ঢাকা ১০:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা, না-খোলা সম্পর্কে

  • আপডেট সময় : ১২:০৬:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুন ২০২১
  • ৯৫ বার পড়া হয়েছে

ড. নিজামউদ্দিন জামি : করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে প্রায় ১৫ মাস আগে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শেষ হয়ে তৃতীয় ঢেউ-এ বাংলাদেশ প্রবেশ করছে মনে হয়! মৃত্যুহার পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় কম হলেও বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে কম নয়। আবার বাংলাদেশের মানুষ যে পরিমাণ বেপরোয়া চলাফেরা করে, নিয়ম ভাঙে সে তুলনায় মৃত্যুহার নগণ্য বলতেই হয়। সরকার যেমন তার রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে কাজে লাগাতে পারেনি, তেমনি জনগণও তার পূর্ণস্বাধীনতা ভোগ করেছে, করছে মহামারি-অতিমারির এসময়ে! সাবাস বাংলাদেশ, সাবাস! এদেশের অধিকাংশ মানুষের শত্রুতা যেন মাস্কের সাথে! এ সম্পর্কে বলার সাহস ও রুচি কোনোটিই এখন আর অবশিষ্ট নেই আমার। মানুষ কথায় কথায় ধর্মের জুজু তুলে কিন্তু মহামারি সম্পর্কে কোরআন-হাদিসে কী আছে, তা জানার বা মানার মতো ধার্মিক বাংলাদেশে এখনো খুববেশি তৈরি হয়নি। এরা শোনা মুসলমান, জানা বা মানা মুসলমান নয়। এরা ইউটিউবে কিছু নষ্ট মোল্লাদের ওয়াজ শুনে জেহাদের উন্মাদনায় ভাসতে থাকে। ফলে ধর্মের মর্মে পৌঁছাতে পারে না। সরকার প্রধানও প্রতিদিন করোনা সতর্কতা নিয়ে কথা বলেন। পাশাপশি যদি কার্যকর পদক্ষেপও নিতে পারতেন, যদি মাস্ক পরাটা বাধ্যতামূলক করতে পারতেন, তাহলেও তাদের আন্তরিকতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠতো না। উপরেই বলেছি, সে-বিষয়ে কথা বলার আগ্রহ আমি বেশ আগেই হারিয়ে ফেলেছি।
দুই. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কথা বলছি। সাধারণ মানুষ বলছে- ‘সবকিছু খুলে দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কোনো অর্থই হয় না।’ তাদের কথায় যুক্তি আছে। তবে এসব কথা যারা বলেন, তাদের মুখেও মাস্ক খুব একটা দেখা যায় না। আরেক শ্রেণীর অভিভাবক আছেন, যারা সত্যিই সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন। করোনাকালে শিক্ষার্থীরা এতটাই যান্ত্রিক হয়ে উঠেছে যে, তাদের মনোবিকাশ প্রায় নাই বললেই চলে! সাম্প্রতিক কিশোর অপরাধ বৃদ্ধির একটি বড় কারণ এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করতে পারলে এতদিনে একটি পথ আবিষ্কার সম্ভব হতো। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালুর বিষয়ে কোনো পথই তৈরি হয়নি এখনো।
তিন. এ বিষয়ে একটি সমন্বিত উদ্যোগ দরকার। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি, শিক্ষক প্রতিনিধি, অভিভাবক প্রতিনিধি, করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি কমিটি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে একটি সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে পারে সরকার। সমন্বয় কমিটি যদি মনে করে যে, এখনই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা যায়, তবেই নি¤œলিখিত প্রস্তাবনা আমলে নেয়া যেতে পারে। অন্যথা আরো অপেক্ষা করতে হবে। তবে এ অপেক্ষায় থেকে আমরা যেন যেকোনো ভালো ফল বের করে আনতে পারি।
চার. আমার মত প্রদান করলাম। প্রথমে স্বাস্থ্যবিধি মানতে ও মানাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রথম ধাপে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি পরীক্ষামূলক খুলে দেয়া যেতে পারে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে ও মানাতে কোনোপ্রকার শিথিলতা মেনে নেয়া হবে না। বর্ষগুলি (ক্লাস)কে ভাগ করে ক্লাস চালু করা যায়। যেমন অনার্সের ৪টি বর্ষকে দুভাগে ভাগ করা যেতে পারে। প্রথম ও দ্বিতীয়বর্ষ শনি, রবি ও সোমবার এবং তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষকে মঙ্গল, বুধবার ও বৃহস্পতিবার ক্লাসের জন্য নির্ধারণ করা যায়। এটা এমন জটিল কিছু নয়, শুধু আন্তরিকতা ও নেতৃত্ব দরকার। মাস্টার্সের ক্লাসও এভাবে ভাগ করা যায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একেবারে বন্ধ থাকার চেয়ে রোস্টারিং (ভাগ) পদ্ধতি চালু করা গেলে হয়তো একটি পথ তৈরি হবে, এটা আমার ধারণা।
পাঁচ. বিশ্ববিদ্যালয় খোলা এবং পরিচালনার প্র্যাকটিসটা ঠিকভাবে করা গেলে তারপর কলেজগুলি খোলার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে, ঠিক একই নিয়মে। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান তাদের ক্লাস ও ছাত্রসংখ্যা বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় রোস্টার (ভাগ) পদ্ধতি চালু করতে পারে। সে বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কতৃপক্ষের সাথে নিজেরা মতবিনিময় করতে পারেন, যদি ইচ্ছা থাকে। সত্য কথা হচ্ছে, আমাদের দেশে এমন লোকও আছেন, যারা এমন উদ্যোগও আটকে দিতে পারে। তাই সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এর উদ্যোগ নিতে হবে।
ছয়. কলেজ খোলার সফলতা পাওয়া গেলে পর্যায়ক্রমে উচ্চ বিদ্যালয়গুলি খুলতে হবে। সেখানে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর ক্লাস শনি, রবি ও সোমবার হতে পারে। ৮ম, ৯ম ও ১০ম এর ক্লাস সপ্তাহের পরের তিনদিন রাখা যায়। এভাবে প্রাথমিক ও কেজির ক্লাসগুলিও চালু করা যেতে পারে। মাদ্রাসাগুলিও ঘনত্ব কমিয়ে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে প্রয়োগ করে খোলা যেতে পারে।
করোনা সংক্রমণ প্রত্যাশিত পর্যায়ে কবে আসবে, আদৌ সে পর্যায়ে আনার চেষ্টা সর্বমহল থেকে করা হচ্ছে কি-না, হলে মানুষ মাস্ক পরছে না কেন? স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সরকারের উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ কোথায়? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা এবং ঢিলেঢালা কিছু লকডাউন ছাড়া অন্য কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। তা নিয়ে জনমনেও সংশয় আছে। সবাই একই লক্ষে কাজ করলে করোনা নয়, আরো কঠিন কিছু এলেও এখানে সুবিধা করতে পারবে না। ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে, অবৈজ্ঞানিক ভাবধারার চালিত হচ্ছে এ দেশের ৯০+% মানুষ। এরই মধ্যে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের ভয়াবহতাও সৃষ্টি হয়েছে দেশে। সবকিছু বিবেচনায় রেখেই আমাদের সিদ্ধান্তে আসতে হবে।
সাত. তারপরও প্রশ্ন থাকে, সন্তা এবং নিজের জীবন রক্ষা করতে স্বাস্থ্যবিধি মানার মতো মা-বাবা, অভিভাবক বাংলাদেশে কতশতাংশ আছে? শুধু মা-বাবার কথা বলি কেন? শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেয়ার মতো সচেতন শিক্ষক বাংলাদেশে ১০%-র বেশি আছে বলে আমার মনে হয় না। অভিভাবক ও শিক্ষক-শিক্ষিকার কথা বাদ দিলাম। প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার্থীর মধ্যে মাস্ক পরার প্রবণতা নেই বললেই চলে।
আট. অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর পর বলতে চাই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কথা। তারা নিজেরা যে পরিমাণ উদাসীন, তেল পুড়ে, গাড়ির চাকা ঘুরে কিন্তু তাদের চেখের সামনেই মানুষ স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করছে, যেন কিছুই বলার নেই তাদের। এমন পরিস্থিতিতে ওরা নাকি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে সম্মানিত করছে দেশের জনগণকে! যার হিসেব মেলোতে পারি না। নানাভাবে জীবন এখানে মূল্যহীন! এসব নিয়ে কথা বলে উলুবনে মুক্তো ছড়ানো ছাড়া আর কী-বা করতে পারি আমরা?
নয়. এবার আসুন, যারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার জন্য আন্দোলন করছেন বা দাবি জানাচ্ছেন, তাঁদের সম্পর্কে বলি। এ দলের অধিকাংশরাই হচ্ছেন প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত মালিক-শিক্ষক-কর্মচারী। কেজি স্কুলও আছে এতে। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, তাঁরা যতটা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে আন্দোলন করছেন, তারচেয়ে অধিক ভাবছেন প্রতিষ্ঠানের পেছনে তাঁদের অর্থলগ্নির কথা। বলা যায়, ভাবতে বাধ্য হচ্ছে। এটা ভাবার অধিকার তাদের আছে এবং তা যৌক্তিকও। কারণ তারাও স্বাধীন দেশের নিয়ম-কানুন মেনে এ প্রতিষ্ঠানে পুঁজি খাটিয়েছেন। দেশের ক্রমবর্ধমান চাকরির বাজার সংকোচিত হওয়ার কারণেও এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার একটি প্রধান কারণ, সেকথা ভুলে গেলে আমাদের চলবে না। সরকারও তাদের স্বীকৃতি দিয়েছে। আজ এ কঠিন সময়ে তাদের পাশে কেউ নেই! না সরকার, না শিক্ষার্থী-পরিবার!
দশ. অবশ্য বিপরীত বক্তব্যও আছে। প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পরও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন আদায় করার অভিযোগও গণমাধ্যমে এসেছে। সব প্রতিষ্ঠানকে ঢালাওভাবে দায়ি করার যুক্তিও নেই। শুরুর দিকে এ অভিযোগ প্রবল ছিল, এখন সেরকম খবর কমে আসছে।
এগার. অন্যদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেতন বন্ধ। কোথাও কোথাও দুচার মাসের বেতন (হাফ অথবা ফুল) পেয়েছেন শিক্ষকরা, কোথাও তাও পাওয়া যায়নি। তাঁদের পাশে তেমন কেউ দাঁড়ায়নি। প্রণোদনা এ পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছেনি। জরুরি ভিত্তিতে এসব প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের প্রণোদনার আওতায় আনা হোক। না হলে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে!
বার. বাংলাদেশের করোনা মোকাবিলায় শিক্ষাক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে প্রাণপণ লড়াই করছে। শতভাগ না হলেও তাঁরা অনেকাংশে সফলতা পেয়েছে। অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে তাঁরা নিজেদের অবস্থান ধরে রাখার যে লড়াই এখনো চালিয়ে যাচ্ছে, তা সত্যি প্রশংসার দাবিদার। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলি যেখানে এখনো দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছে, সেখানে বিগত ১৫ মাস তারা অনলাইনে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করে নিজেদের এগিয়ে নিয়েছে।
আমাদের শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির কথা বলি। তারা শুরু থেকে অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করে এক্ষেত্রে শীর্ষস্থান অধিকার করার সম্ভাবনা তৈরি করেছে। (ইউজিসি জরিপে ষষ্ঠ)। শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি ২০২০ সালের মার্চে অর্থাৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ (১৭/০৩/২০২০) হওয়ার পরপরই তড়িৎগতিতে অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম শুরু করেছিল। সকলের সমন্বিত চেষ্টায় শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অনেকাংশে সফল হয়েছে, বলা যায়। এভাবে দেশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে সফলতা পেয়েছে। যদিও পাঠ কক্ষের সফলতা ও আনন্দ অনলাইন ক্লাসে নেই বা থাকে না, তথাপি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার চেয়ে উত্তম অনলাইন মাধ্যম। তাদের প্রতি সাধুবাদ ও অভিনন্দন রইল।
তের. চলমান বাজেটে বঞ্চিত মানুষগুলির কথা ভাবা হোক। রাষ্ট্রকে সবার কথা ভাবতে হয়, ব্যবস্থাপনার ত্রুটি কিংবা অন্যায়ভাবে কেউ যেন ভাগ্যবিড়ম্বিত না হন, সেদিকে রাষ্ট্রকে নজর রাখতে হবে। আন্তরিক হয়ে তাদের প্রতি মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যার প্রতি সদয় অনুরোধ জানাচ্ছে লেখক।
চৌদ্দ. এ মহাসংকট মোকাবিলায় সরকার ও জনগণের সমন্বিত উদ্যোগ চাই। এগিয়ে আসুন সবাই। দুটি হাত না হলে হ্যান্ডশেক হয় না। সরকারের হাতের সাথে জনগণের হাত মেলাতে হবে। তবেই আমরা সফল হবো। এটা একটা যুদ্ধ। যুদ্ধে কষ্ট আছে, যেন ভালোবাসাও থাকে।
পনের. আন্তরিকতা ছাড়া সবকিছুই এদেশে আছে। যেমন শিক্ষক আছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী আছেন, ইউজিসি আছে, বেতন-ভাতা সবই আছে, শুধু…। চাকরি না করে বেতন পেলে চাকরি করতে চায় ক’জনে?
ষোল. সপ্তাহে একদিন একএকটি ক্লাসের শিক্ষার্থীদের ডেকে বাড়ির কাজ দিলেও তো শিক্ষার্থীরা কিছু একটা পায়, কিন্তু তা হচ্ছে না কেন? কারণ দেশপ্রেমিক মানুষ কমে গেছে। আবার নবজাগরণ চাই।
সতের. এদেশের শিক্ষা-ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্যে আমি যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত আছি-কথা দিলাম। দেশপ্রেমের জয় হোক।
লেখক : ড. নিজামউদ্দিন জামি, শিক্ষক, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোজি।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা, না-খোলা সম্পর্কে

আপডেট সময় : ১২:০৬:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুন ২০২১

ড. নিজামউদ্দিন জামি : করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে প্রায় ১৫ মাস আগে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শেষ হয়ে তৃতীয় ঢেউ-এ বাংলাদেশ প্রবেশ করছে মনে হয়! মৃত্যুহার পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় কম হলেও বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে কম নয়। আবার বাংলাদেশের মানুষ যে পরিমাণ বেপরোয়া চলাফেরা করে, নিয়ম ভাঙে সে তুলনায় মৃত্যুহার নগণ্য বলতেই হয়। সরকার যেমন তার রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে কাজে লাগাতে পারেনি, তেমনি জনগণও তার পূর্ণস্বাধীনতা ভোগ করেছে, করছে মহামারি-অতিমারির এসময়ে! সাবাস বাংলাদেশ, সাবাস! এদেশের অধিকাংশ মানুষের শত্রুতা যেন মাস্কের সাথে! এ সম্পর্কে বলার সাহস ও রুচি কোনোটিই এখন আর অবশিষ্ট নেই আমার। মানুষ কথায় কথায় ধর্মের জুজু তুলে কিন্তু মহামারি সম্পর্কে কোরআন-হাদিসে কী আছে, তা জানার বা মানার মতো ধার্মিক বাংলাদেশে এখনো খুববেশি তৈরি হয়নি। এরা শোনা মুসলমান, জানা বা মানা মুসলমান নয়। এরা ইউটিউবে কিছু নষ্ট মোল্লাদের ওয়াজ শুনে জেহাদের উন্মাদনায় ভাসতে থাকে। ফলে ধর্মের মর্মে পৌঁছাতে পারে না। সরকার প্রধানও প্রতিদিন করোনা সতর্কতা নিয়ে কথা বলেন। পাশাপশি যদি কার্যকর পদক্ষেপও নিতে পারতেন, যদি মাস্ক পরাটা বাধ্যতামূলক করতে পারতেন, তাহলেও তাদের আন্তরিকতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠতো না। উপরেই বলেছি, সে-বিষয়ে কথা বলার আগ্রহ আমি বেশ আগেই হারিয়ে ফেলেছি।
দুই. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কথা বলছি। সাধারণ মানুষ বলছে- ‘সবকিছু খুলে দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কোনো অর্থই হয় না।’ তাদের কথায় যুক্তি আছে। তবে এসব কথা যারা বলেন, তাদের মুখেও মাস্ক খুব একটা দেখা যায় না। আরেক শ্রেণীর অভিভাবক আছেন, যারা সত্যিই সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন। করোনাকালে শিক্ষার্থীরা এতটাই যান্ত্রিক হয়ে উঠেছে যে, তাদের মনোবিকাশ প্রায় নাই বললেই চলে! সাম্প্রতিক কিশোর অপরাধ বৃদ্ধির একটি বড় কারণ এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করতে পারলে এতদিনে একটি পথ আবিষ্কার সম্ভব হতো। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালুর বিষয়ে কোনো পথই তৈরি হয়নি এখনো।
তিন. এ বিষয়ে একটি সমন্বিত উদ্যোগ দরকার। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি, শিক্ষক প্রতিনিধি, অভিভাবক প্রতিনিধি, করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি কমিটি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে একটি সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে পারে সরকার। সমন্বয় কমিটি যদি মনে করে যে, এখনই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা যায়, তবেই নি¤œলিখিত প্রস্তাবনা আমলে নেয়া যেতে পারে। অন্যথা আরো অপেক্ষা করতে হবে। তবে এ অপেক্ষায় থেকে আমরা যেন যেকোনো ভালো ফল বের করে আনতে পারি।
চার. আমার মত প্রদান করলাম। প্রথমে স্বাস্থ্যবিধি মানতে ও মানাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রথম ধাপে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি পরীক্ষামূলক খুলে দেয়া যেতে পারে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে ও মানাতে কোনোপ্রকার শিথিলতা মেনে নেয়া হবে না। বর্ষগুলি (ক্লাস)কে ভাগ করে ক্লাস চালু করা যায়। যেমন অনার্সের ৪টি বর্ষকে দুভাগে ভাগ করা যেতে পারে। প্রথম ও দ্বিতীয়বর্ষ শনি, রবি ও সোমবার এবং তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষকে মঙ্গল, বুধবার ও বৃহস্পতিবার ক্লাসের জন্য নির্ধারণ করা যায়। এটা এমন জটিল কিছু নয়, শুধু আন্তরিকতা ও নেতৃত্ব দরকার। মাস্টার্সের ক্লাসও এভাবে ভাগ করা যায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একেবারে বন্ধ থাকার চেয়ে রোস্টারিং (ভাগ) পদ্ধতি চালু করা গেলে হয়তো একটি পথ তৈরি হবে, এটা আমার ধারণা।
পাঁচ. বিশ্ববিদ্যালয় খোলা এবং পরিচালনার প্র্যাকটিসটা ঠিকভাবে করা গেলে তারপর কলেজগুলি খোলার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে, ঠিক একই নিয়মে। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান তাদের ক্লাস ও ছাত্রসংখ্যা বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় রোস্টার (ভাগ) পদ্ধতি চালু করতে পারে। সে বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কতৃপক্ষের সাথে নিজেরা মতবিনিময় করতে পারেন, যদি ইচ্ছা থাকে। সত্য কথা হচ্ছে, আমাদের দেশে এমন লোকও আছেন, যারা এমন উদ্যোগও আটকে দিতে পারে। তাই সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এর উদ্যোগ নিতে হবে।
ছয়. কলেজ খোলার সফলতা পাওয়া গেলে পর্যায়ক্রমে উচ্চ বিদ্যালয়গুলি খুলতে হবে। সেখানে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর ক্লাস শনি, রবি ও সোমবার হতে পারে। ৮ম, ৯ম ও ১০ম এর ক্লাস সপ্তাহের পরের তিনদিন রাখা যায়। এভাবে প্রাথমিক ও কেজির ক্লাসগুলিও চালু করা যেতে পারে। মাদ্রাসাগুলিও ঘনত্ব কমিয়ে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে প্রয়োগ করে খোলা যেতে পারে।
করোনা সংক্রমণ প্রত্যাশিত পর্যায়ে কবে আসবে, আদৌ সে পর্যায়ে আনার চেষ্টা সর্বমহল থেকে করা হচ্ছে কি-না, হলে মানুষ মাস্ক পরছে না কেন? স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সরকারের উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ কোথায়? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা এবং ঢিলেঢালা কিছু লকডাউন ছাড়া অন্য কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। তা নিয়ে জনমনেও সংশয় আছে। সবাই একই লক্ষে কাজ করলে করোনা নয়, আরো কঠিন কিছু এলেও এখানে সুবিধা করতে পারবে না। ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে, অবৈজ্ঞানিক ভাবধারার চালিত হচ্ছে এ দেশের ৯০+% মানুষ। এরই মধ্যে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের ভয়াবহতাও সৃষ্টি হয়েছে দেশে। সবকিছু বিবেচনায় রেখেই আমাদের সিদ্ধান্তে আসতে হবে।
সাত. তারপরও প্রশ্ন থাকে, সন্তা এবং নিজের জীবন রক্ষা করতে স্বাস্থ্যবিধি মানার মতো মা-বাবা, অভিভাবক বাংলাদেশে কতশতাংশ আছে? শুধু মা-বাবার কথা বলি কেন? শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেয়ার মতো সচেতন শিক্ষক বাংলাদেশে ১০%-র বেশি আছে বলে আমার মনে হয় না। অভিভাবক ও শিক্ষক-শিক্ষিকার কথা বাদ দিলাম। প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার্থীর মধ্যে মাস্ক পরার প্রবণতা নেই বললেই চলে।
আট. অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর পর বলতে চাই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কথা। তারা নিজেরা যে পরিমাণ উদাসীন, তেল পুড়ে, গাড়ির চাকা ঘুরে কিন্তু তাদের চেখের সামনেই মানুষ স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করছে, যেন কিছুই বলার নেই তাদের। এমন পরিস্থিতিতে ওরা নাকি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে সম্মানিত করছে দেশের জনগণকে! যার হিসেব মেলোতে পারি না। নানাভাবে জীবন এখানে মূল্যহীন! এসব নিয়ে কথা বলে উলুবনে মুক্তো ছড়ানো ছাড়া আর কী-বা করতে পারি আমরা?
নয়. এবার আসুন, যারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার জন্য আন্দোলন করছেন বা দাবি জানাচ্ছেন, তাঁদের সম্পর্কে বলি। এ দলের অধিকাংশরাই হচ্ছেন প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত মালিক-শিক্ষক-কর্মচারী। কেজি স্কুলও আছে এতে। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, তাঁরা যতটা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে আন্দোলন করছেন, তারচেয়ে অধিক ভাবছেন প্রতিষ্ঠানের পেছনে তাঁদের অর্থলগ্নির কথা। বলা যায়, ভাবতে বাধ্য হচ্ছে। এটা ভাবার অধিকার তাদের আছে এবং তা যৌক্তিকও। কারণ তারাও স্বাধীন দেশের নিয়ম-কানুন মেনে এ প্রতিষ্ঠানে পুঁজি খাটিয়েছেন। দেশের ক্রমবর্ধমান চাকরির বাজার সংকোচিত হওয়ার কারণেও এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার একটি প্রধান কারণ, সেকথা ভুলে গেলে আমাদের চলবে না। সরকারও তাদের স্বীকৃতি দিয়েছে। আজ এ কঠিন সময়ে তাদের পাশে কেউ নেই! না সরকার, না শিক্ষার্থী-পরিবার!
দশ. অবশ্য বিপরীত বক্তব্যও আছে। প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পরও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন আদায় করার অভিযোগও গণমাধ্যমে এসেছে। সব প্রতিষ্ঠানকে ঢালাওভাবে দায়ি করার যুক্তিও নেই। শুরুর দিকে এ অভিযোগ প্রবল ছিল, এখন সেরকম খবর কমে আসছে।
এগার. অন্যদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেতন বন্ধ। কোথাও কোথাও দুচার মাসের বেতন (হাফ অথবা ফুল) পেয়েছেন শিক্ষকরা, কোথাও তাও পাওয়া যায়নি। তাঁদের পাশে তেমন কেউ দাঁড়ায়নি। প্রণোদনা এ পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছেনি। জরুরি ভিত্তিতে এসব প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের প্রণোদনার আওতায় আনা হোক। না হলে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে!
বার. বাংলাদেশের করোনা মোকাবিলায় শিক্ষাক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে প্রাণপণ লড়াই করছে। শতভাগ না হলেও তাঁরা অনেকাংশে সফলতা পেয়েছে। অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে তাঁরা নিজেদের অবস্থান ধরে রাখার যে লড়াই এখনো চালিয়ে যাচ্ছে, তা সত্যি প্রশংসার দাবিদার। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলি যেখানে এখনো দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছে, সেখানে বিগত ১৫ মাস তারা অনলাইনে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করে নিজেদের এগিয়ে নিয়েছে।
আমাদের শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির কথা বলি। তারা শুরু থেকে অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করে এক্ষেত্রে শীর্ষস্থান অধিকার করার সম্ভাবনা তৈরি করেছে। (ইউজিসি জরিপে ষষ্ঠ)। শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি ২০২০ সালের মার্চে অর্থাৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ (১৭/০৩/২০২০) হওয়ার পরপরই তড়িৎগতিতে অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম শুরু করেছিল। সকলের সমন্বিত চেষ্টায় শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অনেকাংশে সফল হয়েছে, বলা যায়। এভাবে দেশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে সফলতা পেয়েছে। যদিও পাঠ কক্ষের সফলতা ও আনন্দ অনলাইন ক্লাসে নেই বা থাকে না, তথাপি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার চেয়ে উত্তম অনলাইন মাধ্যম। তাদের প্রতি সাধুবাদ ও অভিনন্দন রইল।
তের. চলমান বাজেটে বঞ্চিত মানুষগুলির কথা ভাবা হোক। রাষ্ট্রকে সবার কথা ভাবতে হয়, ব্যবস্থাপনার ত্রুটি কিংবা অন্যায়ভাবে কেউ যেন ভাগ্যবিড়ম্বিত না হন, সেদিকে রাষ্ট্রকে নজর রাখতে হবে। আন্তরিক হয়ে তাদের প্রতি মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যার প্রতি সদয় অনুরোধ জানাচ্ছে লেখক।
চৌদ্দ. এ মহাসংকট মোকাবিলায় সরকার ও জনগণের সমন্বিত উদ্যোগ চাই। এগিয়ে আসুন সবাই। দুটি হাত না হলে হ্যান্ডশেক হয় না। সরকারের হাতের সাথে জনগণের হাত মেলাতে হবে। তবেই আমরা সফল হবো। এটা একটা যুদ্ধ। যুদ্ধে কষ্ট আছে, যেন ভালোবাসাও থাকে।
পনের. আন্তরিকতা ছাড়া সবকিছুই এদেশে আছে। যেমন শিক্ষক আছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী আছেন, ইউজিসি আছে, বেতন-ভাতা সবই আছে, শুধু…। চাকরি না করে বেতন পেলে চাকরি করতে চায় ক’জনে?
ষোল. সপ্তাহে একদিন একএকটি ক্লাসের শিক্ষার্থীদের ডেকে বাড়ির কাজ দিলেও তো শিক্ষার্থীরা কিছু একটা পায়, কিন্তু তা হচ্ছে না কেন? কারণ দেশপ্রেমিক মানুষ কমে গেছে। আবার নবজাগরণ চাই।
সতের. এদেশের শিক্ষা-ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্যে আমি যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত আছি-কথা দিলাম। দেশপ্রেমের জয় হোক।
লেখক : ড. নিজামউদ্দিন জামি, শিক্ষক, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোজি।