ঢাকা ১০:৪০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫

পদ্মায় কোথা থেকে আসে এত অবৈধ স্পিডবোট?

  • আপডেট সময় : ০১:২৭:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ মে ২০২১
  • ১৩৮ বার পড়া হয়েছে


মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি : মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের বাংলাবাজার ও মাঝিকান্দি নৌরুটে পদ্মা নদীতে যাত্রী পারাপারে চলে প্রায় চার শতাধিক স্পিডবোট। এসব স্পিডবোটের কোনও নিবন্ধন নেই। চালকের নেই কোনও লাইসেন্স। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিটিএ) স্পিডবোট ঘাটের ইজারা প্রদান করলেও এখনও এসব স্পিডবোটের নিবন্ধন করেনি। এভাবে নিবন্ধিত না হয়েই বছরের পর বছর ধরে বিশাল পদ্মার বুক চিঁড়ে চলছে স্পিডবোট। কোথা থেকে আসে এসব স্পিডবোট?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি জেলায় এসব স্পিডবোট তৈরি করা হয়। ইঞ্জিন ও কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করে দেশে কারিগররা স্পিডবোটের কাঠামো তৈরি করে। মূলত সরকারি বিভিন্ন বাহিনী ছাড়াও বেসরকারি পর্যায়ের বিভিন্ন লোক এসব স্পিডবোটের গ্রাহক। যার সামর্থ্য ও ইচ্ছা আছে সেই স্পিডবোট কিনে নৌরুটে যাত্রী পারাপার করছে। এজন্য শুধু ইজারাদারের সঙ্গে সমঝোতা করলেই যথেষ্ট। নিবন্ধনের কোনও বালাই নেই।
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের কুমারভোগে অবস্থিত মেসার্স মুন ইন্টারন্যাশনাল তেমনি একটি স্পিডবোট তৈরির কারখানা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ৬/৭ জন কারিগর স্পিডবোট তৈরির কাজে ব্যস্ত। কথা হয় কারখানার মালিক মহসিন আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা ছাড়াও কুমারভোগ এলাকার খলিল ব্যাপারীর কারখানা, আবু বোর্ড বিল্ডার্স, সোনাকান্দা ডকসহ অনেক জায়গাতেই স্পিডবোট তৈরি করা হয়। স্পিডবোটের ইঞ্জিন মূলত জাপান থেকে আমদানি হয়। বাংলাদেশে কোনও ইঞ্জিন তৈরি হয় না। এমনকি স্পিডবোটের বোর্ড তৈরির কাঁচামাল জিন ফাইবারও মালয়েশিয়া, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, চীন থেকে আমদানি হয়। আমাদের কারিগররা স্পিডবোটের কাঠামো তৈরি ও রঙ করে। একেক কারিগর একেক অংশ তৈরি করার পর সব অংশ জোড়া লাগিয়ে একটি সম্পূর্ণ স্পিডবোট বানানো হয়। গড়ে ১৫ জন কারিগরের প্রায় দুই সপ্তাহ লাগে একটি বোট বানাতে।
গ্রাহক ও স্পিডবোটের দাম সম্পর্কে তিনি বলেন, পদ্মা নদীতে যে সকল স্পিডবোট চলাচল করে সেগুলো আমাদের মতো কারখানা থেকেই ক্রয় করে। কখনও নিজেদের মধ্যে স্পিডবোট মালিকেরা বেচাকেনা করে। ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত এসব স্পিডবোট বেচাকেনা হয়। তিনি আরও জানান, করোনা মহামারির কারণে এখন ব্যবসা খুব খারাপ যাচ্ছে। গত ৮/৯ মাসে একটিও স্পিডবোট বিক্রি করতে পারিনি। শুধু কিছু পুরাতন স্পিডবোট মেরামত করে প্রতিষ্ঠানের খরচ চালিয়ে নিচ্ছি। এদিকে, শিমুলিয়া বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী পরিচালক শাহাদাত হোসেন দাবি করেন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন অধিদফতর বেশ কয়েক বছর আগে প্রায় ২৫ ভাগ স্পিডবোটের নিবন্ধন করেছিল। তবে, আমাদের কাছে সেসবের কোনও নথি নেই। প্রসঙ্গত, সোমবার সকালে মাদারীপুরের শিবচরে পুরাতন কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাট এলাকায় পদ্মা নদীতে স্পিডবোটের সঙ্গে বালুভর্তি বাল্কহেডের সংঘর্ষে ২৬ জন নিহত হয়। ওই ঘটনায় সোমবার দিবাগত রাতের চরজানাজাত নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক লোকমান হোসেন বাদী হয়ে চারজনকে অভিযুক্ত করে মামলা করেন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

পদ্মায় কোথা থেকে আসে এত অবৈধ স্পিডবোট?

আপডেট সময় : ০১:২৭:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ মে ২০২১


মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি : মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের বাংলাবাজার ও মাঝিকান্দি নৌরুটে পদ্মা নদীতে যাত্রী পারাপারে চলে প্রায় চার শতাধিক স্পিডবোট। এসব স্পিডবোটের কোনও নিবন্ধন নেই। চালকের নেই কোনও লাইসেন্স। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিটিএ) স্পিডবোট ঘাটের ইজারা প্রদান করলেও এখনও এসব স্পিডবোটের নিবন্ধন করেনি। এভাবে নিবন্ধিত না হয়েই বছরের পর বছর ধরে বিশাল পদ্মার বুক চিঁড়ে চলছে স্পিডবোট। কোথা থেকে আসে এসব স্পিডবোট?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি জেলায় এসব স্পিডবোট তৈরি করা হয়। ইঞ্জিন ও কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করে দেশে কারিগররা স্পিডবোটের কাঠামো তৈরি করে। মূলত সরকারি বিভিন্ন বাহিনী ছাড়াও বেসরকারি পর্যায়ের বিভিন্ন লোক এসব স্পিডবোটের গ্রাহক। যার সামর্থ্য ও ইচ্ছা আছে সেই স্পিডবোট কিনে নৌরুটে যাত্রী পারাপার করছে। এজন্য শুধু ইজারাদারের সঙ্গে সমঝোতা করলেই যথেষ্ট। নিবন্ধনের কোনও বালাই নেই।
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের কুমারভোগে অবস্থিত মেসার্স মুন ইন্টারন্যাশনাল তেমনি একটি স্পিডবোট তৈরির কারখানা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ৬/৭ জন কারিগর স্পিডবোট তৈরির কাজে ব্যস্ত। কথা হয় কারখানার মালিক মহসিন আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা ছাড়াও কুমারভোগ এলাকার খলিল ব্যাপারীর কারখানা, আবু বোর্ড বিল্ডার্স, সোনাকান্দা ডকসহ অনেক জায়গাতেই স্পিডবোট তৈরি করা হয়। স্পিডবোটের ইঞ্জিন মূলত জাপান থেকে আমদানি হয়। বাংলাদেশে কোনও ইঞ্জিন তৈরি হয় না। এমনকি স্পিডবোটের বোর্ড তৈরির কাঁচামাল জিন ফাইবারও মালয়েশিয়া, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, চীন থেকে আমদানি হয়। আমাদের কারিগররা স্পিডবোটের কাঠামো তৈরি ও রঙ করে। একেক কারিগর একেক অংশ তৈরি করার পর সব অংশ জোড়া লাগিয়ে একটি সম্পূর্ণ স্পিডবোট বানানো হয়। গড়ে ১৫ জন কারিগরের প্রায় দুই সপ্তাহ লাগে একটি বোট বানাতে।
গ্রাহক ও স্পিডবোটের দাম সম্পর্কে তিনি বলেন, পদ্মা নদীতে যে সকল স্পিডবোট চলাচল করে সেগুলো আমাদের মতো কারখানা থেকেই ক্রয় করে। কখনও নিজেদের মধ্যে স্পিডবোট মালিকেরা বেচাকেনা করে। ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত এসব স্পিডবোট বেচাকেনা হয়। তিনি আরও জানান, করোনা মহামারির কারণে এখন ব্যবসা খুব খারাপ যাচ্ছে। গত ৮/৯ মাসে একটিও স্পিডবোট বিক্রি করতে পারিনি। শুধু কিছু পুরাতন স্পিডবোট মেরামত করে প্রতিষ্ঠানের খরচ চালিয়ে নিচ্ছি। এদিকে, শিমুলিয়া বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী পরিচালক শাহাদাত হোসেন দাবি করেন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন অধিদফতর বেশ কয়েক বছর আগে প্রায় ২৫ ভাগ স্পিডবোটের নিবন্ধন করেছিল। তবে, আমাদের কাছে সেসবের কোনও নথি নেই। প্রসঙ্গত, সোমবার সকালে মাদারীপুরের শিবচরে পুরাতন কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাট এলাকায় পদ্মা নদীতে স্পিডবোটের সঙ্গে বালুভর্তি বাল্কহেডের সংঘর্ষে ২৬ জন নিহত হয়। ওই ঘটনায় সোমবার দিবাগত রাতের চরজানাজাত নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক লোকমান হোসেন বাদী হয়ে চারজনকে অভিযুক্ত করে মামলা করেন।