তু ইউক্রেইনে রাশিয়া যুদ্ধ বাধিয়ে দেওয়ার পর যুক্তরাজ্যও আর আব্রামোভিচকে ছাড় দিতে পারছে না। সেদেশে তার সম্পদ অবরুদ্ধ করেছে ব্রিটিশ সরকার, এর মধ্যে তার মালিকানাধীন বাড়ি, শিল্পকর্ম এবং চেলসি ফুটবল ক্লাবও রয়েছে। তার ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়েছে।
ইউক্রেইনে রুশ সেনা অভিযানে প্রেসিডেন্ট পুতিনকে সমর্থন যোগানোর অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।
তার মত মানুষের জন্য এটা বড় ধরনের পতন, বিশেষ করে যিনি কিছুদিন আগেও ব্রিটিশ ফুটবলের একজন প্রভাবশালী চরিত্র ছিলেন।
বিবিসি লিখেছে, আব্রামোভিচের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ সরকারের এই ব্যবস্থা নিয়ে ক্রীড়ামোদীরা দ্বিধা বিভক্ত। তাদের একটি অংশ অবশ্য ওই নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থনই দিয়েছে। তবে আব্রামোভিচ এর আগেও বিপদের মোকাবেলা করেছেন, বিশেষ করে তরুণ বয়সে।
অনাথ থেকে ধনকুবের
আজকের ইউক্রেইন সীমান্ত থেকে কয়েকশ মাইল দূরে, রাশিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমের সারাতোভে ১৯৬৬ সালে রোমান আরকাদিয়েভিচ আব্রামোভিচের জন্ম।
তরুণ রোমান আব্রামোভিচ। ছবি: ইস্টটুওয়েস্ট নিউজ/বিবিসিতরুণ রোমান আব্রামোভিচ। ছবি: ইস্টটুওয়েস্ট নিউজ/বিবিসিতার বয়স যখন এক বছর, রক্তের বিষক্রিয়ায় তার মায়ের মৃত্যু হয়। দুই বছর পর একটি ক্রেইন দুর্ঘটনায় মারা যান বাবা।
এরপর আব্রামোভিচের বেড়ে ওঠা শুরু হয় আত্মীয়-স্বজনদের কাছে, রাশিয়ার উত্তর-পশ্চিমে কোমিতে। সেসব দিনে টাকা-পয়সার টানাটানি আর শীতকালের ঠা-া, দুটোই ছিল প্রবল।
গার্ডিয়ানকে দেওয়া বিরল এক সাক্ষাৎকারে আব্রামোভিচ একবার বলেছিলেন, “সত্যি কথা বলতে কি, আমার শৈশবটা খুব খারাপ কেটেছে তা বলা যায় না। শৈশবের বিষয়গুলোকে তুলনা করা যায় না আসলে। কেউ গাজর খায়, কেউ খায় ক্যান্ডি- দুটোর স্বাদই ভালো। শিশু অবস্থায় আপনি পার্থক্য করতে পারেন না।”
আব্রামোভিচ স্কুলের চৌহদ্দি ছাড়েন ষোলতে, তারপর মেকানিক হিসেবে কাজ করেন। মস্কোতে প্লাস্টিকের খেলনা বিক্রি শুরুর আগে রেড আর্মিতেও ছিলেন।
পরে তিনি ব্যবসা বদলে সুগন্ধীর ব্যবসায় নামেন। সমটাও অনুকূল ছিল। সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভের অধীনে সোভিয়েত ইউনিয়ন তখন পশ্চিমা বিশ্বের সামনে দুয়ার খুলতে শুরু করেছে। আব্রামোভিচের মত উদ্যোক্তাদের জন্য তখন দারুণ সুযোগ।
‘বুনো পূব’
সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙন এবং খনিজ সম্পদের ওপর রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ উটে যাওয়ার পর আব্রামোভিচের কপাল খুলে যায়, যৌবনেই আব্রামোভিচের হাতে ধরা দেয় সৌভাগ্য।
বিবিসি লিখেছে, ১৯৯৫ সালে একটি নিলামে কারচুপির মাধ্যমে ২৫ কোটি ডলারে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেল কোম্পানি সিবনেফট কিনে নেন আব্রামোভিচ। ২০০৫ সালে সেটাই তিনি আবার সরকারের কাছে বিক্রি করেন এক হাজার ৩০০ কোটি ডলারে।
রোমান আব্রামোভিচের মালিকানায় বিপুল সাফল্য পেয়েছে চেলসি। ছবি: রয়টার্সরোমান আব্রামোভিচের মালিকানায় বিপুল সাফল্য পেয়েছে চেলসি। ছবি: রয়টার্সতার আইনজীবীদের দাবি, আব্রামোভিচ দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন – এমন অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।
যদিও ২০১২ সালে যুক্তরাজ্যের একটি আদালতে তিনি স্বীকার করেছিলেন, সিবনেফট সংক্রান্ত চুক্তি এগিয়ে নিতে তিনি অবৈধ লেনদেন করেছিলেন।
১৯৯০ এর দশকে ‘অ্যালুমিনিয়াম যুদ্ধে’ জড়িয়ে পড়েন আব্রামোভিচ, যেখানে অলিগার্করা- সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর যারা রাতারাতি বিপুল সম্পদ ও রাজনৈতিক ক্ষমতা হস্তগত করেছিলেন, ওই বিশাল শিল্পখাতের নিয়ন্ত্রণ পেতে তারা লড়াইয়ে লিপ্ত হন।
২০১১ সালে আব্রামোভিচ বলেছিলেন, ওই সময় প্রতি তিন দিনে অন্তত একজনকে খুন হত। নিজের নিরাপত্তা নিয়ে ওই সময় তাকে যে হুমকি মোকাবেলা করতে হয়েছে, সেটাই তাকে একজন একগুঁয়ে মানুষে পরিণত করে।
তবে আব্রামোভিচ যে একজন কঠিন লোক, বিশৃঙ্খলার মধ্যেই কয়েকশ কোটি পাউন্ডের মালিক বনে যাওয়া তার একটি প্রমাণ।
রাজনীতিতে প্রবেশ
প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিনের একজন মিত্র হয়ে ওঠার মধ্য দিয়ে সোভিয়েত-পরবর্তী মস্কোর পরিম-লে একজন রাজনৈতিক খেলোয়াড়ে পরিণত হন আব্রামোভিচ। এমনকি ক্রেমলিনে একটি অ্যাপার্টমেন্টও বরাদ্দ পেয়েছিলেন কিছুদিনের জন্য।
ধারণা করা হয়, ১৯৯৯ সালে ইয়েলৎসিন পদত্যাগ করলে, তার উত্তরসূরী হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণকারী প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক কেজিবি স্পাই ভ্লাদিমির পুতিনকে যারা সমর্থন দিয়েছিলেন, তাদের একজন ছিলেন আব্রামোভিচ।
ধারণা করা হয়, পুতিন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সময় তাকে সমর্থন দিয়েছিলেন আব্রামোভিচ। ছবি: রয়টার্সধারণা করা হয়, পুতিন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সময় তাকে সমর্থন দিয়েছিলেন আব্রামোভিচ। ছবি: রয়টার্সপুতিন নিজেকে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠা করার প্রক্রিয়ায় অলিগার্কদের ওপর নিজের কর্তৃত্ব পেতে চেয়েছিলেন। সে সময় তার প্রতি যারা আনুগত্য দেখাননি, তাদের কয়েকজনকে কারাগারে পাঠানো হয়, অনেকে নির্বাসিত হন।
আব্রামোভিচকে কোনোটাই করতে হয়নি। ২০০০ সালে তিনি রাশিয়ার উত্তর-পূর্বে সুবিধাবঞ্চিত এলাকা চুকোৎকার গভর্নরের দায়িত্ব পান। সমাজসেবায় নিজের অর্থ বিনিয়োগ করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তবে ২০০৮ সালে তিনি গভর্নরের পদ থেকে সরে দাঁড়ান।
এই পুরো সময়ে তিনি নিজের ব্যবসায়িক স্বার্থ ঠিকই রক্ষা করে গেছেন। সম্পদের পাহাড়ে বসে শিল্পকর্ম, বাড়ি, গাড়ি কিনে গেছেন।